কবি হবো পোস্টের জবাবেঃ

ছোট্টবেলায় পাড়ার ক্লাবে কবিতার আসরে কবিতা পড়তে গিয়ে শুনেছিলাম 'কি হচ্ছে! কবিতা না পড়ার বই রীডিং পড়া?' দমে গেলাম। আরো পরে গানের আসরে কি একটা প্রথমবার শুনিয়ে বললেন গাও 'গান নাকি কবিতা পড়লে!' শুনে সেও ছাড়...

এরপরে ক্লাশ এইটে থাকা অবস্থায় কোচিং এর এক মারকুটে অংকের শিক্ষক একদিন ধুম করে বলে বসলেন 'সবাই একটি একটি কবিতা আবৃত্তি করবে, পড়া শেষে আমি তোমাদের শেখাবো। এক সপ্তাহ সময়, পরের শুক্রবার রেডিওতে তোমরা সেই কবিতা শোনাবে।' রেডিও বলতে চট্টগ্রাম বেতার!! ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম, সপ্তাহ কেটে গেলো আর এলো শুক্রবার। মা চুল আঁচড়ে দিয়ে পরিপাটি করে পাঠালেন সবার সাথে মিশে স্যারের কথামতো চলতে। গেলাম, রেডিও এসিরুমে বসে সেই অসমান্য মমতাময়ী আপুর উপস্থাপনায় কি বলেছি খেয়াল নেই। এসে শুনলাম পাড়ার সবাই রেডিও অন করে শুনেছে!!! এরপর!

এগুনোর কথা ছিলো। কিন্তু সেই স্যার ধুম করে আবার মরেই গেলেন একদিন সকালে। সেই শেষ কান্না করেছিলেম কারো মৃত্যুতে। নিজের রক্তের কেউ মারা গেলেও পরে কোনদিন কান্না আসেনি আর।

তারপর? ২০১০ সাল। ২০০৭ থেকে ফেবু শুরু করে টুকটাক নিজের ফেবু নোটে লিখে রাখতাম। এক গায়ক (বলা ভালো আমার শোনা ও দেখায় বাংলাদেশের সেরা রিসাইটার) বন্ধু বললো "নীতেশ তুমি নিজের লেখার ধরন কিছুটা "এদিক ওদিক করে লিখো, ভালো হবে। আমি, তুমি ছাড়ো" এরপরে! সেই গায়ক বন্ধুর গানের দলে কি করে যেন দুটো কবিতা নিয়ে গানও করে ফেললো বুঝিনি। কিছু বন্ধু(বান্ধবী)র সাহচর্যে ও এক শিক্ষকের অদম্য উৎসাহে কবিতার গ্রুপে মিশে যাওয়া, শিখে নেওয়া। ২০১৩ এর শাহবাগে রাজাকার বিরোধী উত্তাল সময়েও বইমেলায় সেইসব বন্ধুরাই কবিতা নিয়ে সম্মিলিত কবিতার বই করে ফেলেন কয়েকটি প্রকাশনী থেকে! আমার কবিতা ছেপেও যায় তাঁদের সাথে, আবারো কি করে হলো বুঝিনি।

এরপরে?

আবারো ছন্দপতন। রাজাকার বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে যাওয়ায় অফিস ছাড়তে বাধ্য হয়ে বেকার জীবনে ঢুকে এখনো বেরুতে না পারা!

মাঝে এক নাটকের লোকের সাথে পরিচয় হয় মিডিয়া হাউজ গড়ার চেষ্টায় বসে এক চতুর মুনাফালোভীর খপ্পরে পড়ে আবারো ফিরে আসা।

কিন্তু সেই ছোট্টবেলার সাধ পূরণে থামিনি-লিখতে হবে। কবিতায় মন বসেনা তেমন। মাথায় ঘুরে ছোট ছোট গল্প যা কবিতার ছন্দে বা ভাবে আনতে পারি না আর। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয় কবিতায় ঢুকে পড়ি, ছন্দ বুনতে না পারলেও ভাবে লিখে ফেলি। কিন্তু হয়ে উঠে না। মনের কোন এক কোণায় বারেবারে প্রত্যাখ্যানের সুতোটুকু আটকে রেখেছে। তবুও থামতে মন চায় না।

 

আজো ঘাসের ডগায় সূর্যের আলো ঢলে পড়া দেখি,

দেখি সোঁদা মাটি হতে জলের সাথে সূর্যের আলোর খেলা,

পুকুরে ছোটমাছের বুদুবুদে খুঁজে পাই ঢেউয়ের ছন্দখেলা,

পিচঢালা পথে ঝরাপাতায় পাই সবুজের আরোহণের কলা।

 

ঠকে যাওয়া, প্রত্যাখ্যানের অভিমানে ফেবু হতেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি কিন্তু মনকে থামাতে পারি না! তারপর?

এরপর! সোনেলা...

0 Shares

৫৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ