বাড়ির বড় বোনগুলো খুব অত্যাচারি হয় মনে হয়। ওরা যা ইচ্ছা তাই করে, ছোট বোনগুলোরে পাত্তাই দেয় না। কতো যে জেদ করতে হয়, তাদের সাথে কোথাও যাওয়ার জন্য তার হিসেব নেই । তবুও নিতে চায় না এই বড় বোনগুলো কোথাও বেড়াতে। রীতুর ছিল ফুফাত, খালাত ও নিজের মিলায়ে কয়েকটা বড় বোন। ওরা কোথাও নিতে চাইত না আমাকে। আমিও কম জিদ করতে ছাড়তাম না, আমায় না নিলে আব্বাকে বলে দিব। ব্যাস কাজও হয়ে যেতো। একবার ওরা ঠিক করল সিনেমা দেখতে যাবে। তিনটা থেকে ছয়টা শো। আমিও জিদ ধরলাম ওদের সাথে যাব। ওরাও নিবে না ঠিক করলো। কারণ আমাকে ওরা নিয়ে গেলেও আব্বাকে বলে দিব, না নিয়ে গেলেও বলে দিব। আর সিনেমা দেখার কথা জানতে পারলে,আব্বা সবগুলোকে দিবে ধ্যাতানি। ওরা দুপুরের খাওয়ার পর রেডি হয়ে রিক্সা নিয়ে বের হইছে। ওরা আমাকে ঘুমাতে বলে বের হয়ে যায়। আমিও পিছন পিছন দৌড়াতে থাকি। অনেক দূর যাওয়ার পর, ওরা আমাকে রিক্সায় তুলে নেয়। আমি চোখ মুছতে মুছতে যেতে লাগলাম। এই প্রথম আমার সিনেমা হলে যাওয়া। *সবুজ সাথী* সিনেমার নাম। কিন্তু এখানেও আমার জিদ শুরু হল। আমি সবার সামনে বসব। আপা বুঝালো অনেক। কে শোনে কার কথা! সামনেই বসব। আপা দিলও গাল টানা। শুরু করে দিলাম আরো কান্না। বাধ্য হয়ে আপা আমাকে সামনে বসতে দিল। সিনেমা শুরু হল, সিগারেটের গানের এ্যাড দিয়ে। ওরে বাবা এতো বড় টিভি ! আমি তো বসেছি একেবারে সামনে। একবার আমি বামে তাকাই একবার ডানে তাকাই। পুরো পর্দার ছবি ভালমতো আর দেখতে পাচ্ছি না। কিছুক্ষণ পর মাথাব্যথা শুরু হল। এখন জিদ ধরলাম বাসায় যাওয়ার। এবার চুলটানা খাইলাম। বাসায় এনে দিলো আরো কিছু উত্তম মাধ্যম।
প্রথম সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা তাই কখনো ভুলিনি।
১৬টি মন্তব্য
আবু খায়ের আনিছ
জীবনে একবার সিনেমা হলে সিনেমা দেখেছি তাও গত মাসে। সিনেমা দেখার চেয়ে ছিঃনেমাই দেখেছি বেশি, তাও আবার শহরের নামদামী একটা সিনেমা হলে। দর্শক নাই বললেই চলে, খুব কম। তার মধ্যে আমরা তিনবন্ধু।
মৌনতা রিতু
তবে অনেক সিনেমা আছে, যা সত্যি মনের খোরাক যোগায়।
বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখার মজাও আলাদা।
আবু খায়ের আনিছ
সেটা অবশ্যই, ভালো সিনেমা পেলে সবাই মিলে দেখি।
জিসান শা ইকরাম
উত্তম মাধ্যম খেলেও আপনার জেদ তো আপনাকে জিতিয়ে দিতো দেখতে পাচ্ছি।
আমার প্রথম সিনেমা দেখার কথা ভুলে গিয়েছি।
মৌনতা রিতু
সত্যি এখস হাসি পায় সেই সব জেদের কথা চিন্তা করে। একবার খুলনা থেকে বড় আপা একটা জামা এনেছিল। সুন্দর ছিল জামাটা। কিন্তু জামাটা কেন বড় ? সেই দুঃখে আমার কান্না শুরু। ক্লাস তখন সিক্সে পড়ি। সারাদিন ভ্যা ভ্যা করে কেঁদেছিলাম, আব্বা না আসা পর্যন্ত।
ইনজা
মজা পেলাম।
মৌনতা রিতু
ধন্যবাদ। 🙂
রিমি রুম্মান
আমার চোখে বড় বোনরা সহজ সরল হয়।ছোটগুলা কিন্তু পাজী হয়। তবে, আপনার জেদের কাছে তো হার মেনেছে ! 🙂
আমার প্রথম ছবি “ছুটির ঘণ্টা”
মৌনতা রিতু
আমি ওটি মজা করেই বলেছি। আমার বড় আপা সত্যি মাটির মানুষ। আমার সব আল্লাদ পূরণ করত। আমাকে এখনও খুবই ভালবাসে। আমার বড় বাবু হওয়ার সময় প্রসব ব্যাথায় যখন নিজের হাত শক্ত করে কামড়ে ছিলে ফেলেছিলাম, আপা বলছিল,” আমার হাত কামড়া”। আমার সব কাজে এখনো আপাকে চাই। আপা আমার আর একটা মা।
লীলাবতী
আপনি যে ছোটবেলা থেকেই জেদী তা এই লেখা প্রমাণ করে 🙂
মৌনতা রিতু
তাই না !
নীলাঞ্জনা নীলা
আপনার প্রথম সিনেমার কাহিনী শুনে মনে পড়ে গেলো নিজের কথা। ময়মনসিংহ শহরের সিনেমাহলে প্রথম সিনেমা দেখা। নাম “ছুটির দিনে।” জোরে কাঁদতাম না, কিন্তু আমার ফোঁপানো শুনে পেছন-সামনের মানুষ বলতে লাগলো “বাচ্চাটা কষ্ট পাচ্ছে, ওকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন?”
মৌনতা রিতু
সেই কথা আর বলো না, এই অভ্যাস এখনো আমার। আমার ছেলেরা এই নিয়ে হাসে। জাফর ইকবাল স্যারের সেরেনা পড়ে কি যে কান্না আসতেছিল, ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদেছি, তাই নিয়ে বাসায় হাসাহাসি। এতো বুঝাই এসব তো সিনেমা, গল্প, তবুও কান্না আসে। আর ছোটবেলায় মারামারি দৃশ্যে আমি খুব মজা পেতাম।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সবুজ সাথী সাদাকালো সুন্দর একটি সামাজিক ছবি।ছবিটি অত্যান্ত আবেগে ভরা।সুন্দর অনুভুতি ।
মৌনতা রিতু
শাবানা আর জসিম ছিল মনে হয়।
আগে ভি সি আরে সিনেমা দেখতাম। মামার বাসায় ছিল রঙিন টিভ। আমাদের ছিল সাদাকালো টিভি। তাই মামার বাসায় পাশে থাকায় ওখানে টিভি দেখতাম। মামানি ছিল বড় আপাদের বান্ধবীর মতো। কিন্তু মামাকে খুবব ভয় পেতাম। যেদিন দোকান থেকে ভিসিআর ক্যাসেট ভাড়া আনতাম, মামা ঐ দিনই দেরি করে বাইরে যেতো। কি করে যে বুঝত!
তবুও সেই দিনগুলি ছিল খুবই প্রানবন্ত।
ব্লগার সজীব
আপনার জেদের কাছে তো সবাই পরাজিত দেখছি 🙂