বাদামী মেছো পেঁচা হল পেঁচা প্রজাতির Ketupa zeylonensis (কেটুপা জেলোনেন্সিস) গোত্রের একটি প্রজাতি। যা সাধারণত Strigidae নামে পরিচিত পরিবারের অংশ যা বেশীর ভাগ লোকালয়ে থাকে। মাঝে মাঝে এরা উপকুলেও বিচরন করে থাকে। বড় বড় উঁচু গাছে, জলাশয়ের ধারে বা পুকুর পাড়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে মাছ শিকারের জন্য। এরা মহাদেশীয় এশিয়া এবং কিছু উপকূলে দ্বীপগুলির উষ্ণ উর্বর এবং আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের প্রাণী। এরা পূর্ব চীন থেকে ফিলিস্তিন পর্যন্ত 7,000 কিমি (4,300 মাইল) এরও বেশি জায়গায় বিস্তৃত। এই প্রজাতিটি ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং এর সাথে সম্পর্কিত অঞ্চলে সর্বাধিক গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপনিবেশিক অংশ জুড়ে সমস্ত বছর বসবাসকারী। তার প্রধান পরিসরের পশ্চিমে এটি লেভান্ট (সম্ভবত বিলুপ্ত) এবং দক্ষিণ এশিয়া মাইনর (সম্প্রতি পুনরায় আবিষ্কৃত) পর্যন্ত বিচরন করে। বাদামী মেছো পেঁচাগুলির সাধারণ বাসস্থান বন এবং বনভূমি নদী, হ্রদ বা ধান ক্ষেতের সীমানা। এটি প্রধানত নীচুভূমি, খোলা বৃক্ষভূমি থেকে ঘন বন এবং গাছপালা ডালে শিকারের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অবস্থান করে। এরা ঘন বাঁশ বা অন্যান্য বড় শ্যাডো গাছের দাঁড়িয়ে থাকে। এদের গ্রামের উপকূলে এবং সমুদ্র উপকূল বরাবর খাল বরাবর জল জলাশয়ের বা পুকুড়ের কাছাকাছি পাওয়া যায়। এরা আমাদের দেশীয় বা আবাসিক পাখি।
এই প্রজাতি পেঁচা প্রজাতির মধ্যে একটি বৃহৎ পেঁচা। কিন্তু এটি অন্যান্য মৎসভোজী ঈগল পাখির মধ্যে আকারে মধ্যবর্তী হয়। এটির দৈর্ঘ্য ৪৮ থেকে ৬১ সেমি (১৯ থেকে ২৪ ইঞ্চি) এবং ১২৪ থেকে ১৪০ সেমি (৪৯ থেকে ৫৫ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। শরীরের ওজন উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, সাধারনত ১.১থেকে ২.৫ কেজি (২.৪ থেকে ৫.৫পাউন্ড) পর্যন্ত ওজন হয়। বৈচিত্রের কারনে কিছু কিছু সাবস্পেসি জুড়ে মাপের পরিসীমা হের ফের হতে পারে। এছাড়াও, পুরুষরা মেয়েদের তুলনায় কমপক্ষে কিছুটা বড়।এটির Tufts বিশিষ্ট কান আছে।তাদের tufts মাথার পাশে ঝুলন্ত এবং একটি scraggly চেহারা আছে। উপরের অংশগুলি কালো রঙের বাদামি এবং গাঢ় বাদামী রঙের। আন্ডারপার্টগুলি সাদা রঙের গাঢ় বাদামি ছিদ্র এবং সূক্ষ্ম বাদামী ব্যারিংয়ের সাথে সাদা রঙের। গলা সাদা। লিঙ্গ আকার ছাড়া চেহারার ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় না। এই প্রজাতি ২বছরের মধ্যে পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। পরে তারা প্রজনন করতে পারে। পা উলঙ্গ থাকে। পায়ে কোন পালক থাকে না। পায়ের আঙ্গুলে ধারালো শক্ত নখ থাকে। যার মাধ্যমে তারা মাছ শিকার করে ও শত্রুর আক্রমন থেকে নিজেদের রক্ষা করে।
Osprey বা মাছমুড়াল হচ্ছে ঈগল প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে দূর্ধর্ষ মাছ শিকারী একটি বাজ বা ঈগল পাখি। এরা যেমন মাছ ছাড়া অন্য কিছু খায় না তদ্রুপ এই মেছো পেঁচাও মাছ শিকারের জন্য অন্যান্য পেঁচার চেয়ে দুর্ধর্ষ। মেছো পেঁচা শুধু মাত্র মাছ শিকার করে নিজেদের আহারের ব্যাবস্থা করে থাকে। অন্য পেঁচা মাছ শিকার করে না। তবে পড়ে থাকা মৃত মাছ ভক্ষন করে থাকে। মেছো পেঁচার চরিত্র ও স্বভাব অনেকটাই মাছমুড়াল বা Osprey ঈগলের মত। এরা গাছের ডালে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে তাদের শিকারের জন্য। শিকার তাদের আয়ত্তের মধ্যে পেলে পায়ের নখ দ্বারা পানি থেকে তুলে নিয়ে আসে। পরে গাছের ডালে সেই মাছটির চোখ সর্বপ্রথম বের করে আনে। তারপর মনের সুখে ভক্ষন করে। এদের চোখের চাহুনীও ভয়ঙ্কর। তাদের দৃষ্টি থেকে কোন মাছ আড়াল হবার সুযোগ নেই বললেই চলে। এরা মাছমুড়াল বা Osprey পাখির মত গা ডুবিয়ে মাছ শিকার করে না। এরা শরীরে পানি লাগতে দেয় না। শুধু মাত্র শিকারটিকে দুই পায়ের নখ দিয়ে ধরে নিয়ে পানি থেকে তুলে আনতে পারে। এরা উড়া যেমন পছন্দ করে তদ্রুুপ হাঁটা হাটিও করে স্বাচ্ছ্যন্দ ভাবে। গাছের ডালে ডালে হাটি হাটি করতে দেখা যায়।
এই মেছো পেঁচা দিনের আলোতে দেখতে পায়। তাদের আহারের জন্য শিকারও দিনের বেলায় করে থাকে। কিন্তু অধিকাংশ পেঁচা দিনে কম দেখে। খাদ্য তালিকায় মাছ ছাড়াও সর্প, চিংড়ি, ইঁদুর, অন্যান্য পোকামাকড়, ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী (ব্যাট সহ) এবং মাঝে মাঝে জলজ পাখি রয়েছে। এরা দুইটি বা একটি ডিম দেয়। ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের হলে এরা বাচ্চা সহ উড়ে যায়।
আইউসিএন (IUCN) দ্বারা বাদামী মেছো পেঁচা হুমকিপ্রাপ্ত প্রজাতি হিসাবে বিবেচিত নয়। এরা ভারতের অনেক অংশে সহ আমাদের দেশেও মোটামুটি সাধারণ। যাইহোক, একটি বৃহত শিকারী পাখি হওয়ার কারণে, এটি খুব কমই জনসংখ্যার ঘনত্বের দিকে পাওয়া যায়।দৃশ্যত ভারতে দিওয়ালি উৎসবের সময়, হাজার হাজার মেছো পেঁচা মারা যায় শুধু মাত্র আঁতশবাজির কারনে।
Myth / মিথঃ
সত্য যুগে এক কৃপণ মহাজনের কাছে এক গরিব চাষীএসে সুদে টাকা ধার চায়। মহাজন কে নিমরাজি দেখে চাষী বলল, টাকা সে শোধ দেবেই। নগদ টাকা দিতে না পারলে গতর খেটে শোধ দেবে। নয়ত টাকার বদলে হয় ঝিকে, নয় ছেলের বউকে দেবে। এই প্রতিশ্রুতিতে মহাজন চাষীকে টাকা ধার দিল। তারপর অনেক দিন যায়, চাষী টাকা শোধ দিতে পারে না, আবার গতর খেটে কিংবা বউ বা ঝি তুলে দিয়েও ঋণ শোধ করে না, পালিয়ে বেড়ায়। একদিন শোনা গেলো চাষি মরে গেছে। কিন্তু কৃপণ মহাজন তার পওনার কথা ভুলে না। কিছুদিন পর মহাজন ও মারা গেলো। মরে গিয়ে সে হল একটা পেঁচা পাখি। পাখি হয়ে আজও রাতের বেলায় চাষির বাড়ি এসে ডাকেঃ বুউম বুউম …হুদ হুদ হুদ …ঝি দিবি না বউ দিবি ?
সবাইকে ধন্যবাদ। মনোযোগ ও সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্য।
মেছো পেঁচার ছবিটি বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের গন্ডগ্রাম থেকে তুলেছি।
১৮টি মন্তব্য
ইঞ্জা
দারুণ পরিচিতি তুলে ধরলেন, এই প্রজাতির প্যাঁচা আমি দেশে প্রথম দেখলাম, খুব ভালো লাগলো লেখাটি।
শামীম চৌধুরী
ইঞ্জা ভাই, আমার দীর্ঘ জীবনের বার্ডিং ফটোগ্রাফীতে আমি সেদিন মানে ২৬শে এপ্রিল এই মেছো পেঁচা প্রথম দেখলাম ও ছবি তুললাম। এত বড় পেঁচা যে হয় তার ধারনাই ছিলো না আমার।পেঁচা তো নয় মনে হচ্ছিল পালাস’স ফিশ ঈগলের বাচ্চা।
লেখাটি ভালো লাগার জন্য কৃতজ্ঞ।
ইঞ্জা
ভাই, আমি পাখি ভক্ত মানুষ, যখন পাখি সম্পর্কে পড়ি তখন খুটিয়েই পড়ি, আপনার লেখা পড়েই আশ্চর্য হয়েছিলাম এই পাখি আমাদের দেশে আছে শুনে, আপনি আরো বেশি বেশি পাখি নিয়ে লিখুন, খুব ভালো এগুচ্ছেন।
মেহেরী তাজ
লেখাটা একটু ভিন্নভাবে লেখা যায়। মানে আমরা পরীক্ষার খাতায় যেভাবে লিখে থাকি আরকি। যেমনঃ
বৈজ্ঞানিক নাম,
স্থানীয় নাম,
গঠন ও দেহের রং,
আকার ও আকৃতি,
বাসস্থান/বস্তৃতি,
খাদ্য+স্বভরং ও
বর্ণনা।
এভাবে লিখলে আমার মনে হয় পড়তে সুবিধা হবে।
যদিও আপনি এক্সপার্ট বলেই আমার মনে হচ্ছে। আশা করি মন্তব্য টাকে আলোচনা/ সমালোচনা হিসেবেই বিবেচনা করবেন।
আমার মনে হচ্ছে আরো কিছু স্থানীয় প্রাণী সম্পর্কে জানতে পারবো।এগুলো পড়তে ভালো লাগে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শামীম চৌধুরী
খুব সুন্দর উপদেশ দিয়েছেন আপু। আমি খুব খুশী হয়েছি। আসলে আমি ব্লগার হিসেবে একেবারেই নতুন। মানে এখনও ভ্রুনে আছি। আপনাদের মত অভিজ্ঞ ব্লগার আমার পাশে থাকলে অবশ্যই আমি ব্লগে সফলতা পাবো বলে আমার বিশ্বাস। পরবর্তীতে আপনার উপদেশ বা গাইড লাইন হিসেবে লিখবো আপু। ভালো থাকবেন ও পাশের জনকে ভালো রাখবেন। শুভ রাত্রি।
শুন্য শুন্যালয়
প্যাঁচাটিকে দেখতে তো প্রায় একটা বন্য পশুর মতো লাগছে, আকারের কারনে। বেশ লাগলো পড়তে।
কতো কতো পাখি যে আছে আমাদের দেশে, তার ধারনা খুব কম মানুষেরই আছে।
আইইউসিএন এই প্যাঁচাকে হুমকিপ্রাপ্তের তালিকায় কেন রেখেছে? বিলুপ্ত হচ্ছে বলে?
অজানা পাখিগুলোকে এভাবে সামনে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা ভাইয়া।
শামীম চৌধুরী
আইউসিএন (IUCN) দ্বারা বাদামী মেছো পেঁচা হুমকিপ্রাপ্ত প্রজাতি হিসাবে বিবেচিত নয়। এটাতো রেড জোনে নেই। এটা এখনও অধিক হারে দেশে দেখা মেলে। তবে ঘনবসতিতে এরা আসে না। বনে বা গ্রামের উচু গাছে এদের বিচরন সর্বত্র।
শুন্য শুন্যালয়
দুঃখিত, আমি নয় শব্দ ওভারলুক করে গিয়েছিলাম। এবার বুঝতে পেরেছি। অনেক। ধন্যবাদ আপনাকে।
তৌহিদ
এতদিন প্যাঁচা শুধু দেখেছি আর আজ কতকিছু জানলাম আপনার লেখার সুবাদে। ধন্যবাদ জানবেন ভাই।
শামীম চৌধুরী
আপনার জন্য রইলো শুভ কামনা ভাই। ভালো থাকবেন।
🎖প্রহেলিকা🎖
সোনেলা একজন প্রকৃত পাখিপ্রেমি পেলো। আপনার পোস্টগুলো যেমন পরিশ্রমী তেমনি তথ্যবহুল। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমরা সকলেই কমবেশি পাখিকে ভালবাসি, কিন্তু তার সম্পর্কে জানি খুব অল্প। আপনার পোস্ট থেকে শেখার, জানার অনেক কিছুই আছে।
ধন্যবাদ এমন পোস্টের জন্য।
শামীম চৌধুরী
আমি আমার সর্বাত্বক দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাবো আমার তোলা সব পাখিগুলির বর্ণনা ও ছবি দিয়ে সোনেলার উঠানকে অলংকৃত করতে। শুধু আপনাদের সহযোগিতা ও ভালোবাসা চাই।
রাফি আরাফাত
অনেক কিছু জানলাম। আরও জানতে চাই। আপনার অপেক্ষায় থাকবো.
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাই সাথে থাক জন্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি এমন প্যাঁচা দেখিনি কখনো। আমাদের দেশে যে কতো ধরণের পাখী আছে। চা’ বাগানে থাকতে পাখীর নাম তো শিখতাম ওই পাখী দেখে দেখেই। এখন বাগানেও পাখী নেই। বন-জঙ্গল সব উজাড়।
শামীম চৌধুরী
সত্য কথা বলেছেন নীলা আপু। বন জঙ্গলে গাছ পালা কেটে পরিস্কার করার জন্য পাখিদের আবাস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতিতে এদের টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পরিবেশ রক্ষা করতে পারলেই পাখিরা বাঁচবে।
নাহ আপু চা বাগানে পাওয়া যাবে না। জলাধার বা পুকুড় বা বিলের ধারে উঁচু গাছে থাকে মাছ শিকারের জন্য।
নীলাঞ্জনা নীলা
এই পাখীর কথা বলছি না। আমি এমন প্যাঁচা কখনওই দেখিনি।
শামীম চৌধুরী
নীলা আপু এত বছরের ফটোগ্রাফী জীবনে আমি নিজেই সেদিন বগুড়াতে প্রথম পেলাম।