মাস্কের বসন্ত

রোকসানা খন্দকার রুকু ১৭ আগস্ট ২০২১, মঙ্গলবার, ০৯:১৩:৫৫অপরাহ্ন রম্য ২৮ মন্তব্য

“ মাস্ক পরুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন!” চলছি সবাই কম আর বেশী।

“টিকা নিন সুস্থ থাকুন!” টিকার পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও লোকজন ফেরত আসে ‘টিকা নাই কাল আসেন।।’ বাসায় ফিরেই টিভিতে ঘোষনা কালই নামছে এতো কোটি টিকা কোন সমস্যা নাই।

মেয়ের বাপেদের বেড়েছে লিপস্টিক ছাড়াও ড্রেসের সাথে ম্যাচিং মাস্কের খরচ। গেলো ঈদে নাকি অন্য দোকান আর মাস্কের দোকানে সমান সমান ভীড় ছিলো।

ছেলে ছোকড়ার মাথা এমনি গরম আবার কিসের মাস্ক। মেয়েরা যে এখনো সব ঘরের মাস্কে ঢাকা। যে দুচারজন হুর- পরী বাইরে তাদের মাস্কের স্ট্যাইলে সৌন্দর্য বেড়েও বহুগুন। যতো বাহারী ডিজাইন আর রঙ। কোনটার কি আহ্বান তাও বোঝা দায়। মাস্কের ভেতরের বয়স, সেটা বোঝাও দায়। সেদিন ‘ হায় বেবী’ বলার পর বাসায় এসে সে কি লজ্জা! অন্য কেউ ছিলো না সেটা মা নিজেই ছিলো। আর একদিন তো সাইকোলোজির হট ম্যাডাম। শুধু চোখ দেখে কি বোঝা যায়, না মন ভরে?

করোনায় তাই মনের হাহাকার বেড়েও আগুন। আগে হাহাকার/ মাথা গরম হইলে স্কুল- কলেজের গেটই ভরসা ছিলো। সামনে গেলে মন ভরতো এখন মেয়ে তো নাই। যদিও দু- চারজন তাও মাস্কে ঢাকা কড়া আয়োজনে। কিচ্ছু দেখার নাই, পাশে যেতে চাইলেও তিনফুট আবার স্যানিটাইজার তো আছেই। গার্ল ফ্রেন্ড প্রেম করবে তাও কড়া শর্ত- যতোদিন করোনা আছে, ওসব চুমুফুমুর আশা করো- না।

কি বিপদ, ধুর! ছাই আর রাস্তাতেই যাবো না। দেখা যায় না আর হলুদ মুখ। শুধু শুধু রোদে পুডে লাভ কি?

এতো ঢাকা- ঢাকিতে এদিকে আবার করোনাই নাই। খুললো লকডাউন, সারি সারি প্যান্ডেল সাজলো। লোকের গাদাগাদি তবুও পরের দিন মৃত্যু হার অনেক কম। শুধু ওই  স্কুল- কলেজ, পাবলিক ভার্সিটি আর ভর্তি পরীক্ষাতেই যতো করোনা। টিকা দিয়েই তবে ছাড়বে।

কদিন আগেও মরিয়মের বাপ বলছিলো- কিসের করুনা, ওগুলা বড়লোকের অসুখ। টিকা হামরা তো কোনকালেও দিবার নই। গ্রামের মেম্বার টিকা দেওয়ার আগে আগে কানে কানে কি যে কইলো মরিয়েমের বাপ; মরিয়মের মাও সহ টিকাকেন্দ্রে সবার আগে হাজির। এখন করোনার শুরুতে কেনা ময়লা মাস্ক থুতনির গোড়াত আটকায়া চায়ের দোকানে কয়- “ আগে তো বিশ্বাস হয় নাই, এখন করুনা বিশ্বাস হয়। টিকাও ভালো জিনিস; দেওয়ার পর শরীরে বল পাওয়া যায়। জ্বরও আসে নাই। তোমার গুলার সবার টিকা দেওয়া জরুরী।”

ওই তো কথা; নেতা যতোই ছোট হউক। তার কান কথা অনেক কঠিন। টিকা না দিয়া মরিয়মের বাপ যায় কই!

সরকারী অফিসের ফ্যানের ঠান্ডা বাতাস। বালিকার সিল্কি চুল বাতাসে উড়ছে, হাল্কা হলুদ সৌন্দর্যের শুধু কপালটুকুই মাস্কের বাইরে। আন্দাজে নাকটা টানটানই মনে হয়। বয়স আন্দাজ করা ঢের কঠিন। এদিকে আবার পরনেও জিন্স। পঁচিশের বেশী হবে না।

সামনে বসা উপসহকারী পরিচালকের মন উসখুস দেখতে যদি পাওয়া যেত হাল্কা পাতলা। ঘুস ছাড়া কাজের কিছুটা হলেও উসুল হতো। কিন্তু কিভাবে? হাল্কা কাজে সংলাপও হাল্কা! একটা মাত্র সিগনেচারই তো চায়, তাতে কি জমে? অবশেষে অকারণ বালিকাকে বসতে বলে ফাইল নাড়া- চাড়া।

-সরি আপনার দেরী করিয়ে দিলাম! একটু বসুন!

-হ্যা ঠিক আছে!

অবশেষে বলেই বসলেন- কি করেন আপনি?

-আমি হাউস ওয়াইফ।

-একটু হতাশ হয়ে; তো বাসা কোথায়; জামাই কি করে, একথায় সেকথায় আপনাকে বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে।

বালিকা বুঝেই নিলো, কি জামানা পরলো রে বাবা মুখ দেখারও বাহানা লাগে। মাস্ক নামাতেও ঈদানিং সংকোচ হয়। ওই বাঙ্গালী মেয়ের মাথায় ঘোমটা দেবার মতো অবস্থা আর কি? অকারণ অভ্যাস হয়ে যাওয়া।

কর্মকর্তার বালিকার মুখ দেখে মাথায় হাত। ভাবলো কি আর হইলো কি! খালি চুল সিল্কি, আর ঘাড় ফর্সা হলেই কি হয়? ভেতরে তো চল্লিশের মহিলা।

এদিকে বালিকা অনেকক্ষন ধরে মুখ খুলে বসে। মাস্ক পরবে কিনা বুঝতে পারছে না কারন তিনি তাকানও না। অবশেষে “ স্যার হয়েছে?”

হবার আর কিইবা আছে। বিনা টাকায় সিগনেচারটাই যা হলো। আর কিছু তো হলো না। যাহ দিনটাই মাটি! না জানি এভাবে আর কতোকাল হবে মাটি!

ছবি- নেট থেকে।

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ