সীমার প্রথম প্রেম-সে আর ভালবাসবেনা

........................সীমা সারমিন.......................

বাবার চাকরির সুবাদে থাকতে হয়েছে অনেক জায়গায়। পড়াশুনা করতে হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। পুরাতন বন্ধুদের জেদের কারনে এসেছিল facebook এ ২০১১ সালে। Account টাও খুলে দিয়েছিল এক বন্ধু। নানা বিধ ঝুট ঝামেলার কারনে fb তে আসতে পারেনি, খুলেও দেখেনি account টা দেখতে কেমন। ২০১৩ সালের জুন মাসে পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের জোরে fb ব্যবহার করতে শুরু করে।

Fb এর কিছুই সে বোঝে না। নিজে নিজে অনেক চেষ্টা করে সে নতুন একটা id তৈরি করে কিন্তু সে ঠিক করে, বন্ধুদের তৈরি id টাই সে ব্যবহার করবে। Pass Word বদলিয়ে নেয় ও বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে। সে অনেক আনন্দের সাথেই ব্যবহার করতে থাকে fb , পুরাতন বন্ধুদের ফিরে পেয়ে সে মহা খুশি।

ইতিমধ্যে তার বেশ কিছু বন্ধু তৈরি হয় fb তে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যারা ছেলে বন্ধু হয়েছিল সবাই ছিল তার ১,২ অথবা ৩ বছরের ছোটো। আর যারা মেয়ে বন্ধু হয়েছিল তারা অধিকাংশই ছিল ভুয়া। fb এর এই ভুয়া বন্ধুর জটিলতা বুঝতে পারার পর সে ভুয়া মনে হওয়া বন্ধুদের বাতিল করে দেয়।

জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে সে তার fb এর news feed এ একটা ফটো দেখতে পায়। ফটোটা সে ঠিকভাবে না দেখেই দেখল যে দিয়েছিল তার প্রোফাইল ফটো। ফটোটা ছিল পাশ ফিরে তোলা একটি ফটো। সে ভেবেছিল এও নিশ্চয়ই ছোটই হবে, ভাবতেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে দেয়। তার পর অবশ্য সে এভাবে আর কখনই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়নি।

ছেলেটি রিকুয়েস্ট গ্রহণ করে chat এ বার বারই প্রশ্ন করছিল তাকে কিভাবে খুঁজে পেল। বলেছিল, কিন্তু সে বিশ্বাস করছিল না কারন ছেলেটির কোন বন্ধুই তার বন্ধু ছিল না। Chat এ যখন তার সাথে কথা বলছিল তখন ছেলেটি বলেছিল সে ছোটো। সে বলেছিল সে পড়াশুনার চেষ্টা করছে। সীমা ভেবেছিল ছেলেটি নিশ্চয় admission test দিবে। অনেক চ্যাট হয় তাদের মধ্যে, হটাত ছেলেটি বলে, সে সীমার থেকে বড়। সীমা লেখালেখি করত তবে শুধুই fb তে, ছেলেটির কথা শুনে সে তার ওয়াল এ গিয়ে শুধু সে কোথায় পরে সে সম্বন্ধে জেনে আসলো।

ইতি মধ্যেই অনেক কথায় তাদের চ্যাটেই তরক লাগত , সীমা বলেছিল আপনার সাথে আমার কখনই ম্যাচিং হবেনা,ঝগড়া হবে ৯৯%। ছেলেটি বলে, না ঝগড়া হবে ১% আর মিল থাকবে ৯৯%, ছেলেটি বলেছিল সে এক হলুদ পরীকে ভালবাসে। সীমার বরাবরি হলুদ রং এর উপর দুর্বলতা ছিল। সে অনেক জেদ করে হলুদ পরীটার নাম জানার জন্য কিন্তু ছেলেটি বলে না। ছেলেটি বলে হলুদ পরী তাকে ভালবাসুক আর না বাসুক সে তাকে ভালবাসে।

এক সকালে ছেলেটি চ্যাটে বলে- এই যে হলুদ পরী কেমন আছো? সীমা অবাক,সে বলে কে হলুদ পরী? ছেলেটি বলে তুমি তুমি আমার হলুদ পরী,ছেলেটি তাকে নাম দিল হলুদ পরী, কারন যে ফটো গুলো সীমার সে দেখেছিল সবগুলোই ছিল হলুদের মত একটা জামায়।

সীমা ভাবল কথাবলে দেখা যাক ছেলেটি কেমন। সে ছেলেটিকে বলল কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো, আপনার ফোন নম্ববারটা কি দেওয়া যাবে? ছেলেটি নম্ববার দেয় ও সীমার কাছে নম্ববার চায় ,সীমাতো পরে গেলো ঝামেলায় সেতো ফোন দিতো একটা বন্ধ নম্বার থেকে। ছেলেটি বার বার নম্বার চাচ্ছে,সীমা বলছে সে ফোন দিবে কিন্তু ছেলেটি শুনছে না, তার নম্ববার নেওয়া হয়েছে, তাকেও নম্ববার দিতে হবে। সীমা ঝট করে তার একটা বন্ধ নম্ববার দিয়ে দিল ও সাথে সাথেই নম্ববার টা ওপেন করল কারন সে জানত ছেলেটি তখনি তাকে ফোন দিবে।

ছেলেটি সত্যি সীমাকে ফোন দিল, আর বলল সঠিক নম্ববার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। সীমা তখন বলেছিল সে বেস্ত আছে পরে কথা বলবে কারন তার মা পাশেই ছিল। সীমার বন্ধ নম্বরে তো কোন টাকা নেই এখন  সে কিভাবে ফোন দিবে ,সে তার আসল নম্বার টা দিয়ে ফোন দিল ও বলল এটা তার আম্মুর নম্বার।

সীমা যত বারি ফোন দিতো অবাক হতো ,কারন তার ফোনটা যাওয়ার আগেই রিচিভ করত ছেলেটি। সীমা জিজ্ঞাসা করল আপনি কিভাবে ফোন রিচিভ করেন বাজার আগেই। সে বলল বাজে তো , কিন্তু সীমা জানত ছেলেটি অপেক্ষাই করে থাকতো ফোনের জন্য যে কারনে ফোন বাজার আগেই রিচিভ করতে পারত ছেলেটি। ছেলেটি সীমার কাছে নাম চাইল , সে বলল সে সীমাকে নাম দিয়েছে হলুদ পরী, তো তাকেও একটা নাম দিতে হবে। সীমা কল্পনার জগতের একজন মানুষ সে স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে আর প্রতিনিয়তই সে এক অপূর্ব রাজপুত্রকে দেখত তার স্বপ্নে, যেটা তার- ছেলেটির সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায়, তাই সে ছেলেটির নাম দেয় ‘স্বপ্ন’।

সীমা এখন অব্ধি ছেলেটির ফটো দেখেনি, ভাবল যার সাথে কথা বলল তাকে দেখা উচিৎ। ১৫ জুলাই রাত ১২.৫ মিনিট, সে গেলো ছেলেটির fb ওয়ালে, ছেলেটির ফটো দেখে ভালই লেগেছিল তার, সে ফটো গুলতে লইকে দিচ্ছিলও। তখন তার hsc এর এক ফ্রেন্ডকে সে চ্যাটে বলছে তার একটা ছেলেকে ভাললেগেছে। তার বন্ধু তাকে বলল সে জানে, কারন লইকে দিলে তার হোমে দেখাচ্ছে। বন্ধু সীমাকে জিজ্ঞাসা করল যদি এখন অন্য কেউ তাকে প্রপস করে তখন সে কি করবে, সীমা বলে অন্নকে না বলে দিবে।

সীমা তার সেই পছন্দ হওয়া ছেলেটির বেশ কিছু ভালো লাগা ফটো গুলো নেয়। সীমা ছেলেটির বেশ কিছু কথায় আকৃষ্ট হয়েছিল, আবার বেশ কিছু কথায় নিজে অনেক অপরাধ বোধ করেছিলো।

সীমা প্রেম ভালবাসা নামক অতভুত জিনিস টার সাথে কখনই জরাতে চায়নি তবুও কিভাবে জেন ভালবেসে ফেললো ছেলেটিকে। সে ভাবল যা করবে অবশ্যই সবাইকে জানিয়েই করবে, বাবা-মা অনেক রাগী কিন্তু ও সত্তের কাছে কাউকেই ভয় পায় না। প্রথমে সে তার মা ও ছোটো ভাইয়াকে ছেলেটির কথা বলল ও ফটো দেখালও, মা ছেলেটির বাড়ি দূরে শুনতেই বলে দিল হবে না। সীমার মন খুব খারাপ হয়ে গেলো তার পর আবার সে সাহস নিয়ে বাবাকে ছেলেটির ফটো দেখিয়ে বলল আব্বু দেখত ছেলেটি কেমন? বলার সাথে সাথেই বাবা বলল এটা কে? সে বলে দিল, বাবা তো রেগে মেগে শেষ। সীমা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল আব্বু আমার মনে হয়েছে কাউকে ভালবাসলে বা পছন্দ করলে বাবা-মা কে জানানো উচিৎ তাই জানিয়েছি, এতে যদি তোমরা খারাপ মনে করো আমার কিছু করার নাই, আমার কর্তব্য আমি করেছি বাকিটা তোমরা জানো কি করবে।

সীমা চেয়েছিল ও যাকে ভালবাসবে মন প্রাণ দিয়েই ভালবাসবে যেন ওর ভালবাসা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালবাসা হয়। ও প্রতিনিয়ত ছেলেটির ফটো দেখত ও ফটোর সাথে সাথে কিছু গান শুনত কিন্তু এতে সে এক অতভুত কষ্ট অনুবভ করত।

বাবা তাকে বলেছিল অতি সুন্দর ছেলেরা ভালো হয়না, মেয়ে দের সাথে প্রতারণা করে, এমনিতেই ছলনা করে, কিন্তু কোন কথাই তার কানে যেতনা। সে ভাবত সে যদি কারো ক্ষতি না করে তবে কেউ তার ক্ষতি করবে না।

সে বাবার কথাকে তেমন গ্রাহ্য না করলেও ভেবেছিল, একবার অন্তত একটু পরীক্ষা করা উচিৎ। যেই ভাবা সেই কাজ সীমা তার নিজের তৈরি সেই fb  account টাতে যায় ও সংশোধন করে তার এক বান্ধবীর ফটো দিয়ে, তার সেই পছন্দের ছেলেটিকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। ছেলেটির সাথে সে দুই id থেকেই এক সাথে চ্যাট করে যেন কোন সন্দেহ না থাকে। যতই সে এভাবে চ্যাট করত তার অনেক খারাপ লাগতো। এক পর্যায়ে সে ছেলেটিকে সব সত্য কথা বলে দেয়, ছেলেটিও অবশ্য ক্ষমা করে দেয়।

এর মাঝে ছেলেটি সীমাকে একবার ব্লক করেছিলো। অনেক রিকুয়েস্ট এর পর ছেলেটি তাকে ব্লক থেকে মুক্ত করে, এতেও হল এক সমস্যা, ছেলেটি যখনি কোন মেয়ের ফটোতে কিছু বলত তখন সীমার খুব খারাপ লাগতো, সীমা ছেলেটিকে unfriend করে দিল আর ভাবল বাহির থেকেই সে তাকে দেখবে, এতে সে হয়ত কষ্ট পাবে না। ছেলেটিকে সে সবি বলে কিন্তু ছেলেটি সীমাকে বাহির থেকেই ব্লক করে দেয়। সীমা তো বিপদে এখন সে ওকে কিভাবে দেখবে কি ভাবে কথা না বললেও বুঝবে ভালো আছে। একটাই তো মাধ্যম শুধু ফোন যদি নম্বার পরিবর্তন করে দেয় তবে সে কিভাবে তার খোজ খবর জানবে। সে অনেক চেষ্টা করে ছেলেটির দূরের ২ জন বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করল শুধু এই ভেবে, চিরকাল যতদিন সে বাঁচবে যেন তার খোজ নিতে পারে।

ছেলেটি ব্লক করলেও কি হবে সীমা অনেক ভালোবাসতো তাকে, তাই সে নতুন করে আবার একটা id তৈরি করল শুধুই তাকে দেখার জন্য। তার কোন কার্যক্রমি ছিলনা ওই id টাতে। সীমা ওই id টা থেকে তার বোনকে দেখে ও তার বোনকে নিয়ে কয়েকটা কবিতা লিখে ফেলে। কিন্তু সে ওই কবিতা গুলোকে কিভাবে ওর বোনকে দেখাবে। অনেক ভাবে ঠিক হবে-কি হবে না তার পর মনে পরে যায় একদিন সে বলেছিল ছেলেটিকে, ওর বোনকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাবে তখন ছেলেটি বলেছিল পাঠাও, সেই কথা ভেবেই সে ওর বোনকে sms করে ও কবিতার লিঙ্ক গুলো দিয়ে দেয়। ছেলেটি ওর বোনকে ব্লক করে রেখেছে সীমার id থেকে যেনও না দেখতে পারে, সীমা জানত যদি ছেলেটি জানতে পারে তার নতুন id এর কথা, তবে ছেলেটি ওই id টাও ব্লক করে দিবে, তার পরো সে মিথ্যা লুকাতে চায়নি তাই ছেলেটিকে সে আবারো সব বলে দেয় আর ছেলেটিও আবারো তাকে ব্লক করে দেয়।

সীমা কখনো ভয় পেতনা সে ভাবত সত্তের মাঝে কোন ভয় নেই যা আছে মিথ্যার মাঝে।

সীমা কেমন সেটা না হয় নাই বললাম , সেটা জানে শুধু তার আশেপাশের মানুষ যারা তাকে উপলব্ধি করেছে। ভালবাসা তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে, এই ভালবাসার জন্য সে যেমন অনেক আপন মানুষের কাছ থেকে দূরে চলে গিয়েছে, তেমনি যাকে ভালবাসেছে সেই মানুষটার কাছ থেকেও পেয়েছে অনেক কষ্ট। হয়তো অনেক ভালবাসার পরিণতি কষ্টই হয়।

সে এখন ঠিক করে নিয়েছে সে আর কাউকে কখনই ভালোবাসবেনা যদিও সে জানে ছেলেটিকে কখনই সে ভুলতে পারবে না, তবুও মিথ্যের ভুলে থাকার খেলায় মেতে থাকতে দোষ কি, এতে যদি কারো মঙ্গল হয়।

 

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ