শুক্লপক্ষ

রিতু জাহান ৯ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার, ০৮:৪৮:০৭পূর্বাহ্ন চিঠি ১১ মন্তব্য

প্রিয় শুক্লপক্ষ চাঁদ,

কেমন আছো জ্যোৎস্না বিলিয়ে?

তোমাকে এখন যখন লিখছি তখন তিথি অনুসারে তোমারই সময়, এখন শুক্লপক্ষ। মাথার উপর মস্ত চাঁদ। চন্দ্র শুদ্ধি। পূর্ণ পূর্ণিমা।

কৃষ্ণপক্ষে তোমাকে নজরে পড়ে না, তবে খুঁজি না যে তা নয় খুঁজে ফিরি। উপভোগের ইচ্ছায় নয় রাতের যে প্রহরগুলো আমার নিদ্রাহীন কেটে যায় গুণে গুণে সে সব মুহূর্তগুলোয় দৃষ্টি আপনাই খোঁজে ফিরে তোমায়। কারণ, এ জীবন খাতা থেকে উপভোগ নামক শব্দকে আমি কোথাও খুঁজে পাইনা আর। কৃষ্ণপক্ষ এ যেনো দুঃখের আকাশ। মেঘ থাকে না,, তবু নিকোষ কালো অন্ধকার।

 

সন্ধ্যার আকাশে তোমার পরে জ্বল জ্বল উঁকি মারে সন্ধ্যা তারা। ঘূর্ণনচক্রে ভোরের শুকতারা। যদিও ভোরে দৃষ্টি কাড়ে না তেমন একটা। যদি কখনো মোরগ ডাকা ভোরে শিউলির অভিমানে ঝরে পড়ার সময় দৃষ্টি ফেলে খুঁজে ফিরি তখন বেশ স্পষ্ট উঁকি মারে।

ভোরে আমার কথার ঝুড়ি তেমন থাকে না। ঐ যে রাতজাগা চোখজোড়া ক্লান্ত ভারি তখন। মুজে আসে সকল শৃঙ্খল ভেঙ্গে।

 

জানো?

আজকাল হেমন্তের সন্ধ্যাটা বড় ছোট্ট। ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে। আমার আজকাল চাওয়া পাওয়াই যেনো সীমিত পরিমাপের সবকিছু। কারণ, অঢেল ও তুমুল কোনোকিছুই আমার কোনোকালে সয় না। ভাগেই পড়ে না! মোহোকালের এক ভারি বস্তু যেনো আমি। দু'দন্ডকাল পার হতেই হাঁপিয়ে উঠে ফিরে চলে যায় চেনা তার সোজা পথে।

শুধু তার জন্য আমার অপেক্ষা গুলোই দীর্ঘ। তাই, সময়ের দীর্ঘ মাপকাঠি আজকাল কেনো যেনো একদম ভালো লাগে না। আমার অপেক্ষাগুলোও আজকাল টের পাচ্ছি ফিকে হয়ে যাচ্ছে। সেই আকুলতাও জোয়ারের মতো ফুসে উঠে পরক্ষণেই  আবার ভাটির টান ধরে।  কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না!

 

অথচ একসময় দীর্ঘ সন্ধ্যা চাইতাম গোধূলি জুড়ে। আকাঙ্ক্ষারা ঝড় তুলতো উথাল পাথাল।  এক পলকা দেখার সে সময়টুকুর  দীর্ঘতা চাইতাম বড্ড। চোখ চোখ পড়তেই বুকের ভিতরে হৃদপিণ্ডের আওয়াজে আমিই ডেনো চমকে যেতাম!

তাই গ্রীষ্মের সন্ধ্যা বড় প্রিয় ছিলো।

আমার সে সকল আকাঙ্খার উপর আক্রমণ চালানোর ব্যাপারে কারো উপর আমার কোনো অভিমান নেই।

আমি নির্বিকার চেয়ে থাকি আজকাল। বুঝতে পারছি স্নায়ু জীর্ণতা দেখা দিচ্ছে। স্নায়বিক অবসাদ হাতছানি দিচ্ছে। চিন্তার জালবুনে মাকড়সার মতো বাস করা দুঃখবিলাসীদের মতো এক মনকুঠির গড়ছে যেনো কোথাও। দখলদার কোনো ভূমিদস্যুদের দখলে যেনো চলে যেতে চাইছে মন জমিনের কিছু অংশ।  ক্ষতচিহ্নগুলোকে অলঙ্কার ভূষণ করতে চাইছে অভিমান।

সে অন্তরে গভীরভাবে দাগ কাটতে পারিনি বলে তার আরাধনার নই আমি।

শান্তি ও স্নিগ্ধ সুখের অনুসরনে যে পথ আমি দীর্ঘ সন্ধ্যাজুড়ে হেঁটেছি তা আসলে তার কাছে প্রয়োজনাতিরিক্ত। আর প্রয়োজনাতিরিক্ত মাত্রেই মূল্য দিতে নারাজ মানুষ।

 

আমি তোমার দিকে অপলোক চেয়ে আছি আজ। সৌন্দর্যের যে নন্দনকাননে তুমি ভিড় জমিয়েছো সেখানে আমার উপস্থিতি রাখতে চাই। তাই প্রিয় শুক্লপক্ষ চাঁদ- নৈরাশ্যের কারাগার থেকে হাত ধরে মোরে তুমি লয়ে যাও তোমার সৌন্দর্যের অমৃত আলয়ে

যেখানে লাবণ্যের কোনো পরিসীমা নেই,

শুনাবে যেথা মোরে তারা নবনব গান।

আজ আর লিখছি না,,, ভালো থেকো শুক্লপক্ষ চাঁদ।

 

ইতি,,

রিতু জাহান,, রংপুর

আজ অগ্রহায়ণ।

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ