রাজনীতির হালচাল

আজিজুল ইসলাম ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪, সোমবার, ০৯:৪৯:৫৩অপরাহ্ন বিবিধ ১৬ মন্তব্য


দেশ-সমাজ নিয়ে যারা গভীরভাবে ভাবেন, দিন দিন তারা অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়ছেন। কারন দেশে অন্যায়-অত্যাচার-অবিচার অত্যন্ত বেড়ে গেছে এবং এগুলির বিরুদ্ধে কারো কোন ভুমিকা নাই। নাই কোন আন্দোলন, নাই কোন প্রতিবাদ, কিছুই নাই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, মানুষ ধরেই নিয়েছে এভাবেই চলবে দেশ। এদেশে ক্ষমতার পালাবদল হবে, কিন্তু তাতে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সুশাসন আসবেনা। কোন সময়ই কোন সরকারী দল এদেশে গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠা তো দুরের কথা, সে উদ্যোগও গ্রহন করবেনা কখনো। সরকারী দল সবসময় নিজ দলের লোকজনকে পালবে এদেশে, সোনার ছেলে, সোনার সন্তান মনে করে তাদের শত-হাজারো-লাখো অন্যায় নীরবে সহ্য করে যাবে, তাদের অপকর্মের সাজা প্রদানের কোন ব্যবস্থা নেবেনা। কারন এরাই তো তাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করবে, বিশেষতঃ বিপদের অর্থাৎ বিরোধী দলের আন্দোলনের সময় এবং নিবার্চনের সময়।

কিন্তু রাজনীতি তো জণসেবা, জনগণের সেবা করাই তো রাজনীতির উদ্দেশ্য। রাজনীতিবিদরা জনগণের সেবা করেই তো সমাজে স্মরনীয়-বরনীয় হয়েছেন যুগে যুগে। আগে আমাদের পূবর্পুরুষরা সহনশীলতা, সহিষ্ণুতা নিয়ে জনগণের সেবা করে গেছেন। আর আজ  ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে গেছেন আমাদের রাজনীতিবিদরা। তারা খুন পযর্ন্ত করছেন শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় টিকে থেকে অবৈধভাবে অর্থবিত্ত লুটপাট করার জন্য। আমাদের রাজনীতিবিদরাই রাজনীতিকে এরকম অবস্থায় নিয়ে এসেছেন।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলই উভয়কে নিশ্চিহ্ন করার এক ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছে। এতটুকু ছাড় দিতে নারাজ কেউ কাউকে। জাতির জনকের পঁচাত্তরের পরিবারসহ নৃশংস জঘন্যতম হত্যাকান্ডের সাথে জিয়াউর রহমানের মৌন-সংশ্লিষ্টতা এবং ২০০৪-এর একুশে আগষ্টের আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনাসহ পুরো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যাকান্ডের জঘন্যতম চেষ্টা, তারো কিছু আগে-পরে আহসানুল্লাহ মাষ্টার, শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ড ইত্যাদি ঘটনাপ্রবাহ বিএনপি-রাজনীতির জঘন্যতম দিক ইঙ্গিত করে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের, বিশেষতঃ আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মনে স্বাভাবিকভাবেই এসমস্ত ঘটনা গভীরভাবে রেখাপাত করে রয়েছে।

তাহলে! তাহলে কী এজন্যই তিনি ক্ষমতা ছাড়ছেননা অথবা ক্ষমতা ছাড়তে যাতে না হয়, সেই চেষ্টা-ই করে যাচ্ছেন সবর্দা? এজন্যই তিনি খুন-গুমের ভীতিকর একটা পরিবেশ জিইয়ে রেখেছেন কী? এজন্যই নিজ দলের লোকদের তিনি এতো আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে তার বিপক্ষে না যায় কেউ কোনদিন, বরং তার লাঠিয়াল হয়ে কাজ করে সবসময়! বিএনপিও একই কাজ করেছিল তাদের বিগত দু’টি পর্বের শাসনামলে। আজ আওয়ামী লীগ যা যা করছে, বিএনপিও তাদের আমলগুলিতে তা তা-ই করেছিল। বরং দেখা যায়, এক দলের শাসনামল শেষ হলে অন্যদলের পরবর্তী আমল আরো অন্যায়-অবিচার-দুর্নীতিতে ভরে যায় কয়েকগুন বেশী হয়ে। কিন্তু দলীয় লোকজন তা স্বীকার করেননা। তারা বলেন, আমাদের আমলে খারাপ কোন কাজই হচ্ছেনা, সব ষড়যন্ত্র।

ফলে নিবার্চনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলেও স্বৈরতন্ত্র-ই বিরাজ করছে দেশে সবসময়। এর ফলে নিজ দলীয় লোক ছাড়া সরকারের উপর কারো কোন আস্থা আর শ্রদ্ধা থাকছেনা। দেশ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে, দুর্নীতিতে, দুঃশাসনে ভরে ওঠছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও ভোগেন আস্থার সংকটে। তারা এদেশে বিনিয়োগ করতে আসেননা, দেশে বিদেশী বিনিয়োগ হয়না এবং বেকারত্বে ভরে ওঠে দেশ।

সমাধান কী? এবিষয়ে কথা বলার আগে আমাদের দেখতে হবে রাজনীতিবিদ বাছাইয়ের দিকটা। জাতীয় সংসদ নিবার্চন এলে প্রার্থী বাছাই হয়ে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কর্তৃক। জাতীয় সংসদ নিবার্চনে প্রার্থী বাছাইয়ের নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। আর তাই দলগুলি মূলতঃ কার প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশি, কার অর্থ-সম্পদ বেশি, সবোর্পরি কে নিবার্চনে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন, সে দিকটিই দেখে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির নীতি-নৈতিকতার মান দেখা হয়ে ওঠেনা। এটা বিরাট এক সমস্যা, আর এজন্যই মূলতঃ দেশের অবস্থা আজ এরকম। অথচ এক্ষেত্রে বাছাইটা যদি এরকম হোত যে, তৃণমূল হতে নিবার্চনের মাধ্যমে যে প্রার্থী কেন্দ্রে যাবেন, তিনিই সংসদ নিবার্চনে প্রার্থী হবেন, তবে দেশ অনেক ভাল সাংসদ পেতে পারত। তৃণমূল কর্তৃক ২ থেকে ৩ জনের একটি প্যানেল তৈরীও করে রাখা যায়, যাতে এই প্যানেলের বাইরে থেকে প্রার্থী দেওয়া না হয়।

বিচার-ব্যবস্থা হচ্ছে একটা দেশের আস্থা-ভরসার সবোর্চ্চ জায়গা। অসহায় মানুষ এখানে সুবিচার খোঁজেন। সুবিচার না পেলে মানুষ আরো অসহায় হয়ে পড়েন এবং প্রচন্ড হতাশা ভর করে তার মধ্যে। তাই বিচারিক কাযর্ক্রমে স্বচ্ছতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, বিচারকদের নিকট থেকে  রাজনীতিবিদরা, আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে, সরকারী দল যাতে রাজনৈতিকভাবে কোনরকম সুবিধা লাভ করতে না পারে, সেব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের এখানে কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দু’টি বড় দলই এরকম করেছেন এবং তা অব্যাহত আছে। সুশাসন নিশ্চিত করার স্বার্থেই এই অভ্যাস বন্দ্ব করা প্রয়োজন দৃঢ়ভাবে। সাবির্ক ন্যায়বিচারের স্বার্থে নিরপেক্ষ, সৎ, সর্বজন কর্তৃক শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিগনের সমন্বয়ে বিচারক, বিচারপতি নিয়োগের জন্য একটি প্যানেল গঠন করে উক্ত প্যানেলের মাধ্যমে এঁদের নিয়োগ দেওয়া উচিত। একইভাবে দেশের অন্যান্য সাংবিধানিক পদসমূহও, যেমন প্রধান নিবার্চন কমিশনার, দুদক-এর চেয়ারম্যান, কমিশনারগন, তথ্য কমিশনার নিবার্চনও এই কমিশনের মাধ্যমে হওয়া উচিত। কারন রাষ্ট্রকে এসমস্ত কমিশনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। রাষ্ট্রের কর্ণধারগন কর্তৃক এঁরা নিয়োগপ্রাপ্ত হলে এঁদের পক্ষে অনেক সময় স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ হয়ে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। গণবিরোধী কাযর্ক্রম বেড়ে যায় তখন দেশে। সাংবিধানিক পদগুলি সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীণ হয়ে পড়লে সরকার প্রচন্ড রকমের স্বৈরাচারে পরিণত হয়ে পড়ে। সংসদ নিবার্চনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তিকরন ঘটিয়ে বিচারিক প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন সরকারের চাহিদা মেটানো এর প্রকৃষ্ট উদাহরন হতে পারে। বড় দু’টি দলের মধ্যে রেশারেশি, দুরত্ব এর ফলে বেড়ে গেছে, যার সমাধান কীভাবে সম্ভব তা আজো কেউ বলতে পারেনা।

দুর্নীতি-দুঃশাসন আমাদের অগ্রগতিকে পিছনে টানছে প্রতিনিয়ত। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কৃষক খাদ্য ঘাটতি ঠেকিয়ে রেখেছেন। দেশের শ্রমিক এবং গার্মেন্টস শ্রমিকরা অমানুষিক পরিশ্রমের মাধ্যমে রপ্তানি আয়ে বিরাট ভুমিকা রেখে চলেছেন আর বিদেশের মাটিতে আমাদের শ্রমিকেরা অমানবিক পরিবেশে বাস করে প্রচন্ড শ্রম করে বৈদেশিক মুদ্রায় সমৃদ্ধ করে রেখেছেন এদেশকে। এঁরাই মূলত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটা ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। আর দুর্নীতি-দুঃশাসন ইঁদুরের মতো সেই অর্থনীতিকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে ছোবড়া করে ফেলছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে যে, দেশে দুর্নীতি নেই আর থাকলেও তা অতি সহনীয় পযার্য়ে রয়েছে। নাহলে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে কেন?

প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনা করে নিতে পারি আমরা। তার আগে জিডিপি (গ্রস ডোমেসটিক প্রোডাক্ট) সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। জিডিপি হচ্ছে একটা দেশের মোট দেশজ উৎপাদন অথবা মোট এক্সপেন্ডিচার (ব্যয় করার সামর্থের অর্থে)। মোট বেসরকারী আয়, মোট সরকারী ব্যয়, মোট বিনিয়োগ আর নীট রপ্তানীর পরিমান, এগুলোর যোগফল হচ্ছে জিডিপি। আর প্রবৃদ্ধি হচ্ছে জিডিপি বৃদ্ধির শতকরা হার। নির্দিষ্ট সময়ের, সেটা ত্রৈমাসিক হোক অথবা বাৎসরিক, জিডিপি বৃদ্ধির শতকরা হারই প্রবৃদ্ধি । প্রবৃদ্ধি হচ্ছে একটা দেশের অর্থনীতির সবলতা অথবা দুবর্লতার নির্দেশক। যে দেশের প্রবৃদ্ধির হার বেশি, সে দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য সবল। বিগত বছরের তূলনায় কত পারসেন্ট জিডিপি বাড়লো, তা-ই হচ্ছে প্রবৃদ্ধি। মোট কথা জিডিপি বাড়তে থাকলে প্রবৃদ্ধি বাড়ে।

এখন দেখা যেতে পারে, সরকারের ভাষ্যমতে প্রবৃদ্ধি তো বাড়ছে, তাহলে দুর্নীতি হচ্ছে কোথায়? আসলে আমাদের দেশে জিডিপিও বাড়ছে এবং সাথে দুর্নীতিও। জিডিপি এবং সাথে সাথে প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে এদেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ আর বিদেশে কষ্টকর শ্রমে নিয়োজিত শ্রমিকগন। এজন্য দুর্নীতি থাকা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি এক জায়গায় আটকে থাকছেনা অথবা নিম্নগামীও হচ্ছেনা। দুর্নীতি না থাকলে প্রবৃদ্ধি আমাদের অনেক বেড়ে যেত। কীভাবে, সেটা আলোচনা করা যেতে পারে।

১) দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কাযর্ক্রম আছে বলে এদেশে বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে অত্যন্ত কম। বিদেশি একজন ব্যবসায়ী এদেশে বিনিয়োগ করতে এসে আমলাতান্ত্রিকতার জালে জড়িয়ে পড়ে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ফিরে যান। আমলাতান্ত্রিকতার জাল পেরিয়ে ক্ষুদ্র যে অংশটা এদেশে বিনিয়োগ কাযর্ক্রম শুরু করেন তারাও শিকার হন চাঁদাবাজির, শিকার হন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের। ফলে পাততাড়ি গুটিয়ে ফিরে যেতে খুব বেশি আর দেরি করেননা তারাও। দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ না হওয়ার এসবই মূল কারন। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়ে পড়েছে অত্যন্ত সংকুচিত, অতি কষ্টে কোনরকমে জীবন-ধারন করছে মানুষ, ক্রয়ক্ষমতা অতি সীমিত এবং এজন্য এত বিশাল জনসংখ্যার দেশ হওয়া সত্ত্বেও এদেশে প্রবৃদ্ধি এতো কম।

২) দেশে অবকাঠামোর উন্নয়ন না হলে প্রত্যন্ত স্থানের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য কৃষক পাননা, ফলে তারা দরিদ্রই থেকে যান, আয়ের সক্ষমতা বাড়েনা তাঁদের। আমাদের দেশে দুর্নীতির কারনে অবকাঠামোর উন্নয়ন সেভাবে হয়না। যা-ও বা হয়, দুর্নীতি থাকার কারনে সেগুলো টেকসই হয়না, দুদিনেই নষ্ট হতে যায়। ফলে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের নায্যমূল্য না পেয়ে দরিদ্র-ই থেকে যান। পণ্য ক্রয়ের ক্ষমতা বাড়েনা তার। পক্ষান্তরে, দেশের অধিকাংশ মানুষের হাতের পরিবর্তে অল্প কিছু চরিত্রহীন মানুষের হাতে দুর্নীতির মাধ্যমে জমে উঠে অগাধ সম্পদ, যেগুলি দেশে ব্যবহৃত হয়না, বাইরে চলে যায়। এভাবে দেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে কমর্সংস্থান আর সম্পদ সৃষ্টি না হয়ে ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। ফলে অধিকাংশ মানুষের হাতে অর্থ-সম্পদ আসেনা। জিডিপি বাড়বে কীভাবে! আর প্রবৃদ্ধি?

(৩) একজন ইঞ্জিনিয়ার ২০/৫০ জন ঠিকাদারের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ দুই লাখ টাকা আয় করতে পারে; কিন্তু তার খরচ হয়না সে টাকা। খরচ হয় অর্ধ্বেকের্ও কম টাকা। বাকী টাকাটা সে সঞ্চয় করে অথবা আনপ্রোডাকটিভ খাতে ব্যয় করে। অথচ এই ঘুষটা না নিলে টাকাটা ঐ ২০/৫০ জন ঠিকাদারের হাতে থাকত, তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ত, অবকাঠামোর মান ভাল হতো, কৃষক তাতে উপকৃত হতো, তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়তো এবং এভাবে জিডিপি বৃদ্ধি পেত। একইভাবে অন্যান্য সার্ভিসেও যে ঘুষগুলি নেয়া হয়, তা না নিলে টাকাগুলি সারাদেশের মানুষের হাতেই থাকত এবং এভাবে জিডিপির সাথে সাথে প্রবৃদ্ধির হারও দিনকে দিন বাড়তেই থাকত।

এভাবেই ঘুষ আমাদের অথর্নীতিকে ইঁদুরের মত কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে, ভঙ্গুঁর করে দিচ্ছে, জিডিপি বাড়তে দিচ্ছেনা, প্রবৃদ্ধির হারকে টেনে ধরে রেখেছে। তাই ”দুর্নীতি নাই, তাই প্রবৃদ্ধি বাড়ছে”, সরকারী তরফের এই বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য।

আমাদের রাজনীতি শুদ্ধ করতে হলে দুর্নীতি-দু:শাসনের বিরুদ্ধে আমাদেরকে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে, এসমস্ত অন্যায়কারীকে প্রাপ্য শাস্তি দিতে হবে। এই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে, কোন হস্তক্ষেপ করা যাবেনা। বরং প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে, নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে কি-না, সরকারকে দেখভাল করতে হবে সেটা। আর রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণের মাঝে স্থান করে নিতে চায়, তবে সুবিধাভোগী, চামচা-জাতীয় লোকদের পরিবর্তে তৃণমূলের ভাষাকে মূল্য দিতে হবে, দিতেই হবে।

(হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, এজাতির জণক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান; তাঁর উপর শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হয় যে, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক এদেশ লুন্ঠন এবং এদেশবাসীর প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য তিনি আজীবন লড়াই করে গেছেন এবং অবশেষে একাত্তরের ৭ই মার্চ তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়ে গেছেন। মানুষ যাতে মানবিকতা দিয়ে পরিচালিত হয়, এটি-ই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। এই চেতনা থেকে আমরা বহুদুরে, বরং বলা যায় কোনদিনই এই চেতনার ধারে-কাছেও যেতে পারিনি আমরা। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস মৃত্যুবরনের জন্য মৌন-সম্মতির কারনে অভিযূক্ত জিয়াউর রহমান। এছাড়াও আরো অনেক খুনের আর খুনের চেষ্টার কারনে অভিযূক্ত বিএনপি। সম্প্রতি তারেক জিয়া কর্তৃক কিছু মন্তব্য করা হচ্ছে, যেটাতে কিন্তু বিএনপি মানুষের হৃদয় থেকে বিতাড়িতও হয়ে যাচ্ছে। তবুও এভাবে বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে না দেওয়াটা ঠিক হচ্ছেনা, যদিও সর্বান্তকরণে চাই, বিএনপি যেন ক্ষমতায় না আসে। সমাধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে এবং মাটির মানুষ হয়ে যেতে হবে, একেবারে সাদা মনের মানুষ, যাতে তিনি গণমানুষের একেবারে হৃদয়ে স্থায়ীভাবে স্থান করে নেন। ২য় এবং শেষ পর্বে আলোচনা করার ইচ্ছা রইলো।)

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ