আমাদের সময় সবকিছু এনালগ আর ম্যানুয়েল ছিলো। তাই আমাদের চিন্তা-ভাবনা গুলো ও ছিল নন-ডিজিটালাইজড। চিঠির আদান-প্রদান ছিলো যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম , ল্যান্ডফোন ছিল হাতে গোনা কয়েকটি বাসায়। অবসর কাটতো গল্পের বই, ম্যাগাজিন পড়ে আর রেডিও-টেলিভিশনের অনুষ্ঠান এর মাধ্যমে। এটাই ছিল বিনোদনের ব্যবস্থা। ছুটির দিনগুলোতে জাতীয় জাদুঘর, শিশুপার্কে যাওয়া তাও বাসা কাছাকাছি থাকার সুবিধার্থে। আর পহেলা বৈশাখ, পূজোর সময় ঘোরাঘুরিতেই সীমাবদ্ধ ছিল আমাদের বিনোদন। বই পড়ার নেশা থেকে নিজেকে একসময় লেখকের স্থানে ভাবতে মন চাইলো, নিজের লেখা বই আকারে ছাপানো হবে , সবাই চিনবে, জানবে। সেই ভাবনা থেকেই একসময় লেখালেখি শুরু করে দিলাম সবার অগোচরে। একসময় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে লেখা পাঠানো শুরু করলাম। একদিন একটা কবিতা ছাপানোর ব্যবস্থা হলো আরো কয়েকজন কবির সাথে। মনটা আরো বড় হয়ে গেল আমার স্বপ্ন পূরনের উদ্দেশ্য সফল হবার জন্য। আমার লেখাটি ছাপা অক্ষরে পেয়ে দারুন খুশি হয়েছিলাম। এরপর আর লেখালেখি বেশীদূর আগায়নি পদার্থবিজ্ঞান এর মতো কঠিন বিষয়কে পড়াশোনায় যুক্ত করার জন্য , সাথে আরো আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় যুক্ত হওয়াতে। একসময় বাইরের বই পড়াও বন্ধ করে দিলাম সেই সাথে লেখালেখি ও।

 

আমাদের সময় ফেসবুক ছিলোনা, মোবাইল ছিলোনা ব্লগ তো বহু দূরের বিষয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে এক বন্ধুর অনুরোধে ফেসবুকে একাউন্ট খুললাম, কিন্তু আগামাথা কিছুই বুঝতাম না। ঐ বন্ধুর সাহায্যে অনেক কিছু শিখলাম,জানলাম। আস্তে আস্তে মোবাইলে ফেসবুক চালানো শুরু করলাম। ২০১২ সালে কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে শাহবাগ তখন উত্তাল । ঐ সময় ব্লগারদের নাম প্রথম শুনলাম। তাদের লেখা পড়ার জন্য- কোথায় লিখে তা জানার আগ্রহ হলো । কিন্তু জানা বা বোঝা অজানাই রয়ে গেলো। আর তখন আমি পুরোপুরি চাকুরীজীবী তা-ও হাসপাতালে তাই ছুটি মিলতো না তেমন । সময় পেলেই বাইরে ঘুরতে যেতাম। এরমধ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাসায় বসে রইলাম। সময় কাটছিলো না। হঠাৎ বান্ধবী যূথীর সাথে জবের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে ওর গ্রাফিক্স কোর্সে ভর্তি হলাম। সেখানেই ক্লাসমেট হলো আমাদের সবার প্রিয় ইকরাম জিসান মোঃ শামসুল দাদা ভাই। তার আর যূথীর ঠেলায় পড়ে মরিচা ধরা লেখালেখিতে ধার দেয়া শুরু করলাম। কিন্তু কি লিখবো, কিভাবে শুরু করবো  কিছুই মাথায় আসছিলো না! এদিকে ইকরাম দাদা ভাই প্রায়ই বলছে লেখা দিতে। পরে যূথীর সাহায্য নিয়ে একটি লেখা তৈরি করলাম আর ইকরাম দাদা ভাইয়ের সাহায্যে ব্লগে একাউন্ট খুললাম। দাদা ভাই সব করে দিলো। তারপর উনি প্রতিটি পোষ্টে ধাপে ধাপে আমাকে সোনেলার একজন পরিচিত ব্লগার তৈরি করলেন। আজ আমার ভাবতেই ভালো লাগে আমার লেখার জন্য এতো সুন্দর, আন্তরিক প্লাটফর্ম হিসেবে সোনেলাকে পেয়েছি। এখানকার সবাই আমাকে এতোটা আপন করে নিয়েছে, আমার লেখার প্রশংসা করেছে যা আমার কল্পনাতীত ছিল। আমি কখনোই এতোটা আশা করিনি। সব সম্ভব হয়েছে সবার ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণার জন্য। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

 

হাঁটি হাঁটি পা করে দশ মাসে পড়লো সোনেলার উঠোনে পদচারণা। এখন সোনেলাই আমার একমাত্র ভালোলাগার জায়গা যেখানে না আসলে, লেখা না পড়লে মনটা অস্থির হয়ে থাকে। মন্তব্যগুলো পড়ে অনেক কিছু শিখেছি, জেনেছি। সেই মন্তব্য যখন এক দু'লাইনে , গৎবাঁধা ছকে আবদ্ধ দেখি তখন মনটাই খারাপ হয়ে যায়। তারপর লেখায় বানান ভুল । ইংরেজী ভাষার চর্চা করতে গিয়ে নিজের মাতৃভাষার বারোটা বাজিয়েছি। অথচ এই ভাষার জন্য আমরাই রক্ত দিয়েছি। আমরা কি ব্যর্থ হয়ে যাবো শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে? আমরা কি পারি না এই ভুলত্রুটি গুলো শোধরাতে? আমরা চাইলেই এই দুটো জায়গায় নিজেদের সদিচ্ছায় উন্নতি করতে পারি।

সোনেলার নবম জন্মবার্ষিকীতে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার তাহলেই এই জন্মবার্ষিকী সার্থক হবে বলে আমি মনে করি।

 

জয়তু সোনেলা, জয়তু সকল ব্লগারগণ। শুভ ব্লগিং

0 Shares

৪৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ