শবানুগমন

আরজু মুক্তা ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শনিবার, ১২:৪৮:২২পূর্বাহ্ন ছোটগল্প ২৬ মন্তব্য

আশ্বিনের বৃষ্টিগুলো কুয়াশার মতো। ঝিরঝির শব্দে মন মাতাল করে। সাদা কাশবন আরও ঝকঝকে হয়। কাজ শেষে বের হয়ে দেখি, বৃষ্টি। ব্যাগে ছাতাও নেই। একটু জোরে পা চালিয়ে মোড়ে যেতে পারলেও; দোকানে চা খেতে খেতে রিকশা খোঁজাও যাবে।

চাচা, চা দেন। সাথে সিঙ্গারাও।

মা, আজ এতো দেরি যে! বৃষ্টিও যেভাবে নামছে।

কাজ শেষ হতে দেরি হয়েছে।

এই নাও চা।

একদিন চাচাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেমনে এতো সুন্দর করে চা বানান? উনি বলেছিলো, পানিতে এলাচ দিয়ে অনেকক্ষণ ফুটাই। দুধ আর চিনি আলাদা জ্বাল দিয়ে নিই। চাপাতা দেয়ার পর, বলক উঠলে দুধ চিনি দিয়ে হালকা জ্বালে বসাই। ওনার চা এক চুমুক খেলেই বুঁদ হয়ে বসে থাকা যায়। চোখ বন্ধ করে ভাবছি, কি নিয়ে গল্প লিখবো। টিউব লাইটের মতো চমকে দেখি, একজন লোক সামনে বসে। জোরে জোরে গলা খাঁকড়িয়ে থুথু ফেলছে।

আ- প- নি!!  কখন এলেন?

আপনার চায়ের ধোঁয়ার মধ্য থেকে।

কি বলেন?

মিথ্যা বলে কি লাভ?

চা খাবেন?

না, এখন খেলে ঘুম আসবেনা!

কোথায় যাবেন?

যাবোনা। এইখানে বসে থাকবো। বৃষ্টি খাবো। মেঘ খাবো। আঁধার খাবো।

ভয়ডর কম হওয়াতে, ওনার কথায় মজা পাচ্ছি। তবে কৌতূহল বাড়ছে।

আপনি খাওয়া শেষ করে কী ছবি আঁকবেন?

হুম! ছবি আঁকবো। তুমি জানলে কেমনে?

আপনার বন্ধু হতে চাই। বানাবেন?

আমার এই উসকো খুসকো চুল দেখে কেউ বন্ধু হতে চায় না।

আমার তো ভালোই লাগছে। আপনার চেহারায় লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির মিল পাচ্ছি।

তুমি ওনাকে চেনো? জানো, উনি আমার বন্ধু। উনি যখন মোনালিসা এঁকেছিলেন তখন ওনার পাশে ছিলেম। তুমি কি বলতে পারো: মোনালিসার ভ্রু নাই কেনো?

ভ্রু থাকলে ভালো লাগতো না।

আরে নাহ্। ভ্রু থাকলে ওর রহস্যময় হাসি চোখে পরতো না।

দারুণ বললেন। আব্বা, একবার জন্মদিনে মোনালিসার ছবি ফ্রেমে বেঁধে গিফট দিয়েছিলেন। আমার রাত জাগার অভ্যেস। বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছিলাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দেখি, মোনালিসার চোখ দিয়ে আলো বের হচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে ওড়না দিয়ে ওর মুখটা ঢেকে দিয়েছিলাম। সেই থেকে ঐ ছবি আর ঘরে রাখিনা।

হা---হা---হা--হা!!!

হাসছেন যে?

আমার জীবন কাহিনী শুনলে তো তুমি ভয় পাবে।

বয়সের তালে তালে ভয় কমে গেছে। বলেন। আমি শুনবো। বৃষ্টি কমতে আধাঘণ্টা দেরি লাগবে। আর এক কাপ চা খাই।

আমি তো মরে গেছি। গ্রামের লোক কবর দিতে গেলেই উঠে বসি। সবাই তা দেখে ভুত বলে দৌড় দিলো। বাড়িতে গেলাম, বৌ বাচ্চা সবাই ডরায়। সেই থেকে কবরে থাকি।

এই প্রথম লোকটার চোখে চোখ রাখলাম। ফ্যাকাসে চোখ। নির্লিপ্ত দৃষ্টি। আচ্ছা, চাচা আপনার নাম কী?

নাম মনে নাই। ভুলে গেছি। সব ভুলে যাই। খিদা লাগলে পানি খাই, মাটি খাই। দেখবা পানি খাবো। বলেই হাত বাড়ালো লম্বা করে, পানি কেমনে জানি ওনার মুখে আসলো। অবাক হলাম। ভুত না মানুষ? মাথাটা আউলায় গেলো। চোখটা ঝিম ঝিম করছে। দুই/ তিন সেকেন্ড ঝিমায় ছিলাম। চোখ খুলে দেখি লোকটা নাই। গায়ে চিমটি দিলাম। ঠিক আছি।

দোকানি চাচা, চাচা!! আপনি কই? একটু আগে যে লোকটি কথা বললো, উনি কই গেলেন?

কার কথা বলছো?

নীরব হয়ে,  রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরছি। তবে পিছন ফিরে দেখছি। যদি আবার দেখা পেতাম। পৃথিবীতে অনেক অপ্রাকৃত ঘটনা ঘটে। তার  কিছুটা অবান্তর হলেও ছাপ থেকে যায় মনের গহীন কোনে।

 

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ