তন্বী আজ অনেকক্ষণ নীরবে ঘরের দরজা বন্ধ করে কেঁদেছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলে গেছে। চল্লিশোর্ধ নারীর এমন আবেগ, আচরণ মানায় না তবুও সে নিজেকে কিছুতেই মানাতে পারলো না। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সংসারে থাকে, কিছুদিন হলো নতুন চাকুরীর চেষ্টা করছে। আগেরটা আর ভালো লাগছিলো না তার কাছে , তাই ছেড়ে দিলো।

হঠাৎ একদিন স্কাইপে একজনের সাথে পরিচয় হলো। টুকটাক কথা বার্তা হচ্ছিলো। তন্বীর একাকীত্বের বিরহী জীবনে ছন্দপতন ঘটলো। ভালোই লাগছিলো প্রায় পঞ্চাশোর্ধ লোকটির সাথে কথা বলতে। তন্বীর বিয়েটা বিভিন্ন কারনে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলো।এ পর্যন্ত পরিবার, আত্নীয়-স্বজন, নিজে চেষ্টা করে কমপক্ষে ৫০/৬০ জন সুপাত্র দেখা হলো। তাও কেন বিয়েটা হলোনা? আসলে যাদেরকে সুপাত্র উপাধি দেয়া হলো তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে 'সু' হলেও তন্বীর কাছেই কেন যেন 'সু' থেকে 'কু' হয়ে আসে। পাত্রদের ধারণা মেয়ের অনেক ধনসম্পদ। সেই লোভেই তারা আসে, যখন জানে মেয়ের কিছুই নেই ; তখনই চম্পট দেয়।

আসলে তন্বী আহামরি সুন্দর না, তার উপরে ওর সাজুগুজু করা একদম পছন্দ না। কিছু কিছু আসে ওর সহজ-সরল মনটাকে নিয়ে ছেলেখেলা করতে। যাইহোক এই হলো এতোটা বছর একা থাকার কারণ। বিশ্বাস, ভালোবাসা আর ফিরে পাওয়া হলোনা তন্বীর। স্কাইপের পুরুষটি কথায় খুব সাবলীল, আন্তরিক। পুরুষটির নাম হলো তমাল। যদিও তমাল বিবাহিত। বৌ , দুই বাচ্চা নিয়ে সুখের, ভালোবাসার সংসার। পেশাগত কারনে সে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন।

তমালের কাছে তার পরিবারই সব। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে তেমন একটা আড্ডা দেয়না বা ভালো লাগে না তার। আর তন্বীর ঘুরতে, আড্ডা দিতে ভালো লাগে। তবুও তন্বীর সাথে কথায় কথায় সম্পর্কটা বেশ জমে উঠলো । প্রতিনিয়ত ওরা ভিডিও কলে কথা বলে, ম্যাসেজ আদান-প্রদান করে। দু'জন দু'জনের কাছে খোলা বইয়ের মতো হয়ে গেলো। দু'জনের কিছু জায়গায় খুব মিল। যেমন দু'জনেরই প্রথম ভালোবাসা ব্যর্থ, দু'জনেই লেখালেখির সাথে জড়িত, আজকালকার অত্যাধুনিকতা তাদের কারোরই পছন্দ না ইত্যাদি ইত্যাদি।

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ