প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা,
আপনাদের সাথে সোনেলা ব্লগের যাত্রা শুরুর সময় থেকেই আছি। চমৎকার ছিমছাম, এবং পরিবেশগত দিক থেকে সোনেলা আমার প্রিয় একটি ব্লগ সাইটে পরিণত হওয়াতে প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকার পরও আমি সোনেলাতে আপনাদের জন্য আমার কিছু লেখা শেয়ার করি। আপনাদের ব্যস্ত ব্লগিং জীবনের মাঝে আমার লেখায় চোখ বুলিয়ে যান এটা ভাবতেই ভালো লাগছে, ভার্চুয়াল এই লাইফে আপনাদের মাঝে কয়েকজন নিয়মিত পাঠক-সমালোচক পেয়েছি আমি, এটা আমার জন্য গর্বের, এবং একজন লেখক হিসেবে সম্মানের।
আমি প্রথমেই আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আমি নিয়মিত ব্লগার নই, পিএইচডি গবেষণা নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ততার ফলে এবং বহুজাতিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কামলা খাটার কারণে সময় খুব একটা হয়ে ওঠে না, যতটুকু অবসর পাই সেই সময়টুকুতে ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে, এরই মধ্যে কিছুটা সময়ের জন্য ফেসবুকিং আর টুকটাক পড়াশুনা এবং লেখালেখি করি। আপনাদের সাথে আমার যাত্রা শুরু আমার একটি বড় গল্প, দিয়ে, ধারাবাহিকভাবে সেই গল্পের জন্য আপনাদের যে ভালোবাসা পেয়েছিলাম আমি, তা কখনো ভুলবার নয়।
এবার আসি আমার উপন্যাস, “সূর্যাই ডোম ও রাম্বা আখ্যান” প্রসঙ্গে। ২০০৭ সালের শেষের দিকের কথা, আমি তখন দেশের অন্যতম প্রভাবশালী একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত ছিলাম, ক্ষমতায় সামরিক-তত্ত্বাবধায়ক সরকার, হঠাৎ করেই চাকুরি জীবনে নেমে আসে অনিশ্চয়তা, প্রতিষ্ঠানটির মালিক কাম সম্পাদক ও মুদ্রাকর তখন জেলে। বেতন বন্ধ হয়ে গেছে আমরা যারা প্রতিষ্ঠানটিতে কামলা খাটি তাদের, এর মধ্যে ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হিসেবে অনেকটা অনিশ্চয়তার ভিতরেই দিন যাপন করতে থাকি, বিবিসিতে টুকটাক ফ্রিল্যান্সিং করে তখন পেট চালাতাম। এরই মধ্যে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী একটি বহুজাতিক এনজিও থেকে একটি প্রজেক্টের ফিল্ড ভিজিটের অফার পাই, যদিও ইচ্ছে ছিলো না কাজ করার, তবুও ভরা পেট নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে ওই এনজিওটির মোটা অংকের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। কাজের ধরন, ছুৎ-অচ্ছুৎ বর্ণের মানুষদের নিয়ে কাজ করতে হবে, আমার ফিল্ড ভিজিট এলাকা বগুড়ার সারিয়া কান্দির ডোম পাড়া, টানা তিন মাস কাজ করতে হবে। প্রথম প্রথম অস্বস্তি লাগলেও এক মাস যেতেই ওদের সাথে মানিয়ে নিয়েছিলাম, সেই সাথে ওদের জীবনাচারণ নিয়ে ঘাটতে গিয়ে আবাস গেড়েছিলাম ডোম পাড়ারই একটি বাড়িতে, ওদের সাথে নিবিড়ভাবে মিশে গিয়েছিলাম আমি। সেই কাজ করতে গিয়েই বুঝে নিয়েছিলাম এখানে শুধু আমি পেটের দায়েই আসিনি, এসেছি মনের খোড়াকের জন্য। সেই থেকে আমার, “সূর্যাই ডোম ও রাম্বা আখ্যান”-এর সাথে পথচলা।
২০০৮ সালের মার্চ মাসের দিকে, প্রথম উপন্যাসের প্লাটফর্ম চিন্তা করি ডোমদের নিয়ে, সেই চিন্তার ফসল আজকের “সূর্যাই ডোম ও রাম্বা আখ্যান”। তবে আপনাদের জানানোর জন্যই আমার এই সামান্য বাচালতা, আমি ইতি টানছি আমার এই উপন্যাসটির, আর মাত্র একটি পর্ব বাকি আছে, আপনারা আমার সাথে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। আপনাদের যে অপরিসীম ভালোবাসা পেয়েছি তা কখনো ভুলবার নয়। খুব শীঘ্রই উপন্যাসটির বই আকারের অবয়ব কলকাতা থেকে আমার হাতে আসবে, বই আকারে উপন্যাসটি বের হচ্ছে কলকাতা থেকে। সোনেলার যারা আমার নিয়মিত পাঠক ছিলেন, আমার চলার পথে নিয়মিত বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন, তাদেরকে আমি বই পৌছে দেবো। সবাইকে ধন্যবাদ।
১৪টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় একটা কোচিং এ যেতাম। ক্লাসের জানলা ঘেষেই একটা ডোম পাড়া। ফাকীবাজ স্টূডেন্ট হিসাবে মন ওখাণেই থাকতো। সারাদিন ঝগড়াঝাটি আর কিচির মিচির, ভাষা বোঝার চেস্টা করতাম, আর জামের সিজনে ওদের বিশাল জাম গাছটা থেকে জাম কিনে নিতাম। আপনার সিরিজটা পড়তে তাই কখনও বিরক্তি আসেনি। উপন্যাসের জন্য আগাম শুভেচ্ছা। ভালো লেগেছে অবশ্যই।
সাতকাহন
ধন্যবাদ শুন্য।
খসড়া
ভাল লাগলো আপনার ছোট্ট কথা। এত ব্যাস্ততার মাঝেও যে আপনি লিখেছেন এত বড় ও সুন্দর একটি উপন্যাস এটাই বড় ব্যাপার। সবচেয়ে বড় কথা বিরক্ত লাগেনি পড়তে বা ঝুলে যায় নাই । আপনার বই বাজারে আসুক এই কামনা করি।
সাতকাহন
ধন্যবাদ খসড়া।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সবগুলো সিরিজই ছিল চমৎকার পটভূমি নিয়ে তাছাড়া আপনার লিখুনির শিল্প অনেক উচু তাই পড়তেও ভাল লেগেছিল।ধন্যবাদ আপনাকে ।
সাতকাহন
ধন্যবাদ, মনির।
মিসু
এত ব্যাস্ততার মাঝেও আপনি যে এখানে এসেছেন, এতেই আমরা খুশি।
সাতকাহন
ধন্যবাদ, মিসু।
স্বপ্ন
আপনি পিএইচডি করছেন? শ্রদ্ধা আপনার প্রতি। আপনার পুরো উপন্যাসটি পড়বো ভাইয়া।
সাতকাহন
ধন্যবাদ স্বপ্ন, নামের পূর্বে ড-এ ডট লাগিয়ে কোনো মতে জাতে ওঠা আরকি।
ব্লগার সজীব
আপনার উপন্যাসের প্রতিটি পর্বই পড়া হয়, শুধু মন্তব্য করা হয়না। শেষ পর্বের পরে পুরো উপন্যাসটি একদিন পড়বো।
সাতকাহন
ধন্যবাদ সজীব।
জিসান শা ইকরাম
আপনার এই উপন্যাসটি সোনেলার একটি অমুল্য হিসেবে থাকবে।
এর ঘটনা, চরিত্র গুলো এঁকেছেন আপনি নিপুন ভাবে।
নিজে এদের মাঝে থেকে রপ্ত করেছেন এদের কথা, জীবনযাত্রা
যা উপন্যাসে স্থান পেয়েছে।
আমাদের সবার ভালো লাগছে এটা ভেবে যে,
বই আকারে প্রকাশের পুর্বেই আমাদের এখানে প্রকাশ পেয়েছে।
শুভ কামনা।
সাতকাহন
ধন্যবাদ জিসান ভাই।