সম্পর্কের টানাপোড়েন পর্ব-১০

সুপর্ণা ফাল্গুনী ২৯ মার্চ ২০২০, রবিবার, ১০:৫৭:২৭পূর্বাহ্ন গল্প ১৮ মন্তব্য

আকাশ সিদ্ধান্ত নিলো সে তন্বীর কাছে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু কিভাবে আগাবে বুঝতে পারছিলো না , যদি তন্বী রিএক্ট করে! একটা সুযোগ যখন বিধাতা দিলো ক্ষমা চাওয়ার , তাকে যেভাবেই হোক ক্ষমা চাইতেই হবে। এদিকে তন্বী দীনার প্রস্তাব গুলো নিয়ে ভাবছিলো। না সে দীনার কোনো সাহায্য নিবেনা। আর আকাশকে বিয়ে করাটা হবে একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর ক্ষতি করা আর নিজের আত্মসম্মানটা বিকিয়ে দেয়া । আত্মহত্যা 'মহাপাপ' সেটাও করবেনা। কিন্তু সে কি করবে? চারদিকে সমস্যা আর বিপদ আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে।

সে তমালের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিলো। কিছু একটা তো উপায় আসতে পারে তার থেকে। ওদিকে অফিসে ওদের দুজনকে নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে। সে রাতে তমালের সাথে সবকিছু শেয়ার করলো। তমাল বললো , 'তুমি তোমার জায়গায় ঠিক আছো। তুমি তাড়াতাড়ি ওখান থেকে ব্যাক করো । আপাতত বাবা-মায়ের সাথে থাকো। একটা পথ বের হবেই । আমি ও তোমার জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।' তন্বী তমালকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলো। ওদিকে খবর পেল ওর সেই কাজিন ওর বাবা-মায়ের খেয়াল রাখছে খুব ভালোভাবে। কাজিনের কথা মনে পড়তেই আৎকে উঠলো। বাড়িতে গেলেই ওর উৎপাত শুরু হবে।

দীনা আজ অনেক ভালো ভালো খাবার রান্না করলো। সবই আকাশের পছন্দের তালিকায় থাকা মেনু। টাকি ভর্তা, সরষে ইলিশ, গলদা চিংড়ির দোপেঁয়াজা, ভেজিটেবল রাইস, মাটন কড়াই, আলু বোখারার চাটনি। আকাশ খাবারের মেনু দেখে অবাক। সারা শরীরে যেন হিমবায়ু বয়ে গেল। দীনার ভাবগতিক বিশেষ সুবিধার মনে হচ্ছে না। তবুও এই মুহূর্তে কিছু জানতে চাইলো না। ঝড়ের আগে যেমন থমকে যায় প্রকৃতি তেমনি মনে হচ্ছে আকাশের কাছে। না জানি আজ কি আছে কপালে!! আকাশ মাথা নিচু করে সব একটু একটু খেয়ে নিল। পাশে বসে দীনা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। আকাশ যথারীতি খেয়েদেয়ে গেস্ট রুমে চলে গেল।

দীনা রুমে এসে খুব সুন্দর একটা শাড়ি পড়লো, কপালে বড় একটা সিঁদুর রাঙা টিপ দিল, দু'হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি , ঠোঁটে মেরুন কালারের লিপগ্লস, গলায় দশ ভড়ির সীতাহার , কানে ঝুমকো, মাথায় চূড় । আকাশের চোখ আজ কিছুতেই ফেরাতে পারবেনা দীনা। রুমের সমস্ত লাইট অফ করে ক্যান্ডেল লাইট জ্বালালো। জানালার কার্নিশ বেয়ে সকালের মিষ্টি আলো চোখে পড়তেই আকাশ ধরফড়িয়ে উঠলো। বেডরুমে এসে দেখলো ক্যান্ডেল গুলো নিভু নিভু হয়ে প্রায় মিশে গেছে; জানালার পর্দা সরাতেই দীনার সুসজ্জিত সাজ চোখে পড়লো। অনেক দিন পর দীনাকে এমন অপরূপ সাজে দেখতে পেলো। কতক্ষণ দেখলো হুশ নেই আকাশের। একটা চড়ুইয়ের কিচিরমিচির ডাকে সম্বিত ফিরে এলো। আকাশ দীনাকে ডাকতে গেলো নাস্তা তৈরি করার জন্য। হঠাৎ আকাশ চিৎকার করে উঠলো দীনার নাম ধরে। কিন্তু দীনা আজ আর ওর ডাকে সাড়া দিলো না। দিবে কিভাবে? সেতো আজ সবার ডাক শোনার ঊর্ধ্বে চলে গেছে।

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ