সন্দ্বীপে সাগড় পাড়ে গেলে দেখতাম, ছোট ছোট পোলাপান চুম্বকের মাঝখানে রশি বেঁধে টেনে টেনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লোহা লক্করের সন্ধানে। চুম্বকের গায়ে যেগুলো আটকে যায় কিছুক্ষণ পর পর সেগুলো হাতের থলেতে রাখে।পরে একদিন আম্মার কাছে শুনলাম, এইভাবে সাগরের কূলে হাঁটতে গিয়ে একসময় অনেকে নাকি স্বর্ণ-রোপ্যও পেত। কথাটা শুনার পর, আমার শিশু মনে লোভ বেড়ে গেল। তখন থেকে রাস্তায় হাঁটার সময় আমি নিচের দিকে সামনে-ডানে-বামে খুব সজাগ দৃষ্টি রেখে হাঁটি। যদি মূল্যবান কিছু পেয়ে যায়!
এইভাবে কতো দিন-মাস-বছর চলে গেলো, অথচ কখনও কোন কিছুই পেলাম না। বরঞ্চ অনেকদিন হাঁটার সময় দেখেশুনেও গোবরে পা দিয়ে দিছি। কারণ, আমার লোভী চোখ গোবর দেখেও সেই সংকেত মস্তিষ্কে পাঠাত না।
তো, হতাশায় হোক কিংবা অভ্যাস মুছে, ধীরে ধীরে আমার দেহ থেকে সব লোভ-লালসা মুছে গেলো।আমি স্বাভাবিকভাবেই হাটাঁচলা করতে শুরু করলাম।আমার চোখও গোবর-কাদা দেখে মস্তিষ্কে সঠিক সংকেত দিতে শুরু করলো। কিন্তু………..
সেদিন সকালে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ দেখি ৫০০ টাকার একটা ও ১০০ টাকার বেশ কয়েকটা চকচকে নোট রাস্তায় পড়ে আছে। হঠাৎ দেখায় আমি থতমত খেয়ে গেলাম। কিছুক্ষণের জন্য হিতাহিত বুদ্ধি হারিয়ে হা করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। সামনের দিক থেকে স্কুল ড্রেস পরিহিত দুটো মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। পিছনে মধ্যবয়স্ক একজন লোক দাঁড়িয়ে মনে খুব সুখ নিয়ে সিগারেট ফুঁকছে। তার চেহারায় ভদ্র ভদ্র টাইপের একটা ভাব আছে। আমার তখন ঠিক কি করা উচিত তা ভাবার আগেই, আমি পিছনের লোকটাকে ডেকে টাকার দিকে আঙ্গুল রেখে বলি, দেখেন আংকেল এখানে কিছু টাকা পড়ে আছে। আর এটা বলেই আমি বোকার মতো হাঁটতে শুরু করি। কিছুদূর গিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি লোকটা টাকা গুলো শার্টের পকেটে নিয়ে উল্টো দিকে হাঁটা দিছে।
পথের মধ্যে হঠাৎ কিছু টাকা পড়ে থাকতে দেখলাম। তা নিজে না নিয়ে অন্য আরেকজনরে দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলাম। এই বিষয়টা এখানে খতম হলেই পারতো। কিন্তু না! ব্যাপারটা সেদিনের পর থেকে আমার মাথার মধ্যে এমনভাবে গেঁথে গেছে যে, আমি এখন প্রতিনিয়ত হ্যালুসিনেশনে ভুগছি।রাস্তায় নিচের দিকে তাকালেই শুধু টাকা দেখি! রাস্তায় পড়ে থাকা সব কাগজ এখন আমার চোখের সামনে টাকা হয়ে ভাসে!
১৫টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
মগজে যা বিধে যাই তা তাড়ানো ক্ষুব সহজ নই। এটাই মগজের খেলা।
আকবর হোসেন রবিন
হ্যাঁ ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল থাকুন।
সুরাইয়া পারভিন
হা হা হা হা হা
আপনার রম্যরচনা পড়ে বেশ কিছু ক্ষণ হাসলাম।
দারুণ লিখেছেন 👏👏
এখন সব কাগজ টাকা মনে হয়,,,,হা হা হা হা
আকবর হোসেন রবিন
ধন্যবাদ আপু।
মাহবুবুল আলম
“বরঞ্চ অনেকদিন হাঁটার সময় দেখেশুনেও গোবরে পা দিয়ে দিছি। কারণ, আমার লোভী চোখ গোবর দেখেও সেই সংকেত মস্তিষ্কে পাঠাত না।”
হাসালেন। গোবর বলেছেন ভাল, মাবর বলেন িনি।
একটু মাজা করলাম। হাহাহা।
আকবর হোসেন রবিন
আপনাকে হাসাতে পেরে আমি ধন্য ।
মনির হোসেন মমি
হা হা হা মজার বিষয়তো! সত্যিই যদি রাস্তার সব কাগজ টাকা হয়ে যেত। আমারও এমন হয়েছে নিজে না নিয়ে অন্যকে দেখিয়ে দিয়েছি অথবা এড়িয়ে গেছি কারন মনে ছিলো বাপ দাদাদের হাদিস-এক টাকা কুড়াইয়া হাতে নিলে ফকিরকে দুই টাকা দিতে হবে।
সব মনের ব্যাপার।
আকবর হোসেন রবিন
আমার এই ঘটনাটা এক বন্ধুকে জানালাম। সে বললো, ‘রাস্তায় কুড়িযে পাওয়া সবকিছু পরম সত্তার উপহার’ এই থিউরি বিশ্বাস করে টাকা গুলো নিয়ে রেখে দিতে পারতি।
মনির হোসেন মমি
হুম স্বর্গীও দান।জায়েজ আছে।
নিতাই বাবু
একটা কথা শুনেছিলাম, “রাস্তায় পড়ে আছে ছাঁই, তুলিয়া দেখন না তাই, পাইলেও পেতে পার মাণিক রতন।” কথাটা যেন কার, তা মনে করতে পারছি না। তবে আপনার পথচলার কাহিনী শুনে এই কথাটা মনে পড়ে গেল।
আকবর হোসেন রবিন
আমার এক বন্ধু বললো, সে একবার রাস্তায় একটা সোনার আংটি পেয়েছে। পরে সেটা বিক্রি করে টাকা গুলো ফকিরকে দান করেছে।
প্রথম বন্ধুর এই ঘটনা শুনে আরেক বন্ধু বললো, ‘রাস্তায় কুড়িযে পাওয়া সবকিছু পরম সত্তার উপহার’ এই থিউরি বিশ্বাস করে টাকা গুলো নিয়ে রেখে দিতে পারতি ’।
তখন প্রথম বন্ধু বললো, একবার তিন পেকেট বেনসন লাইট পেয়েছি। ওটা আর দান করতে পারি নাই।
নিতাই বাবু
বিদেশিরা রাস্তায় কিছু পেলে এটাকে সৃষ্টিকর্তার দান বলে বিশ্বাস করে। আর বিশ্বাস করি গচ্চা যাবে বলে। হাহাহা! কির বলবো, বলুন!
এস.জেড বাবু
হাহাহা
মনে হয় অনেকদিন হাসি না।
চমৎকার গল্পে হাসালেন।
একদিন চোখ মগজে ঠিকই সংকেত পাঠাবে, রাস্তায় পড়ে থাকা সব টাকা না।
শুভেচ্ছা বিজয়ের
আকবর হোসেন রবিন
আপনাকেও বিজয়ের শুভেচ্ছা।