মরার আবার জাত কি?

শামীম চৌধুরী ১৭ জুন ২০২০, বুধবার, ০৩:১১:২৭অপরাহ্ন সমসাময়িক ৯ মন্তব্য

অস্থির লাগছে।
পুরো বিশ্ব এক অস্বাভাবিক পথে চলছে। সমস্ত পরিশ্রমী লোক থেমে যাচ্ছে। একে অপরের কাছ থেকে কেউ অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়ার আশা ছেড়ে দিচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষরা খাবারের অভাবে ভুগছেন। অনেকেই কারো কাছে হাত পেতে চাইতে পারছেন না। কারো মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজন COVID-19 ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ইচ্ছা থাকলেও তাঁর কাছে যেতে পারছেন না।

মানবতা আজ কোথায় দাঁড়ালো?
কেউ কি আমাকে বলতে পারেন?
প্রতিটি মুহুর্ত এই ভাবনাগুলি আমাকে মনে করিয়ে দিচেছ।
অথচ আমাদের হাতে কোন সমাধান নেই।
তবে কি কেয়ামত আসছে?
এর চেয়ে ভাল আর কিছু নয়।

কি যে কষ্ট ও বেদনা 😥। একমাত্র তাঁরাই প্রতিটি মুহুর্ত অনুভব করছেন, যার পরিবার থেকে কোন একজন সদস্য/সদস্যা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন।
আক্রান্তকারীর ভাগ্যে কি নির্মম পরিহাস!
আপনজন বা প্রিয় মানুষটির সেবা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন। অথবা যিনি ভেন্টিলেশনে আছেন তিনি বুঝতেই পারছেন না তাঁর জীবনের উপর দিয়ে কি আম্পান ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন এমনকি সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে বিছানায় জড় পদার্থের মতন নিথর দেহটি শুধু মাত্র একটি স্বাভাবিক নিঃশ্বাসের জন্য যানপরনাই লড়ে যাচ্ছেন। কৃত্রিম ভাবে চেষ্টা করছেন একজন ডাক্তার কি ভাবে তাঁর রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন। অথচ এক সময় সকল চেষ্টাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে চলে যাবে দেহটি তার নিজস্ব বলয়ের ঠিকানায়।
তখন আবারো প্রমানিত হবে
“জন্মিলে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করিতে হবে”।

যে মা/বাবা কখনই চোখের আড়াল করেননি তাঁর সন্তানকে সেই মা/বাবা আজ আক্রান্ত হয়ে ছিঁটকে দূরে চলে যাচ্ছে নয়নের মনিদের কাছ থেকে।
মা/বাবা অফিসে বা ঘরের বাহিরে গেলে যে সন্তানরা প্রতিটি ঘর খুঁজে বেড়াতো কোথায় তাঁর মা/বাবা। আজ সেই সন্তানটিও খুঁজে পাচ্ছে না কোথায় আছে বা কেমন আছে তাঁরা। স্বামী যেতে পারছে না স্ত্রীর কাছে তদ্রুপ স্ত্রীও। একবার ভাবুনতো কতটা কষ্ট তাঁরা বুকে নিয়ে চলছেন? তিনিই বুঝবেন যিনি এই পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন।

সহোদর ভাইটি আজ দূরে । দুর হয়ে গেছে একে একে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় পরিজন। ভাইটির মাথায় হাত দিয়ে বলতে পারছে না “ভাইয়া তুমি কেমন আছো” কিচ্ছু হয়নি তোমার। আমরা সবাই আছি তোমার পাশে। ভাইয়া,আর মাত্র দুদিন। তারপর তুমি সুস্থ্য হয়ে আবার প্রকৃতির সুন্দর সকাল দেখবে। শুনবে পাখির কলতান ও মধুর সুরেলা কন্ঠ। আমরা আবার ধানমন্ডির লেক ধরে হাঁটবো আর খুঁনসুটি করবো।

সড়ক দূর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে তাঁর মৃত দেহটি বুকে টেনে নেয়া যায়। মৃত দেহটিকে মনের মাধুরীর সাথে মিশিয়ে তাঁর আত্মীয় স্বজন বড়ই পাতা গরম জলে সুগন্ধি মেখে গোসল করিয়ে কাফনের কাপড় পড়াতে পারে। শত শত মানুষ জানাজায় শরীক হয়ে লাশ কাঁধে নিয়ে শেষ সম্মানটুকু জানাতে পারে। মানুষের সহানুভূতি পায়। অথচ করোনায় মৃত্যুকারীর ভাগ্য্যে কিছুই মিলে না। আপনজনও পরিচয় দিতে চায় না। শুধুমাত্র সমাজের ভয়ে।

আমি প্রতিটি মুহুর্ত খুব কাছ থেকে দেখছি আক্রান্তকারীর পরিবারের সদস্যদের। কতবার চেষ্টা করেছি তাঁদের সান্নিধ্যে যেতে। কতটা পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে গেয়েছি সেই মানুষটির কাছে যিনি হাসপাতালের বেডে অচেতন মনে ঘুমিয়ে আছেন। অথচ প্রতিবারই বিফল হতে হয়েছে সমাজিক রীতিনীতির কাছে। উপদেশ দিয়েছেন নিজেকে সুরক্ষা রাখতে।
ইহাও কি সম্ভব?
তারপরও আমরা মনকে সান্তনা দিচ্ছি এই বলে যে, আমার প্রিয়জন বা আপনজন যেন সুস্থ্য হয়ে উঠেন। সমাজে আজ এমন নীরব আহাজারীর মানুষের সংখ্যা দিনি দিন বেড়েই চলছে। না পারছে কাউকে বলতে না পারছে সহ্য করতে। নীরবে কষ্টগুলিকে বুকের ভিতর লালন করছেন ।

আমাদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন শরীফে যে কয়টি শহীদি মৃত্যুর কথা বলা আছে তারমধ্যে মহামারীতে মৃত্যুও একটি। ১৫-২০দিন মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে যে মানুষটি তার অধিকার অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হয়ে করোনা ভাইরাসে মারা গেলেন তিনি হয়তো শহীদি মর্যাদা পাবেন আল্লাহর কাছে। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন কোনদিনই আশা করেননি এমন মৃত্যু হোক তাঁর আপনজনের।
আমরা এমন মৃত্যু চাই না।

সমাজে নোংরা মনের মানুষ থাকবেই। তাদের কাজই হচ্ছে সমাজকে কুলষিত করা। তারা করোনায় মৃত্যুকে বাঁকা চোখে দেখবে। আর এটাই হচ্ছে তাঁদের স্বভাবজাত অভ্যাস। অথচ তারা একবারও ভাবে না তাদের এই নোংরা কথা যদি মৃতের পরিজন শুনতে পায় তবে কতই না কষ্ট পাবেন।

পরিশেষে বলি “মরার আবার জাত কি”

আল্লাহ সবাইকে এমন পরিণতি থেকে হেফাজত করুন।
সবাইকে স্বাভাবিক মৃত্যু দান করুন।
আমীন।

ছবিটি প্রতিকী ও গুগল থেকে নেয়া।

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ