শিক্ষিত হলেই সুশিক্ষিত হওয়া যায়না। সার্টিফিকেটদারী শিক্ষা শিক্ষিত করে আর সুশিক্ষা মানুষ বানায়।
পুঁজিবাদের ঘেরাটোপে পড়ে আমরা সার্টিফিকেটদারী শিক্ষা অর্জনের পথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত কিন্তু মানুষ হয়ে ওঠার প্রতি কারো মনযোগ নাই। ফলে শিক্ষিত হয়ে উঠলেও প্রজন্ম প্রজ্ঞাবান হচ্ছেনা। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সুশিক্ষিত জাতি গঠনে অমনোযোগিতায় এ পরিস্থিতিটা এখন সমাজে খুব বেশি প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। জ্ঞানহীন শিক্ষা কতোটা ভয়ংকর হতে পারে দিনেদিনে তা আরও স্পষ্ট হবে।
গত একদশকে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে টেনে তুলতে সরকারও সেদিকে অতিমাত্রায় মনোনিবেশ ঘটিয়েছে। শিক্ষিতের হার বাড়ানো দরকার কিন্তু সুশিক্ষিত হচ্ছে কিনা তা দেখার প্রয়োজনবোধ করেনি। ফলে ধীরগতিতে হলেও আমাদের মেরুদণ্ড এখন বলা যায় ভঙ্গুর পর্যায়ে। বলা হয়, শিক্ষাই (সুশিক্ষা) জাতির মেরুদণ্ড। আমাদের সে মেরুদণ্ড ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। আমরা সার্টিফিকেটদারী উচ্চশিক্ষিত নাগরিক পাচ্ছি কিন্তু ধীশক্তিসম্পন্ন নাগরিক পাচ্ছিনা। আমাদের উচ্চশিক্ষিত নাগরিকেরা ওজনদার কর্তব্য পালনের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দিকেদিকে ছড়িয়ে পড়ছেন ঠিক কিন্তু প্রায়শই তাদের কেউ কেউ দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মের কারণে পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছেন, সোস্যাল নেটওয়ার্কে তির্যক সমালোচনার শিকার হচ্ছেন অথচ তারা উচ্চশিক্ষিত। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন বিসিএস ক্যাডারের চাকুরে। এই পর্যায়ে যিনি আসবেন, ধরেই নেয়া হয় তিনি তেমন মানসম্মত একজন নাগরিক হবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা তেমনটা দেখতে পাচ্ছিনা।
মানসম্মত নাগরিক গঠনে যেমন শিক্ষাব্যবস্থার ভূমিকা থাকে, তেমনি অভিভাবকদেরও ভূমিকা থাকে। কিন্তু পুঁজিবাদের ঘেরাটোপ ঘর-বাহির সর্বত্রই ফাঁদ পেতেছে। ফলে অভিভাবক পর্যায়েও এখন সার্টিফিকেটদারী শিক্ষার প্রতি মনযোগ বেশি। ফলশ্রুতিতে সুশিক্ষিত নাগরিক থেকে সার্টিফিকেটদারী উচ্চশিক্ষিত নাগরিকের সংখ্যা রাষ্ট্রে এখন অনেক বেশি।
এখনকার এই সার্টিফিকেটদারী উচ্চশিক্ষিতদের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করলে দেখতে পাবেন, তাদের মাঝে জ্ঞানের এতোটাই অভাব যে কখনোকখনো তাদের দ্বারা যে একটি অনৈতিক কাজ ঘটে যাচ্ছে, এটাই তারা উপলব্ধি করতে পারেন না অথচ তারা নাকি উচ্চশিক্ষিত। সুশিক্ষার অভাবেই এমনটা ঘটছে। তারা বিসিএস ক্যাডারের অহমিকায় ভুলেই যাচ্ছেন তারা চাকুরে। রাষ্ট্রের নাগরিকদের সেবা দেয়াই তাদের কর্ম। কর্ম সম্পাদনে নিয়ন্ত্রণ করার দায় কাঁধে উঠলেও নাগরিকদের প্রতি জুলুম করার অধিকার তাদের দেয়া হয়নি।
মোদ্দা কথা, তারা শিক্ষিত হলেও মান অর্জন করতে পারেননি বলে মান নির্ণয় করার ক্ষমতাও অর্জন করতে পারেননি।
আফসোস, এনারাই আগামীতে জাতির পরিচালক হতে যাচ্ছেন।
★সার্টিফিকেটদারী শিক্ষা নয়, সুশিক্ষাই (জ্ঞান) মানুষের মান নির্ধারণ করে।
★ ব্রেকিং নিউজে দেখতে পাচ্ছি গতকালের আলোচিত বিসিএস ৩৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা কে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
১৬টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আমরা সাধারণ মানুষ শিক্ষা দেখি, ধনসম্পদ দেখি। মনুষ্যত্ব, বিবেক এসব দেখিনা। এটাই আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের বিবেক বুদ্ধি জাগ্রত হোক। ধন্যবাদ আপনাকে সমসাময়িক এমন বিষয়টি তুলে ধরার জন্য। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
মারজানা ফেরদৌস রুবা
পুঁজিবাদের প্রতিক্রিয়া।
সুপায়ন বড়ুয়া
সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করেনি।
দাম্ভিকতার উচিৎ জবাব।
ভাল থাকবেন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
পরে শুনেছি, উনারা নাকি নিজেই নিজেই লজ্জা পেয়ে কানে ধরে আর এমন করবেন না বলছিলেন, এজন্য এসিল্যান্ড বলছিলেন, দাঁড়ান আপনাদের ছবি তুলে রাখছি মনে রাখার জন্য।
এসময় পেছন থেকে কেউ একজন ছবি নিয়ে এটাকে বিরুপ উপস্থাপন করে।
সুপায়ন বড়ুয়া
দু:খজনক।
কে কখন কাকে বিপদে ফেলে
বুঝা বড় দায়।
শুভ কামনা।
ফয়জুল মহী
দেশে ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সঠিক সংখ্যা রাষ্ট এবং আল্লাহ জানে । তাই সাবধান থাকুন। ধর্য্য ধারণ করুণ পারলে আপনার পাশের অসহায়কে মানবতার হাত প্রসারিত করুণ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
একদম। সাবধানের বিকল্প নেই।
সুরাইয়া নার্গিস
ভালো পোষ্ট।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ভালো থাকবেন।
এস.জেড বাবু
আমরা পারিবারিক ভাবে সন্তানদের টার্গেট দিয়ে রাখি- মাল্টিপল লেভেল কোম্পানি প্রতিনিধির মতো।
এতো মার্ক লাগবে-
এটা হতে হবে।
দিনে চার পাঁচটা কোচিং সহ স্কুল / কলেজ- সময় কই মানবিকতা শিক্ষা দেয়ার। সন্তান যতটা সময় নিজের মতো করে নেয়, উড়িয়ে দেয় গেমস / মেসেঞ্জারে।
উনার উচিত সাঁজা হয়েছে, এদেশের প্রেক্ষাপটে এমন দৃষ্টান্ত সম্ভবত প্রথম দেখলাম। মনে থাকবে।
চমৎকার লিখেছেন
শুভকামনা আপনার জন্য।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এখন শিক্ষিত হলেও বেয়াদব থাকছে কারণ সুশিক্ষিত হচ্ছেনা।
আর এসিল্যান্ডের ব্যাপারে পরে শুনেছি, বয়স্ক উনারা নাকি নিজেই নিজেই লজ্জা পেয়ে কানে ধরে আর এমন করবেন না বলছিলেন, এজন্য এসিল্যান্ড বলছিলেন, দাঁড়ান আপনাদের ছবি তুলে রাখছি মনে রাখার জন্য।
এসময় পেছন থেকে কেউ একজন ছবি নিয়ে এটাকে বিরুপ উপস্থাপন করে।
এস.জেড বাবু
বিষয়টা জানা ছিলো না- জানলাম।
যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে সে মহিলার কোন দোষ ছিলো না।
ভালো থাকবেন।
হালিম নজরুল
আমার মনে পারিবারিক শিক্ষার দুর্বলতা ছিল।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
পারিবারই তো মানবশিশুর প্রথম পাঠাগার।
জিসান শা ইকরাম
এরা নিজেদেরকে প্রভু ভাবে আর জনগনকে চাকর।
এই এসি ল্যান্ডের উপর বিভাগিয় ব্যাস্থা নেয়া হচ্ছে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
সেটাই। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রায়জনের মধ্যেই এখন প্রভূত্বের প্রবণতা দেখা যায়।