সোনেলার আমি, আমার সোনেলা

রিতু জাহান ২০ আগস্ট ২০২১, শুক্রবার, ১১:২১:৩৭অপরাহ্ন স্মৃতিকথা ৩৪ মন্তব্য

 

আজ ভোরটা অন্যদিনের মতোই চিরচেনা একইরকম যদি কোনো ছেদ না পড়ে। ঘুম থেকে উঠে বারান্দার চেয়ারে বসা,,,
রাতের অর্ধেক পড়া বই, ফোন আর এক কাপ মশলা চা নিয়ে। ভোরের মন ভালো করা গান ছাড়া মিউজিক ছাড়ি মৃদু সুরে। চেয়ারে বসে প্রথম কাজ নোটিফিকেশন চেক করা। ফেসবুক ও ব্লগে ঢু মারা। ফোন রেখে চুপচাপ ভোর দেখা। বারান্দার জবাগুলো একটু একটু করে ততোক্ষণে ফুটতে থাকে,, পাশের হাসনাহেনাগুলো ঝরে পড়া দেখি।

আমার এ সময়টুকু ভাবনাগুলো ঠিক যেনো গাছের ডালপালা শাখা উপশাখা, ঘাসবুকে ঝরে পড়া ভোরের শিশিরে স্নানে সেরে সজিবতায় হেসে ওঠার মতো। কিন্তু আজকের ভোরটা অন্যরকম। সোনেলা বলছে তার বুকে আমার ভাবনার বসত গড়ার আজ ২০০ তম পোষ্টের শব্দের ভীত বসানো।

ব্লগিংএ আজ আমার ২০০ তম পোস্ট! ছয় বছর পার করে ফেললাম ব্লগিং জগতে। ছয় বছর আগে ভীরু ভীরু হাতে আদি অক্ষর অ-অক্ষরে আমার া কার ি কার বসানোর চেষ্টা করেছিলাম এ সোনেলার বুকে। আনাড়ি শুব্দগুলোর প্রাণ দিতে পুরাতন যাদরেল(ভালো অর্থে) লেখক ব্লগারদের স্নেহাশিস পেয়ে হামাগুড়ি দিতে দিতে এখন একটু একটু হাঁটতে শিখেছে। হাঁটতে শেখা মানে সাহস করে ফেলে প্রবন্ধ কবিতা লেখার দুঃস্বাহস যাকে বলে। সে কি উৎসাহ উদ্দীপনা তাদের আমাকে ঘিরে। লেখার জগতে এমন স্নেহ কতোজন পেয়েছে আমার জানা নেই। সেই হিসেবমতে আমি বড় ভাগ্যবতী বলা যায়। আগে লিখে লিখে বিছানার নীচে রেখে দিতাম। ভাবি দেখে বলতো, সব কেনো বাক্সবন্দি করে রাখিস? মেলে ধর নিজেকে। দুই পরিবারে তখন কড়া অনুশাসনে আমি ফেসবুক বা ব্লগিংএ নাম লেখাব তা ভাবনার বাইরে। তবু ভয়ে ভয়ে ভিন্ন নামে শুরু করলাম ব্লগিং।
ছাইপাশ অখাদ্য শব্দমালাকে ছেঁকে টেলে তা সুস্বাদু খাদ্য বানানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো জিসান ভাইয়া। যেমন ধান থেকে তুষ ঝেড়ে বের করে আনা হয় চাল তেমন।আমি লিখতে লাগলাম। মন্তব্য করতে করতে নিজেও লিখতে লাগলাম তাদের অতি উৎসাহে। আজ লেখার জগতে আমাকে যদি কেউ একজনও চিনে থাকে সে হয়েছে সোনেলা ব্লগের জন্য।

দাদাভাইদের ভালবাসা,,, সব পেয়েছি এ শব্দের কারনে। আমি বড় বেশি অকৃতজ্ঞ সে আমি জানি, উপলব্ধি করতে পারি এই অকৃতজ্ঞ বোধটুকুকে। স্নেহ ভালবাসা ফিরিয়ে দেবার মতো সামর্থ্য যোগ্যতা আমার নেইস্নেহ ভালবাসাগুলো ধরে রাখার মতো যোগ্যতা, ক্ষমতাও আমার নেই। পেয়ে হারানোর মতোও অনেকটা।  আমি বড় অগোছালো একজন মানুষ। সংসারটা ছাড়া আর যেনো কোনোকিছু আমি ঠিক সামলে উঠতে পারি না। তাই মাঝের তিনটা বছর আমি সোনেলা থেকে বাইরে ছিলাম। এ মধ্যবয়সে কিছু জিনিস শিখছি আর তা হলো,, অন্যের চোখে না দেখা,,,, নিজের শেঁকড় ছেড়ে যেতে নেই। শেঁকড় ছাড়া গাছ যতো বড় বটবৃক্ষই হোক সে মাটিতে লুটাবে,,, একটু একটু করে ক্ষয় হবে তার অস্থিত্ব। দণ্ডায়মান দাঁড়িয়ে তো থাকবে কিন্তু নতুন পত্রপল্লব, নতুন শাখা গজাবে না সহজে। কান্নাগুলো গলায় শক্ত দলা পেকে থাকে মাঝে মাঝে মাঝে হতে চায় না হাউমাউ করে।

সোনেলা ছাড়া আমি এ গাছটার মতো শেঁকড় ছাড়া প্রিয় জিনিস, প্রিয় স্থান ছেড়ে পারিযায়ি পাখি ছুটে চলে কোথায় কোথায় কিন্তু হাজার মাইল পাড়ি দিলেও দিনশেষে সে ঠিকই ফেরে আপনালয়ে। আমিও ফিরেছি আমার আপনালয়ে সোনেলা দিগন্তে জলসিঁড়ির ধারে।

প্রিয় সোনেলার পাঠক হয়ে, অক্ষরের প্রেমে পড়ে,
সোনেলার বুকে প্রত্যোক লেখকের হৃদয় হতে উঠে আসা শব্দের শীতলতা ছুঁয়ে সিক্ত হয়েছি
তার শব্দের মাতলতায় আমার তুষ্টি।vতার এ বুকের অক্ষর বিরহে আমার নয়ন কোনে জল ওঠে
তারকারাজি খসে পড়ে, সবুজ মাঠে কলরব ওঠে।
|
এ বুক বার বার আগলে জড়ো করেছে আমার এলোমেলো ভাবনাগুলি শৃঙ্খলিত করে।
সময়ের ক্লান্তি ভেঙ্গে আমার শব্দের পূর্ণ আকাঙ্খার  দ্বীপ জ্বালিয়েছে বার বার।
অক্ষরের আদলে সাজাতে আমার শতো জড়ো ভাবনাগুলিকে প্রাণ দিতে দিবানিশি জল ঢেলেছে।
তাতে থাকে কিছু আমার নয়নের নোনাজল, আরো কিছু ঐ শিশির বিন্দু।
তার আপ্রাণ চেষ্টায় শব্দ গাঁথার আকাঙ্খা আমার বেড়ে যায় চুপি চুপি।
ভিজিয়ে রাখি ঐ সুশ্রী গোলাপের পাপড়ির মতো আমার সকল শব্দ সম।

হৃদপিণ্ড যেমন দেখা যায় না শুধু থেমে গেলে বোঝা যায় বুকের ভিতরে তার বাস ছিলো। তেমনি শেকড় ছেড়া গাছও উপড়ে গেলে বোঝা যায় কতোটা শেকড় গেঁথে ছিলো মাটির বুকে। এই অগোছালো আনাঢ়ি আমাকে লিখতে বসালো সে কতো আদর করে, এতো স্নেহ, মায়া, মমতা, ধৈর্য্য এ বুক কি করে পায় আমার জানা নেই।

আগে যখন মন খারাপ হত বা মনে নতুন কোনো ভাবনা এলে কাগজের বুকে যা ইচ্ছে লিখে ফেলতাম। কাগজ তো কথা বলতে পারে না, তাই সে কখনো বলেও না, লেখায় আমার প্রাণ আছে নাকি নাই। কোনো শব্দের মিল ছিল না তাই তাতে। ছিলনা কোনো ভাবনারও মিল। এ ভাবনা থেকে ও ভাবনায় হঠাৎই চলে যেতাম। কাগজ কথা বলতে পারে না বলে কলমও তাই ঘুরতে চাইত না।

কিন্তু সোনেলা শেখালো কলম না, তোমার আঙ্গুলের স্পর্শে তার বুকে লিখে ফেলতে, সেই-ই আমাকে বলে দিলো, এই পরিবারের সবাই বলে দিলো  আঙ্গুলের স্পর্শের শব্দে প্রাণের স্পন্দন কি করে আনতে হবে।  হলো ও তাই। কতো আদর করে বুঝিয়ে দিলো, শব্দ সাজানোর নিয়ম কানুন। ভাবনার আদান প্রদান। কাগজের বুকে প্রথম লেখাগুলো পড়ে এখন হাসি আমি। কতোটা পরিবর্তন করে দিয়েছে এই আমায়।

প্রখম প্রথম  আমি যখন সোনেলার বুকে হ য ব র ল লিখতাম, পোস্ট কি করে করতে হয় তাও জানতাম না। তখন ভাইয়ার মাথার চুল ছেঁড়ার অবস্থা হয়। ছবি দিতে আমি এখনো শিখতে পারিনি। খুব কষ্ট হয় ছবি পোস্ট করতে। গানের কলি তো আরো ধারে কাছে যাই না পোস্ট করার।

এই পৃথিবী আজ বড়ই যান্ত্রিকতায় ভরে গেছে। আর এখন তো করোনায় আরো ভয়াবহ অবস্থা! কেউ বসে মনের দুইটা কথা শুনাবে ও শুনবে সেই সময়টুকু নেই। মন খারাপ হয় না এমন মানুষ নেই। সোনেলা সেই দিনগুলোতে মনের দুয়ার খুলে দিলে। বুক পেতে দিলো শব্দ সাজানোর। নিজের শব্দগুলো ছিলো আমার ঠিকানা বিহীন। সোনেলা দিলো তাদের একটা ঠিকানা।

সোনেলাকে দেখি কখনো বড় ভাই, কখনো ছোট ভাই, কখনো বোন, কখনো এমন এক বন্ধু, যার ঘাড়ে মাথা রেখে বলা যায় অনেক কথা। একজন মানুষের অনেক কিছুই বলার থাকে, তা দেশ, সংসার, সমাজ ও নিজেকে নিয়ে যা এক প্লাটফর্মে সবাই পড়তে পারবে। সোনেলা সেই প্লাটফর্ম।

প্রথম যখন সোনেলার কাছে শব্দ নিয়ে আসলাম, অন্যদের লেখা দেখে ভাবতাম, ইশ এটা যদি আমি লিখতে পারতাম! ভেবে ভেবে হেসে ফেলতাম। রাজ্যময় আনন্দ নিয়ে সোনেলার বুকে লিখে ফেলি আমার সব ভালবাসা, দুঃখ আনন্দের কথা। তার এই উৎসাহে আজ আমি অনেক বিশী আত্মবিশ্বাসী। আমাকে করেছো সাহসী প্রতিবাদী। সেই আত্মবিশ্বাসে বের করে ফেলেছি কবিতার বই।  এ বাড়িতে আমার শব্দের হাতেখড়ি। তাই আমি বলি আমার মাতুলালয় আঁতুড়ঘর।

দেখতে দেখতে সোনেলার সাথে কেটে গেল আমার ছয় বছর তিনদিন! জীবনের আমির ও মরণের আমির এই সময়টুকুতে যদি কলম ও শব্দ থেমে যায় তবে ভুলে যেও না প্রিয় সোনেলা। যদি কখনো কোনো ভুল হয়ে যায় সবার কাছে আমি হাতজোড় মিনতি করে ক্ষমা চাচ্ছি।

সোনেলার বুকে সকল লেখক ব্লগারদের জন্য আমার আন্তরিক ভালবাসা। পরিশেষে একটা কথা না বললে হবে না। জিসান ভাইয়া যে মানুষটাকে অসহনীয় ধৈর্যের শেষ সীমা পর্যন্ত জ্বালিয়েছি তার কাছে আমার চির ঋণ।

শেষ করছি ২০০ তম পোস্ট।

,,রিতু জাহান,,রংপুর।

উৎসর্গঃ সোনেলার সকল সোনালী মানুষদের যাদের ভালবাসায় আমি আমি হবার স্বপ্ন দেখি।

0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ