চলতি বছরের ৫ই জানুয়ারী ধর্মানূভুতির ধুয়া তুলে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হা্মলা হয় ফরাসী রম্য ম্যাগাজিন শারলি হেবদোর কার্যালয়ে। সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান ১১ জন, আরো আহত হয় ১১ জন। এই ঘটনার বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবারো ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় কেঁপে উঠলো প্যারিস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স আর কখনো এরকম ভয়াবহ হামলার স্বীকার হয়নি। শারলি হেবদোর হামলার ঐ পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে টার্গেট করে পরিচালিত হলেও এবারের হামলাটি পরিচালিত হয়েছে একেবারে নির্বিচারে সাধারন মানুষকে লক্ষ্য করে। এর ক্ষতির পরিমাণও তাই ব্যাপক। প্যারিসের বিভিন্ন জায়গায় চালানো এই বর্বর হামলায় প্রাণ হারায় ১৩০ জন, আহত হয়েছে প্রায় চারশ মানুষ। প্যারিসে হামলার পর তাই আবারো কিছু প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে । কেন বারবার সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হচ্ছে প্যারিস ? কেনই বা সন্ত্রাসীদের প্রিয় টার্গেট ফ্রান্স ? ইউরোপে ডানপন্থীদের উত্থান কি প্রভাব ফেলবে শরণার্থীদের আশ্রয় দানের নীতিতে? এই প্রশ্ন গুলো নিয়েই মূলত এই লেখাটি লেখা।

কেন বারবার রক্তাক্ত হচ্ছে ফ্রান্স

উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে একসময় ফরাসি উপনিবেশ ছিল । ফ্রান্সের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে অংশ নিয়ে স্বাধীন হয়েছে এই অঞ্চলের বেশ কিছু দেশ। ফলে ফরাসীদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক এক ধরণের প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করে এই অঞ্চলের অনেক মানুষের মাঝে। উপনিবেশ ত্যাগ করলেও বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে ফ্রান্স তার প্রভাব অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করেছে। ২০১৩ সালে ইসলামী জঙ্গীদের লক্ষ্য করে মালিতে হামলা চালিয়েছিল ফ্রান্স উপনিবেশ এবং উপনিবেশ পরবর্তী কালে এই অঞ্চলগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলিম অভিবাসী হিসেবে ফ্রান্সে পাড়ি জমিয়েছে। বর্তমানে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বসবাস ফ্রান্সে। ফ্রান্স সাংবিধানিক ভাবে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও সেখানে মুসলিম নারীদের জন্য নেকাব নিষিদ্ধ। দেশটির দরিদ্র নাগরিকদের একটা বড় অংশই মুসলিম। প্যারিসে শহরতলীর ঘিঞ্জি বস্তিতে এদের অনেকের বসবাস। ফরাসী মুসলিমদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতাও বেশি। বলা হয় যে ফ্রান্সে কারাগারে আটক বন্দীদের শতকরা ৭০ ভাগই মুসলিম। দীর্ঘ দিন ধরে ফ্রান্সে বসবাস করলেও এদের একটা বড় অংশ মূলধারার ফরাসী সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন। বিচ্ছিন্ন এই মুসলিম জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশের মাঝে ইসলামিক ষ্টেটের উপর এক ধরণের নীরব সমর্থন রয়েছে। ফ্রান্স থেকে ইসলামিক ষ্টেটে যোগদানকারীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সাইট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি তরুন তরুনী সিরিয়ায় যেয়ে ইসলামিক ষ্টেটে যোগ দিয়েছে যার মধ্যে ১৪৭০ জন ফরাসী নাগরিক। বার্তা সংস্থা এএফপির রিপোর্ট অনুযায়ী আরো প্রায় ১৫০০ ফরাসী নাগরিক ফ্রান্স থেকে নিয়মিত ইসলামিক ষ্টেটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে ফরাসী গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। কম করে প্রায় প্রায় ৭ হাজার ফরাসী আই এসে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। অপর দিকে যে পশ্চিমা সভ্যতার সঙ্গে আইএসের মূল সংঘাত সেই পশ্চিমা সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে প্যারিস। আইএসের ভাষায় "অনৈতিকতা ও পতিতা বৃত্তির রাজধানী"। আই এসের তৎপরতা এতকাল প্রধানত মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও এবারই প্রথম তারা নিজেদের নিজেদের কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে ইউরোপের সুরক্ষিত এলাকায় হামলা চালিয়েছে। পশ্চিমা সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র প্যারিসে হামলার মধ্য দিয়ে তারা এই লড়াই টিকে দুটো সভ্যতার লড়াই হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। কারন তারা জানে এই লড়াইটিকে দুটো সভ্যতা ও সংস্কৃতির লড়াই হিসেবে তুলে ধরতে পারলে লড়াইটি আরো এক ধাপ এগিয়ে একটি বৈশ্বিক রুপ পাবে । এটি বিশ্ব জুড়ে মুসলিমদের মাঝে "জেহাদী জোশ" এবং তাদের জনপ্রিয়তা দুটোকেই বৃদ্ধি করবে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাদের নির্দেশে ফরাসী বিমান বাহিনী সিরিয়ায় আইএস কে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে। সেই হামলায় আই এসের কতটা ক্ষতি হয়েছে তা অবশ্য খুব একটা দৃশ্যমান না হলেও প্যারিসের এই হামলাটিকে ফ্রান্সের উপর আইএসের এক ধরণের প্রতিশোধ মুলক হামলা হিসেবে মনে করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ উইল ম্যাকেন্টস। তার ভাষায় আই এসের সবচেয়ে বড় শত্রু আমেরিকা । কিন্ত ভৌগলিক অবস্থান এবং বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার কারনে তাদের পক্ষে সেখানে হামলা চালানো কঠিন। ভৌগলিক ভাবে সুবিধা জনক হওয়ায় ফ্রান্সই তাদের কাছে সবচেয়ে সহজ টার্গেট। বিপুল সংখ্যক মুসলিমের আবাস স্থল হওয়ায় তাদের পক্ষে সেখানে আত্বগোপনে থেকে হামলার পরিকল্পনা করাও খানিকটা সহজ। ইউরোপে ভিসা বিহীন অবাধ মুক্ত চলাচলের সুযোগ এবং অবৈধ অস্ত্রের সহজলভ্যতাকেও তারা এক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছে।

প্যারিস হামলার প্রভাব

আইএসের এই বর্বর হামলার সবচেয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া গিয়ে পড়বে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত অভিবাসী মুসলিম সম্প্রদায় এবং সিরিয়া, লিবিয়া ,আফগানিস্থান থেকে ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থী লাখ লাখ শরণার্থীর উপর। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে গৃহহীন হয়েছে প্রায় এক কোটি মানুষ। চলতি বছর ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে সমুদ্র পাড় হয়ে ইউরোপে আশ্রয় পেয়েছে প্রায় এক লাখ মানুষ । শরণার্থীদের আরো একটি বড় অংশ এখনো ইউরোপে আশ্রয় পাবার প্রত্যাশায় দিন গুণছে। প্যারিস হামলার ফলে এই শরণার্থীদের জীবন এখন আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। প্যারিস হামলায় আই এসের দায় স্বীকার এবং হামলা কারী অন্তত দুজনের শরণার্থী হিসেবে ইউরোপে প্রবেশের তথ্য সমগ্র ইউরোপে শরণার্থী বিরোধী জনমতকে চাঙ্গা করবে। প্যারিস হামলার পূর্বেই পূর্ব ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ আশ্রয় প্রার্থী শরণার্থীদের নিতে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছিল। শরণার্থীদের নিয়ে ইউরোপের বিভাজনও বেশ তুঙ্গ আকার ধারন করে। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে এই দেশগুলোর অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবে। ইতমধ্যে প্যারিস হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পোল্যান্ড তাদের দেশে শরণার্থীদের আশ্রয় দানের নীতি থেকে নিজেদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছে। এমনকি শরণার্থীদের প্রতি সবচেয়ে উদার মনোভাব ধারন কারী দেশ জার্মানিতেও শরণার্থী বিরোধী জনমতের চাপ বাড়ছে। ডানপন্থীদের কাছ থেকে সীমান্ত বন্ধ করার চাপে রয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মরকেল। শরণার্থী বিরোধী আবহ তৈরী হয়েছে আরেক উদার নৈতিক দেশ সুইডেনেও। প্যারিস হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডান পন্থী আন্দোলন নুতুন প্রাণ ফিরে পাবে। ফ্রান্সে আসন্ন আঞ্চলিক নির্বাচনে মারিন লা পেনের নেতৃত্বাধীন ডান পন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্টের ভাল ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই নির্বাচনে ডানপন্থীদের সম্ভাব্য ভাল ফলাফল প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাদের উপর অভিবাসন বিরোধী চাপ আরো বাড়াবে। তবে আশার কথা এই যে এ বছরের শেষ নাগাদ ফ্রান্সে ৪০ হাজার শরণার্থী আশ্রয় দানের যে ঘোষণা তিনি পূর্বে দিয়েছিলেন তা থেকে এখনো সরে আসেন নি । তবে অভ্যন্তরীণ চাপে কতদিন তিনি তার এই অবস্থান ধরে রাখতে পারেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

শরণার্থীদের আশ্রয় দানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় যে যুক্তিটি উপস্থাপন করা হচ্ছে তা হল এই শরণার্থী দের হাত ধরে ইউরোপে আই এস প্রবেশ করবে যেটা নিরাপত্তা আশঙ্কাকে বৃদ্ধি করবে। একই সংঙ্গে লঙ্ঘিত হবে খ্রিষ্টান মুল্যবোধ। যদিও এই শরণার্থীদের প্রায় সবাই মধ্য প্রাচ্যে আই এস এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীগত যুদ্ধের দানবীয় ধবংস লীলা থেকে বাঁচতেই ইউরোপে আশ্রয় প্রার্থী হয়েছে। তারপরও এদের মধ্যে আই এসের উপর সহানুভুতিশীল ব্যক্তি থাকার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই। শরণার্থীদের ছদ্মবেশে আই এসের ইউরোপে প্রবেশের আশংকাকে তাই অমূলক বলা যায় না। পাশাপাশি এই বিপুল সংখ্যক মুসলিম অভিবাসীকে ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে সংযুক্ত করার কাজটিও কম চ্যালেঞ্জিং নয়। মুল ধারার ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে সংযুক্ত করতে না পারলে এই অভিবাসীদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বোধ আরো বাড়বে এবং এর ফল ঘরে তুলতে পারে আইএসের মত ইসলামী জঙ্গীরা। একদিকে ধর্মীয় ও জাতিগত অসহিষ্ণুতা রোধ করে ইউরোপের উদার সংস্কৃতি রক্ষা অপরদিকে ক্রম বর্ধমান নিরাপত্তা আশঙ্কা সব মিলিয়ে পুরো পরিস্থিতিটাই এখন ইউরোপের জন্য চ্যালেঞ্জিং।

বদলাবে কি ফ্রান্সের সিরিয়া নীতি

প্যারিস হামলার পর সিরিয়া নীতি পরিবর্তনের ব্যাপারে বিরোধীদের কাছ থেকে চাপে রয়েছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাদ। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতি বাস্তবায়নের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফ্রান্স। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত ফ্রান্সও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের কট্টর বিরোধী। আমেরিকার পাশাপাশি ফ্রান্সও সিরিয়ায় আসাদ সরকারকে হটানোর উদ্দেশ্যে বাশার বিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠীকে অস্ত্র,প্রশিক্ষণ সহ নানান সুবিধা দিয়ে আসছে। জঙ্গীদের "মডারেট" ও "র‍্যাডিক্যাল" এই দুটোতে শ্রেনীবিভাগ করার পশ্চিমা নীতি কতটা কার্যকর হয়েছে তা নিয়ে এখন খোদ ফ্রান্সেই প্রশ্ন উঠছে। অপর দিকে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব অক্ষুন্ন রাখতে আসাদ সরকারকে যে কোন মুল্যে সিরিয়ায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে মরিয়া আরেক পরাশক্তি রাশিয়া। উল্লেখ্য মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার একমাত্র নৌঘাঁটিটি সিরিয়ায় লাতাকিয়া শহরে অবস্থিত। মুলত আসাদ সরকারকে রক্ষায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে আইএস কে লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে রাশিয়া। আইএস দমনের নামে আসাদ বিরোধী সকল গোষ্ঠীর উপর বোমা ফেলছে রাশিয়া বলে অভিযোগ করে আসছে ন্যাটো । অপর দিকে রাশিয়ার দাবি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনীদের ভুল নীতিই আইএসের উত্থানের জন্য দায়ী । ইতমধ্যে ন্যাটোর আরেক সদস্য দেশ তুরষ্ক তার আকাশ সীমা লংঘনের দায়ে রাশিয়ান বিমান ভুপাতিত করে উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। গত বছর রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করলে ফ্রান্সের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি হয়। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক সামরিক ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ আইএস মোকাবেলায় ফ্রান্সকে আরো বাস্তবিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের মতে আইএস কে বৈশ্বিক ভাবে মোকাবেলায় একটি্ বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা জরুরী। এর জন্য প্রয়োজনে আসাদ সরকারকে ক্ষমতায় রেখে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা করা যেতে পারে। এই অভিমতদাতাদের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্রাসোয়া ফিলন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালীন হিটলারকে মোকাবেলায় ষ্ট্যালিনের সঙ্গে জোট বাধার উদাহরন দিয়ে আইএসকে মোকাবেলায় প্রয়োজনবোধে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে সমঝোতা করার অভিমত দিয়েছেন। মিসরের সিনাই উপদ্বীপে বিধ্বস্ত রাশিয়ান বিমানটিতে বোমা হামলার সঙ্গে আই এসের সংশ্লিষ্টতা এবং এর পরপরই প্যারিস হামলা বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও ফ্রান্সকে কিছুটা একই কাতারে দাড় করিয়েছে। প্যারিস হামলাকে শুধু ফ্রান্সের উপর নয় সমগ্র ইউরোপের উপর হামলা বলে আখ্যা দিয়ে ওলাদও এখন একটি বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠায় মনযোগী হয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টাও লক্ষণীয়। আইএসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠায় রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও আগ্রহী। এর কারন মূলত দুটো। এক, এটি সিরিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসাদ সরকার টিকিয়ে রেখে মূল ফোকাসটা আইএসের উপর প্রয়োগ করবে যা একই সঙ্গে সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপকেও জাষ্টিফাই করবে। দ্বিতীয়ত, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসী ভুমিকা থেকে বিশ্বের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরানো। প্যারিস হামলার পর রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার নৌ বাহিনীকে ফ্রান্সের সাথে তথ্য বিনিময় করে আইএস লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন । ফ্রান্সও এখন সিরিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতায় প্রেসিডেন্ট আসাদকে রেখে সমঝোতায় আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। সিরিয়াকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে গুরুতর মত পার্থক্য রয়েছে। সেই মত পার্থক্য নিরসনে বর্তমানে কিছুটা তৃতীয় পক্ষের ভুমিকা পালন করার চেষ্টা করছে ফ্রান্স। কিন্ত তারপরও প্যারিস হামলার প্রতিক্রিয়ায় ফ্রান্সের সিরিয়া নীতিতে আমুল কোন পরিবর্তনে সম্ভাবনা কম। রাশিয়ার সঙ্গে এখনো তাদের গুরুতর মতপার্থক্য রয়েছে। প্রথমত ফ্রান্স কখনোই ইউক্রেনের উপর থেকে তার সমর্থন প্রত্যাহার করবে না। দ্বিতীয়ত মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার সমর্থন মূলত শিয়া বলয়ের দেশ ইরান, সিরিয়া, লেবাননের প্রতি। মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব বাড়া মানে শিয়া বলয়ের প্রভাব বাড়া যেটা সৌদি নেতৃত্বে থাকা সুন্নী বলয়ের দেশগুলো কখনোই মেনে নেবে না। ফ্রান্সকে একই সঙ্গে তার পুরনো মিত্র সুন্নী বলয়ের দেশ গুলোর স্বার্থের কথাও মাথায় রাখতে হবে।

সবশেষে

ইসলামী সন্ত্রাসবাদ সমগ্র বিশ্বের জন্য হুমকি। মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের ভুল নীতি এবং ধর্ম কেন্দ্রীক বিভাজনের রাজনীতি থেকে উদ্ভুত ইসলামিক ষ্টেট আজ সমগ্র মানবতার জন্য হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর নিরাপত্তার জন্য আইএসের বিনাশ তাই অত্যন্ত জরুরী। আইএস দমনের একটি উপায় অবশ্যই সামরিক অভিযান। তবে শুধু সামরিক অভিযান মধ্যপ্রাচ্যের সব সমস্যার সমাধান করবে না। একই সঙ্গে আইএস মোকাবেলায় ধর্ম, বর্ণ, মত নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল শক্তির মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা জরুরী। যেহেতু ইসলাম ধর্মের নামে এই সন্ত্রাস বাদ চালানো হচ্ছে কাজেই এর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদটা আসা উচিত মুসলিমদের কাছে থেকে। কিন্ত মুসলমানদের কাছে থেকে আসা প্রতিবাদ এখন পর্যন্ত খুব একটা উৎসাহ ব্যাঞ্জক নয় । উল্টো আমাদের দেশেও এই ঘটনাকে জাষ্টিফাই করার মত মুসলিমের অভাব নেই। আই এস মোকাবেলায় মুসলিমদের আরো সক্রিয় ভুমিকা নিতে হবে। আঞ্চলিক রাজনীতির হিসেব নিকাশের ঊর্ধ্বে উঠে জঙ্গী বাদের বিস্তার, বিকাশ ও প্রকরণের পথ গুলো বন্ধ না করলে বিশ্বের আরো নানা জায়গায় প্যারিসের মত রক্তাক্ত ঘটনা ঘটতেই থাকবে যা হবে সমগ্র পৃথিবীর জন্য ভয়ংকর।

0 Shares

২১টি মন্তব্য

  • নীলাঞ্জনা নীলা

    ধর্মকে পুঁজি করে রাজনৈতিক খেলা চলছে।
    মাঝে-মধ্যে মনে হয় ধর্ম না থাকলেই ভালো ছিলো। “ধর্মই অধর্মের মূল।”

    বেশ লিখেছেন। (y)

    • অপার্থিব

      ধর্ম যদি শুধু ব্যাক্তিগত জীবনাচরণের অংশ হিসেবে থাকতো তাহলে হয়তো খুব একটা সমস্যা হত না কিন্ত ধর্মের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ হয়েছে রাজনৈতিক ভাবে। প্রতিটা ধর্মের প্রবর্তক একটা রাজনৈতিক চরিত্র। পরবর্তীতে ধর্ম হয়েছে শাসকশ্রেনীর হাতিয়ার। তারা চিরকালই ধর্মকে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে। ধর্ম না থাকলে হয়তো মানব সভ্যতা আরো কয়েকশ বছর এগিয়ে থাকতো। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

  • আবু খায়ের আনিছ

    যে দেশ মানুষের খাবার মাছের খাবার বলে মানুষের খাদ্য সমুদ্রে ফেলে সেই দেশ কি করতে পারে তা আমরা প্রতক্ষ্য করছি প্রতিনিয়ত। একটা সোজা কথা, বিশ্বে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর অভাব যত বেশি থাকতে যুদ্ধ বিগ্রহ তত বেশি হবে। আর যুদ্ধ মানেই অস্ত্র। সুতরাং অস্ত্র ব্যবসাও ভালো হবে।
    উৎপাদন সম্ভবনা চিত্র দেখলে স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায়। মুসলিম তকমা এর পিছনেও একটা সুক্ষ্ম রাজনীতি আছে। সে বিষয়ে আপনার ভালোই জানা আছে বলেই মনে করি।
    দাবা দেখা দেখলে মনে হয় খুব সোজা কিন্তু আসলে কি তাই?

    • অপার্থিব

      এটা সত্য যে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে যুদ্ধ একটা বড় অস্ত্র। অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত হলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গুলো পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তে যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়। যুদ্ধ মানেই অস্ত্র বিক্রি। যুদ্ধের ফলে আরো অনেক পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। সেই অস্ত্র ও পণ্য বিক্রি করে তাদের নিজেদের অর্থ নীতি সচল করে বৃহৎ শক্তিরা । তবে ধর্ম কেন্দ্রীক সহিংসতার একটা সুনির্দিষ্ট ইতিহাস রয়েছে। নিজ ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করা কেন্দ্রীক সহিংসতায় পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন সময় অনেকে মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সেই ধারা চলছে এখনো।

      • আবু খায়ের আনিছ

        কিছু মনে করবেন না, গত মাস দুয়েক ধরে বিশ্ব অর্থনীতির উপর বেশ কিছু বিষয়ে কাজ করার সুবাধে যে তথ্যগুলো পেয়েছি তাতে এই কথাটা বলতেই পারি, তালেবান থেকে আইএস এরা কেউ ধর্ম প্রচার করার জন্য যুদ্ধ করছে না, ধর্ম প্রচার কে এরা একটা নাম মাত্র উদ্দেশ্য হিসাবে দেখাচ্ছে। আইএস এর উত্থান আর কার্যক্রম নিয়ে একটু খোজ খবর করলেই জানতে পারবেন আইএস এর মিত্র কারা এবং এর উত্থান কিভাবে।
        ছোট্ট করে একটু বলি, বাসার আল আসাদ এর বিপক্ষে কাজ করছে আমেরিকা সহ তার মিত্র দেশগুলো, আর এই একই কাজ করছে আইএস সহ আরো কিছু জঙ্গি গোষ্ঠী। পূর্ববতী সময়ে আমরা দেখেছি সাদ্দাম হোসেন কে ক্ষমতায় আনল কে আর হত্যা করল কে? সুতরাং বুঝতেই পারছেন।
        আর এই সব জঙ্গি গোষ্ঠির নামের সাথে ইসলাম নামটা জড়িয়েছে তার একটা বড় কারণ বিশ্বে তৈল বাণিজ্য। অধিকাংশ তৈল খনি আর মজুদ আছে এই সব ইসলামি দেশগুলোতে।
        আরো কিছু বিষয় আছে, যেমন আমেরিকার জিডিপিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সমুহু সম্ভাবনা চীনের। এটা পরিসংখ্যান বলছে আগামাী বিশ বছর পরে বিশ্বে সব বড় বাজেট হবে ভারতে। আবার ভেনিজুয়েলা মাথা পিছু আয় আমেরিকার চেয়ে প্রায় তিনগুন বেশি। এগুলো আমেরিকার মাথায় ভাঁজ ফেলার জন্য কতটা ভুমিকা রাখছে তা ত বুঝতেই পারছেন।
        সুতরাং আমেরিকার চোখের সামনে আসছে তাদের পতন। এর প্রতিরোধ করতে মরিয়া হবে আমেরিকা এটাই স্বাভাবিবক।

      • অপার্থিব

        @আবু খায়ের আনিছ

        /”তালেবান থেকে আইএস এরা কেউ ধর্ম প্রচার করার জন্য যুদ্ধ করছে না, ধর্ম প্রচার কে এরা একটা নাম মাত্র উদ্দেশ্য হিসাবে দেখাচ্ছে।”//

        কি করে নিশ্চিত হলেন ? পোষ্টেই উল্লেখ আছে চলতি বছর শুধু ফ্রান্স থেকেই ১৪৭০ জন সিরিয়ায় গিয়ে আই এসে যোগ দিয়েছে। গত বছর তিনজন ব্রিটিশ কিশোরী ব্রিটেন থেকে সিরিয়ায় আই এসে যোগ দিয়েছে যারমধ্যে দুজন বাংলাদেশী বংশদ্ভুত। তো ইউরোপের সুখ সমৃদ্ধির শান্তিময় জীবন ছেড়ে এই মানুষগুলো কেন সিরিয়ায় আই এসে যোগ দিচ্ছে তার ব্যাখাটা কি ? আই এস দ্বারা কোন বিদেশী শিরোচ্ছেদ খবর আমাদের দেশের পত্রিকাগুলো ফেসবুকে শেয়ার করলে তার নিচে জমা হওয়া মন্তব্য গুলো পইড়েন। দেখবেন যে কত বিপুল সংখ্যক মুসলিম এই হত্যাগুলোকে সমর্থন করছে। তো মুসলিমদের আই এসের প্রতি এই বিপুল সমর্থনের উৎসটা কি? কারন এটাই যে আই এসের লড়াইটা সম্পূর্ণ আদর্শগত লড়াই । সেই আদর্শ একটা ধর্ম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আদর্শ। ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা ও একটি পরিপূর্ণ খিলাফত ভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তারা লড়াই করছে । ইসলামের স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনা ও গোটা দুনিয়াকে ইসলামের করতলে আনাই তাদের মুল উদ্দেশ্য। নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ আর নিজেদের ধর্মের স্বর্ণ যুগের যে কল্প কাহিনী শুনে তারা বড় হয়েছে তারা মানব সভ্যতাকে সেই কল্পিত সময়কালে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এই আদর্শের প্রতি বিপুল সংখ্যক মুসলিমের সমর্থন আছে কিন্ত সবাই সেটা স্বীকার করে না। এর কারন হল প্রগ্রেসিভ সমাজ ব্যবস্থা ধর্মীয় মুল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয় না,
        পরিচালিত হয় মানবিক মুল্যবোধ দ্বারা। মানবিক মুল্যবোধের সাথে এই ধর্মীয় মুল্যবোধগুলো যায় না । তাই মডারেট মুসলিমরা মানবিক মুল্যবোধের সঙ্গে ধর্মীয় মুল্যবোধগুলো এক ধরণের সমঝোতা করে নিয়েছে। আপনার উক্তিটা এই জাতীয় সমঝোতা মুলক উক্তি।

        //”ছোট্ট করে একটু বলি, বাসার আল আসাদ এর বিপক্ষে কাজ করছে আমেরিকা সহ তার মিত্র দেশগুলো, আর এই একই কাজ করছে আইএস সহ আরো কিছু জঙ্গি গোষ্ঠী। পূর্ববতী সময়ে আমরা দেখেছি সাদ্দাম হোসেন কে ক্ষমতায় আনল কে আর হত্যা করল কে? সুতরাং বুঝতেই পারছেন।”//

        বাসার আল আসাদ একজন শিয়া রাষ্ট্রপ্রধান। তার উপর সমর্থন আছে আরেক শিয়া অধ্যুষিত শক্তিশালী রাষ্ট্র ইরানের। আসাদের বিরুদ্ধে সুন্নী দমন নিপীড়নের অভিযোগ আছে। শিয়া বলয়ের রাষ্ট্রগুলোর সাথে সৌদি সুন্নী বলয়ের রাষ্ট্রগুলোর ঐতিহাসিক শত্রুতা আছে। এর পিছনে লুকিয়ে আছে ধর্মীয় বিশ্বাস জনিত দ্বন্দ। সুন্নী মতাদর্শ ধারীদের কাছে শিয়ারা কোন মুসলমানই নয় , মোনাফিক। এই ঘৃণা , বিদ্বেষও ঐতিহাসিক। মুসলমানদের মধ্যকার শিয়া সুন্নীর বিভাজন, মধ্য প্রাচ্যের শিয়া সুন্নীর প্রতিদ্বন্দীতা এই সব তো আর আমেরিকা তৈরী করে নি । এগুলো ঐতিহাসিক কাল থেকেই চলে আসছে। আই এস একটা সুন্নী সংগঠন। তারা সেই ঐতিহাসিক শত্রুতার লিগাসিটা ধারন করছে। তারা বিশ্বের সমগ্র মুসলমানদের নিয়ে একটি একক ধর্ম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই করছে। তার মানে এই না যে আই এস উত্থানে আমেরিকার কোন দোষ নাই। আমেরিকা নিজেদের স্বার্থে মুসলিমদের মধ্যকার এই বিভাজনকে কাজে লাগিয়েছে কিন্ত তাতে ধর্মগুলোর দায় এড়ায় না। এটা অনেকটা আপনি একজন কে গুলি করতে চান কিন্ত রিভলভার কেনার টাকা নেই । আমেরিকা তার নিজের স্বার্থে আপনাকে সেই রিভলভার কেনার টাকাটা দিচ্ছে কিন্ত অন্যকে গুলি করার আপনার যে বাসনা সেটা কিন্তু আমেরিকা তৈরী করে নি। এটা আপনার মনে আগে থেকেই আছে।

        “// আর এই সব জঙ্গি গোষ্ঠির নামের সাথে ইসলাম নামটা জড়িয়েছে তার একটা বড় কারণ বিশ্বে তৈল বাণিজ্য। অধিকাংশ তৈল খনি আর মজুদ আছে এই সব ইসলামি দেশগুলোতে।//”

        মধ্যপ্রাচ্যের তেলের খনি একটা ইস্যু । তেলের খনির উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আমেরিকা মধ্য প্রাচ্যের উপর নানা উপায়ে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে ।কিন্ত এটা পুরোপুরি বস্তুগত এবং সাময়িক । সাময়িক এই কারনেই যে তেলের বিকল্প কোন জ্বালানী আবিস্কার হলে আমেরিকার আর মধ্যপ্রাচ্যের উপর আগ্রহ নাও থাকতে পারে। অপরদিকে অপরদিকে আদর্শ গত লড়াই (যেমনটা আই এস করছে) চলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। অর্থ কিংবা ক্ষমতার লোভে সংঘটিত লড়াইয়ে কেউ কখনো আত্নঘাতী হয় না কিন্ত শক্তিশালী কোন আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াই একজন মানুষকে আত্নঘাতী বানাতে পারে,এর নজির আশেপাশে খুজলেই পাবেন। সবচেয়ে বড় কথা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমেরিকা হাত গুটিয়ে নিলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে না।

        জিডিপির দিক দিয়ে চীন এক সময় আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে কিন্ত তাতে আমেরিকার পতন হবে না বরং এটি দ্বি মেরুকেন্দ্রীক বিশ্বের সুচনা করবে অনেকটা স্নায়ু যুদ্ধের সময়কালের মত । এটি বিশ্বের নানা প্রান্তের ক্ষমতার দ্বন্দকে আরো প্রকট করবে।

      • আবু খায়ের আনিছ

        “কি করে নিশ্চিত হলেন ? ” আপনার উল্লেখিত সংখ্যা আমি দেখেই মন্তব্য করেছি।
        সুন্দর প্রশ্ন করেছেন ধন্যবাদ। আমি আগেই বলেছি ”তালেবান থেকে আইএস এরা কেউ ধর্ম প্রচার করার জন্য যুদ্ধ করছে না, ধর্ম প্রচার কে এরা একটা নাম মাত্র উদ্দেশ্য হিসাবে দেখাচ্ছে।” একটু ব্যাখা করি, তার আগে বলছি, আপনি কোরআন পড়েছেন বা কোন হাদিস, অথবা বাইবেল, ত্রিপিটক?
        কোরআন অনেকেই পড়ে কিন্তু তার অর্থ কয়জনে জানে? উত্তরটা যদি হয় অধিকাংশ জানে না তাহলে বলছি, আইএস এই ধর্মীয় তকমাটা শুধু গায়ে মেখেছে তাদের জন্যেই যারা কোরআন এর অর্থ জানেনা।
        আবার বলছি, এরা নাম মাত্র জিহাদ এর ঘোষণা দিয়ে নিজেদের নামের সাথে ইসলাম শব্দটা যুক্ত করেছে, আর মানুষ ভিড়ছে কেন জানেন? এই যে কুরআন এর অর্থ না জানা বা তার ভুল ব্যাখ্যা বা পরকালীন শান্তি লাভের লোভ থেকে। তাছাড়া কাচা পয়সার ছড়াছড়িও এর সাথে যুক্ত আছে। একটা প্রবাদ আছে, অর্থ আর ক্ষমতা এক হাতে হয়ে গেলে সেই হাত আর নিয়ন্ত্রনে থাকে না।
        ছোট্ট করে বলি, ফেইজবুক কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে পারে না, আর মানুষের মন্তব্য, কান নিয়েছে চিলে তাই শুনেই দিলাম দৌড় চিলের পিছনে বিষয়টা এমন হয়ে গেল না।
        মানবিক মূল্যবোধ এর কথা বলছেন, আবার ধর্মীয় মূল্যবোধ এর কথা বলছেন, কোনটাই পরস্পর বিরোধী নয় বরং একই পথের পথিক বলা হয়। ধর্মীয় মুল্যবোধ থাকলে মানবিক মূল্যবোধ এমনিতেই চলে আসবে। কিন্তু মানবিক মূল্যবোধ থাকলেই যে ধর্মীয় মূ্ল্যবোধ থাকবে এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না।

        জাতিগত বিরোধ ত শুধু মুসলিমদের মধ্যেই নয় অন্য ধর্মালম্বীদের মধ্যেও আছে এবং তা প্রকট আকারেই আছে। উদারহারণ দিয়ে কথা বড় করতে ইচ্ছা করছে না।
        আপনি সুক্ষ্ম ভাবে রাশিয়া আর ফ্রান্স এর কথা এড়িয়ে গেছেন। ফ্রান্স সর্মথন করে সিরিয়ার বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর মধ্যে মডারেট গ্রুপগুলোকে, এবং সাহায্যও করে। অপরদিকে বিরুধিতা করে বাশার, ইসলামি স্টেট এবং উগ্রপন্থীদের।
        অপর দিকে রাশিয়া বাশারকে সমর্থন করছে আইএস এর বিরোধিতা করছে। এখন প্রশ্ন হল, আই এস এর বিরুধিতা করছে বিশ্বের ১৬৯টি দেশ। ফ্রান্স যেহেতু বাশার বিরুধী সুতরাং আই এস এর এক দিক দিয়ে লাভ হচ্ছে, কারণ তারাও বাশার বিরুধি। আবার ফ্রান্স থেকে বিপুল সংখ্যক লোক যোগ দিচ্ছে আই এস এ এটাও আই এস এর জন্য সুখবর। যতদূর আমি জেনেছি তাতে রাশিয়া থেকেও প্রায় দুইহাজার লোক আই এস এ যোগ দিয়েছে। রাশিয়ায় একটা হামলার হুমকি পযন্ত দেয়নি আইএস এখন পযন্ত। অন্যদিকে আমেরিকাকে দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক হুমকি। বাস্তবায়ন একটাও হয়নি ( আশা করি হবে না)।
        ”এটা অনেকটা আপনি একজন কে গুলি করতে চান কিন্ত রিভলভার কেনার টাকা নেই । আমেরিকা তার নিজের স্বার্থে আপনাকে সেই রিভলভার কেনার টাকাটা দিচ্ছে কিন্ত অন্যকে গুলি করার আপনার যে বাসনা সেটা কিন্তু আমেরিকা তৈরী করে নি। এটা আপনার মনে আগে থেকেই আছে।”
        চমৎকার একটা কথা বলেছেন, জ্ঞানীর মুখে হাসির কথা ভালো মানায় কি বলেন? ( ঠাট্টা করলাম কিছু মনে করবেন না)
        আমি গুলি করতে চাইছি আর আপনি আমাকে গুলি কিনে দিয়ে বললেন গুলি করিও না। বাহ! এর চেয়ে সুন্দর কথা আর কি হতে পারে।
        একটা কৌতুক পড়তাম এমন, পাগলা নৌকা নাড়াইস না ডুবে যাবে, পাগলা বলে এতক্ষন মনে ছিল না এখন মনে করিয়ে দিলে। এই বিষয়ে আর কিছু বলার নাই।
        অর্থের সাথে যুদ্ধের একটা যোগসুত্র আছে জানেন ত? বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে চীনের অর্থনীতি যে ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চীনের সাথেই হয়ে যেতে পারে। আর জিডিপি শুধু বাড়বে না, আকাশ পাতাল তফাৎ হয়ে যাবে। তথ্য মতে ২০৪০ সালে ভারতের জিডিপি হবে ৮০ ট্রিলিয়ন ডলার, চীনের ৬০-৬৫ ট্রিলিয়ন ডলার আর আমেরিকার ৪৫ এর মত ( সম্ভাব্য) আর বর্তমানে যা আছে, আমেরিকা ৩১, চীন ১৭ আর ভারত ৩ বা ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের মত। কতটা অস্বাভাবিক বুঝতেই পারছেন।

        ” তেলের খনির উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আমেরিকা মধ্য প্রাচ্যের উপর নানা উপায়ে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে ।কিন্ত এটা পুরোপুরি বস্তুগত এবং সাময়িক । সাময়িক এই কারনেই যে তেলের বিকল্প কোন জ্বালানী আবিস্কার হলে আমেরিকার আর মধ্যপ্রাচ্যের উপর আগ্রহ নাও থাকতে পারে। ”

        সাময়িক সময়ের ব্যাপ্তিকালটা কত?

        আর একটা কথা, আপনার মত অনুযায়ী জাতি গত দন্দ অথাৎ শিয়া আর সুন্নি যদি এই ধরনের অবস্থান ধরে রাখে তাহলে কোন কালেই এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার নয়। ধর্ম পৃথিবীতে থাকবেই।

        এবার ছোট্ট করে একটা কথা, কোন দিন শুনেছেন ধর্মী দলগুলো দেশের অর্থনীতি নিয়ে কোন কথা বলেছে? কেন বলে না জানেন? কারণ তারা জানে যখন অর্থনীতি নিয়ে কথা বলবে তখন অন্য অনেক সমস্যা চলে আসবে যেগুলো নিয়েও কথা বলতে হবে। আর যখন থেকে ধর্মের বাইরেও কথা বলা শুরু করবে তখন আর কোন রাষ্ট্রই জায়গা দিবে না তাদের। সে আই এস বলেন আর তালেবান বা বাংলাদেশের জামাত, চরমোনাই বা অন্য কোন ধর্মীয় দল। এগুলোকে তৈরি করে রাখা হয় শুধু মাত্র ক্ষমতা প্রদর্শন আর টিকে থাকার জন্য। কারা করে সেটা আর নাই বা বললাম।

        ধন্যবাদ, যুক্তিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন।

    • অপার্থিব

      //কোরআন অনেকেই পড়ে কিন্তু তার অর্থ কয়জনে জানে? উত্তরটা যদি হয় অধিকাংশ জানে না তাহলে বলছি, আইএস এই ধর্মীয় তকমাটা শুধু গায়ে মেখেছে তাদের জন্যেই যারা কোরআন এর অর্থ জানেনা।//

      শুধু আমিই কোরআনের অর্থ জানি , আমি যেটা জানি সেটাই সঠিক , অন্যরা কোরআনের অর্থ জানে না, জানলেও ভুল জানে এগুলো এক ধরণের সস্তা আত্ব অহমিকা। বিশ্ব জুড়েই মডারেট মুসলিমরা এই সস্তা আত্ব অহমিকায় ভোগে। জঙ্গীবাদের সমর্থনে অনেক কোরআন হাদিসের আয়াত আছে যেগুলো জঙ্গীরা ব্যবহার করে। আমি অতীতে অনেকের সঙ্গে তর্কে সেই সব হাজির করেছি , কিন্ত এই আয়াতের শানে নুযুল জানতে হবে, ঘটনা প্রবাহ জানতে হবে ইত্যাদী বলে তারা এড়িয়ে গেছে। এখানেও ব্যতিক্রম কিছু হবে বলে মনে হয় না তাই সেগুলো এড়িয়ে গেলাম। যাই হোক আসল কথা হল ধর্মে মানবিকতা, পরোপকার, সহনশীলতার কথা অনেকবারই আছে। তেমনি নিজ নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ দাবী , অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো , নিজ ধর্মকে প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করা এইসবের কথাও বলা হয়েছে। আসলে ধর্ম প্রচারকেরা নিজেদের স্বার্থ মোতাবেক বিধি বিধান তৈরী করেছে। তাদের যখন প্রয়োজন হয়েছে তখন ধর্মের প্রেমময়তার কথা প্রচার করেছে আবার যখন প্রয়োজন হয়েছে তখন যুদ্ধের কথা বলেছে। কিন্ত সমস্যা হল আজ চৌদ্দ পনেরশ বছর পর কোনটাকে আসল ধর্মীয় মান দণ্ডে গ্রহন করা হবে তার কোন সুষ্পষ্ট নির্দেশনা নেই। তাইতো আজ ধর্ম কেন্দ্রীক এত উপদল। যারা ধর্মে শান্তির কথা বলছে এবং যারা ধর্মে জিহাদের কথা বলছে উভয়ই সঠিক। আর আই এসে যারা যোগ দিচ্ছে তারা পার্থিব ভোগ বিলাসের আশায় যোগ দিচ্ছে না , যোগ দিচ্ছে পারলৌকিক ভোগ বিলাসের আশায়।

      // ফেইজবুক কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে পারে না, আর মানুষের মন্তব্য, কান নিয়েছে চিলে তাই শুনেই দিলাম দৌড় চিলের পিছনে বিষয়টা এমন হয়ে গেল না।//

      ফেসবুক এখানে কোন উপাত্ত হিসেবে ব্যবহার করা হয় নাই। ব্যবহার করা হয়েছে আই এসের হত্যাকান্ড সমর্থনে তৈরী হওয়া আবহটার একটা জেনারেল পারসেপশন তুলে ধরার জন্য।

      //মানবিক মূল্যবোধ এর কথা বলছেন, আবার ধর্মীয় মূল্যবোধ এর কথা বলছেন, কোনটাই পরস্পর বিরোধী নয় বরং একই পথের পথিক বলা হয়। ধর্মীয় মুল্যবোধ থাকলে মানবিক মূল্যবোধ এমনিতেই চলে আসবে। কিন্তু মানবিক /ল্যবোধ থাকলেই যে ধর্মীয় মূ্ল্যবোধ থাকবে এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না।//

      ধর্মীয় মুল্যবোধ অনেক দিক দিয়ে মানবিক মূল্যবোধের সাথে কন্ট্রাডিক্ট করে। আমি এর অনেক উদাহরন দিতে পারি। তাছাড়া এক ধর্মের মুল্যবোধ অন্য ধর্ম থেকে ভিন্ন। মুসলমানদের ঈদ উল ফিতরে ফিতরার টাকা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কোন দরিদ্রকে দেওয়া হয় না কারন ধর্ম গ্রন্থ সেটা এলাউ করে না। এটি ধর্মীয় মুল্যবোধ অনুযায়ী বৈধ কিন্ত আধুনিক মানবিক মূল্যবোধের কোন সংজ্ঞায় এটিকে ফেলা যায় না। খ্রিস্টান মিশনারীরা তাদের ধর্ম গ্রহনের বিনিময়ে দরিদ্রদের নানা রকম অর্থ সহায়তা দেয় কিন্ত ভিন্ন ধর্মের কেউ তাদের আর্থিক সহায়তা পেয়েছে বলে জানা নেই।এগুলো মানবিক মূল্যবোধের সাথে যায় না। হিন্দুদের গরু না খাওয়া, মুসলিমদের শুকর না খাওয়া এগুলোর সাথে নীতি নৈতিকতার কোন সম্পর্ক নেই । এগুলো স্বৈরাচারী বিধি নিষেধ কিন্ত ধর্মীয় মূল্যবোধ অনুযায়ী এগুলো বৈধ। মানবিক মুল্যবোধ একজন মানুষকে তার জাতি ধর্ম বর্ণ পরিচয়ের উড়ধে উঠে তার মানুষ পরিচয়টিকে গুরুত্ব দেয়। তাই মানবিক মুল্যবোধ সম্বলিত সমাজে মানুষের স্বার্থটাই সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দেয়। এ কারনেই মানবিক মুল্যবোধ সম্বলিত সমাজে আলাদা করে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রয়োজন নেই।

      //জাতিগত বিরোধ ত শুধু মুসলিমদের মধ্যেই নয় অন্য ধর্মালম্বীদের মধ্যেও আছে এবং তা প্রকট আকারেই আছে। উদারহারণ দিয়ে কথা বড় করতে ইচ্ছা করছে না।//

      কে সেটা অস্বীকার করছে?

      //আপনি সুক্ষ্ম ভাবে রাশিয়া আর ফ্রান্স এর কথা এড়িয়ে গেছেন। ফ্রান্স সর্মথন করে সিরিয়ার বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর মধ্যে মডারেট গ্রুপগুলোকে, এবং সাহায্যও করে। অপরদিকে বিরুধিতা করে বাশার, ইসলামি স্টেট এবং উগ্রপন্থীদের।//

      এড়িয়ে যাই নাই। পোষ্টে বলা হয়েছে।

      //রাশিয়ায় একটা হামলার হুমকি পযন্ত দেয়নি আইএস এখন পযন্ত।অন্যদিকে আমেরিকাকে দিয়ে যাচ্ছে একের পর এক হুমকি। বাস্তবায়ন একটাও হয়নি ( আশা করি হবে না)//

      এই তথ্য সঠিক নয়। আই এস রাশিয়াকে অনেকবারই হুমকি দিয়েছে। মিশরের সিনাই উপদ্বীপে বিধ্বস্ত রাশিয়ান বিমানটিতে বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে। এইতো কয়েকদিন রুশ গুপ্তচর সন্দেহে একজনের শিরোচ্ছেদের ভিডিও প্রকাশ করেছে। আর আমেরিকার উপর হামলা চালানো ভৌগলিক ভাবে তাদের জন্য কঠিন , আদৌ সেটা সম্ভব হবে কি না সেটা ভবিষ্যৎ বলবে।

      //আমি গুলি করতে চাইছি আর আপনি আমাকে গুলি কিনে দিয়ে বললেন গুলি করিও না। বাহ! এর চেয়ে সুন্দর কথা আর কি হতে পারে। //

      এই উদাহরন বুঝতে ভুল হয়েছে। আই এস উত্থানে আমেরিকার ভুমিকাকে জাষ্টিফাই করতে এটি ব্যবহার করা হয় নাই। তাছাড়া আই এস উত্থানে যে আমেরিকার দায় আছে সেটা পোষ্টে ও আগের মন্তব্যে বলা হয়েছে। এই উদাহরন দেওয়া হয়েছে ধর্মগুলোর বিভাজন এবং ধর্মীয় বিভিন্ন উপদল কেন্দ্রীক আন্তঃ দ্বন্দ বোঝাতে। এই আন্তঃদ্বন্দ আমেরিকার তৈরী করেনি, সে নিজ স্বার্থে এটিকে ব্যবহার করছে। এর জন্য সে অবশ্যই দোষী। কিন্ত এই উদাহরণটা ফোকাস করছে ধর্মীয় উপদল কেন্দ্রীক আন্তঃ দ্বন্দকে।

      // সাময়িক সময়ের ব্যাপ্তিকালটা কত? //

      সময়ের ব্যপ্তিকাল গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই উদাহরন দেওয়া হয়েছে আই এসের আদর্শিক লড়াই এবং আমেরিকার তেল তথা সম্পদের উপরনিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পার্থক্য বোঝানোর জন্য যাতে এই দুটো লড়াইয়ের গুরুত্ব্ এবং লঘুত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা তৈরী হয়। তর্ক করতে গেলে উদাহরন ভাল ভাবে বুঝতে হবে।

      //বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে চীনের অর্থনীতি যে ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চীনের সাথেই হয়ে যেতে পারে।//

      সামরিক বিষেষজ্ঞরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করে নানা রকম সামরিক ত্বত্ত দেয় । কিন্ত তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ এখনো অনেক দুরের সম্ভাব্যতা। দুটো বিশ্বযুদ্ধে মানুষের যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে তাতে আধুনিক অস্ত্র সম্বলিত তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ সংগঠিত হলে গোটা মানব সভ্যতাই হুমকি মুখে পড়বে। এটা বৃহৎ শক্তিগুলো জানে। বৃহৎ শক্তি গুলো তাই নিজেদের স্বার্থেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরী করে আখের গোছাবে কিন্ত যুদ্ধে জড়াবে না।
      আর ভবিষৎ পৃথিবীর রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিচালিত হবে সারভাইভাল অব দ্য ফিটেষ্ট নীতিকে কেন্দ্র করে। যার অর্থনীতির সক্ষমতা বেশি সেই সবকিছু নিয়ন্ত্রন করবে। অন্যরা না চাইলেও সেটি তাদের মেনে নিতে হবে।

      //জাতি গত দন্দ অথাৎ শিয়া আর সুন্নি যদি এই ধরনের অবস্থান ধরে রাখে তাহলে কোন কালেই এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার নয়। ধর্ম পৃথিবীতে থাকবেই।//

      এটা ব্যক্তিগত অভিমত, এ নিয়ে তর্ক করা অর্থহীন । প্রত্যেকেরই নিজ মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে।

      // কোন দিন শুনেছেন ধর্মীয় দলগুলো দেশের অর্থনীতি নিয়ে কোন কথা বলেছে? কেন বলে না জানেন? কারণ তারা জানে যখন অর্থনীতি নিয়ে কথা বলবে তখন অন্য অনেক সমস্যা চলে আসবে যেগুলো নিয়েও কথা বলতে হবে।//

      ধর্মীয় দল গুলো আলাদা করে অর্থনীতির কথা বলে না কারন তারা ধর্মীয় বিধি বিধান কেন্দ্রীক শাসন ব্যবস্থা প্রণইয়নের জন্য কাজ করছে অর্থাৎ তাদের মূল উদ্দেশ্য রাজনৈতিক। জগতের সকল অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান তাদের ধর্মীয় বিধি বিধানের মধ্যেই আছে বলে তাদের বিশ্বাস। আলাদা করে অর্থ নীতির কথা বলা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক ।

      • আবু খায়ের আনিছ

        শুধু আমিই কোরআনের অর্থ জানি , আমি যেটা জানি সেটাই সঠিক , অন্যরা কোরআনের অর্থ জানে না, জানলেও ভুল জানে এগুলো এক ধরণের সস্তা আত্ব অহমিকা।
        আমি এই ধরণের কথা বলা বা প্রকাশ কোন জায়গাতেই করি নাই। ধন্যবাদ, যুক্তি তর্ক যখন বিষয় ছাড়িয়ে ব্যাক্তিগত প্রসঙ্গে চলে যায় তখন আর সেখানে কথা বলার মত কিছু থাকে না।
        হ্যাঁ যখন আমি জানি তখন সেটা আমার অহংকার, যখন অন্যকেউ জানবে তখন সেটা তার অহংকার। জ্ঞান আহরণ করে যদি কেউ অহংকারী হয় তবে আমি তাকে সাধুবাদ জানাই।
        আপনার মূল বক্তব্যটা ধর্মের দিকে চলে যাচ্ছে, যদি তাই হয় তবে বলি, আমিও ধর্ম নিয়ে মাতামাতি পছন্দ করি না আর ব্যাক্তিগত ভাবে আমি কোন ধর্মের আদর্শে চলি না। কোন ধর্ম আমার পরিচয় নয় বরং আমার পরিচয় আমি একজন মানুষ।
        ধন্যবাদ আপনাকে, আপনার সাথে আমি আর তর্ক বাড়াতে ইচ্ছুক নয়। বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেক কথাই বলা যাবে পক্ষে বিপক্ষে। সুতরাং এখানেই থেমে যাওয়া উচিৎ বলেই মনে করি।
        শুভেচ্ছা নিবেন, বুঝাই যাচ্ছে আপনি যথেষ্ট কষ্ট করেছেন এই বিষয় নিয়ে। প্রয়োজন আছে এই সব বিষয়ে কথা বলার। অগ্রিম শুভেচ্ছা নিবেন। ধন্যবাদ আবারো।

      • অপার্থিব

        জ্ঞান আহরনের অর্থ নিজের মনকে মুক্ত করা, আরো নুতুন কিছু জানার জন্য নিজের মনকে প্রস্তুত করা।
        জ্ঞান আহরনের সাথে অহংকারের কোন সম্পর্ক নেই। আমার প্রতি মন্তব্য গুলো পুরোটাই আপনার আগের মন্তব্যের সাপেক্ষে করা, এখানে ব্যক্তিগত কোন কিছুই নেই। পরিশেষে আপনার মন্তব্যগুলোর জন্য ধন্যবাদ।

  • শুন্য শুন্যালয়

    ফ্রান্স সম্পর্কে এত তথ্য জানা ছিলোনা আমার। যারা এসব করছে, তারা কখনই ধর্মের কারনে করছে বলে মনে হয়না, কারন এতে মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তবে আমাদের তাতে কোন বিকার বা প্রতিবাদ নেই, এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে তারা।
    খুব চমৎকার একটা বিশ্লেষণী পোস্ট।

  • স্বপ্ন নীলা

    খুবই মন দিয়ে পোস্ট এবং মন্তব্যগুলো পড়লাম – খুবই বিশ্লেষণ ও সময় উপযোগী পোস্ট। আমি এ ধরণের পোস্ট পেলে গো গ্রাসে গিলি বলতে পারেন —
    আই এস নিপাত যাক – মানবতা মুক্তি পাক —

    আন্তরিক ধন্যবাদ

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ