লোভ

প্রত্যাবর্তন ২৫ জুন ২০১৪, বুধবার, ০৩:১০:০৯অপরাহ্ন সাহিত্য ১৯ মন্তব্য

কেএফসিতে সুন্দরী মহিলার সাথে কথা বলতে বলতে কুড়কুড়ে মুড়মুড়ে মুরগি চিবুতে চিবুতে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা সময়ে বৌয়ের ফোন পেয়ে বশিরের মেজাজটা অদৃশ্যভাবে তিরিক্ষি হয়ে উঠে | যেন নিটোল কাঁচের মত নিপাট সময়ে কেউ ঢিল ছুড়ল |

মুখমন্ডলের চিত্রপটে অবশ্য তা বুঝতে দেয় না |

এই সঙ্গিনীর সাথে বশিরের পরিচয় মহিলা যে অফিসে কাজ করে সেখানে কিছু লেনদেন করার সূত্র ধরে | পরিচয় থেকে আস্তে আস্তে গভীর সখ্যতা |

সঙ্গিনীকে নিজের অফিসের ফোনের কথা বলে সে বাইরে এসে বৌকে কলব্যাক করে |
~ এই শোন, তোমাকে তো বলতে ভুলে গেছি , আমার ডিভিশনের একজন প্রমোশন পেয়েছে | তার খাওয়া আজকে | বাসায় আজ খাব না |

আরো কিছু কথা বলে ফিরে আসতেই সঙ্গিনী জিজ্ঞেস করে,
- আজব তো | অফিসের ফোন এটেন্ড করতে বাইরে যাওয়া লাগে ?
~ না মানে, বাইরে গাড়িঘোড়ার শব্দে বুঝালাম যে আমি বাসার পথে অনেক দূর চলে গেছি | ইন কেইস যদি ব্যাক করার কথা বলত |
- ও |

খাওয়া শেষ হয় | সঙ্গিনী বলে ওঠে,
- এই তুমি আধঘন্টা পরে বাসায় এস | একসাথে বাসায় যাবার দরকার নেই |

এই আধঘন্টা হাতিরঝিলে চক্কর দেয়া যাক | এই ভেবে বশির হাঁটা শুরু করে |

প্রায়ান্ধকার সন্ধার ফুরফুরে বাতাসে বশিরের মনের দরোজা খুলে যায় | এই দরোজা দিয়ে সে আস্তে আস্তে এগোয় ভাবনার মঞ্জিলে |

ভাবনা গুলো কেমন ঘুড়ির মত | উড়ে | গোত্তা খায় | আবার উড়ে | আবার গোত্তা খায় |

এই টাইপের ভাবনা ফাবনা যে বশিরের আগে আসেনি তা নয় | মনের সাথে কত বোঝাপড়া হয়েছে | শেষবেশ যে লাউ সেই কদুই থেকে গেছে |

যেন নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে : এইভাবে লুকোচুরি আর প্রতারণা আর কতদিন ?

হু হু করে আসা বাতাসের তোড়ে বশিরের মনের ভাবনাগুলোকে ছক্কার গুটির মত এদিক ওদিক করায়। আচ্ছা, এই যে পরকীয়া বা নিজের স্ত্রী ব্যতীত ভিন্ন মানবীর দেহ ভোগের যে নেশা, এ কি সত্যি প্রকৃতি প্রদত্ত নাকি পুরুষের লোভের সংস্করণকেই প্রকৃতির নামে চালিয়ে দেয়া ? আবার বউকে ভালবাসবার তীব্রতা নেই বলে তাকে ছেড়ে যাবার কথাও কোনভাবে ভাবতে পারে না সে । একে কি মায়া বা করুণা বলে ?

বশির বেশি ভাবতে পারে না । তার মাথায় চাপ পড়ে । নিজের মনে কথা বলতে গিয়ে মাঝে মাঝে সে ঠোঁট আওড়াচ্ছিল । একটা লোক হঠাত এই ব্যাপারটা খেয়াল করল । সে কৌতূহলী চোখে বশিরকে দেখছিল | বশির হঠাত তাকাতেই লোকটার সাথে চোখাচোখি হল | বশিরের ধাক্কার মত লাগলো | কি তীব্র চোখের দৃষ্টি | এই রে, মনের ভাবনাগুলো আবার লোকটা পড়ে ফেলেনি তো | এহ, তাই কি হয় ? বশির মনে মনে হাসল |

সেই তীব্র দৃষ্টি বশিরের মনে সাময়িক ঘোর লাগা সৃষ্টি করে | হঠাত একটা দমকা বাতাস তাতে সুর সঙ্গত করলো | তার ইচ্ছে হল লোভের মায়াজাল কেটে বেরুবার | ঝিলের পানির মত টলটলে হবার লোভ জাগল বশিরের ।

হাঁটতে হাঁটতে বাসস্টান্ডের কাছে চলে এসেছে সে | উঠান পেরিয়ে দুই পা’র মত রাস্তার ওপাশে গেলেই বাসে উঠে পৌঁছে যাওয়া যাবে বাড়ি | কিন্তু রাস্তা পেরুবার আগ মুহূর্তে পা টা কেমন স্লথ আর ভারী হয়ে গেছে তার | পিছন থেকে লোভ নামক একটা বস্তু তাকে চুম্বকের মত টানছে |

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ