সুবর্ণলতা

নিবিড় রৌদ্র ২২ মার্চ ২০২২, মঙ্গলবার, ০৯:১৭:১৩পূর্বাহ্ন সাহিত্য ৩ মন্তব্য

সুবর্ণলতা,

ঘুমের আবেশে অবেশেষে গতরাতে স্বপ্নে পৌঁছে গিয়েছিলাম তোমাদের গ্রামের পাশে যে গ্রামটি-

সেই গ্রামে; সোনামুখী, রায়কালি নাম, না কি তুলসীগঙ্গা, নাগরনদীর তীরবর্তী গ্রাম আমার এইমুহূর্তে ঠিক মনে পড়ছে না তার নামটি।

সেখানে মাটির ঘর একটা থেকে আরেকটা কিছুটা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে,

মাঝখানে শিম আর মটরশুঁটির ছাউনিতে ঘনসবুজ ছায়া

বুনো হাতির মত কান নেড়ে নেড়ে নেমে আসে তপ্ত দুপুর ছাড়িয়ে,

সারাদিন পুকুর পাড়ে ঘাসে গলা ডুবিয়ে রাখে মাতাল ঘাস ফড়িঙের ছানাপোনা।

জলার ধারে যতদূর চোখ যায় কচুরিপানার সমাবেশ, দেখলে মনে হয়-

তারা আমাদের পূর্বপুরুষদের মতই অসহায়, সহায় সম্বল হারিয়ে

সহস্র মাইলের স্রোতে ভেসে এসে ভিড়েছে তোমাদের প্রাকৃতিক শরনার্থী শিবিরে,

মুখে নেই কোন ক্লান্তি কিংবা পরাধীনতার ছাপ; উপরন্তু-

ফুলেল-নীল পতাকার মিনারের নীচে বেঁচে থাকার সুবিশাল প্রত্যয়ের

সজীবতা উঁকি দেয় তাদের।

আমার দুইদিন দুইরাত কেটে গেছে ইতিমধ্যে ঘোরের ভিতর ঘুরে ঘুরে

জলপাই আর পেয়ারা বাগানের সাথে কোন সখ্যতা গড়ে উঠেনি এখনো।

রাত নয়টা বেজে গেলেই যেখানে নীরবতার প্রাচীরে শুরু হয়ে যায়

জোনাকিদের মৌন মিছিল,

সেখানে নিজেকে ভীষণ বিমর্ষ একা এক সমুদ্রের মত মনে হয়, সুবর্ণলতা;

অথচ তোমার আমার দূরত্বে এখনমাত্র কয়েক মাইলের ব্যবধান!

সীমান্তে তোমার সুচারু সুঢোল বক্ষের মত স্নিগ্ধ পাহাড় দেখে

আমার মনে হয় তুমিই দাঁড়িয়ে আছো উদ্যত মস্তকে,

তোমার শক্তিমান দুই উরুসন্ধি গোধূলির আলোর মত আরো

লাবণ্যময় করে তোমাকে, আমার চোখে।

আকাশে নবমীর চাঁদ, মৃদু চাঁদোয়ায় আঙ্গিনায় কানামাছি খেলে শরতের মেঘ,

আমি অদূরে একটা বাঁশের মাছায় বসে কৃষ্ণ কড়ইয়ের পাতায় ঘুম দেখি-

হাওয়ায় দোলে ফুলে ফুলে। আকাশে তারার পসরা।

ওহ ভাল কথা, বলতেই ভুলে গেছি-

আসলে যে বাড়িতে আমার আশ্রয় হয়েছে সেটা প্রবোধ মন্ডলের বাড়ি,

এখানে কি করে এলাম, কোথায় প্রবোধ মন্ডলকে পেলাম

সে কথা স্বপ্নের চেয়ে অধিক স্বপ্নের দখলে বিধায়

আমি ব্যক্ত করতে পারছি না, এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করাটাই বোধয় সমীচীন।

এইটুকু মনে আছে যে, সাধারণ স্বচ্ছল কৃষক মন্ডলকাকা, বহুদিন পর শহর থেকে গ্রামে গেলে

ভুল করে তার সমস্ত বাড়ির আঙ্গিনাটাকে আমাদের খামারবাড়ি ভাবতে হতে পারে।

মন্ডল কাকার একমাত্র ছেলে দুলাল সারা সন্ধ্যা দেশী মদের হাড়িতে ভাসে,

আমি তার কাছ থেকে আনমনা নেশার এক সুযোগে জেনে নিয়েছিলাম

তোমাদের গ্রামে যাওয়ার সহজ রাস্তাটা।

সকাল হলে সে নিজেও যাবে সঙ্গে, বলেছিল দুলাল, শুনে আমার

সেই উল্লাস অথবা অভিলাসে সারারাত ঘুম আসেনি, স্বপ্নে; স্বপ্নে

আমার আর সকাল আসেনি সুবর্ণলতা তোমার অঙ্গে মৌমাছি-বিলাসিতা দেখার!

তবে এতটুকু স্পষ্ট মনে আছে রাতের অস্পষ্টতায়

তোমার চোখের মতই দূর থেকে দেখা তোমাদের গ্রাম, তোমাদের ধাম,

তোমার বিস্ময়ী কুঁচকানো ভ্রু যেনো তোমারই গ্রামের আকাশ।

এখন আমার ঘরের জানালায় কার্ত্তিকের রোদ এসে পড়েছে

অস্থিরতার অস্থি ছুঁয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গে, আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারি

বয়সের বলিরেখায় বছর ঘুরে আমারও জন্মের একটা তারিখ আসে এবং

বিগত জন্মদিনের রাত ছেড়ে আসা কোন একটি সকালের চিহ্নেও তুমি নেই, ছিলে না

যা আছে জন্ম থেকে আজন্ম একটি অবিস্মরণীয় আক্ষেপ,

একটি আসন্ন অনাগত মরণ;

তবে আমার প্রচন্ড ইচ্ছে সুবর্ণলতা, দেখো

পরের জন্মে তোমার গ্রামদেশে উষ্ণ আয়ুরেখা হব

তোমার সারা শরীর জুরে কেবল আমি থাকব, থাকবে আমার বিচরণ।

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ