করোনা মহামারিতে সারা বিশ্ব থমকে গেলেও ই-কমার্স ব্যাপক জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলাতে ই-কমার্স কেনাকাটার জন্য পছন্দের তালিকায় থাকলেও বাংলাদেশে তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। কিন্তু বর্তমান মহামারিতে বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বাংলাদেশে ই-কমার্সের জনপ্রিয় প্লাটফর্ম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক। যথাযত ট্রেনিং ও নির্দেশনা পেলে ই-কমার্স হাজার হাজার শিক্ষিত বেকারদের জন্য আয়ের অন্যতম একটা মাধ্যম হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
ই-কমার্সে সফলতার জন্য প্রথম যে ব্যাপারটির উপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হয় তা হলো পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং। ব্যবসায়িক ব্র্যান্ডিং এর কথা আমরা শুনে থাকলেও পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং শব্দটা আমাদের দেশে একদম নতুনই বলা যায়। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং ব্যবসায়িক প্রসারে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার অনলাইন বিজনেসে এটা একটা অভিনব পদ্ধতি যার মাধ্যমে আপনি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারবেন। অনলাইন ব্যাবসায় ভূবনে আপনি নিজেকে কেমন দেখতে চান এবং আপনার সম্ভাব্য কাস্টমার আপনার প্রতি কেমন ধারনা পোষণ করবে সেটা নির্ভর করবে আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর উপর।
অনলাইন ব্যবসায় বা ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং খুব শক্তিশালি একটা ভূমিকা পালন করে। আপনার অনলাইন ব্যবসায় সর্বোচ্চ আউটপুট পেতে হলে অবশ্যই ব্যবসায়িক ব্র্যান্ডের পাশাপাশি পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং কাস্টমারের কাছে আপনার স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করবে। আপনার ব্যাক্তিত্ব, আপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, আপনার আগ্রহ, আপনার বিচক্ষণতা এইসব কিছুই পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে যথাযতভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। সঠিক পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে আপনার বিক্রয় বৃদ্ধি করতে পারবেন সেই সাথে ব্যবসায় পরিচিতির পরিধি। তাই চমকপ্রদ পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর জন্য কিছু সাধারণ টিপস নিয়ে আলোচনা করলাম। আশা করি নবীন ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের জন্য টিপস গুলা কাজে লাগবে।
১। উদ্ভাবনী ক্ষমতাঃ যে বিষয় সম্পর্কে আপনার উৎসাহ ও উদ্ধিপনা অনেক বেশী, যে কাজ করতে আপনার ভিতর থেকে একটা আকর্ষন কাজ করে সেই কাজ যথাযত মার্কেটপ্লেসে উপস্থান করাই হচ্ছে আপনার উদ্ভাবনী ক্ষমতা। অর্থাৎ আপনার স্বপছন্দের কাজকে পেশা হিসেবে অনালাইন মার্কেটপ্লেসে জাহির করার মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা।
২। সৃষ্টিশীলতাঃ কাস্টমার আকর্ষন করার জন্য ব্যাতিক্রম ব্যাক্তিত্বই হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা। আপনার ব্যাক্তিত্বের মাধ্যমেই আপনি অন্যান্যদের থেকে আলাদা হবেন। অনলাইনে ক্রেতা আকর্ষনের জন্য আপনাকে জাহির করতে হবে আপনি কি জানেন! আপনার কি কি গুনাবলী আছে! যে প্রোডাক্ট আপনি মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করতে চাচ্ছেন সেই প্রোডাক্ট কাস্টমার কেন অন্যের কাছ থেকে না নিয়ে আপনার কাছ থেকে কিনবে! কেন আপনি অন্য উদ্যোক্তা হতে ব্যতিক্রম তা প্রকাশ করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সৃষ্টিশীল হতে হবে।
৩। যোগাযোগঃ কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার ক্ষমতা অর্জন করুন যেহেতু আপনি অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যাবহার করে উদ্যোক্তা হতে চান সেই ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কিংবা ব্লগে আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে আর্টিকেল লিখতে পারেন এতে আপনার ভবিষ্যৎ কাস্টমার আপনার সম্মন্ধে একটা স্পষ্ট ধারনা পাবে।
৪। সমন্বয় বজায় রাখাঃ মানুষ আপনার সম্পর্কে কি বলে? আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে কি বলে সেই দিকে মনোযোগ দিন এবং মানুষের কথার যথাযত সাড়া দিন। কাউকে সাড়া দিতে গিয়ে রেগে গেলেন কিংবা মানুষের কানকথা শুনে থেমে গেলেন এমন করা যাবে না এই জন্য আপনার নিজের অভিমত ও মানুষের কথার মাঝে একটা সেতু বন্ধন তৈরি করুন তাহলে আজকে যিনি আপনার সমালোচক আগামীকাল তিনিই আপনার কাস্টমার হবেন।
৫। বিশ্বাসযোগ্যতাঃ ইন্টারনেটে ভালো মার্কেটপ্লেসের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যাঙের ছাতার মত আনাচে কানাচে গজিয়ে উঠেছে ফেইক ই-কমার্স সাইট বা ফেইসবুক বিজনেস পেইজ। সফল ই-কমার্স উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে এইসব ফেইক পেইজের সাথে প্রতিযোগীতা করে প্রমাণ করতে হবে আপনি ফেইক নন। আপনার প্রতি মানুষের আস্থা অর্জন করে নিতে হবে সম্পূর্ন নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে। একবার মানুষের মনে বিশ্বাস স্থাপন করেই দেখুন, হাজার হাজার ফেইক পেইজের ভীরে মানুষ আপনাকে খুজে নিবে।
৬। দৃঢ়তাঃ ব্র্যান্ডিং এর জন্য দৃঢ়তা একটি চমৎকার হাতিয়ার। আপনি যদি মাসে একবার সোস্যাল মিডিয়ায় একটা সেল পোষ্ট দিয়ে কিংবা কন্টেন্ট লিখে ভাবেন আপনার দায়িত্ব শেষ,এখন আপনাকে সবাই চিনবে, তাহলে ভুল পথে এগোচ্ছেন আপনি। সোস্যাল মিডিয়া এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে প্রতিনিয়ত নতুনের আগমন ঘটছে আর সেই নব আগন্তুকদের মাঝে টিকে থাকতে হলে আপনাকে দৃঢ়তা নিয়ে এগোতে হবে, প্রতিদিন অনন্তত একটি কন্টেন্ট নিয়ে পোষ্ট লিখতে হবে হোক সেটা সোস্যাল মিডিয়া কিংবা ব্লগিং সাইট। তবে ভূলবাল তথ্য বা দূর্বল তথ্যের কন্টেন্ট লিখার চেয়ে কিছু না লিখাই শ্রেয়। তাই যাই লিখবেন সেটা যেনো অবশ্যই তথ্য বহুল হয় সেই দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে চলুন।
৭। গল্প করতে শিখুনঃ এখানে আমি প্রচলিত নাকট, সিনেমা কিংবা ফিকশনের গল্পকার হতে বলিনি আপনাকে। এখানে জীবন, জীবিকা, সাফল্য, ব্যার্থতা ও আদম্য পরিশ্রমের গল্পেরর কথা বুঝিয়েছি। প্রতিটা মানুষের জীবনে কিছু না বলা গল্প থাকে। বানানো গল্প না, বাস্তব অভিজ্ঞতার ঝুলি যেখানে আপনার অব্যাক্ত কিছু কথা লুকিয়ে আছে সেই কথাগুলিকে সাজিয়ে গল্প করতে শিখুন। কোন পথে? কি করে আপনি আপনার উদ্যোক্তা জীবনের প্রতিটি দিন পার করেছেন? কি কি প্রতিবন্ধকতা পেড়িয়ে এসেছেন? বর্তমানে আপনার উদ্যোগটি কোন পর্যায়ে এসেছে? ভবিষ্যতে আপনার প্রতিষ্ঠানকে কোন পর্যায়ে দেখতে চান? সেই কথা গুলা গল্পাকারে লিখতে শিখুন। যখন মানুষ জানবে আপনি কে? কোথা থেকে আজকের এই অবস্থানে এসেছেন? ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান বলে স্বপ্নের জাল বুনে যাচ্ছেন তখন আপনি মানুষের আস্থাভাজন ব্যাক্তি হিসেবে পরিচিতি পাবেন যা আপনার উদ্যোক্তা জীবনে সাফল্যের মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে ।
৮। ব্যাক্তিত্বের ভিত পোক্ত করুনঃ কাস্টমারের কাছে সদা সর্বদা সৎ থাকুন সেই সাথে ব্যাক্তিত্ববোধকে এমনভাবে লালন পালন করুন যে, যখন কোন কাস্টমার আপনার নাম শুনবে তখন যাতে তাদের মনে একজন আদর্শবান, শিক্ষিত, স্মার্ট, পেশাদার, বন্ধুত্বপূর্ণ ইত্যাদি বিশেষণ সমৃদ্ধ ইতিবাচক মানুষের চেহেরা ভেসে উঠে। তারমানে হচ্ছে যখন আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং প্রতিষ্ঠিত করতে যাবেন তখন এমনভাবে কাজ করুন যেখানে আপনাকে মানুষের মাঝে কোন পর্যায়ে দেখতে চান সেই প্রতিবিম্ভ ছকে একে নিতে পারেন এবং তা আন্তরিকভাবেই করবেন। কোন প্রোডাক্ট বা সেবা সম্পর্কে না জানলে সেই ব্যপারে মিথ্য বলবেন না বরং সময় নিয়ে রিসার্চ করুন এবং যথাযত জ্ঞ্যান অর্জনের পর সেই প্রোডাক্ট নিয়ে কাস্টমারের সাথে আলোচনা করুন। বিশ্বাস করুন এসব টুকিটাকি গুলাবলিই আপনার ব্যাক্তিত্বের ভিতকে কাস্টমারে মনে ইস্পাতের ন্যায় পোক্ত করবে ।
৯। মতবিনিময় করুনঃ কাস্টমারের সাথে আপনার সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরো বেশী এক্টিভ হোন, আপনার প্রোডাক্ট, সার্ভিস কিংবা কন্টেন্ট সম্পর্কে কাস্টমারে প্রতিটা কমেন্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং যথাযত প্রতিউত্তর দিন। প্রতিটি ম্যাসেজের জবাব দিন যদিও এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার কিন্তু এই কাজ গুলিই ব্যাপকভাবে আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
১৮টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
এভাবে এগিয়ে যাক ই-কমার্স
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বাহ্ আপনার এই লেখার মাধ্যমে এই বিষয়টি সম্পর্কে বিশদ ধারণা পেলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করলেন। খুব ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
ইকবাল কবীর
আপনাকেও ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
ই-কমার্সের সম্যক ব্যাখ্যা সুন্দর ও সুচারিত উপস্থাপন করেছেন আপনি। আপনার লেখা পড়ে অনেক জানতে পারলাম।
শুভেচ্ছা অবিরত।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
ইকবাল ভাই। আপনার প্রতি ভালবাসা রইল
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সম সাময়িক প্রসঙ্গে বস্তুনিষ্ট এবং দরকারি লেখা। তবে আপনার লেখার এই বিশেষ দিকটার প্রতি সংশ্লিষ্টদের আরও মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে —- “বিশ্বাসযোগ্যতাঃ ইন্টারনেটে ভালো মার্কেটপ্লেসের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যাঙের ছাতার মত আনাচে কানাচে গজিয়ে উঠেছে ফেইক ই-কমার্স সাইট বা ফেইসবুক বিজনেস পেইজ। সফল ই-কমার্স উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে এইসব ফেইক পেইজের সাথে প্রতিযোগীতা করে প্রমাণ করতে হবে আপনি ফেইক নন। আপনার প্রতি মানুষের আস্থা অর্জন করে নিতে হবে সম্পূর্ন নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে। একবার মানুষের মনে বিশ্বাস স্থাপন করেই দেখুন, হাজার হাজার ফেইক পেইজের ভীরে মানুষ আপনাকে খুজে নিবে”।
ধন্যবাদ।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে। ই-কমার্স আমাদের দেশের জন্য একটা আলোড়ন ঘটাতে পারবে তরুন প্রজন্মকে এই বিষয়ে সঠিক গাইডলাইন দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে বেকার সমস্যার সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা কয়েকজন বন্ধুরা দেশীয় ই-কমার্স নিয়ে নানান রকম কার্যক্রম করে যাচ্ছি তরুন প্রজন্মকে সঠিক গাইডলাইন দেওয়ার জন্য। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আমরাও আশাবাদী। ধন্যবাদ।
ফয়জুল মহী
অন্যরকম চিন্তায় অনবদ্য প্রকাশ ।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকে। ই-কমার্স নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা বহু দিনের সেই ইচ্ছা থেকেই কিছু গাইডলাইন দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার ই কমার্সের ওয়েভ ঠিকানা দিবেন পড়ে দেখব
নিতাই বাবু
আপনার এই লেখাটি সময়োপযোগী এবং পরোপকারীও বটে। এই বিষয়ে যতটুকু ধারণা ছিল, আগের চেয়ে আপনার এই লেখা পড়ে আর কিছু ধারণা আগের ধারণার সাথে যোগ হলো।
আপনার জন্য শুভকামনা থাকলো।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ দাদা। এখন থেকে নিয়মিত কিছু ই-কমার্স শিক্ষামূলক আর্টিকেল লিখার চেষ্টা করবো। ই-কমার্স এর সঠিক ব্যবহার হাজার হাজার বেকার ছেলে মেয়েদের স্বাধীন কর্মসংস্থানের যোগান দিবে। কিন্তু পর্যাপ্ত গাইড লাইনের অভাবে অনেকেই শুরু করতে পারছে না।
নিতাই বাবু
ঠিক বলেছেন। আপনার মহৎ উদ্দেশ্যকে স্বাগত জানাচ্ছি। সাথে শুভকামনাও।
আরজু মুক্তা
ভালো একটা ধারণা পেলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ আপনাকেও।