মাত্র সকাল ৭টা, এর মাঝেই হট্টগোল শুরু হয়ে গিয়েছে। এ পাড়া এমনিতেই ঘুমায়না, দিনে হৈ হুল্লোড় আর রাতে নিষিদ্ধ আনন্দের শব্দ। কিন্তু এতটা সকালে কখনোই এ পাড়া জাগেনা, রাত জেগে আনন্দ নিতে আসা খদ্দেররাও একটু ঘুমায়, আর যারা ধরি মাছ না ছুই পানি তারা তো ভোরের আলো ফোটার আগেই বের হয়। তবে আজ এই সময়ে এত শব্দ কিসের?
আরেকটা হট্টগোল শুরু হয় বারোটা বা একটার দিকে, মদ্যপেরা জেগে উঠে, একসাথে দলবেধে যায়, আসলে তাদের দিয়ে হট্টগোল কম ই হত, যে যেখানে ইচ্ছে শুয়তে থাকত, ঘুম ভেঙ্গে গেলে কেউ চলে যেত, কেউ আবার খেয়ে পড়ে থাকত। বেশ্যার নতুন সর্দারনী আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে নিয়ম! দুপুর থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত মদ খাও্যা যাবে, কিন্তু অবস্থান বেশিক্ষণ করা যাবেনা, এদের উতপাতে খদ্দের আসা কমে গিয়েছে, আর এত মাতাল হয়ে ঘুমায় যে ডেকে উঠানো সম্ভব না, তাই পাইপ দিয়ে পানি মারা হয়। তখন ই ছোটো একটা আওয়াজ উঠে। তাছাড়া সবসময় মিষ্টি হাসির আওয়াজ আর আহ উহ শব্দ।
কি হলো মা বলে যে জানতে চাইবে সে উপায় ও নেই তার। আগে তারা এক ঘরেই থাকত, একটা পর্দার আড়ালে, মায়ের সাথে প্রায় রাতেই থাকত খদ্দেরা, সে জানত কি হচ্ছে। কি করে তাদের পেট চালাতে হয়, কিন্তু মায়ের সতর্কতা থাকায় তা এক বিন্দু বুঝতে পারতোনা অমলেশ শুধু মাঝে মাঝে খদ্দেরের শীৎকার ছাড়া। মাস দুয়েক হলো অমলেশ আলাদা একটা ঘর পেয়েছে। পেতোনা, যদি অঘটন টা না ঘটত। রমা রায়, জাতে ব্রাম্মণ ছিলো কিন্তু কোনো এক কারণে জাতচ্যুত হয়ে আশ্রয় হয় তার গাঙ্গিনারপাড় বেশ্যাপল্লিতে। মেয়েটাকে ভালোবাসত অমলেশ। ঘন্টার পর ঘন্টা দুজন হাত ধরে বসে থেকেছে, কিন্তু কখনোই অন্য কিছু হয়নি তাদের। কোনো খদ্দের এলে নীরবে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাবার সময়েও অমলেশের খারাপ লাগেনি। সে তাকে সত্যি ভালোবাসত, সে জানত প্রেমে খারাপ লাগা নেই, একদিন তাদের টাকা হবে, রমা আর অমলেশের সুখের ঘর হবে। অমলেশের এই জানায় ভুল ছিলো, একদিন হুট করে পালিয়ে যায় মেয়েটা, বেশ কয়েকদিন ধরেই বলছিলো আমি চলে যাবো, তুমি কোনোদিন সিম চেঞ্জ করনা, খুঁজে নিবো আমি। অমলেশ সেটা বিশ্বাস করেনি। অথচ মেয়েটা চলেই গেলো। হাই তুলতে তুলতে ঘর থেকে বের হয় অমলেশ, সর্দারনীর রুমের সামনে জটলা। গতকাল রাতে কেউ সর্দারনীর ঘর থেকে সোনার নেকলেস নিয়ে এসেছে, কে এনেছে তাকে চায় এই মহিলা, গত কয়েকবছর ধরেই চলছে সর্দারনী পরিবর্তন। গত ৪ বছরে চার জন এসেছে, ইনি ৫ম। আগের সবাই বুড়া হলেও এই সর্দারনী একদম ই যোয়ান, বয়স ২৭ কি ৩০ হবে। ১৭ বছর বয়সী অমলেশ এই সর্দারনীর মাঝে রমা কে দেখতে পায়, কথা বলার কি অদ্ভুত মিল এদের।
এর মাঝেই লক্ষ্য করে অমলেশ তার মা সীতা কে টেনে নিয়ে আসা হচ্ছে। জাতে হিন্দু বলে যতটা না অবজ্ঞিত অমলেশরা তার থেকে বেশি অবজ্ঞিত শুধু তাদের খদ্দের বেশি বলে। মাথায় সিদুর দেয় বলেই নাকি তাদের খদ্দের বেশি। এটা নাকি ব্যাবসার কুটচাল, তাই তার মায়ের সিধুর পড়া যাবেনা, এ নিয়ে তার মাও সিদ্ধান্তে অটল, তিনি সিধুর পরা ছাড়বেন না, এ তে যা হয় হোক। এটা অনেকটা বনে থেকে বাঘের সাথে যুদ্ধের মত। কিন্তু আজ এ নিয়ে লেগেছে বলে মনে হয়না, কিছুক্ষন পরেই অপরাধ জানতে পারল অমলেশ। তার মা নাকি গতকাল সর্দারনীর ঘরে গিয়েছিলো আর কেউ যায়নি, তাহলে তার মা মিয়েছে। ঘরে গেলেও অন্যের জিনিস চুরি করার মত মানুষ নয় সীতা রায়, এটা জানে অমলেশ। সে লোকমুখে অনেক শুনেছে, তার মা যদি অন্যদের মত খদ্দের কে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে পকেট হাতরে টাকা রেখে দিত, তাহলে তাদের অনেক টাকা হত, সেসব তো পড়ে তার মা নাকি কখনো খদ্দেরের কাছ থেকে বখশিশ ও নেয়না, আর এ জন্য তিনি ২ টাকার নোট সবসময় কাছে রাখেন। ৮ টাকার কাজ শেষ করে অনেকে দুই টাকা রেখে দিলেও তার মা কখনোই রাখেন না। এখানে অমলেশের কথা বলার ও ব্যবস্থা নেই, মেয়ে সন্তান হলে পেশায় নাম লেখানো আর ছেলে হলে হয় বেশ্যালয়ের বাইরে পাঠাতে হবে না হলে মদ মাগি জুয়া যে কোনো একটার দালালি করতে হবে। উভয়ের জন্য বয়সসীমা ১৫। কিন্তু অমলেশ এসবের সাথে না জড়িয়ে আজো আছে এখানে, বর্তমান বয়স ১৯।নতুন সর্দারনী কি করবেন তা ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা, তার মায়ের নেকলেসের ব্যাপারে যতটা ভীত নয় অমলেশ তার থেকে বেশী ভীত তার থাকা না থাকা নিয়ে, মা সনাক্ত না হলে হয়ত বেঁচে যাবে অমলেশ, আর সনাক্ত হলে তার মা থেকে গেলেও তার আর থাকা হবেনা। মাথায় চিন্তা জাগে অমলেশের। তাই বিচার না দেখেই সে দোকানের পথে পা বাড়ায়।
২২টি মন্তব্য
আগুন রঙের শিমুল
😮
চলুক
হৃদয়ের স্পন্দন
চলবে -{@ \|/
নীলাঞ্জনা নীলা
দেখি পরের পর্বে কি হয়!
আগুন রঙের শিমুল
আমি কিন্ত জমাট গল্পের ঘ্রাণ পাচ্ছি
নীলাঞ্জনা নীলা
কি রকম শুনি!
আগুন রঙের শিমুল
এইঘাটে এসেই জগতের সকল মত পথ এক হয়ে যায়, অদ্ভূত এক সাম্যাবস্থা 🙂 দাড়ি কনুইয়ের গুতোয় টিকিকে সরিয়ে লাইনের আগে দাড়াতে চায়, ভান্তের ভুড়িতে হাত বুলিয়ে দিয়ে পবিত্র জল বলে আমারে আগে যাইতে দে …. এইখানে অন্ধকার থেকে উঠে আসে বিষাদের ঘ্রাণ, সেই ঘ্রাণ পুড়িয়ে অনিঃশেষ গল্প চলতেই থাকে 🙂
হৃদয়ের স্পন্দন
কি বলবো বুঝতে পারছিনা! তবে হ্যা চলতেই থাকে স্বীকার করছি
নীলাঞ্জনা নীলা
আগুন রঙের শিমুল খুব সুন্দর বলেছেন।
হৃদয়ের স্পন্দন
আজ দেখা যাবে মনে হয়! ধন্যবাদ আপু
নীলাঞ্জনা নীলা
আচ্ছা অপেক্ষায় থাকলাম হৃদয়ের স্পন্দন।
হৃদয়ের স্পন্দন
আজ দিয়েছি। নেট খুব ঝামেলা ছিলো বলেই দেয়া হয়নি। 🙁
নীহারিকা
অন্যরকম এক জীবন।
দেখা যাক কি হয়।
হৃদয়ের স্পন্দন
দেখা যাক, আজ বোধ হয় পরবর্তী পর্বে দেখা দেবে
মোঃ মজিবর রহমান
ঘটনায় কি আসে দেখি।
হৃদয়ের স্পন্দন
দেখেন, খারাপ ভালো বলিয়েন।
মোঃ মজিবর রহমান
এটা জীবন আর জিবনে এরকম ঘটে এটাই জীবন
হৃদয়ের স্পন্দন
ঠিক বলেছেন, এটাই জীবন
-{@
অনিকেত নন্দিনী
ইয়েএএএএএএএ!
তোমারে পাইছি। কাল (নাকি পরশু?) তোমার ব্লগে লেখার পোস্ট দেখে ভাবছিলাম কোন সে ব্লগ যেখানে তুমি নিয়মিত হবে। আজ ব্লগে ঢুকেই দেখি প্রথম পাতায় তোমার লেখা। 😀
ইয়ে মানে, এই গল্পের পুরাটা আমি পড়েছিলাম তা এইখানে আর নাই বলি। ব্যস্ততার কারণে পুরোটা খুঁজে খুঁজে কপি করে গুগল কিপে রেখে পড়েছি সেইটাও কিন্তু কাউকে বলবোনা, ঠিক আছে? 😀
নতুন করে সোনেলায় স্বাগতম রে ভাই। 😀
হৃদয়ের স্পন্দন
এবার আর ভুল ধরায়া দেন নাই 🙁 একবার ভেবেছিলাম সামুতে যাবো, কিন্তু মন বলল পাগল, ভাই বোন যেখানে আছে সেখানেই যা। আমি ও আরেকবার ধন্যবাদ দেই, স্বাগতম করার জন্য :p
প্রহেলিকা
এই লেখাটির শেষ পর্বটি পড়েছিলাম। ব্লগের সুবাদে প্রথম পর্বটি পড়লাম। পরের পর্ব আসুক। শেষ করে মতামত জানাব।
হৃদয়ের স্পন্দন
প্রিয় কোনো মানুষ যখন একটি সামান্য লেখায় মতামত জানাতে চায়, তার থেকে আনন্দ আর কি বা আছে! ধন্যবাদ ভাই। সেই আগের মতই ভুলে ভরা লেখায় সংশোধনের আমন্ত্রণ।
সঞ্জয় কুমার
অনেকদিন পর সোনেলায় এলেন । নিয়মিত লিখুন ।
পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম