পশ্চিমা সাম্রাজ্যের একজন নেতৃস্থানীয় ইতিহাসবিদ হলেন প্রফেসর বার্নার্ড লুইস। শুধু তাই নয় গোটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও একজন বিখ্যাত মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয় তাঁকে। যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যার মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে তিনি বিস্তর লেখালেখি করেছেন। ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে ফরাসী পত্রিকা Le Monde তে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে আর্মেনিয়ার গণহত্যা নিয়ে কিছু মন্তব্য করে বসেন। তিনি বলেন, আর্মেনিয়ায় যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, সেটি গণহত্যার সংজ্ঞায় পড়ে না। কাজেই সেখানে গণহত্যা হয়েছে, এমনটি বলা যাবে না। পশ্চিমের একজন শীর্ষ ইতিহাসবিদ, গবেষক হিসেবে লুইস তাঁর গবেষণালব্ধ তথ্য দিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করতেই পারেন। কিন্তু তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় আর্মেনিয়ানদের মধ্যে। সেই প্রতিক্রিয়ার সূত্র ধরে একটি ফরাসী আদালত তাঁকে এক ফ্রাঙ্ক জরিমানা করে।
এছাড়াও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনী কর্তৃক গণহত্যাকে (হলোকাস্ট) ঠিক ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করতে চাননি বলে ডেভিড আর্ভিং নামের পশ্চিমের একজন খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ ১৩ মাস জেল খেটেছিলেন। আরেক ঘটনায় মার্কিন অধ্যাপক ও আইনজীবী পিটার আর্লিন্ডার রুয়ান্ডার গণহত্যাকে অস্বীকার করে এটাকে যুদ্ধের একটি বাই প্রোডাক্ট বলে অভিহিত করেছিলেন।

11000517_10206916390367983_8987710165120041666_n

কিন্তু আশ্চর্যজনক এবং খুব লজ্জার হলেও সত্যি যে,১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা নিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী এই ৪৪ বছর সময়ে অসংখ্যবার নানা রকম বিভ্রান্তি ও অপমানজনক কথাবার্তা বলা হয়েছে। শুধু তাই নয় মিথ্যাচার করা হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষককে নিয়ে, বীরাঙ্গনা মায়েদের সংখ্যা নিয়ে এমনকি অনেকে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে “সামান্য গণ্ডগোল” বলার মতোও ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। চিহ্নিত রাজাকার নিজামী, মুজাহিদরাও একাত্তরের গনহত্যাকে তাচ্ছিল্য করে বলেছে- “কিসের গণহত্যা”। কিন্তু তাতেও আমাদের বোধোদয় হয় নি। বাংলাদেশের মূল ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে এতোবার এতো কুৎসিত এবং অপমানজনক কথা বলার পরেও এসব ঠেকাতে “হলোকাস্ট ডিনায়াল ল” এর আদলে কোন আইন আমাদের দেশে করা হয় নি ! কেন? এরকম একটা আইন করা কি খুব অসুবিধার? খুব অপ্রয়োজনীয়? সবশেষে কয়েকদিন আগে আরেকবার আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের প্রশ্ন তুলে,তাঁদেরকে অপমান করার মতো স্পর্ধা দেখালো রাজাকারদের মাস্টারমাইন্ড গো আজমের ছেলে, সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত কর্মকর্তা আজমী !
৩০ লাখ শহীদ আর ৬ লাখ বীরাঙ্গনা মায়েদের আর কতো অপমানের পর “১৯৭১ ডিনাইয়াল ল” নামের একটি আইন হবে আমাদের দেশে ? আর কতো ? নাহ্‌... আর বসে থাকা নয় ! এখনই সময় দাবি তোলার এরকম একটা আইনের। নিজেদের ভেতরের সমস্ত দ্বন্দ্ব আর কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি বন্ধ করে, সকলে একাত্ম হয়ে এরকম একটা দাবি তোলার মোক্ষম সময় এখন-ই। তা না হলে আমাদের জন্মের ইতিহাসগুলো বিকৃতি হতে হতে একদিন হারিয়েই যাবে। সেদিন কি করে আপনার কিংবা আমার সন্তানদের আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব আর ত্যাগের ইতিহাসগুলো শোনাবো ?

আমাদের দাবি খুব সাধারণ একটি দাবি। বাংলাদেশে Genocide Denial Law চাই। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও তার ইতিহাসকে বিকৃত করে, এমন ব্যক্তি গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন হোক, সে আইনের প্রয়োগ হোক। কেউ যেনো আর কখনোই আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা, মুক্তিবাহিনীর কর্মকাণ্ড অথবা একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের কুকীর্তি সম্পর্কে অসত্য বক্তব্য না রাখতে পারে। এমন যেকোনো কিছুকে যেনো এদেশের আইনে বিচার করা হয়।

এই দাবিতেই আগামি ৯ জুন টিএসসি এবং আগামি ১৩ জুন প্রেসক্লাবে বিকেল ৪টায় আমরা আসছি। দাড়াচ্ছি। নিজের শেকড়ের অস্তিত্ব রক্ষার দাবিতে।

আমরা কতোই না সময় নষ্ট করে নানান অপ্রয়োজনীয় কাজে। নিজেদের নিজের শেকড়ের অস্তিত্ব রক্ষার দাবিতে আমরা কি এইটুকু করতে পারি না।  এইটুকু করা কি আমাদের কর্তব্য নয় ?

আমাদের ইভেন্ট লিংকঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধে Genocide Denial Law চাই

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ