সবাই হোলি নিয়ে ছবি ভরা পোস্ট দিচ্ছে। কিন্তু হোলি কি? কেন? এ প্রশ্নগুলো কি কারো মাথাতেই খেলছে না? বর্তমান সময়ে রঙের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, এমনকি শ্রীকৃষ্ণ রাধার হোলি মাখা ছবিগুলো দেখে অনেকেই বলেছেন এর নামই কি হোলি?!
দৈত্যরাজ হিরণ্যকিশপুর কাহিনি আমরা সকলে জানি। ভক্ত প্রহ্লাদ অসুর বংশে জন্ম নিয়েও পরম ধার্মিক ছিলেন। তাঁকে যখন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও হত্যা করা যাচ্ছিল না তখন হিরণ্যকিশপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুলে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ হোলিকা এই বর পেয়েছিল যে আগুনে তার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু অন্যায় কাজে শক্তি প্রয়োগ করায় হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলে বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অগ্নিকুণ্ড থেকেও অক্ষত থেকে যায় আর ক্ষমতার অপব্যবহারে হোলিকার বর নষ্ট হয়ে যায় এবং হোলিকা পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়, এই থেকেই হোলি কথাটির উৎপত্তি ।
অন্যদিক বসন্তের পূর্ণিমার এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেশি নামক অসুরকে বধ করেন। কোথাও কোথাও অরিষ্টাসুর নামক অসুর বধের কথাও আছে। অন্যায়কারী, অত্যাচারী এই অসুরকে বধ করার পর সকলে আনন্দ করে। এই অন্যায় শক্তিকে ধ্বংসের আনন্দ মহাআনন্দে পরিণত হয়।
অঞ্চল ভেদে হোলি বা দোল উদযাপনের ভিন্ন ব্যাখ্যা কিংবা এর সঙ্গে সংপৃক্ত লোককথার ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু উদযাপনের রীতি এক ।বাংলায় আমরা বলি ‘দোলযাত্রা’ আর পশ্চিম ও মধ্যভারতে ‘হোলি’,। রঙ উৎসবের আগের দিন ‘হোলিকা দহন’ হয় অত্যন্ত ধুমধাম করে । শুকনো গাছের ডাল, কাঠ ইত্যাদি দাহ্যবস্তু অনেক আগে থেকে সংগ্রহ করে সু-উচ্চ একতা থাম বানিয়ে তাতে অগ্নি সংযোগ করে ‘হোলিকা দহন’ হয় । পরের দিন রঙ খেলা । বাংলাতেও দোলের আগের দিন এইরকম হয় যদিও তার ব্যাপকতা কম – আমরা বলি ‘চাঁচর’ । এই চাঁচরেরও অন্যরকম ব্যাখ্যা আছে । দোল আমাদের ঋতুচক্রের শেষ উৎসব । পাতাঝরার সময়, বৈশাখের প্রতীক্ষা। এই সময় পড়ে থাকা গাছের শুকনো পাতা, তার ডালপালা একত্রিত করে জ্বালিয়ে দেওয়ার মধ্যে এক সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে । পুরনো জঞ্জাল, রুক্ষতা, শুষ্কতা সরিয়ে নতুনের আহ্বান হচ্ছে এই হোলি। বাংলায় দোলের আগের দিন ‘চাঁচর’ উদযাপনকে এভাবেই ব্যাখ্যা করা হয় ।
আমাদের অনেক ধর্মীয় উৎসবেই আঞ্চলিক লোক-সংস্কৃতি ও রীতির প্রভাব দেখা যায়, হোলিও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলার দোলযাত্রায় গৌড়ীয় বৈষ্ণব রীতির প্রাধান্য পায়। ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন পূর্বভারতে আর্যরা এই উৎসব পালন করতেন । যুগে যুগে এর উদযাপন রীতি পরিবর্তিত হয়ে এসেছে । পুরাকালে বিবাহিত নারী তার পরিবারের মঙ্গল কামনায় রাকা পূর্ণিমায় রঙের উৎসব করতেন ।
দোল হিন্দু সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন উৎসব । নারদ পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ ও ‘জৈমিনি মীমাংশা’য় রঙ উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়। ৩০০ খৃষ্টপূর্বাব্দের এক শিলালিপিতে রাজা হর্ষবর্ধন কর্তৃক ‘হোলিকোৎসব’পালনের উল্লেখ পাওয়া যায় । হর্ষবর্ধনের নাটক ‘রত্নাবলী’তেও হোলিকোৎসবের উল্লেখ আছে। এমনকি আল বেরুণীর বিবরণে জানা যায় মধ্যযুগে কোন কোন অঞ্চলে মুসলমানরাও হোলিকোৎসবে সংযুক্ত হতেন ।মধ্যযুগের বিখ্যাত চিত্রশিল্পগুলির অন্যতম প্রধান বিষয় রাধা-কৃষ্ণের রঙ উৎসব । এই রাধা-কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে হোলির যে অতি বৈষ্ণবীয় আচার তা অবশ্যই প্রশ্নযুক্ত। কেননা এটি শ্রীকৃষ্ণের জীবন ইতিহাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কেননা শ্রীকৃষ্ণ ১০ বছর বয়সে বৃন্দাবন ত্যাগ করার পর সেথানে তার যাওয়াই হয়নি। অন্যদিকে বহু গবেষক রাধার অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন থেকে দোল কথার উদ্ভব।
সে যাই হোক রাধা-কৃষ্ণ তত্ত্বকে দাড় করিয়ে বিপরীত লিঙ্গের মাঝে অবাধ হোলি খেলা অবশ্যই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থন যোগ্য নয়। আবার বিষাক্ত রঙের ব্যবহারও উচিত নয়। এমনকি বহু জায়গায় হোলিকা দহনের নামে গাছপালা যথেচ্ছ কেটে ফেলা হয় তাও উচিত নয়। তাই হোলি নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের অসামাজিকতা পরিহার করা জরুরী।হোলি সম্পর্কে বড়ো একটি তথ্য সকলে এড়িয়ে যায়। ধর্ম ও সমাজ ওতোপ্রোত জড়িত। আর একটি উৎসব বা দিন আরও পবিত্র হয়ে ওঠে যদি উক্ত দিনে পৃথিবী মহান পুরুষের জন্ম দেয়। বাঙালি তথা হিন্দু সমাজের অন্যতম মহাপুরুষ শ্রীচৈতন্যের জন্মতিথি হচ্ছে এই পূর্ণিমা তিথি তথা হোলি তিথি। এই মহান পুরুষের জন্ম উৎসবের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যায়কে পরাজিত করার আনন্দে সকলের মন রাঙিয়ে উঠুক। মহানপুরুষের আবির্ভাবে সকলের মন আনন্দে নেচে উঠুক।
সকল হিংসা বিদ্বেষ,হানাহানি দূর হোক,
পবিত্রিতার আভাসে শুদ্ধতার পরিপূর্ণ সাজে সবার মন রঙে রাঙিয়ে উঠুক।
সবাইকে শুভ হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা।
ছবি নেট থেকে।
তথ্য - আংশিক সংগৃহীত।
২৩টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। এতকিছু আমার ও অজানা ছিল। সত্যিই যেকোন উৎসব নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ, ধর্মীয় তাৎপর্যকে অন্য ধারায় প্রবাহিত করা ঠিক না। ভালো থাকুন শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা দিদি।
অনেক ভালো থাকুন।
ইঞ্জা
ভিন্ন ধর্মী পোস্ট দিয়েছেন দেখে খুব ভালো লাগলো দাদা, হোলিউৎসবকে নিতে মানুষের মাঝে ভুল ধারণা এই পোস্ট থেকে সনাতন ধর্মের মানুষেরা কিছু শিখবে বলে আশা রাখছি।
ধন্যবাদ দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা দাদা।
অনেক ভালো থাকুন।
ইঞ্জা
আপনাকেও শুভেচ্ছা দাদা, শুভ হোলি।
রেহানা বীথি
খুব ভালো পোস্ট। জানা হল অনেককিছু।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা দিদি।
অনেক ভালো থাকুন।
আলমগীর সরকার লিটন
অনেক ভাল বলেছেন দাদা
অনেক শুভ কামনা রইল————–
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা দাদা।
অনেক ভালো থাকুন।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ লেখা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা দাদা।
অনেক ভালো থাকুন।
ছাইরাছ হেলাল
এত কিছু তো জানা ছিল না, বিশেষ করে ৩০০ খৃষ্টপূর্বাব্দের পুরনো কথা।
অনেক ধন্যবাদ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা দাদা।
অনেক ভালো থাকুন।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ দাদা, আমাদের হিন্দু ধর্মে বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির বা গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সহিত রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রা বের করা হয়। কিন্তু সেসব নিয়মকানুন আজকাল কেউ মানতে রাজি নয়। দোলযাত্রা বা হোলি হলো শুধুই বরং নিয়ে রাঙিয়ে দেওয়া। ধর্মমতে এই দোলযাত্রার নিয়মকানুনের দিকে কে আর ফিরে দেখে? সবাই সবার মতে চলতে অভ্যস্ত।
দোলযাত্রার শুভেচ্ছা সহ শুভকামনা থাকলো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা দাদা।
অনেক ভালো থাকুন।
সুপায়ন বড়ুয়া
ধন্যবাদ হোলি সম্পর্কে বিশদ তুলে আনার জন্য
যা আগে ছিল না জানা।
শুভ হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা দাদা।
অনেক ভালো থাকুন।
জিসান শা ইকরাম
হোলি এবং দোল উৎসব সম্পর্কে কিছুই তেমন জানতাম না।
এই লেখার মাধ্যমে জানা হলো।
ধন্যবাদ তোমাকে প্রদীপ।
বর্তমানে ধর্মীয় চিন্তা বাদ দিয়ে কেবল রং মাখামাখির দিকে মানুষ ঝুকেছে মনে হয়।
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভ হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা দাদা।
অনেক ভালো থাকুন।
সাবিনা ইয়াসমিন
হোলি সম্পর্কে খুব বেশি জানতাম না। টেলিভিশনে ভারতীয় নাটকের বদৌলতে হোলি সম্পর্কে একটু ধারণা পেয়েছিলাম। আজকে তোমার লেখা পড়ে এর ইতিহাস এবং কারণ গুলো স্পষ্ট জানা হলো।
হোলির শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইলো প্রদীপ।
ভালো থেকো 🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনাকেও শুভ হোলি উৎসবের শুভেচ্ছা দিদি।
অনেক অনেক ভালো থাকুন।
সুরাইয়া নার্গিস
সুন্দর পোষ্ট
হালিম নজরুল
মূল্যবান পোস্ট