মান্নার রাজনীতি

আজিজুল ইসলাম ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, সোমবার, ০৬:৩৭:৫৯অপরাহ্ন সমসাময়িক ৮ মন্তব্য

গতকাল রাতেই একাত্তর টিভির টকশোর মাধ্যমে জানা হয়েছিল মাহমুদুর রহমান মান্নার লাশের রাজনীতি সম্পর্কে। তারপর অনলাইন পত্রিকা আমাদের সময়.কম-এ শোনা গেল মান্নার সাথে বিএনপির সাদেক হোসেন খোকার অডিও সংলাপ। আশ্চর্য হয়ে যেতে হলো, কিছুটা সম্মান যাকে করতাম তার লাশের রাজনীতির কথা শুনে। অবাক বিস্ময়ে যখন মান্নার এই কথাটা কানে এলো যে, ”দুই তিনটা গেলে যাবে, কী আর করা যাবে”, মান্না সম্পর্কে একধরনের ঘৃণার উদ্রেগ হলো আমার মধ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করতে  দুই তিনটা লাশের কথা বলতে তিনি এমনটা বলেছেন।

খোকার সাথে টেলিফোন সংলাপে মান্না তার কাছে ঢাকা শহরে তিনি একটি মিছিল বের করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন এবং জনাব খোকার কাছে কমপক্ষে একহাজার লোক চান। এটাতে একটা প্রতিক্রিয়া হবে এবং সরকার টালমাটাল হয়ে পড়বে বলে জানান। তিনি  বিএনপির কন্ঠ পরিবর্তন করার কথা বলেন এবং বিএনপিকে কী বলতে হবে, তা-ও শিখিয়ে দেন এভাবে যে, ম্যাডামকে বলতে বলবেন পেট্রোলবোমা সরকারের কাজ, আমরা আন্দোলন করছি, কোন সহিংসতা করছিনা। সংলাপে খোকার কিছুটা হতাশা পরিলক্ষিত হয় এবং এর প্রেক্ষিতে মান্না তাকে বলেন, ভেঙ্গে পড়লে তো চলবেনা, আন্দোলন কোনমতে বন্দ্ব করা যাবেনা, এক মুহুর্তের জন্যও না। কারন তাতে সরকার সুযোগ পেয়ে যাবে এবং আন্দোলনে ভাটা পড়বে। হায়রে মান্না, এই অভিব্যক্তিটা-ই আমার মধ্যে শুধু রণিত হয়, হচ্ছে বার বার।

কিছুদিন থেকেই শোনা যেত, জনাব মান্না নাগরিক ঐক্য নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। আবার শোনা যেত, তিনি সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন আর তার নিজের মত আওয়ামী লীগ থেকে প্রত্যাখ্যাত অন্যান্য নেতা, যেমন সুলতান মো: মনসুর, মোস্তফা মহসীন মন্টু, জাসদের আসম আব্দুর রব, এঁদের সাথে মিলে রাজনীতির তৃতীয় একটি ধারা গড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে শোনা গেল তিনি দুর্নীতি বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে বসবেন। বসেছিলেন মাত্র দুই ঘন্টার জন্য। তারপর সব শেষ। মনে করতাম মান্নার মনে দেশের চলমান রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে একধরনের অশান্তি, ছটপটানি রয়েছে, যার পরিণতিতে তিনি এসমস্ত থেকে আসলে মুক্তির পথ খুঁজছেন। মানুষটার প্রতি একধরনের সহানুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল আমার। সেজন্য ভাবতাম তাকে আমার অভিপ্রায় জানাব। বলব, ”মান্না ভাই, এদেশে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে ভোটের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট আপনি কোনদিনই পাবেননা, এজন্য আপনাকে ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা পরিত্যাগ করতে হবে। আপনাকে আন্দোলন করতে হবে এবং করে যেতেই হবে। আন্দোলন করতে করতে আপনাকে জনগণ চিনবে, বুঝবে, আস্থায় নেবে। দুর্নীতি-দু:শাসন-অবিচার-অনাচারের এই দেশে গণমানুষ কেন আপনার সম্পর্কে এরকমটা ভাববেনা যে, আপনিও ওঁদেরই মত, আপনিও চান অবৈধ সুযোগ-সুবিধার ভাগিদার হতে, দুর্নীতি করতে, লুটপাট করতে। আপনি যে সেরকমটি নন, সেটা আপনাকে দেখাতে হবে এবং প্রমান করতে হবে। এর আগে আপনি এদেশ-মাটি-মাতৃকার জন্য সত্যিকার অর্থে কিছুই করতে পারবেননা।” কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি সেটা। ভবিষ্যতে হতো হয়ত, কিন্তু এখন অবশ্যই নয় তার স্বরুপ চিনে ফেলার পর।

দেশের ভাল যদি তিনি চাইতেন, তবে তিনি বিএনপিকে এই জঘন্যতম সন্ত্রাস অবিলম্বে থামাতে বলতে পারতেন, সরকারকে দেশে জরুরী অবস্থা জারী করতে বলতে পারতেন। আরো অনেককিছু করতে পারতেন। কিন্তু বিএনপিকে পেট্রোলবোমা মারা বন্দ্ব করার আহ্বান না জানিয়ে এই সহিংসতাকে আরো উস্কিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো, এ কেমন রাজনীতিবিদ তিনি? বলবেন তিনি যে, বিএনপির পক্ষে কি ৩০/৩৫ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়না এবং এখনো কী নেই? হয়ত আছে হয়ত নাই. কিন্তু একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের তারা কেন সমর্থণ করবে, কেন তাদের বিচারিক কার্যক্রমকে অস্বচ্ছতার দোহাই দিয়ে সবসময় বাধাগ্রস্থ করবে, কেন তাদের নিয়ে নীরিহ মানুষ পুড়িয়ে মারার জঘন্যতম খেলায় তারা মেতে উঠবে, কেন জনগণকে নিয়ে আন্দোলন তারা দানা বাধাতে পারবেনা, কেন হরতাল ডেকে আত্মগোপনে চলে যাবে তারা সাধারন খেটে-খাওয়া মানুষজনকে নিদারূন কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়ে? আর সেই আন্দোলনকে আরো উস্কিয়ে দিয়ে মান্না বিএনপির চেয়েও আরো বড় অপরাধ করেছেন বলে মানুষ যদি মনে করে! এবং এটাই সঠিক যে, মান্না বিএনপির চেয়ে আরো বড় অন্যায় করেছেন। আরো আছে- অজ্ঞাতনামা একজন মান্নাকে টেলিফোনে সেনাবাহিনীর সাবেক বিভিন্ন জেনারেলগণ তার সাথে কথা বলবেন বলে বলেছেন। কথা হচ্ছে এধরনের কথা বলার সুযোগ কীভাবে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পায় মান্নার সাথে? প্রতিউত্তরে কেন মান্না বলেন যে, ভাই, আমারতো কথা বলতে ভয় হয়। জনগণকে নিয়ে তৃতীয়ধারা সৃষ্টির উদ্যোগী রাজনীতিবিদ কীভাবে এধরনের টেলিফোন রিসিভ করেন আর কেন তিনি তাকে ধমকে দিয়ে বলতে পারেননা যে, আমার কাজ জনগণকে নিয়ে, কোন সামরিক অভ্যূত্থান করা নয়?

জনাব মান্না রাজনীতিক, কিন্তু গত কিছুদিন থেকে তিনি নাগরিক সমাজের সাথে থেকেছেন, তাঁদের বিভিন্ন কাযর্ক্রমে অংশগ্রহন করেছেন, যদিও রাজনীতির সাথে সংস্রব থাকায় তাকে নাগরিক সমাজে গ্রহন করা উচিৎ হয়নি এর উদ্যোক্তাদের। জনাব খোকার সাথের এই সংলাপের পর তাকে আর নাগরিক সমাজে গ্রহন করার তো প্রশ্নই আসেনা, উপরোন্ত নাগরিক সমাজের মানুষজনের এরজন্য আত্মসমালোচনা করা উচিৎ এবং ভবিষ্যতে এবিষয়ে তাঁদের আরো সতর্ক থাকা উচিৎ। কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নাগরিক সমাজে থাকলে এর গ্রহনযোগ্যতা এখন থেকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এখন আমাদের দেশের অধিকাংশ রাজনীতিবিদই ক্ষমতালিপ্সু, যেনতেনভাবে ক্ষমতায় যেতে চান। তাই নাগরিক সমাজ আরো সতকর্ভাবে কাজ করবেন বলে আশা রাখি।

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ