ভালো থেক আমাদের সন্তানেরা।

রোকসানা খন্দকার রুকু ১ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০৫:৪৩:১৪অপরাহ্ন সমসাময়িক ২৮ মন্তব্য

কন্যা দিবস গেল! দেখলাম ফেসবুকে গর্বিত বাবা-মায়ের পোস্ট । কন্যারা সব শুভকামনা শুভেচ্ছায় গড়াগড়ি খেল। এত গড়া গড়ির মধ্যেই গবেষকরা বলছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে এবং সেটা পরিবারে ও পরিবারের বাইরে। তারমানে নারী ও শিশু ঘরেও নিরাপদ নয়। এ বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক ধর্ষণ ও বাল্যবিবাহের রমরমা ঘটনা ঘটেছে। উঠতি বয়সী ছেলেরা অতিমাত্রায় উচ্ছশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। মধ্যবয়সী বুড়োরাও বাদ যাচ্ছে না অঘটনে। আর এ কারণেই বাবা-মাও অনিশ্চিয়তার মধ্যে।মেয়েদের ক্ষতির আশংকায় বাল্যবিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এতেই বাল্যবিয়ের হার বেড়ে যাচ্ছে।

 

আদতে আমরা কন্যাদের কতটুকু সমান অধিকার দেই বা সেভাবে মানুষ করি। পুত্র সন্তান ও কন্যা সন্তানকে কি একই চোখে দেখি বা একই ভাবে মানুষ করি ? ছেলেদের অতি আদর, অধিকার দিলে তারা যেমন লাগামহীন হয় তেমনি মেয়েদের কোনঠাসা করে রাখলে তারা হীনমন্যতায় ভোগে।

কোন দিবস বা আলোচনার কি দরকার আছে? আসুন ছেলে-মেয়ে নয়, কন্যাকেও সন্তান হিসেবে সমান অধিকারে বড় করি।

সন্তান জীবনের বিরাট বড় একটি অধ্যায়। আমরা তাদের আসলে কিভাবে বড় করছি? সমাজে যে সব ঘটনা ঘটছে তার জন্য কিন্তু বাবা-মাও অনেকাংশে দায়ী।

Women and child rights এ সন্তান লালন-পালন এর নিয়ম তিন ধরনের-

১. গনতান্ত্রিক

২. শাসনতান্ত্রিক

৩. স্বাধীনচেতা।

আমাদের এ তিনটির কোনটাই এককভাবে এপ্লাই করা যাবে না। একেবারে গনতান্ত্রিক না হওয়া, অতিরিক্ত শাসনও না করা, আবার ছেড়েও না দেয়া।আদর,শাসন,ছাড় সব মিলিয়ে বড় করলে তবেই সুসন্তান হিসেবে গড়ে ওঠবে।

 

কিছু নিয়ম কানুন আছে যেগুলো প্যারেন্টিং কোর্সের মধ্যে পড়ে-

১. জন্মের পাঁচ ছয় মাস পর বাচ্চারা একটু একটু করে বুঝতে শেখে। আমরা তখন মুখে খাওয়ানো শুরু করি। অনেক সময় খেতে চায় না তখন মোবাইল ফোন হাতে দিয়ে দেই। কার্টুন দেখিয়ে খাওয়াতে অভস্থ্য করি। এটা কখনোই করা উচিত নয়। আমাদের অবশ্যই সুন্দর সুন্দর গল্প শুনিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে।

২. বাচ্চারা বুকের উপর শুয়ে ঘুমাতে পছন্দ করে আর এতে বাবা-মায়ের সাথে এটাচমেন্ট বাড়ে। বুকের উপর নিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিলে আরামও বোধ করে।

৩. কপালে চুমু দেয়া, হাতের তালুতে চুমু দেয়া, কপালে হাত রাখা, আঙ্গুলের ভেতর আঙ্গুল ঢুকানো, পায়ের পাতা মায়ের গালে ছোয়ানো, গালে গাল লাগানো এসবেও এটাচমেন্ট বাড়ে এবং তারা মানসিক শান্তি পায়। আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। বাবা-মায়ের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ে।

৪. দুই গালে হাত দেয়া, নাকে নাক ঘষা। মাথার পেছনে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়া। এতে বাচ্চারা মার্সি ফিল করে এবং বাবা মায়ের মিস্ করার ব্যাপারটা বুঝতে পারে।

৫. হাঁটতে শেখার পর তাদের সাথে নিয়ে আঙ্গুল ধরে, হাত ধরে ধরে হাঁটতে হবে। তাতে তারা বুজবে বাবা-মা তাদের কেয়ার করে।

৬. বছর দুয়েক হলে ঘুমানোর সময় ছড়া, ছোটদের কবিতা, মজার মজার গল্প।এছাড়াও ধর্মীয় বিষয় যেমন- সুরা পড়ে শোনাতে হবে। এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে নৈতিকতা বোধ তৈরি হবে। ভবিষ্যতে তারা কোন অন্যায় কাজ করতে দ্বিধা করবে। টুকিটাকি ছোটদের বইও কিনে দিতে হবে।

৭. সালাম বিনিময় করতে হবে। পজিটিভ দিকগুলোতে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হবে।এতে তারা গর্বিত হবে এবং ভালো কাজে আগ্রহ তৈরি হবে।

৮. মোটামুটি বুঝতে শেখার সময় এলে ন্যায় অন্যায় বোঝাতে হবে। ভাই-বোন একসাথে একইরকম আচরনে বড় করতে হবে। তাহলে সমঅধিকার বিষয়টি নিশ্চিত হবে।

৯. চোখের ভাষা, আবেগ, রাগের ভাষা সন্তানদের বোঝাতে হবে। তারা যেন বুঝতে পারে আপনি কখন তার কাছে কি আশা করছেন। এবং তাদেরটাও বুঝতে হবে।

১০. সর্বোপরি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। তখন যে কোন বিষয় সহজে তারা শেয়ার করবে। মাঝে মাঝেই বেড়াতে যেতে হবে। বিশেষকরে পারিবারিক আয়োজনগুলোতে তাদের অবশ্যই সাথে নিয়ে যেতে হবে।

১১. সবসময় ইতিবাচক দিকগুলো বাচ্চাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। নেতিবাচক দিকগুলো কখোনোই তুলে ধরা বা সেরকম কোন আলোচনাও করা যাবে না।

সুসন্তান যেমন একটি পরিবারের শান্তি আনয়ন করে । তেমনি সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষাসহ অনৈতিক কর্মকান্ড থেকেও বিরত থাকে।

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ