কেএফসিতে সুন্দরী মহিলার সাথে কথা বলতে বলতে কুড়কুড়ে মুড়মুড়ে মুরগি চিবুতে চিবুতে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা সময়ে বৌয়ের ফোন পেয়ে বশিরের মেজাজটা অদৃশ্যভাবে তিরিক্ষি হয়ে উঠে | যেন নিটোল কাঁচের মত নিপাট সময়ে কেউ ঢিল ছুড়ল |
মুখমন্ডলের চিত্রপটে অবশ্য তা বুঝতে দেয় না |
এই সঙ্গিনীর সাথে বশিরের পরিচয় মহিলা যে অফিসে কাজ করে সেখানে কিছু লেনদেন করার সূত্র ধরে | পরিচয় থেকে আস্তে আস্তে গভীর সখ্যতা |
সঙ্গিনীকে নিজের অফিসের ফোনের কথা বলে সে বাইরে এসে বৌকে কলব্যাক করে |
~ এই শোন, তোমাকে তো বলতে ভুলে গেছি , আমার ডিভিশনের একজন প্রমোশন পেয়েছে | তার খাওয়া আজকে | বাসায় আজ খাব না |
আরো কিছু কথা বলে ফিরে আসতেই সঙ্গিনী জিজ্ঞেস করে,
- আজব তো | অফিসের ফোন এটেন্ড করতে বাইরে যাওয়া লাগে ?
~ না মানে, বাইরে গাড়িঘোড়ার শব্দে বুঝালাম যে আমি বাসার পথে অনেক দূর চলে গেছি | ইন কেইস যদি ব্যাক করার কথা বলত |
- ও |
খাওয়া শেষ হয় | সঙ্গিনী বলে ওঠে,
- এই তুমি আধঘন্টা পরে বাসায় এস | একসাথে বাসায় যাবার দরকার নেই |
এই আধঘন্টা হাতিরঝিলে চক্কর দেয়া যাক | এই ভেবে বশির হাঁটা শুরু করে |
প্রায়ান্ধকার সন্ধার ফুরফুরে বাতাসে বশিরের মনের দরোজা খুলে যায় | এই দরোজা দিয়ে সে আস্তে আস্তে এগোয় ভাবনার মঞ্জিলে |
ভাবনা গুলো কেমন ঘুড়ির মত | উড়ে | গোত্তা খায় | আবার উড়ে | আবার গোত্তা খায় |
এই টাইপের ভাবনা ফাবনা যে বশিরের আগে আসেনি তা নয় | মনের সাথে কত বোঝাপড়া হয়েছে | শেষবেশ যে লাউ সেই কদুই থেকে গেছে |
যেন নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে : এইভাবে লুকোচুরি আর প্রতারণা আর কতদিন ?
হু হু করে আসা বাতাসের তোড়ে বশিরের মনের ভাবনাগুলোকে ছক্কার গুটির মত এদিক ওদিক করায়। আচ্ছা, এই যে পরকীয়া বা নিজের স্ত্রী ব্যতীত ভিন্ন মানবীর দেহ ভোগের যে নেশা, এ কি সত্যি প্রকৃতি প্রদত্ত নাকি পুরুষের লোভের সংস্করণকেই প্রকৃতির নামে চালিয়ে দেয়া ? আবার বউকে ভালবাসবার তীব্রতা নেই বলে তাকে ছেড়ে যাবার কথাও কোনভাবে ভাবতে পারে না সে । একে কি মায়া বা করুণা বলে ?
বশির বেশি ভাবতে পারে না । তার মাথায় চাপ পড়ে । নিজের মনে কথা বলতে গিয়ে মাঝে মাঝে সে ঠোঁট আওড়াচ্ছিল । একটা লোক হঠাত এই ব্যাপারটা খেয়াল করল । সে কৌতূহলী চোখে বশিরকে দেখছিল | বশির হঠাত তাকাতেই লোকটার সাথে চোখাচোখি হল | বশিরের ধাক্কার মত লাগলো | কি তীব্র চোখের দৃষ্টি | এই রে, মনের ভাবনাগুলো আবার লোকটা পড়ে ফেলেনি তো | এহ, তাই কি হয় ? বশির মনে মনে হাসল |
সেই তীব্র দৃষ্টি বশিরের মনে সাময়িক ঘোর লাগা সৃষ্টি করে | হঠাত একটা দমকা বাতাস তাতে সুর সঙ্গত করলো | তার ইচ্ছে হল লোভের মায়াজাল কেটে বেরুবার | ঝিলের পানির মত টলটলে হবার লোভ জাগল বশিরের ।
হাঁটতে হাঁটতে বাসস্টান্ডের কাছে চলে এসেছে সে | উঠান পেরিয়ে দুই পা’র মত রাস্তার ওপাশে গেলেই বাসে উঠে পৌঁছে যাওয়া যাবে বাড়ি | কিন্তু রাস্তা পেরুবার আগ মুহূর্তে পা টা কেমন স্লথ আর ভারী হয়ে গেছে তার | পিছন থেকে লোভ নামক একটা বস্তু তাকে চুম্বকের মত টানছে |
১৯টি মন্তব্য
স্বপ্ন নীলা
হায়রে পরকীয়া। এই পরকীয়ার বলিতে কতজনের জীবন যে তছনছ হয়ে গিয়েছে –কে তার হিসাব রাখে।
গল্পটা অসাধারণ হয়েছে —— দারুন লেগেছে পড়তে
প্রত্যাবর্তন
অকৃপণ প্রশংসায় আমি আপ্লুত ।
ছাইরাছ হেলাল
পড়লাম , এ লেখায় আমি কী মন্তব্য করব বুঝতে পারছি না ।
আপনি যেমন লেখেন তেমন করে লিখুন ।
নিয়মিত লিখলে ভালই হয় ।
পড়তে পারি ।
কবিতা লিখে দিন ।
প্রত্যাবর্তন
কবিতা ?
বাপরে ! এ আমার কম্ম নয় ।
ছাইরাছ হেলাল
এমন লেখাটি বুঝি আপনার কম্মের মধ্যে পড়ে ?
ভালো লেখা পড়ার আশা রাখি ।
প্রত্যাবর্তন
এইবেলা চুপচাপ থাকি ।
মশাই
হা কবিতা লিখে দিন আমিও হেলাল ভাইয়ার সাথে একমত।
প্রত্যাবর্তন
আমি গদ্যের চাইতে কবিতা বেশি পছন্দ করতাম এককালে । এখন আর বইটই পড়া হয় না ।
লীলাবতী
চুম্বকের টান কি সে উপেক্ষা করতে পেরেছে? পাঠকের উপর রেখে দিলেন সমাপ্তি।
ভালো লিখেছেন ভাইয়া।
প্রত্যাবর্তন
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
জিসান শা ইকরাম
মনের সাথে বোঝাপরা করা খুব কঠিন ।
বশিরের মনের দ্বন্দটা ভালো ভাবেই তুলে এনেছেন।
ভালো লেগেছে লেখা ।
শুভ কামনা ।
প্রত্যাবর্তন
আসলেই মন বড় বেপরোয়া জিনিস।
অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে ।
শুন্য শুন্যালয়
একটা লোক হঠাত এই ব্যাপারটা খেয়াল করল । এই অংশটূকূ ভালো লেগেছে বেশ। ভালো লেগেছে মনের দ্বন্দ্ব। লোভ সংবরণ করা যে অনেক কঠিন কাজ।
প্রত্যাবর্তন
আপনাদের ভাল লাগাটাই আমার প্রাপ্তি ।
মশাই
এই লোভ কে নিয়ে লেখব লেখব করছি অনেক দিন ধরে কিন্তু আপনার লেখা পরে আর নূতন ঝামেলা পাকাব না। বেচে গেছি। আপনি লিখতে থাকুন অবিরত।
প্রত্যাবর্তন
লোভের ব্যাপ্তি অনেক । সুতরাং আপনি এই বিষয়ে না লিখে আমাদেরই বরং ভালো লেখা থেকে বঞ্চিত করবেন কিন্তু ।
নীলাঞ্জনা নীলা
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু , লোভকে নিয়ন্ত্রন করা আসলেই ভীষন কষ্ট । ভালো লিখেছেন ।
প্রত্যাবর্তন
হুম, লোভ বড় সাংঘাতিক ।
সঞ্জয় কুমার
লোভ কে পরাজিত হোক ,ভালবাসার জয় ঘটুক । । সুন্দর একটা গল্প ।