যৌতুকের বলি ১২তম

মনির হোসেন মমি ৯ জুলাই ২০১৫, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৯:২০অপরাহ্ন গল্প ১৫ মন্তব্য

1435922146665রাজাকার আল বদর রশিদ মোল্লার ভয়ে তটস্থ গ্রামবাসী"খবরের কাগজে নিউজটি পড়ছিলেন সাহসী সাংবাবাদিক রায়হান আহম্মেদ।কনকনে শীতে গ্রাম্য চায়ের দোকানে পত্রিকা পড়া উৎসুক বৃদ্ধের অনুরোধে সাংবাদিক রায়হান এতক্ষন রাজাকার রশিদ মোল্লার কুকৃর্তির ইতিহাস পড়ে জানালেন তা ছিল রায়হান সাহেবের রিপোর্ট।ঘটনার শেষ মুহুর্তে থেমে যাওয়ায় উৎসুক বৃদ্ধ অবাক হলেন।
-কি হলো সংবাদিক সাব থামলেন কেনো শেষ করুন।ফুলীর জামাই আকমল বিদেশ চলে যাবার পর কি হয়েছিল ফুলীর?পড়ুন।
-হুম!কি হয়েছিল পত্রিকার লেখা এবং আমার চেয়ে ভালো আপনারাই বলতে পারবেন।কেননা আপনারা হলেন প্রত্যক্ষ সাক্ষী...
দোকানে এরই মধ্যে এক ছন্ন ছাড়ার মতো এলো মেলো চুল দাড়িওয়ালা এক জন লোক ঢুকে এক কাপ চা আর রুটি চাইলেন।দোকানদার তাকে পাগল ভেবে দূরে তাড়িয়ে দিচ্ছেন ঠিক সেই সময় দোকানদারকে রায়হান সাহেব,তাকে চা এবং রুটি দিতে বলেন।
-ভাইয়া,তার শরিরে ময়লা আর অর্ধ নগ্ন জীর্ণ পোষাক দেখে আর কাউকেই এ ভাবে তাড়িয়ে দিবেন না কেননা আল্লাহ কার ভিতর কি দিয়ে রেখেছেন তা কেবল সেই জানেন।
পাগল টাইপের লোকটি চা রুটি হাতে নিয়ে সাংবাদিকের মুখের কাছা কাছি ঝেকে এসে পাগলের মতো কি যেন দেখার চেষ্টা করছেন।অতঃপর সে তার তর্জুনী অঙ্গুটিটাকে নাড়িয়ে মাটিতেই বসে পড়লেন এবং খেতে লাগলেন।সাংবাদিক সাহেব আবারো শুরু করলেন রশিদ মোল্লার আলাপ।
-ফুলীর মৃত্যু সম্পর্কে আপনারা যদি কেউ কিছু জানেন তবে বলতে পারেন আমার জন্য সহজ হবে।
তাদের মধ্যে আর এক আধা বয়সী যুবক প্রশ্ন করলেন।
-আপনি ফুলীকে স্বাাভাবিক মৃত্যু ভাবছেন?সে কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে মারা যান নি।তার মতো  গুণবতী বউ এ গ্রামে আর একটিিও ছিল না...আকমল আমি দুজনে একে অপরের খুব কাছের ছিলাম, মাঝে মাঝে আমি ওর  কাাছেই শুনতাম ওর বাবার সীমাহীন অত্যাচারের কথা।পত্রিকায় যা লিখেছেন সবই সত্য......তারপর কি হলো কোন পর্যন্ত আপনি জানেন তা শুনে নেই তারপর বলব আমাদের কথা....।
-ঠিক তাহলে শুনুন পড়ছি..এই যে দোকানদার ভাই আমাদের এখানে আরো কয়েক কাপ গরম গরম চা দেনতো...।
-{@
বাংলার নারীরা স্বামী ভক্ত এ  কথাটি চির সত্য।স্বামীহীন স্ত্রী অসহায় অবলা আর যদি কারোর স্বামী বিদেশ থাকেন তবেতো লোক মুখে কত বাজে কথাই না শুনতে হয় প্রতিনিয়ত।কখনো কখনো যা না সে করেছেন ভাগ্যের কারনে তা তাকে কলঙ্কের কালি বহন করতে হয় সারাটি জীবন।স্বামী বিনে নারীর জীবন বৃথা,কলঙ্কময়।আকমল বিদেশ চলে যাবার পর ফুলী তা হাড়ে হাড়ে টেড় পাচ্ছেন।এক দিকে লোক মুখে অন্য দিকে ঘরের ভিতর আপন জনের তিরস্কার আর কঠাক্ক উক্তি জীবনকে বিষিয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত।
আকমলের প্রবাসী জীবনের প্রায় মাস ছয়েক গত হতে চলছে।মোটা মোটি কাজ কর্ম ভাল বেতনও ভাল পান এই পর্যন্ত তিন মাসের প্রায় লক্ষাধিক টাকা ফুলী তার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে রেখেছেন তা তার শাশুড়ীকে নিয়েই সে সব সময় ব্যাংকে যাতায়াত করেন।প্রথমে আকমল তার মায়ের নামে টাকা পাঠানো ব্যাংক এ্যাকাউন্টের  কথা বললেও তার মা ই ছেলেকে এক প্রকার বাধ্য করেন এবং বুঝাতে সক্ষম হন যে তার বউয়ের এ্যাকাউন্টে রাখলেই বরং তার জন্য সব চেয়ে ভাল হবে।কেননা তার বাবা ভাই ননদীরা তার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিয়ে পারলেও বউয়ের কাছে ভয়ে কিংবা লজ্জায় টাকা চেয়ে নিতে পারবেন না।অবশেষে মায়ের কথাই হলো ফুলীর এ্যাকাউন্ট মা নমিনেন্ট এ্যাকাউনন্টে টাকা পাঠায় আকমল।অবশ্য এ জন্য ভাসুর দেবর ভাবী ননদীর কাছ থেকে শুনতে হয়েছিল অনেক কটু কথা।আর রাজাকার শশুড়ের মুখের ভাষাতো পাঠাকদের জানাই আছে।
ভাই ভাবী দেবর ননদ শশুড়ের সাথে রুদ্ধদার বৈঠক করছেন যখন আকমলের পাঠানো টাকা ব্যাংক গচ্ছিত রাখতে শাশুড়ীকে নিয়ে ফুলী ব্যাংকে গেলেন ঠিক তখন তারা যৌথ ভাবে ষড় যন্ত্রের জাল বুনেন।যে করে হোক ফুলীকে এ বাড়ী হতে তাড়াতে হবে।ভাই ভাবী চিন্তায় পড়ে গেলেন ফুলীর উদরে আগত শিশুটি তাদের সম্পত্তির ভাগীদার হবে সুতরাং যে করে হোক তা রুখতে হবে।
-প্রয়োজনে পৃথিবী হতে চির বিদায়....
প্রথমে ওরা যা করল তা কল্পনাতীত এক জন সতীকে অসতীর আক্ষ্যা দিয়ে বাপ ছেলে সবাই মিলে স্বাক্ষী দিয়ে একটি বানোয়াট গল্প তৈরী করে ছেলে আকমলের কাছে চিঠি লিখল।রাজাকার পিতা ছেলেকে বিস্বাস করার জন্য লিখেছিল লম্বা এক চিঠি তার কিছু অংশ...
1436291714998"আমি তোমার জন্ম দাতা একজন  অভাগা পিতা  আর জন্মদাতা কখনো তার পুত্রের অমঙ্গল চায় না তাই যা লিখেছি সবই সত্য।তুমি বিস্বাস না করলে আমার মরন মুখ দেখবে আমি ভাববো পৃথিবীতে রক্তের সম্পর্কের কোন দাম নেই।তাছাড়া তুমি চাইলে এলাকার লোকদের সাথে ফোনে কথা বলতে পারো আমি সেই ব্যাবস্থা করিব"।বউমার সাথে ছেলেটির বিবাহের পূর্বে অবৈধ সম্পর্ক ছিল তুমি দেশে থাকতে ,মনে পড়ে এক দিন ...তোমার ভাই ফোনে ভিডিও তুলেছিল সে দিন তুমি বিস্বাস করোনি আমিও বিস্বাস করিনি আজ  যখন নিজের চোখে দেখলাম ছেলেটি বউমার ঘর হতে রাত দুপুরে বের হয় তখন তোমার কথা আর আমাদের মান সন্মানের কথা ভেবে কিছুই বলিনি।এবার তুমি বিস্বাস কর আর নাই করো তা তোমার ব্যাপার আমি এই পাপিষ্ঠ বউকে আর আমার বাড়ীতে রেখে পবিত্র বাড়ীটিকে অপবিত্র করতে চাই না...এবার তোমার মর্জি।
ইতি:তোমার পরিবার।
"চোখেরঁ আড়াল হলে মনের আড়াল হয়"   কথাটি সত্যতা মিলল আকমলের বেলায়।বৈদেশিক চাকচিক্যতায় আকমলের মন ধীরে ধীরে পরিবরর্তন হতে থাকে তাছাড়া পরিবারের অনবরত ফুলীর কলঙ্কময় লেখা চিঠি এবং রশিদ মোল্লার ক্ষমতা বলে ফুলীর পাঠানো চচিঠিগুলো পোষ্ট অফিসে সীমাবদ্ধ থাকায় বেশ কয়েক মাস যাবৎ ফুলীর কোন চিঠি না পাওয়ায় ও বিদেশে স্বদেশী বন্ধুদের কু-মতলব পরামর্শে সে তার মন মানষিকতাকে কন্ট্রোল করতে পারেননি।প্রতিনিয়ত নেশায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন তার মাঝে বিয়ের আগের সেই মস্তান টাইপের চরিত্রের আর্বিভাব ঘটে,তার কাছে প্রেম ভালবাসা সংসার মিছে তাসের ঘর বরং যা বর্তমান তাই ভোগ করাই শ্রেয় বলে মনে হতে থাকে...সাধের ময়না পাখিটি একাকিত্তে সাংসারিক পারিপার্শিক আলো অন্ধকারে কি ভাবে পথ চলছেন তা খোজ করার প্রয়োজন বোধ করছেন না।
-তার পর?
-তারপর কর্তব্যের প্রয়োজনে আমার এই গ্রামে আসা যাওয়া,উঠেছি আপনাদের পাশের গ্রামে আমার এক আত্মীয়ের বাসায়।রশিদ মোল্লার স্ত্রী খুবই ভদ্র মনে হয়...
-হ ঠিক কইছেন সে মাটির মানুষ ঐ মানুষটির মথা ঠিক ছিল বলেই ফুলী কিছু দিন ভালয় ভালয় সংসার করতে পেরেছিল।সোনার মতো বউকে হারিয়ে সে এখন পাগলের মতো।আগের মতো কারো সাথে তেমন কোন কথা বলেন না,কেমন যেন স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়ে গেছেন।
-হুম ঠিক কিন্তু তাকে যে কথা বলতে হবে সে হয়তো জানেন ফুলী নিখোজের আসল ঘটনাটি।হয়তো অত্যান্ত মানষিক চাপে সে এখন পাগল প্রায়।আপনারা কেউ একজন যাবেন আমার সাথে রশিদ মোল্লার বাড়ীতে।
সবাই সবার মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ী করছেন রায়হান যেন তাদেরকে বিপদেই ফেলে দিলেন।
- আপনি যাবেন একটু?
-না ভাই, আমি রাজাকারের বাড়ীতে যুদ্ধের পর কখনিই যাইনি আর যাবোও না।
-খোলে বলুন একজন সুনাম ধন্য চুল দাড়িওয়ালা মোল্লাকে রাজাকার বলছেন কেনো?
-এই রাজাকার তার দলবল নিয়ে আমার চাচাকে মেরেছে কারন চাচ্চু আমার মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল।
-এখনতো মামলা করার সময় এসেছে,মামলা করেন না কেনো?
-ভয়ে,
-কিসের ভয় আপনাদের?অপরাধী কে?সে নাকি আপনি...।
-এখানেতো সমস্যা ভাই, ভয়ে পালিয়ে থাকার কথা ছিল ওদের অথচ ভয়ে পালাচ্ছি আমরাই...রাষ্ট্রের কর্নধারদের স্বার্থবাদী রাজনিতী ওদেরকে শক্তি যুগিয়েছে..শক্তি এখনো যুগাচ্ছে।
-হুম তবে এটাও সত্য যে ওদের বাহাদুরীর দিন আপনার আমার সচেনতার মধ্য দিয়ে কমে আসছে এবং এক দিন শেষ হবে।আমাদের সমস্যা ঐক্যতায় আমাদেরকেই সমাধান করতে হবে...ঘরে বসে থাকলে যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায় না।ঠিক আছে আপনারা যদি প্রয়োজন মনে করেন আসবেন আমি এখন উঠবো...আসসালামুআলাইকুম।

রায়হান সাহেব ফজরের নামাজ পড়েন প্রতিদিনের মতো বেড়িয়ে পড়েন মনিং ওয়াকের জন্য এবার সে ফুলীদের শশুড় বাড়ী সেই বাশ ঝারের আশে পাশে ঘুরা ঘুরি করে সেখানে পুকুর ঘাটে বসে আছেন।সে প্রথম যেদিন ফুলীর ভাসুরের মেয়ে পিংকিকে নিয়ে এখানে এসেছিলেন হঠাৎ তার সে দিনের কথা মনে পড়ে গেল,নিদিষ্ট পথটি দিয়ে যেতে সে দিন খুকী চিৎকারটি তার কর্ণে প্রধ্বনিত হচ্ছে ...
"এ  কি করছেন ওখানে পা দেবেন না।
লেখক সে স্হান থেকে ঝটকায় সরে আসেন।
-কেনো খুকী…এখানেতো পা না রাখার কিছুই দেখছি না?
-এখানে আমার নতুন চাচীর কবর।
-তার মানে ?"
সে ধীরে ধীরে সেই নিদিষ্ট গেলেন।সেখানে সবুজ বাশঁ গাছটিতে হেলাল দিয়ে আনমনে দাড়িয়ে থাকা একটি মেয়েকে দেখে অবাক হয়।এ মেয়েটি কে এখানে দাড়িয়ে সে কি করছে...ধীরে ধীরে আর একটু কাছে যেতেই চিনে ফেলেন রায়হান ..সেতো পিংকি।কয়েক মাস দেখা না হওয়ায় সে এখন কত বড় হয়ে গেছে... চেনাই যায় না।আসলে মেয়েরা মনে হয় খুব দ্রুতই বড় হয়ে যায়।
চলবে...

যৌতুকের বলি ১১তম
ছবিওস্কেচ
মমি

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ