পুত্র থেকে জাতির পিতা (সংকেত)

সৈকত দে ১৬ মার্চ ২০২০, সোমবার, ১১:০০:২৯অপরাহ্ন ইতিহাস ২১ মন্তব্য

গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ শেখ পরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন।

বাবা শেখ লুৎফর রহমান নাম রাখলেন খোকা। খোকার বয়স যত বাড়তে থাকে তার বন্ধুবান্ধব ও বাড়তে থাকে। গ্রামের সবার সাথে নিভিড় হয় খোকার সম্পর্ক।
১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যলয়ে শিক্ষাজীবন শুরু।

ছোট কাল থেকেই তিনি প্রতিবাদী ও পরোপকারী ছিলেন।

সাল ১৯৩৮ বঙ্গবন্ধু তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
১৬ জানুয়ারী অবিভক্ত বাংলার প্রধামন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল পরিদর্শনে এলে বঙ্গবন্ধুর অতি সাহসিকতার সঙ্গে যাবতীয় সমস্যা তুলে ধরেন।
১৯৩৯ সালে সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সভা করার দু:সাহসের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথম কারাবরণ করেন।
১৯৩৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি বেগম ফজিলাতুননেসার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৪৪ সালে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান করেন। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন।
১৯৪৬ সালের হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা রোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় কলকাতা ইসলামি কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহকারী নিযুক্ত হন। এই বছরই প্রদেশিক নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৪৭ সালে বঙ্গবন্ধু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। ৬ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় গণতান্ত্রিক যুব কর্মীদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।২৩ ফেব্রুয়ারী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন উর্দুকে পাকিস্থানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তার তৎক্ষনিক প্রতিবাদ করেন।২ মার্চ, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
১১ মার্চ, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে সাধারণ ধর্মঘট আহবানকালে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন।
১৫ মার্চ, বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তিপান। ১১ সেপ্টেম্বর, ফরিদপুরের কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য বঙ্গবন্ধু আবার গ্রেফতার হন।
১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারী, বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তিপান।
৩ মার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তাদের দাবী দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তার প্রতি সমর্থন জানান।২৯ মার্চ, আন্দোলনে যোগদেয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে অযৌক্তিক ভাবে জরিমানা করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তার প্রতি সমর্থন জানান।২৩ জুন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।২৭ জুলাই, বঙ্গবন্ধু জেল থেকে মুক্তিপান। মুক্তি পেয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে না গিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।
পূর্ব বাংলায় দুর্ভিক্ষ শুরু হলে খাদ্যের দাবীতে তিনি আন্দোলন শুরু করেন।
১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারী,এই আন্দোলনের কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন,১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও পরে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাবরণ করেন তিনি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাবার পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের এক বিশাল জনসভায় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমদ তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন।

সেদিন থেকে তিনি শেখ মুজিব বা নেতা-কর্মীদের মুজিব ভাই।

১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে তার দল নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েও পাকিস্তানিরা ক্ষমতায় বসতে দেন নি।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ, বাঙালি জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। এদিন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে অবতীর্ণ হবার আহ্বান জানান। এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন,

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’

এরই প্রেক্ষিতে মুক্তিকামী বাঙালি স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।
২৫ই মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন।
একটানা নয় মাস চলে যুদ্ধ। নয় মাসের যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন জাতির জনক। এরপর যুদ্ধবিধ্বস্ত ভঙ্গুর দেশকে পূনর্গঠনে তিনি মনোনিবেশ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও অন্যান্য আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি বার বার জেল খেটেছেন। ফাঁসির মঞ্চে নিয়েও তাকে মারতে পারেনি পাকিস্তানিরা। বাঙালি জাতি ও বিশ্ববাসীর চাপে কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তানিরা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশের সেনাবাহিনীর কিছু বিপদগামী সদস্য স্ব-পরিবারে বঙ্গবন্ধু কে হত্য করে,নির্লজ্জ অকৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পরিচয় দেন।

 

তথ্যসূত্র: অসমাপ্ত আত্মজীবনী, বঙ্গবন্ধু অনলাইন আর্কাইভ।

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ