মামাকে দেখতে যাওয়া- পর্ব(১)

শামীম চৌধুরী ৮ মে ২০২০, শুক্রবার, ০৩:১০:১৮পূর্বাহ্ন ভ্রমণ ১৯ মন্তব্য
ভ্রমন পিপাসু মানুষ কখনই ঘরে বসে থাকতে পারেন না। প্রকৃতির সজীবতার সাথে মিশে থাকতে সবারই মন চায়। ভ্রমন শুধু অর্থই খরচ করে না। ভ্রমন এনে দেয় মনের ভিতর এক অনাবিল সুখ ও শান্তি। দেহ ও মন দুটোই সজীব রাখার জন্য ভ্রমনের বিকল্প নেই। তাই মনোবিজ্ঞানী ও ডাক্তারদের উপদেশ থাকে নিজের গন্ডির বাহিরে কোথাও আউটিং বা ভ্রমনে যাবার জন্য। এক কথায় ভ্রমন একটি মহাঔষধ।
 
ব্যাক্তিগত জীবনে আমি একজন হাড়-ভাঙ্গা পরিশ্রমী মানুষ। রুটি-রুজীর বাহিরে যদি কোন নেশা থাকে সেটা হলো ফটোগ্রাফী। আর ফটোগ্রাফী মানেই ভ্রমন। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, শহর-গ্রাম,পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল,সমুদ্র-নদী ও হাওড়-বিলে ঘুরে বেড়িয়েছি শুধুমাত্র ফটোগ্রাফীর জন্য। তার সাথে তাল মিলিযে ভ্রমনের ফাঁকে কত জানা অজানা মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। সখ্যতা গড়ে উঠেছে স্থানীয় লোকজনের সাথে। অপরিচিত অথচ ভিন জেলার লোকের আপ্যায়ন ও আতিথিয়েতায় মনে হয়েছে তারা সবাই আমার পরিবারের একেক জন সদস্য। জানতে পেরেছি ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। পরিচিত হয়েছি অঞ্চল ভিত্তিক খাবার ও আঞ্চলিক ভাষার। সব কিছু মিলিয়ে মনে হয়েছে আমি যেন এক সুঁতোয় গাঁথা কোন মালার ফুলের কলি। ভ্রমন শেষে নিজ বাসস্থানে ফেরত আসার পর অসাড় দেহটা যেন ফিরে পায় এক মৃত্যুঞ্জীবনীর স্বাদ। যে স্বাদের ভাগ কাউকে দিতে রাজী নই। দেহ ও মন পায় নতুন করে উদ্দোম শক্তি। আর এই সবই দরকার একজন মানুষকে সুস্থ্য রাখার জন্য।
সুস্থ্য জীবন মানেই সুস্থ্য মন। আর সুস্থ্য মনই হচ্ছে চির তরুনের ছোঁয়া।
ফটোগ্রাফীর বয়স ১৬ বছর চলছে। এই সময়ে অনেক পশু ও পাখির ছবি তুলেছি । ছবি তুলতে যেয়ে যতটা না পরিশ্রান্ত হয়েছি তার চেয়ে বেশী আনন্দ পেয়েছি ভালো মানের একটি ছবি পেয়ে। একটা ভালো ছবি সারাদিনের কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। আমি সবসময় বলে বেড়াই যে, আমার একেকটি ছবি একেকটি গল্প। আর যে গল্প ঘিরে আছে নানান এডেভেঞ্চার ও স্মৃতি। অবসর সময়ে সেই স্মৃতিচারনে খুঁজে পাই মধুরতা। ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফীর শুরু থেকেই লোভ ছিলো বাঘের বা মামার ছবি তোলার। আর আমাদের দেশে বাঘের প্রাপ্তিস্থান একমাত্র সুন্দরবন। বহুবার ছুঁটে গিয়েছি সুন্দরবনে শুধুমাত্র বাঘের ছবির জন্য। কিন্তু বিধি-বাম। ভাগ্য কখনই সুপ্রসন্ন হয়নি। বার বার যেয়েও নিজ চোখে বাঘের দেখা পাইনি। প্রতিবারই বুক ভরা কষ্ট ও মনে দুঃখ নিয়ে ঢাকায় ফিরেছি। সুন্দরবনে বাঘের দেখা না পাওয়ার অনেক কারন আছে। সেটা নিয়ে কোন এক সময় অন্য লেখায় লেখা যাবে।
গত বছরের নভেম্বর’১৯ মাসে আমরা ৫ জন ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার ভারতের রাজস্থানে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। ভ্রমনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো ফটোগ্রাফী। আবার এই ফটোগ্রাফীর মূল আকর্ষন ছিলো বাঘের ছবি। নিজেদের মধ্যে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি রাজস্থানে দুইটি ফরেষ্টে বাঘের দেখা মিলবেই। সবাই মনঃস্থির করলাম রাজস্থানেই যাওয়া হোক। আমাদের একজন বয়োজেষ্ঠ্যঃ ফটোগ্রাফার প্রথাযশঃ সাংবাদিক কিসমত খোন্দকার ভাই ২০১৯ সালে রাজস্থানের ভরতপুর গিয়েছিলেন পাখির ছবি তোলার জন্যে। সেই সময় তিনি যার মাধ্যমে ভ্রমন করেন তার সাথে যোগাযোগ করতে বললাম।
সুজিত বেরা একজন ট্যুর অপারেটর। কোলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা। তার কাছ থেকে আমরা খরচের হিসেব নিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ০৭ তারিখ সুজিতের মাধ্যমে রাজস্থানের “সারিসকা টাইগার রিজার্ভ”, “রান্থম্বোর ফরেষ্ট” ও “ভরতপুরের কিওলাদিও ন্যাশনাল পার্কে” যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। ট্যুরটা ছিলো ০৭ রাত ০৮ দিনের। জনপ্রতি বাংলাদেশী ৩০ হাজার টাকা সুজিতকে পাঠানোর ব্যাবস্থা করলাম। কারন সেই সময় ঢাকা-কোলকাতা-দিল্লী. দিল্লী-জয়পুর এবং দিল্লী-কোলকাতা-ঢাকার বিমান ভাড়ায় ছাড় চলছিলো। নিয়মিত দামের চেয়ে অর্ধেক দামে টিকিট খরিদের জন্য সুজিতকে অগ্রীম টাকা পাঠানো হয়। আমাদের জনপ্রতি মোট খরচ হয় ভারতীয় রুপি ৪৪ হাজার টাকা। এই টাকার ভিতর বিমান ভাড়া, খাওয়া-দাওয়া, পাঁচ তারকা মানের হোটেলে রাত্রি যাপন, জয়পুর থেকে দিল্লী আসা পর্য়ন্ত সার্বক্ষনিক দুটি মাইক্রোবাস ভাড়া সহ যাবতীয় খরচ। বনের ভিতরের প্রবেশ মূল্য ও কেনা-কাটা আমাদের নিজস্ব। এখানে উল্লেখ্য যে আমার একমাত্র পুত্র সন্তান দীপ আমার সফরসঙ্গী হয়। কারন মার্চ মাসে সে উচ্চতর শিক্ষার জন্য নরওয়ে চলে যাবে। তাই শেষ সময়টুকু পুত্রকে সান্নিধ্যে রাখার ইচ্ছা মাত্র।
আমরা ০৭ই ফেব্রুয়ারী’২০২০ সকাল ০৯:৪৫মিনিটে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বিমানে কোলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কোলকাতার স্থানীয় সময় সকাল ০৯:২০মিনিটে নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু আন্তজার্তিক বিমান বন্দরে অবতরন করলাম। ইমিগ্রেশান কাষ্টমস শেষ করে বিমান বন্দরের বাহিরে অপেক্ষমান সুজিতের সাথে দেখা করলাম। সুজিতকে পেয়ে আমার মনে হলো কত বছরের চেনা একজন বন্ধু। মৃদু হাসি ও নম্র ভাষার একজন মানুষ। আমাদের একটি স্টলে নিয়ে সকালের নাস্তা সহ চা দিয়ে আপ্যায়নের ব্যাবস্থা করলেন। আমাদের সবাইকে সুজিত ভারতীয় মোবাইল কোম্পানীর সিম দিলেন। আমরা যার যার মতন দেশে পরিবার স্বজনদের সাথে কোলকাতায় পৌছানোর খবরটা দিতে পেরে হালকা হলাম।
ট্রানজিট যাত্রী হওয়ায় নাস্তা সেরে বিমান বন্দরের ভিতরে অবস্থান করলাম। স্থানীয় সময় দুপুর ৩:৪৫মিনিটে দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বিকাল ৬:১০মিনিটে দিল্লীর ইন্ধিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবরতন করলাম। সেখানে যাবতীয় আইনের কাজ শেষ করে বিমানবন্দর সংলগ্ন হোটেল নাইট কুইনে যখন উঠলাম তখন রাত ০৮টা। হোটেলে পৌছে গরম পানিতে গোসল সেরে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। পরদিন ভোর ৬:৩০ মিনিটে জয়পুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। তাছাড়া সারাদিন ভ্রমনের ক্লান্তিতে শরীরে অবসাদ চলে আসে। তাই রাত ১০ টায় নিজ নিজ রুমে ঘুমিয়ে পড়লাম।
(চলবে)
0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ