ব্রেইন ওয়াশ

নীরা সাদীয়া ২৪ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ১২:১২:৫২পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৮ মন্তব্য

ব্রেইন=মগজ
ওয়াশ=ধোলাই

অর্থাৎ ব্রেইন ওয়াশ বলতে সোজা বাংলায় বোঝায় মগজ ধোলাই! লেখাটি পড়তে গিয়ে কারো কারো হয়ত হাসি পাবে, কারো কাছে মনে হবে অযাচিত টপিক।তবে আমি আপনাদেরকে আজ এই ব্রেইন ওয়াশ তথা মগজ ধোলাইয়ের গুরুত্ব বোঝাবো না, বরং এর কয়েকটা উদাহরন তুলে ধরব। ফলে আপনারাই বুঝে যাবেন এর প্রয়োজনীতা এবং অপ্রয়োজনীয়তা।

ধরুন, আপনি ভূতে বিশ্বাস করেন না। এবার, আপনি একটি অচেনা জায়গায় বেড়াতে গেলেন।হতে পারে সেটা আপনার বন্ধুর বাড়ি। বন্ধুটি বলে দিলো, এখানে রাতের বেলা বের হওয়া যায় না, কারন এলাকাটা ভালো নয়, ভূতে ধরে।বন্ধু বেছে বেছে কটা অলৌকিক ঘটনাও আপনাকে শুনিয়ে দিলো। তখন নিজের যত বিশ্বাসই থাকুক না কেন "ভূত বলে কিছু নেই" ; তথাপি বন্ধুর কথাগুলো বারবার আপনার কানে বাজবে। আপনি কিছু না দেখেও অনেক কিছু দেখে ফেলবেন। হয়তো একটা খড়ের গাঁদাকেই আলাদীনের চেরাগ থেকে সদ্য বের হওয়া জীন মনে করতে থাকবেন!

আবার মনে করুন একটা নতুন বই পড়ার জন্য হাতে নিলেন। বইটিতে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে গল্প লেখা হয়েছে। আপনি ট্রান্সদের বিষয়ে মূলত কিছুই জানেন না।কিন্তু বইটি কেনার সময় দোকানী আপনাকে বলে দিয়েছে, ট্রান্সরা কত্ত খারাপ। খারাপ একটা বিষয়ের ওপর লেখা এ বইটি। অতপর বইটি পড়ে ট্রান্সদের সবগুলো খারাপ দিক খুঁজে বের করে ফেলতেই চাইবে আপনার মন তথা মগজ।

খুব বেশি উদাহরন দেব না। এটাই সর্বশেষ এবং সবচেয়ে প্রচলিত উদাহরন যা আমি এখন আপনাকে দিতে চলেছি! ধরুন কেউ আপনাকে খুব ভালো করে বোঝালো মিস লিমা তো সাম্রাজ্যবাদী! এখন মিস লিমা এক জায়গায় বিড়াল হত্যার প্রতিবাদে ভাষণ দিতে গেলেন। এবার আপনার উৎসুক সদ্য ধৌত হওয়া মগজ সেখানে বিড়ালের জন্যেও একটি সাম্রাজ্য খুঁজবে, এটাই কি স্বাভাবিক নয়?

ঠিক তেমনি কেউ যখন অন্যের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে, আমরা তা মহানন্দে গলাধকরণ করি। কেননা, আমরা নিজেদের মস্তিষ্ককে অন্যের দ্বারা পরিচালিত করতে বেশি পছন্দ করি। এর কয়েকটা কারন থাকতে পারে। যেমন:

১. জাতি হিসেবে আমরা খুব অলস। অলসতা আমাদের মননে, মগজে সর্বত্র বিরাজমান। নিজের ব্রেইনকে একটু খাটাবো, একটু নিজস্বতা দিয়ে কোন বিষয়কে ভাববো, তা আমরা করি না। কেবলই অন্যের চিবিয়ে দেওয়া চর্ব্যচোষ্যকে গলায় নিয়ে ঢোক গিলতে পারলেই বাঁচি।

২. আমরা PNPC (পরনিন্দা/পরচর্চা) কে খুব ভালোবাসি। অন্যকে চর্চা করে সুখ খুঁজি, ভাবি নিজে খুব ভালো! কিন্তু নিজে ভালো হতে গেলে অন্যের চর্চা করে কোন লাভ নেই, বরং নিজের চর্চা করতে হবে, এটাই বোঝাতে পারি না নিজেদের মস্তিষ্ককে।

৩. অন্যের অপমান দেখার বড় নেশা আমাদের। এ নেশা এতই নেশা যে, যেখানে সেখানে, যখন তখন অন্যকে বিব্রত করে বিনোদন নেই আমরা! কেন জানি মনে হয়, সুষ্ঠু বিনোদনের আমাদের বড়ই অভাব! তাই কাওকে বিব্রত করার জন্য তার নামে অন্যের কানে বিষ ঢেলে তিক্ততা তৈরি করে রাখি।

৪. আমাদের অতি কৌতুহলী মন। অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে আমাদের আগ্রহ বেশি। কার হাঁড়িতে কি খবর আছে তা সংগ্রহে ব্যস্ত সদা। খবর পেলেই তা নিজের মনমত সাজিয়ে নিজের মস্তিষ্কের আবর্জনা অন্যের মস্তিষ্কে ঢেলে দিয়ে আসি।

৫. যারা মগজ ধোলাই করে তাদের তুলনায়, যাদের মগজ ধোলাই হয়, তারা অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের প্রানি। জীবন ধারনের দিক থেকে নয়, বরং মানসিক দৃঢ়তার দিক থেকে এরা নিম্ন স্তরে বসবাস করে।

এবার আসি, কারা অন্যের ব্রেইন দ্বারা ধৌত হয়?
সম্ভবত তারাই অন্যের দ্বারা ধৌত হয়, যারা খুব দূর্বল মস্তিষ্কের! তারা নিজের ওপর,নিজের যুক্তির ওপর, বুদ্ধির ওপর ভরসা রাখতে পারে না। অথবা তারা খুবই অলস, তারা কোনকিছুকেই নিজের মগজ খাটিয়ে ভাবতে ও ব্যাখ্যা করতে চায় না।

তারপর আসি এর উপকারীতা নিয়ে। এর উপকারী দিক হলো, আপনার ব্রেইন অন্যকেউ ধৌত করে দিলে আপনার সময়, শ্রম সবই বাঁচলো। আপনার মগজ পুরোটাই অব্যবহৃত রয়ে গেলো! টাটকা নতুন যে মগজ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন, তাই নিয়ে ফিরতে পারবেন।

এবার ক্ষতিকারক দিক বলি। ধরুন আপনার চার কদমের ভেতর একজন বিজ্ঞানীর বসবাস। তার কাছ থেকে আপনার অনেক কিছু শেখার আছে, অনেক কিছু পাবার আছে। কিন্তু তার সাথে পরিচিত হবার আগেই এক অতি সামাজিক প্রানি আপনার মগজ ধোলাই করে দিয়ে বললো, "এই লোক অসামাজিক। কারো বাড়ি যায় না, মেশে না" ইত্যাদি। তখন এসব শোনার এবং বিশ্বাস করার পর কি তার সঙ্গে পরিচিত হবার ইচ্ছেটা আপনার আর থাকবে? অথবা পরিচিত হতে গেলেও তো বারবার মনে প্রানে আপনার ধৌত হওয়া ব্রেইন ঐ নেতিবাচক সংকেতগুলোই খুঁজতে থাকবে! আর প্রকৃতিও তেমন, আপনি যখন নেতিবাচক কিছু দেখতে চাইবেন, সেও আপনাকে সেটাই দেখাবে!
অথচ ভালো ভাবে জেনে দেখুন, ঐ ব্যক্তি হয়ত সারাদিন নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। কারও হাঁড়ির খবর জেনে তাকে বিব্রত করা বা হেনস্থা করার বিন্দু মাত্র কোন আগ্রহ তার নেই। কিন্তু নিজের মগজের অসারতার কারনে তেমন একজন গুনী মানুষের সান্নিধ্য আপনি হারালেন। হয়ত তার নামে নেতিবাচক ভেবে সাময়িক বিনোদন ও লাভ করলেন। কিন্তু আপনার কোন সুদূর প্রসারী উন্নয়ন ঘটলো নাহ!

***যাই হোক, আমি কোন মনোবিজ্ঞানী নই। যা লিখেছি তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। এরপর এই সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানার অপেক্ষায় রইলাম। ***

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ