বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শেষ কোথায়, তা একটি জটিল প্রশ্ন যার কোন সহজ উত্তর নেই। এই সহিংসতার অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় গোঁড়ামি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উস্কানি এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য। চলুন এবার একেক করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শুরু থেকেই মনে করি। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর, ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠিত হয়। এই ঘটনার ফলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর উপর সহিংসতা শুরু হয়। এরপর দেখা যায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ এ সালটার নাম শুনলেই আজো অনেকের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে।১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক সহিংসতা চালায়। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৯৯২ সালে, ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়।২০০১ সালের ৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়।২০১২ সালের ৩১ মার্চ, সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটে।২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতে ইসলামীর সহ-সভাপতি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে একাত্তরের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ডের সাজা প্রদান করে। এই সাজার পরে জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের উপর হামলা চালায়।২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর, কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে কুরআন অবমাননার অভিযোগে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়। এই সহিংসতায় সারাদেশে অন্তত ১০ জন নিহত এবং কয়েকশো আহত হয়। পরিশেষে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা ছিল। এই সহিংসতায় অন্তত ১০ জন নিহত এবং কয়েকশো লোক আহত হয়।২০২২ সালের ২ জুন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় একটি ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনায় নিহতদের জন্য শোকসভায় পুলিশের উপস্থিতির প্রতিবাদে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া বাজারে বিক্ষোভ হয়। এই বিক্ষোভের মধ্যেই ফেসবুকে একটি পোস্টের অভিযোগে আকাশ সাহা নামে এক ব্যক্তির বাড়ি ও দোকানঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে এলাকায় সহিংসতা শুরু হয়। এখানে এই সহিংসতার দিকে লক্ষ্য রেখে বিবেচনা করলে বোঝা যায় উদ্দেশ্যমূলক ভাবে বার বার হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর টার্গেট করা হচ্ছে কিন্তু কেনো? এই পরিক্রমা ছিল ১৯৪৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা।এই সহিংসতার চলাকালীন বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে কাজ করেছেন কিন্তু কখনো কি মনে হয় নি এই সহিংসতার মূল কারণ কি এর প্রতিকার কি হতে পারে‌ প্রতিবছর বা কোন না কোন সময়ে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসান ঘটানোর জন্য কিছু কারন আমি উপলব্ধি করতে পারি যেমন ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করতে হবে, ধর্মীয় সহনশীলতা ও বোঝাপড়া বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উস্কানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে হবে।এই পদক্ষেপগুলি বাস্তবায়ন করা হলে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অবসান ঘটানো সম্ভব হবে।এই না হলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত এটাই যে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কমবে না বরং দিন দিন বাড়বে।এই সমস্যার সমাধানের জন্য, সরকার, ধর্মীয় নেতারা, এবং সাধারণ মানুষ সকলেরই ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারকে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সহিংসতা দমন করতে হবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য কাজ করতে হবে। ধর্মীয় নেতাদেরকে তাদের অনুসারীদের মধ্যে সহনশীলতা ও বোঝাপড়া প্রচার করতে হবে এবং সাধারণ মানুষকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য কাজ করতে হবে এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শেষ কোথায়, তা একটি দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য। তবে, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য এখনই কাজ শুরু করা করতে হবে যাতে পরবর্তীতে কোন সমস্যার সম্মুখীন না হয় বরং আমরা বিদ্রোহী কবি কবিতার ভাষায় বলতে পারব

"মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান। মুসলিম তার নয়ণ-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ"

 

শিক্ষার্থী সৌরভ হালদার ব্যবস্থাপনা বিভাগ সরকারি ব্রজলাল কলেজ খুলনা

skhsouravhalder@gmail.com

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ