যৌতুকের নীল থাবা!

মারজানা ফেরদৌস রুবা ২০ জুলাই ২০১৫, সোমবার, ১১:১৮:৪২অপরাহ্ন সমসাময়িক ১৬ মন্তব্য

যৌতুকের বলি

যৌতুকের জন্য ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে!

যৌতুকের বলি মেয়েটির নাম সুখী (যার কপালে সুখ বলে কিছু নেই)। ঈদের আগের দিন স্বামী, দেবর, ভাসুর ও ননদ মিলে হাত-পা বেঁধে এ কাজটি করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সাভারের জিঞ্জিরা এলাকায়। স্বামী রবিউল এখন সাভার থানা-পুলিশের হাতে। ঘটনার সময় একজন বুকের ওপর বসেছে, একজন চোখে লাইট ধরেছে, আর আরেকজন ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে চোখ উঠানোর কাজ করেছে।

হাসপাতালে নেয়ার পর জরুরীভিত্তিতে সুখীর চোখের জন্য তিনটি ইনজেকশনের প্রয়োজন দেখা দেয়, একেকটির দাম এক হাজারেরও বেশি। কিন্তু সুখীর বাবার সেই সামর্থ্য নেই দেখে ডাক্তার নিজের পকেট থেকেই একটি ইনজেকশন কেনার দাম দেন।

এ অবস্থায় মেয়েটির পরিণতি কি?

জানা যায়, সুখীর স্বামী শ্বশুর থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলো। মাত্র মাস খানেক আগে সে বিদেশ থেকে একেবারে চলে এসেছে। আসার পর থেকেই আবার স্ত্রীর কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। এর আগেও এ কারনে সুখীকে মারধর করা, ঘরে বন্দী করে রাখা, খাবার না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিচার-সালিস হয়েছে। সুখীর মা-বাবা অনেক বার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন মেয়েকে আর শ্বশুরবাড়ি পাঠাবেন না। এবারও স্বামী বিদেশ থেকে আসার পর সাত দিনের মাথায় মারধরের ঘটনায় মেয়েকে নিয়ে আসেন তাঁরা। কিন্তু সুখী মা-বাবা কাউকে কিছু না বলে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর কাছে চলে যায়। আর এ যাওয়াই তাঁর কাল হয়ে উঠে।

বিয়ে নারী-পুরুষের একসাথে বসবাসের একটি ধর্মীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি। সামান্য কারনে বিবাহ-বিচ্ছেদকে আমি সমর্থন করি না কিন্তু তারমানে এই নয় যে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে সম্পর্কটিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। একটা মানুষের সাথে বসবাস করার কিছুদিন পর থেকেই বুঝা যায় তার সাথে বাকী জীবনটা কেমন যাবে। যে মানুষের কাছে ব্যক্তি মানুষ থেকে অন্য বিষয়াদি গুরুত্ব পায়, আখেড়ে তার অবস্থান কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এটুকু বোধ নিয়ে যে মেয়েরা চলতে পারে না, তাদের জীবন এমন পরিণতির দিকেই এগিয়ে যায়।
আবেগ সেখানেই দেখানো উচিত, যেখানে এর মূল্যায়ন হয়।

কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমানা মঞ্জুরের জীবনেও এমন ঘটনা ঘটে।
 এই ভিডিওতে শুনুন তাঁর করুন কাহিনী।

সবচেয়ে আগে জীবন। তাঁর জন্যই জীবনকে উৎসর্গ করা যায়, যে জীবনের মূল্য বুঝে।
আর যে বুঝে না, তাঁকে ছুড়ে ফেলাই উত্তম।

যৌতুক একটি ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি। যৌতুককে না বলুন।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ