যৌতুকের বলি ৭ম পর্ব

মনির হোসেন মমি ১১ মার্চ ২০১৫, বুধবার, ০৯:৩৪:১৬পূর্বাহ্ন গল্প, বিবিধ ১৫ মন্তব্য

নর এবং নারী ইসলাম ধর্ম মতে পৃথিবী সৃ্ষ্টির বহু বছর পূর্বেই সৃষ্টি করে রেখেছিলেন অতপরঃ আদম এবং হাওয়া নামে পৃথিবীর মাঝে পাঠায় তার বন্দনা করিবার সেই সুত্র ধরেই বংশপরাক্রমে পৃথিবীতে নর এবং নারীরা সামাজিক শৃংঙ্খলা রক্ষার্থে  বিবাহ নামক একটি পবিত্র বন্দনে আবদ্ধ হন।ধর্ম মতে বিবাহের পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হলে একত্রে থাকার সুত্র একটিই তাহলো একে অপরের দায়ীত্ত্ব বুঝে নেয়া,সমাজ তার গ্যারান্টি,ধর্ম বেদে মন্ত্রের কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন বাক্য যা ইসলাম ধর্মে বলেন "কবুল"।ধর্মবেদে এমন কিছু মন্ত্র পাঠেই সমাজ তাদের একত্রে রাত্রী যাপনে বংশের প্রদীপ জ্বালাতে বৈধতার লাইসেন্স দেয়।অন্যথায় ভুমিষ্ঠ সন্তাস জারজ অথবা অবৈধ।ধর্মের দৃষ্টিতে পাপ বা পাপী।

গল্পের মূল চরিত্র ফুলীকে সামাজিক রীতিনিতী মেনে রশিদ মোল্লার মেঝো ছেলে আকমলের সাথে বিবাহ দেবার প্রস্তুতি নেন কন্যার পিতা সহজ সরল মুক্তিযোদ্ধা আলমাছ বেপারী।বিয়ে দিতে আলমাছ বেপারী তার শেষ জমিটি বিক্রয়ের উদ্দ্যেগ নেন কেননা জামাইকে যৌতুক হিসাবে একটি হোন্ডা দিবেন।জমিটি রশিদ মোল্লার ক্রয় করার কথা থাকলেও সে ক্রয় না করে আলমাছকে অন্য আরেক জন ক্রেতাকে দেখিয়ে দেন।সেই মোতাবেক আলমাছ জমি বিক্রয় করে জামাইয়ের জন্য একটি হোনডা খরিদ করে সরাসরি বাড়ীতে চলে আসেন।তার দুদিন পর ঘটে ভিন্ন ঘটনা।

আজ ফুলী এবং আকমলের বিয়ে।বিয়ের সকল প্রস্তুতি বেশ সুষ্ঠুভাবেই সম্পর্ন হয়।বর-কন্যা পক্ষের কবুল নামক বিশেষ শব্দটি শুনার পূর্বে মোড়লের বাদ সাধে জামাইয়ের উপহারগুলো বুঝে পেতে।সমস্যা কি হোন্ডাতো দুদিন আগেই কিনে রেখেছেন আলমাছ ব্যাপারী।সে তার লোকদের বললেন হোন্ডাটি নিয়ে আসতে।লোক কথা মতো চলে গেলে হোন্ডা রাখার স্থানে।ঐ দিকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বর কনের আত্ত্বীয় স্ব-জনরা।পাঠানো লোকগুলো ফেরত আসেন খালি হাতে.....।অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন আলমাছ।
-কি রে তোরা খালি হাতে এলি কেনো?হোন্ডা কই?
-পেলাম নাতো,
-বলিস কি!তোরা ঠিক মতো দেখেছিস?
-হ' চাচা...
আলমাছ দৌড় দেন হোন্ডাটি রাখার স্থানে....যেই ঘরে হোন্ডাটি রাখা হয়েছিল সেই ঘরটি ফাকা কিছুই নেই,আলমাছ পাগলের মতো এদিক সেদিক খোজছেন আর বুক ফাটা কান্নায় প্রলেপ বকে যাচ্ছেন।পাশে সেই কখন আলমাছের স্ত্রী হোন্ডা ঘর থেকে উদাও হওয়াতে অজ্ঞান হয়েছেন এখনও তার জ্ঞান ফিরেনি কয়েকজন মহিলা তাকে পানি ছিটা দিয়ে জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করছেন।
এরই মধ্যে রসিদ মোল্লা তার দল বল নিয়ে হোন্ডা হারানোর স্থানে আসেন।সে রেগে গেলেন আলমাছের সাথে।
-বাটপারির একটা সীমা থাকা দরকার,জামাইকে হোন্ডা দিতে না পারলে বলতে আমি কিছুই মনে করতাম না....এভাবে আমারে বেজ্জতি না করলেও পারতে আলমাছ।ঐ তোরা সব চল এখানে আর এক মুহুর্তোও না।
চারদিকে শোরগোল,কন্যাদায় পিতার মাথায় যেন বজ্রপাতে ঘনঘটা কন্যাদায় মাতা জ্ঞান ফিরে ফের অজ্ঞান কন্যার চোখের পানিতে মেকাপ গলে বিশ্রী চেহারা এ সমাজে বিধবাকে যত সহজে ফের বিয়ে দেয়া যায় কিন্তু বিয়ের আসর থেকে বর কোন কারনে উঠে গেলে কন্যার কলঙ্ক অপয়া অলক্ষুনী লাগে সারা গায়।পিতা কোন মতে বার বার মোল্লাকে ম্যানেজ করার বৃথা চেষ্টা।
-দয়া করেন বিয়াই,দয়া করেন এ ভাবে চলে গেলে আমার মরন ছাড়া উপায় নাই....একটু রহম করেন,আমি দরকার হলে আমার ভিটে বাড়ী বিক্রি করে জামাইকে আবার হোন্ডা কিনে দেবো।
-মুগরী কয়বার জবাই করে?তোমার বাটপারী ধান্দা বাদ দাও আমি অবাক হলাম আলমাছ,শেষ পর্যন্ত মেয়েকে নিয়েও ছলচাতুরী করলে!
-বিশ্বাস করেন আমি হোন্ডাটা আমার ঐ খালি ঘরটির মধ্যে সাজিয়ে রেখেছিলাম,সকালেও সেটাকে ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করেছি।
-তাহলে এখন তা কৈ?হাওয়াই চলে গেছে নাকি?যত্ত সব বাটপারের গোষ্টির খেতা মারি......ঐ ঐ সবাই চল...।
ঠিক সেই মুহুর্তে মোল্লার ছেলে বিয়ের পোষাক পরিধানে মোল্লাকে বাধা দেয়।
-দাড়ান বাবা,
চলন্ত রশিদ মোল্লা ঘুড়ে তাকিয়ে অবাক।
-দাড়ান বাবা....আপনি যাবেন না।
-কি বলছিস তুই,তুইও সাথে যাবি এখানে আর সম্মন্ধ করব না আমরা।
-বাবা,একটু সু নজরে তাদের অসহায়ত্ত্বের দিকে তাকান,আমরা এ ভাবে চলে গেলে ওরা সমাজে মুখ দেখাবে কি করে।
-এই তুই কি আমার ছেলে?তোর কি হয়েছে হঠাৎ এতো দরদ উৎলে পড়ল কেনো?
-বাবা আমি স্বীকার করি আমি এমনটি ছিলাম না।ফুলীকে যে দিন থেকে ভালবেসেছি সে দিন থেকেই পরিবর্তন এসেছে আমার জীবনে,আমি বুঝতে শিখেছি কোনটা ভাল কোনটা মন্দ।তোমাকে আমাকে লোকেরা সালাম দেয় কেনো জানো....শ্রদ্ধায় নয় ভয়ে।আজ এই যে পরিস্থিতির জন্য তুমিই দায়ী।তোমার এলাকায় তোমার হবু পুত্রবধুর হোন্ডা চুরি হয়ে যায় আর তুমি তা জানো না আমি বিস্বাস করি কি করে বাবা, বলো,?তুমিই বলো যেখানে তোমার হুকুম ছাড়া গাছের পাতাটিও নড়ে না সেখানে চুরি! এ গ্রামে কার এতো বড় সাহস আছে যে মোল্লার পুত্রের উপহার চুরি করে?বলো....?

ছেলের কথা শুনেন আর এক বার এ দিকে আরেক বার ঐদিকে কেমন যেনো বিরক্ততায় বার বার দাতে কামড় দিয়ে ছেলের দিকে তাকাচ্ছেন রাগে মাথার টুপি একবার খোলেন আবার মাথা চুলকিয়ে মাথায় দেন,ছটফট করে পায়চারি করতে থাকেন।
-কয় কি ছেলে আমার?
-হ'বাবা তুমি মানো আর নাই বা মানো এই বিয়ে আমি করবই।
-দেখো তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছ তুমি কার সাথে বিটট্রে করছ?
-না একটুও না,তুমিও ভুলো না আমি তোমারি ছেলে।আমারও সাধ ইচ্ছে পছন্দ অপছন্দ বলতে কিছু আছে।
-এই তোমার শেষ কথা.......
মোড়লের চামচায় মোড়লকে ঠিক সেই সময় টান দিয়ে একটু আড়ালে কানে কানে ফিস ফিস করে কি মন্ত্র দিলো যে খলনায় রশিদ মোল্লা নায়কের ভাবটা ধরলেন।কিছু ক্ষণ পাকা বাংলা সিনেমার মোড়লের অভিনয়ের মতো ভাব ধরলেন তার পর.....।
-সাবাস!এই না হলে কি আমার ছেলে!আলমাছ মিয়া যাও বিয়ের ব্যাবস্থা করো,আরে ...আমিতো দেখলাম ছেলে আমার তোমার মেয়েকে কতটা পছন্দ করে...আমি মুগ্ধ।
আলমাছ মিয়ার মরুভুমির শুষ্ক কলিজায় পানি এসে যেনো শীতল করে দিল।টপটপ করে পড়া চোখের জল মুছতে মুছতে মোল্লার সামনে আসেন।
-না না বিয়াই সাব আমি যে ভাবে হউক জামাইকে হোন্ডার ব্যাবস্থা করব।
-মাশাল্লাহ মারহাবা এই চলো চলো..........কাজী সাহেব কই?
মোল্লার চামচা কথাগুলো বলতে বলতে মোল্লাকে টেনে নিয়ে গেলেন বিয়ের আসরে।আবারও সবাই যার যার মতো কাজে ব্যাস্ত হৈ হুল্লোতে ভুতুরে ভাবার্থ বাড়ীটি আনন্দে মাতহারা।আলমাছ ফুলীদের কষ্টে আকাশের কান্নায় খুশি বিলাতে ঝিড় ঝিড় বৃষ্টি।এমন ঝিড় ঝিড় বৃষ্টিতে বিয়ে বাড়ীর ছেলে মেয়েরা মেতেছেন হলি খেলায়।অন্য দিকে চলছে বিয়ের সব অবশিষ্ট আয়োজন।
ফুলীর জীবনে এলো লাইফ পার্টনার।বরের এমন আশ্চর্য জনক ভাল ব্যাবহারে,যে ছেলে ছিল কয়েক ঘন্টা পূর্বেও তার চোখে বদমাইশ মাস্তান সেই আজ তার জানের জান।এমন সুন্দর একটা মন সমাজের একজন বকাটে মাস্তানের থাকতে পারে ফুলীর চোখে তা ছিল কল্পানাতীত।
চলবে,,,,,

যৌতুকের বলি ৬ষ্ঠ পর্ব

পরবর্তী পর্বে কি থাকছে......................
-{@ ফুলী কি তার সংসার ধরে রাখতে পারবে?
-{@ তাকে কি পুত্র বধু হিসাবে শশুড় -শাশুড়ী সত্যিই মেনে নেবেন?
-{@ দেবর ননদরা কি তাকে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করবে?
-{@ এর পর যৌতুক পেতে কি ভুমিকা থাকবে ফুলীর স্বামীর সে কি সত্যিই ফুলীকে ভালবেসে ছিল?
এ রকম  আরো কিছু জটিল প্রশ্নের উত্তর পেতে চোখ রাখুন আগামী পর্বে............................ -{@

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ