কিছু প্রশ্ন

আজিজুল ইসলাম ১৬ মার্চ ২০১৫, সোমবার, ০৯:৫৬:৩৩অপরাহ্ন বিবিধ ২ মন্তব্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অথর্নীতি বিভাগের অধ্যাপক জনাব ড. এম এম আকাশের একটা নিবন্ধ পড়লাম আজকের (১৬-০৩-২০১৫) প্রকাশিত “দৈনিক সমকাল” পত্রিকায়। জনাব আকাশ একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি। বিভিন্ন সম্মানিত ব্যক্তিগণের শোকসভা, নাগরিক শোকসভায় তাঁর বক্তব্য শোনার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। বলা বাহুল্য ভাল লেগেছে, আধুনিক চিন্তা-ভাবনার মানুষই মনে হয়েছে তাঁকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকও তিনি, রাজনীতি আর অর্থনীতি বিষয়ের অনেক জ্ঞানগর্ভ কথা শুনে থাকি তাঁর কথায়।

এই লেখার শেষদিকে যথার্থই তিনি বলেছেন, ”….১৯৭১ সালের পরাজিত প্রতিক্রিয়াশীল সন্ত্রাসী শক্তিকে যদি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রিয় বল প্রয়োগ করেও দুবর্ল ও নি:শেষিত করতে পারে, তাতে বাগড়া না দেওয়া।…” সুশীল সমাজের বিজ্ঞজনদের উদ্দেশ্য করে কথাটা বলা হয়েছে। এবিষয়ে আমি মনে করি, জামাত-শিবিরের বতর্মান সন্ত্রাসী কমর্কান্ড প্রতিহত করতে তাদেরকে একেবারে ম্যাষ্ট করে দিতে হবে, রাষ্ট্রের পক্ষে যতটা শক্ত হওয়া যায়, ততটা শক্ত হয়ে তাদের এই সন্ত্রাসী অবস্থান থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করা সরকারের অন্যতম একটা সাংবিধানিক দায়িত্বও বটে। এব্যাপারে সুশীল সমাজ কোন আপত্তি অথবা বাধা দিলে তাঁদেরও  দমন করা উচিৎ। কারন জনগণের জান-মাল হেফাজত করতে সরকার বাধ্য।

এর আরেকটি দিক আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে ভেবে দেখতে বলি। জামাত-শিবিরের ৭০ হতে ৭৫ শতাংশ তরুন। এটি একটি ক্যাডারভিত্তিক দল এবং এর সকল সিদ্ধান্ত আসে এর সবোর্চ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ফোরাম ’মজলিসে সুরা’ থেকে, যেখানে এই তরুনদের কোন ভূমিকা  থাকেনা। অথচ ক্যাডারভিত্তিক দল বলে সিদ্ধান্তগুলি মেনে সেগুলি বাস্তবায়ণ করতে হয় তাদের। মিডিয়ার মাধ্যমে আরো জেনেছি যে, যুদ্ধাপরাধীদের সমথর্ণ প্রসঙ্গে সংগঠনের মধ্যে তাদের দু’টি ধারা বিদ্যমান। এক ধারা মনে করেন, ’একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীগণের দায় তারা বহন করতে চাননা, যিনি যে অপরাধ করেছেন, সেই অপরাধের দায়ভার শুধু তাঁর; সংগঠন হিসেবে জামাত-শিবির সেই দায়ভার বহন করবেনা।’ আরেক পক্ষ এই ধারনার সম্পূর্ন বিপরীত। এঁরাই দলের নীতি-নির্ধারক। এদেরই সিদ্ধান্তে দেশব্যাপী সহিংসতা চলছে, প্রতিজন যুদ্ধাপরাধীর রায়ের পর এই পক্ষই সন্ত্রাস-সহিংসতা চালায়। আর তার দায়ভার পুরো দলের উপর বর্তায়। জামাত-শিবিরের তরুন প্রজন্মের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ অনিচ্ছায় এধরণের সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে দলীয় নেতাদের নির্দেশে।

জামাত-শিবিরের এই তরুন প্রজন্মকে আমাদের নৈতিক সাহস যুগিয়ে যেতে হবে। সংগঠন হিসেবে তাদের শক্তি কম করে দেয়ার জন্য নয়, বরং সংগঠন যাতে ভাল একটা সংগঠনে পরিণত হয়, সংগঠন যাতে গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয় এজন্য। জামাত-শিবিরকে মানুষের জন্য যদি রাজনীতি করতে হয়, তবে মানুষ মারার সহিংসতা পরিত্যাগ করতে হবে। গণমানুষের মন জয় করার দিকে সংগঠনটিকে ধাবিত হতেই হবে। প্রকাশ্যে না বললেও বা বলতে না পারেলেও দেশের অধিকাংশ মানুষ এদের বতর্মান কমর্কান্ডকে ঘৃণা করে। সংগঠন হিসাবে জামাত-শিবিরকে এদেশে টিকে থাকতে হলে তাদেরকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় অবশ্যই মেনে নিতে হবে, কারন একাত্তরে ওরা আসলেই যুদ্ধাপরাধ করেছিলেন এবং সাজা, তা যত বছর পরই হোক-না-কেন, অবশ্য অবশ্যই পেতে হবে। নতুবা সেই সময়কার অত্যাচারের শিকার হওয়া অসহায় মানুষের আতর্নাদের, ক্ষুদ্র হলেও কী প্রতিদান দিলাম আমরা! আইনের উর্ধ্বে আসলে কেউ-ই নয়। সবাইকে তার কমর্কান্ডের দায়ভার বহন করতেই হবে।

তারা যদি সন্ত্রাস বন্দ্ব করে, তবে তারপর থেকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তরুন প্রজন্মকে দু’এক মাসের সময় দেয়া যেতে পারে। সেই সময়ের মধ্যে তবুও যদি তারা সংশোধিত না হয়ে যুদ্ধাপরাধীদেরকে সমর্থণ-যুগিয়ে-যাওয়া অব্যাহত রাখে, বন্দ্ব না করে, তখন তো বুঝতে হবে যে, এই তরুনরাও একাত্তরের পরাজিত শক্তির মত যুদ্ধই চায় আসলে এবং এই যুদ্ধে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির জয় যেকোনভাবেই হোক অবশ্যই নিশ্চিৎ করতে হবে। আপামর জনগণের সাথে তখন সুশীল সমাজকেও সংশ্লিষ্ট হতে হবে, বাগড়া দেয়া তো কোন কথাই থাকবেনা তখন।

শেষের দিকের একটু আগে জনাব এম এম আকাশ লিখেছেন, ’…তাই সুশীল নাগরিকদের গোপন ষড়যন্ত্রমূলক চেষ্টায় শিকা ছিঁড়েনি। বরং তারা নিজেরাই (মাহমুদুর রহমান মান্না) ধরা খেয়েছেন।..’

একটা বিষয় আমরা ভুল করি, তা জেনে হোক আর না জেনেই। তা হচ্ছে, মান্না একজন রাজনীতিবিদ। নাগরিক ঐক্য নামে তাঁর একটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। তিনি ক্ষমতার রাজনীতি করেন অন্য দুটি বৃহৎ দলের মত। আর সুশীল সমাজের লোকেরা দেশের সংকটময় মুহুতর্গুলিতে সামনে আসেন। আপনার সামনে দুজন মানুষ সংঘাতে লিপ্ত, আপনি সেদিকে না তাকিয়ে থাকতে পারবেন? কিছু না করে থাকতে পারবেন? এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি এদেশে, যখন দ’দলের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই, কোন সংঘাত নেই, অথচ সুশীল সমাজের লোক এগিয়ে এসেছেন। দ্বন্দ্ব-সংঘাত লাগে কেন দলগুলির মধ্যে? না লাগলে তো সুশীলরা আসেননা। যদিও সুশীল সমাজের লোকজনের মধ্যেও দু’দলেরই মনোভাবাপন্ন মানুষ আছেন, আবার নিরপেক্ষও আছেন অনেকে। আর সব থেকে বড় কথা, এরা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্কিত নন অথবা এঁদের কোন রাজনৈতিক দলও নেই। তাই মান্নার সাথে সুশীলদের কোন সম্পর্ক নেই, এটা দিবালোকের মত সত্য। পেট্রলবোমা মারা যে সকল সুশীল নামধারী ব্যক্তি রাজনৈতিক কৌশল বলে মনে করেন এবং সমর্থণ করেন, আর কুটকৌশল প্রয়োগ করে ক্ষমতাকে স্থায়ী করার স্বপ্ন দেখা রাজনীতিবিদগণকে সমর্থণ করেন সুশীল নামধারী যেসকল ব্যক্তি, তাঁরা আসলে সুশীল নন। তাঁদের ক্ষেত্রে জনাব আকাশের উপরোক্ত কথাটা সাজে। কিন্তু তিনি কোন ভেদ করেননি এক্ষেত্রে।

নিরপেক্ষ এসব জ্ঞানী মানুষকে আজকাল যেভাবে ষড়যন্ত্রকারী বলা হচ্ছে আর গালি দেয়া হচ্ছে, তার সারিতে জনাব এম এম আকাশ, আপনিও এলেন, তাতে আমি আহত হয়েছি এবং বিষ্ময় প্রকাশ করছি।

মো: আজিজুল ইসলাম।

১৬/০৩/২০১৫।

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ