পূর্ব প্রকাশের পর : 

পবিত্র কুরআনের সূরা সাবা (22 তম পারা 34 নং সূরা 13 নং আয়াত আলোচনা)

দেখে নেয়া যাক, সূরা সাবার 13 নং আয়াতে কি বলা হয়েছে-

তারা সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী প্রাসাদ, ভাস্কর্য, হাউজ সদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং সুদৃঢ়ভাবে চুল্লির উপর স্থাপিত বৃহদাকার ডেক নির্মাণ করত হে দাউদ পরিবার কৃতজ্ঞতার সাথে তোমরা কাজ করতে থাক আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ”  

বর্ণিত আয়াত হতে কয়েকটি প্রশ্নঃ

  • তারাবলতে কাদের বুঝানো হয়েছে?
  • এই আয়াতে ভাস্কর্য বলতে কি বুঝানো হয়েছে?
  • কৃতজ্ঞতার সাথে কাজ করা বলতে কি বুঝানো হয়েছে?

উত্তর (1)- “তারাবলতে জ্বীনদের বুঝানো হয়েছে।

উত্তর (2)- “ভাস্কর্য(আরবি শব্দ তামাছিলা) কি তার শাব্দিক অর্থ অত্র নিবন্ধের শুরুতে বিভিন্ন অভিধান ও তাফসিরের কিতাব অনুসারে দেয়া হয়েছে।

তথাপিও সূরা সাবার 13 নং আয়াতের আলোকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যেতে পারে। এ অংশের আলোচনায় হযরত সুলায়মান আ. এর প্রতি ভাস্কর্য নির্মাণ করার নির্দেশ দেয়া সংক্রান্ত বিভ্রান্তির নিরসন ঘটবে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধরণ সংক্রান্তে পরিচ্ছন্ন ধারণা লাভ করা যাবে। “কাজ” করার আদেশ দান সংক্রান্ত মতপ্রার্থক্যের শীতল সমাধান বেরিয়ে আসবে।

আসুন দেখি তাফসিরে মাজহারির 9 খণ্ডে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা কিভাবে করা হয়েছে : -

তারা সুলায়মানের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রাসাদ, ভাস্কর্য, হাউজ সদৃশ বৃহদাকার পাত্র, এবং সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত ডেগ নির্মাণ করতো

এখানে মাহারিব অর্থ সুদৃঢ় প্রাসাদ, সুউচ্চ মসজিদ, সুউন্নত বসতবাটি। মাহারিব শব্দটি মিহরাব এর বহুবচন। এর শাব্দিক অর্থ হরব (যুদ্ধ) করা, আক্রমণ প্রতিহত করা, আর সুউচ্চ প্রাসাদও বিরুপ প্রাকৃতিক প্রভাবকে প্রতিহত করে।

বাগবি লিখেছেন বায়তুল মাকদিস মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় হযরত দাউদের আমলে। যখন মসজিদের প্রাচীর এক মানুষ সমান নির্মাণ করা হল, তখন প্রত্যাদেশ হল, হে দাউদ! তোমার মাধ্যমে এই মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়া আমার অভিপ্রায় নয়। তোমার উত্তরসূরী সোলায়মানকে আমি দান করবো নুবওয়ত ও সাম্রাজ্যাধিকার। আর সে-ই সুস্পন্ন করবে এই মসজিদের নির্মাণ। এর কিছুকাল পরেই হযরত দাউদের মহাতিরোভাব ঘটল। তার স্থলাভিষিক্ত হলেন তার প্রিয় পুত্র হযরত সুলায়মান এবং তিনিই সুসম্পন্ন করলেন বায়তুল মাকাদিস মসজিদের নির্মাণ পর্ব। ঐ নির্মাণ পর্বে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন শুভ-অশুভ উভয় প্রকার জ্বীনকে। কয়েকটি দলে বিভক্ত করে দিয়েছিলেন তিনি তাদেরকে। তাদের কাজের প্রকৃতিও ছিল বিভিন্ন রকম। আর মসজিদ নির্মাণে ব্যবহৃত শ্বেতমর্মর পাথরগুলো তিনি তাদেরকে দিয়ে উত্তোলন করিয়েছিলেন খনি থেকে। মসজিদ নির্মাণ ছাড়াও ঐ শ্বেতমর্মরগুলো দিয়ে তিনি নির্মাণ করিয়েছিলেন সুরক্ষিত দুর্গ, নগর-প্রাকার ও অনেক বসতবাটি। বনি ইসরাইলেরা ছিল বারটি গোত্রবিভক্ত। তাদের প্রত্যেক গোত্রের জন্য তিনি জ্বিনদের দ্বারা নির্মাণ করিয়ে নিলেন পৃথক পৃথক সুরক্ষিত নগরি। মসজিদ নির্মাণ করালেন সবার শেষে। জিনদের এক এক  উপদলের দায়িত্ব ছিল এক এক রকমের। কেউ খনি থেকে পাথর তুলতে লাগল। কেউ তুলতে লাগল সোনা-রুপা। কেউ সমুদ্রাভ্যন্তর থেকে সংগ্রহ করে আনল মনি-মুক্তা। কেউ আবার আনল মেশক আম্বর ও সুগন্ধি দ্রব্য। এভাবে সবগুলো নির্মাণ সামগ্রী মিলে হয়ে গেল বিশাল স্তুপ। সেগুলো গণনা অথবা পরিমাণ করার সাধ্য কারো ছিল না।

এরপর ডেকে আনা হল স্থপতি ও প্রকৌশলীদেরকে। তারা পাথরগুলোকে করিয়ে নিলো মসৃন ও নির্দিষ্ট পরিমাপের। মনি-মুক্তা দিয়ে অঙ্কন করিয়ে নিল বিভিন্ন রকমের নয়নাভিরাম নকশা। দেয়াল ও মেঝে নির্মাণ করা হলো শ্বেত ও পীতবর্ণ মর্মর প্রস্তর দিয়ে। মেঝেতে বিছিয়ে দেওয়া হল ফিরোজা বর্ণের গালিচা। এভাবে একসময় সমাপ্ত হল নির্মাণ কর্ম। দেখা গেল বায়তুল মাকদিসের মতো চিত্রাকর্ষণ প্রাসাদ তৎকালীন পৃথিবীতে আর একটিও নেই। ঘোর অন্ধকার রাতেও সমসজিদটি সমুদ্ভাসিত হতে লাগল পূর্ণিমার চাঁদের মতো। হযরত সুলায়মান বনী ইসরাইলদের বিদ্বান ও সুধী সমাবেশে ঘোষণা করলেন, আমি এই সুদৃশ্য মসজিদ ভবনটিকে নির্মান করিয়েছি কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে। এর বাহিরে ও ভিতরের সমস্ত কিছু কেবলমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত।

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ