একদিন হাসির দিন

খসড়া ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, মঙ্গলবার, ০৫:৫৯:৪৬অপরাহ্ন বিবিধ ৩২ মন্তব্য

আমাদের পরিবারটা বেশ বড়। আমরা প্রতি বছর একবার বাড়িতে যাই সবাই মিলে। উদ্দেশ্য পরিবারের প্রতিটি সদস্য বছরে একবার আন্তত একত্রিত হওয়া । আমরা রাতের ট্রেনে করে সবাই মিলে ঢাকা থেকে এলাম। এটা একটা মজার যাত্রা। এবার আমাদের সাথে এসেছে আমার মেঝবোনের ছেলে ও তার বউ বাচ্চা, যে চাকুরি সূত্রে সৌদীআরবে থাকে । সে অনেক দিন পর তার নানা বাড়ীতে এল বেড়াতে। বড়ভাই এর ছেলে যে থাকে আমেকিরাতে সে আর ওর ছোট বোন এ অস্ট্রেলীয়াতে থাকে, অনেক দিন পর এল। ওরা আসাতে আমাদের এবারের বাড়িতে অবস্থানটা বেশ জাঁকজমক পুর্ণ। চোখে পরার মতো। আমারা বাড়িতে গেলে এম্নিতেই সমস্ত গ্রামে সাড়া পরে যায়।
আমাদের এখানে কখনও চুরি ডাকাতির কথা শোনা যায়নি। আর আমাদের বাড়িতে তো প্রশ্নোই উঠে না। আমাদের বাড়ি মোটামুটি খোলাই থাকে দিন রাত। আমরা আসাতে গ্রাম শুধু কেন, আশে পাশের গ্রাম থেকেও অনেকে আসছে যাচ্ছে। এত মানুষ এসছে যে কে কখন আসছে আর কে কখন যাচ্ছে তার ঠিক নেই।আমরা এমনিতেই আড্ডাবাজ তার উপরে এতগুলি প্রিয়জন একসাথে হও্য়া মানে, যার কোন অর্থ নেই কিন্তু মূল্য অনেক।

সবাই মিলে হইচই করা, এই ক্ষেত থেকে পটল তুলা, সেই পটলের জাঙীর নিচে শেলীপা ছোট মানুষের মত ঢুকে হামাগুড়ি দিয়ে পটল তুলতে যেয়ে সত্যি কারের পটল তোলার দশা, এর ক্ষেতে ক্ষিরা, ওর ভূমির বেগুন, তার জমির শাক, কে মালিক? কে খোঁজ নেয়। বাচ্চারা মুরগীর বাচ্চা ধরছে, হাঁসের বাচ্চা কোলে নিয়ে ঘুরছে,কবুতর ধরছে, এর হাঁস নিয়ে এসে বলছে পিকনিক করবো, ওর ছাগলের বাচ্চা ঢাকা নিয়ে যাব। পুকুরগুলি ক্লান্তিহীন সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে, মাছ তো দিচ্ছেই সেই সাথে এত্ত মানুষের দাপাদাপি। এটা ওদের দাদা বাড়ি ওদের অবারিত দ্বার। এখানে কেউ ওদের বাধা দেবার নেই। আমরা মোটামুটি যে কয়দিন থাকি গ্রামে ত্রাহী ত্রাহী দশা শুরু হয়ে যায়। আসার সময় সব ক্ষতিপূরন করে দিয়ে আসা হয়, কারন তারা তো আমাদের মত স্বচ্ছল নয়। যারা অবস্থাপন্ন তাদের কথা আলাদা ,তারা আরও বেঁধে ছেদে দেয়। সারাদিনের ও রাতের এই সব হুটোপূটির ফল হল এর গা চুলকাচ্ছে এর কোমরে ব্যাথা, সে খোঁড়াচ্ছে।
রাতে শুতে শুতে প্রায়ই দুইটা তিনটা বেজে যায়। মাঝে মাঝে ফজরের আজান পড়ে যায়, তখন হায় হায় করে বিছানার দিকে দৌড়। বিছানায় শুয়েও এঘর ওঘর থেকে এর ওর সাথে টীক্কা টিপ্পনি করতে করতে কখন যে কে ঘুমায় তার কোন ঠিক নেই। শোবার ব্যাপারে আর কি বলব? যে যেখানে পারছে শুচ্ছে।

আমাদের গ্রামে কিন্তু ইলেক্ট্রিসিটি নেই। আমার শেলীপার বরের নাম জামান। আর বড় ভাইয়ে অস্ট্রেলিয়ান জামাইএর নামও জামান। যাই হোক একজন কে আমরা দুলাভাই বলি আর একজন তো জামাই। কাকে দুলাভাই আর কাকে জামাই নিশ্চই বুঝতে পারছেন।

আমি আমার বাচ্চাদের পাশে শুয়ে সবার গল্পে আংশগ্রহন করছি। সবাই বাড়ীর ভিতরে উঠানে গোল হয়ে বসে গল্প করছে, গল্পের বিষয় অবশ্যই সবার ছেলেবেলার পাকামি, বোকামি। আর হাসা হাসি করছে। সবাই সবার পিছনে লেগে রয়েছে। কে কবে কি করেছে, না করেছ, এই সব নিয়েই ভাই বোনদের খুনটুসি । ভাইবোনদের কারো কারো সাথে বছরে হয়তো একবারই দেখা হয়। এটাই সবচেয়ে আনন্দের ব্যপার । একে একে ধীরে ধীরে সবাই শুতে চলে যাচ্ছে । যে ঘুমাবার সে ঘুমাবে আর যে আড্ডা মারার সে বিছানা থেকেই চিৎকার করছে।

শেলী আপার বর হোচ্ছেন জামান দুলাভাই। দাদার স্ত্রীকে বড়ভাবী বলি। বড়ভাবী শেলী আপাকে আমাদের ডানপাশের ঘরটা দেখিয়ে বলল “জায়গাতো নাই, এই রুমে মামুন আর তোর দাদা শুয়েছে, তুই জামানের পাশে শুয়ে পড় যা। জামান ওই ঘরে আছে।" শেলীপাকে আমাদের ঘরের বাম দিকের ঘরে যেতে বলায় আমি ক্ষিণকন্ঠে বললাম “কে বলল জামান দুলাভাই ওই ঘরে ?!”
ভাবী বলল “আমি তো নিজে দেখে এলাম। হারিকেন নিয়ে নিজের চোখে !!” লাবনীও বললো --"ফুপু ফুপার পাশে জায়গা আছে, ছোটকাকা আসার আগেই দখল কর।" এখানে আর কিছু বলা যায় না। যার স্বামী সেই ভাল চিনবে আমি কেন তর্ক করি। আমি তো খালি শুনেছি। দেখিনি! তবে আমার মনে হল, আমি যেন শুনলাম যে দাদা বলছে জামাইকে “তুমি ফ্রী হয়ে ঐ ঘরে থাক, আমরা এদিকে ব্যাবস্থা করছি, যদি যায়গা না হয় তখন না হয় লাবনী বাচ্চাদের নিয়ে তোমার ঘরে যাবে।" আমার কথা বলার দরকার কি, একে মহিলা মহলে ঢুকেছি যদি বেড় করে দেয়।?
শেলী আপা তো চললেন অন্ধকারে তার বর জামানের কাছে শুতে। বড়ভাবী এলেন আমার বিছানায়,বললেন-"তুই মরতে বচ্চাদের পাশে কেন?" এতবছর বিয়ে হয়েও আলাদা শুতে পারিস না"
বললাম পায়ে ধরি ভাবী মেয়েজামাই/ছেলেরবউ সবাই শুনবে, চুপ করে ওর পাশে শোও । অন্ধকার আমি কিছু দেখব না।" হঠাৎ শুনি পাশের ঘর থেকে মামুন হো হো করে হাসছে। সঙ্গে জামান ভাই শেলীআপা দাদা সবাই। ব্যাপার কি ভাই বাপার কি? খোঁজ নিয়ে জানলাম,ব্যাপার আর কি ?

শেলী আপা সব সময় জামান দুলাভাইএর সাথে ধমকানোর সুরে কথা বলে। (এই অভ্যাস শুরু হয়েছে নাতি নাতনীরা হবার পর থেকে।) সেই সুরে সে বিছানায় যেয়ে দুলাভইকে বলল “সরো তো। বাপের বাড়ি এসেও তোমার যন্ত্রনা। তুমি জানো যে আমি সামনের দিক ছারা শুই না । সরো সরো ।" বলে দুই হাত দিয়ে বেশ জোড়েই ঠেলা। সদ্য ঘুম ভেঙ্গে দুলাভাইএর তখন ছেড়াবেড়া অবস্থা। দুলাভাই আর একবার ধাক্কা খেয়ে ধাতস্থ হলেন এবং বিন্দু মাত্র দেরী না করে বলে উঠলেন “ ফুপু আমি এখনও ঘুমাই নি। আমি যাচ্ছি, আমি যাচ্ছি।" আর যায় কোথায়? মামুন আর জামান দুলাভাই এই ঘর থেকে হা হা হা করে হেসে উঠল। ওই ঘরে দাদাও হাসতে হাসতে হেচকি তুলছে। আর শেলীপা হি হি হি করে হিক্কা তুলতে তুলতে বলছে “হায় হায় ছিঃছিঃ, লাবনী তুই মানুষ, ছিঃছিঃ জামাই এটা ? ভাবী তোমার আক্কেলের বলিহারি,।" জামাই সেই যে ঘর ছাড়লো, কোথায় যে গেল? পরে শুনেছি শালাদের সাথে ছিল।
আর কি সারা রাত ঘুম হয়। হা হা হি হি করতে করতে রাত ভোর হয়ে গেল। আজান পরল । সবাই নামাজে গেল। চা চলে এল। এভাবেই একটা রাত গেল।
কাল বলব দ্বিতীয় রাতের গল্প

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ