ISIS / ISIL / Waffen / @albaraka_newsগত পর্বে(বিশ্ব রাজনীতি বনাম আলকায়দা থেকে আইএস-বিহাইন্ড দি সিন। পর্ব-৬)  বলেছিলাম, লাদেনের অবস্থা তখন রীতিমত সংকটাপন্ন। ডাক্তাররা বলছিলেন তিনি বড়জোর দুই কি তিন বছর বাঁচবেন। নিয়মিত কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য তাকে একটি বহনযোগ্য মেশিন আফগানিস্তানের কান্দাহারে নিয়ে যাবার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা। তবে দুবাইয়ের এই রিপোর্ট নয়-বরং গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা নেতারা। খবরটা বরাবরই জোর গলায় অস্বীকার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। যেমনটা অস্বীকার করা হয়েছিল টুইন টাওয়ারে হামলা-হামলার পূর্বাপর অনেক তথ্য। ফরাসি গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এই তথ্য ফাঁস হওয়াকে কেন্দ্র করে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তখন অনেকখানি জল ঘোলা হয়েছিল। সে অন্য ইতিহাস। আমরা একটু ফিরে যেতে চাই আরও অতীতে ১৯৮৬ সালের বসন্তে!!!!!!

কি ঘটেছিল ১৯৮৬ সালের সেই মায়াবী বসন্তে, চলুন মিলাই তথ্যসুত্র পর্বঃ ৭ এঃ

ক্যালিফোর্নিয়ার শেরমান ওকসের হিলটন হোটেল। ঐ হোটেলে উঠেছেন প্রায় সাড়ে ছয় ফিট লম্বা প্রভাবশালী এক আফগান মুজাহিদ। সিআইএ’র খাতায় তাঁর পরিচিতি “টিম ওসমান” নামে। হোটেলে তাঁর সাথে দেখা করতে গেছেন এফবিআই’র স্পেশাল এজেন্ট গুন্ডারসন, মিশেল রিকনোসকুইটো ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তা রালফ ওলবার্গ। তাদের প্রথমজন অর্থাৎ গুন্ডারসন কেবল এফবিআই’র স্পেশাল এজেন্টই নন। একই সঙ্গে সিআইএ ও ন্যাশলান সিকিউরিটি সার্ভিসেরও একজন দুর্ধর্ষ এজেন্ট। দ্বিতীয়জন নিউট্রনিক বোমার জনক (পারমানবিক নয় কিন্তু বিধ্বংসী এই বোমা ব্রিফকেস এমনকি ছোট্র একটি পার্সেও বহনের উপযোগি করে তৈরি করেছেন তিনি) এবং মিসাইল প্রযুক্তির বিশেষজ্ঞ মেশেল রিকনোসকুইটো। গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাঁর সাহায্য নিয়ে থাকে সিআইএ আর তৃতীয়জন হলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টর আফগান ডেস্কের কর্মকর্তা রালফ ওলবার্গ। তাঁর আরেকটা পরিচয় হলো মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং স্টেট ডিপারটমেন্টের সাথে দেন দরবারের সমন্বয় করেন তিনি। এই তিন কর্মকর্তার হাই প্রোফাইলই প্রমান করে টিম ওসমানের সাথে বৈঠকটার গুরুত্ব। কারন এই সব আফগান মুজাহিদদের সাথে সাথে ১৯৮৩ সালেই বৈঠক পর্যন্ত করেছিলেন খোদ প্রেসিডেন্ট রিগান।

Reagan_Meets_Talibanছবিঃ ১৯৮৩ সালে হোয়াইট আফগান মুজাহিদদের সাথে বৈঠক করেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগান।

আফগান রণাঙ্গনে রুশ সেনাদের হাতে যখন ধরাশায়ী হচ্ছে আফগান মুজাহিদরা। বিশেষ করে রুশ বিমান আর হেলিকপ্টার গানশিপের হামলায় নাস্তানাবুদ মুজাহিদরা। তাদের জন্য দরকার আধুনিক অস্ত্র। আরে সেই জন্যই টিম ওসমানের সাথে এই বৈঠক। এফবিআই এজেন্ট গুন্ডারসন একটি নতুন অস্ত্রের কথা বললেন। এর নাম হলো ম্যানপ্যাডস (MANPADSs: Man Portable Air Defense Systems) অর্থাৎ বহনযোগ্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা। যার অরেক নাম স্টিঙ্গার মিসাইল। চীনের তৈরি 107 MM Rocket System কাঁধে বহনযোগ্য মিসাইলে রুপ দিয়েছেন অর্থাৎ একটি প্রটোটাইপ তৈরি করেছেন মিশেল রিকনোসকুইটো। আকাশে ছোঁড়ার পর এটি নিজে থেকেই শত্রু বিমানের উপর আঘাত হানবে। মুজাহিদরা এমন একটি অস্ত্র পেলে আফগান রণাঙ্গনে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা গুড়িয়ে দিতে পারবে। মিসাইল সিস্টেমটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে নিয়ে যাবার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টের অনুমতির দরকার। সেটা সমস্যা নয়। সমস্যা হলো অস্ত্রটি নির্মাণ এবং আফগানিস্তান পর্যন্ত পৌচানোর কাজটা কঠিন। তারও সমাধান দিলেন গুন্ডারসন ও ওলবার্গ। প্রোটোটাইপটা অনুসরন করে মিসাইলটি বানানোর কাজ করবে পাকিস্তানের কোন একটি সমরাস্ত্র কারখানায়। পরে পাকিস্তান থেকেই অস্ত্রের চালান পৌঁছে যাবে মিজাহিদদের হাতে। এমন একটি সিন্ধান্ত নিয়েই রণাঙ্গনে ফিরে যান টিম ওসমান। বলাবাহুল্য, সিআইএর ছদ্মনামের আড়ালের মানুষটি আর কেউ নন, তিনি “ওসামা বিন লাদেন”।

permission lattertim_osman_documentAlter2ছবিঃ টিম ওসামান বা ওসামাকে স্ট্রিঙ্গার মিসাইল দেওয়ার বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টর অনুমোদনপত্র।

পরের এক বছরে আফগান মুজাহিদদের হাতে পৌঁছে যায় পনেরশো থেকে দুই হাজার ম্যানপ্যাডস তথা স্ট্রিঙ্গার মিসাইল। রুশ বিমান প্রতিরক্ষার জন্য আতঙ্কের কারন হয়ে উঠেছিল এই অস্ত্র। কারন এর ধ্বংসক্ষমতা প্রায় ৮০ শতাংশ। বলা হয় স্ট্রিঙ্গার মিসাইলের কারনেই টার্নিং পয়েন্টে পৌঁছে যায় রুশ বনাম আফগান মুজাহিদদের ধর্মযুদ্ধ।

firing stinger michaleছবিঃ স্ট্রিঙ্গার মিসাইলে রুশ হেলিকপ্টার গানশিপ ঘায়েল।

১৯৭৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাশিয়ার দখলে যায় আফগানিস্তান। সে বছরই আফগান মুজাহিদদের সাথে সিআইএ’র দৃশ্যমান এবং প্রাতিষ্ঠানিক সেতুবন্ধন তৈরি হয়। ১৯৭৯ সালের ৩ জুলাই আফগান মুজাহিদসহ রুশ বিরোধীদের গোপন সাহায্য দেওয়ার বিষয়ে একটি নির্দেশনামায় সই করেন প্রেসিডেন্ট কার্টার। বিন লাদেনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের দৃশ্যমান সূচনাও সে বছরই। ২২ বছর বয়সি বিন লাদেন তখন সৌদি আরবে প্রায় তিনশ মিলিয়ন ডলারের পারিবারিক ব্যবসা ছেড়ে আফগান রণাঙ্গনে মুজাহিদ হওয়াটাকেই নিজের ভিবিতব্য বলে মেনে নিয়েছেন। প্রভাবশালী কোটিপতি পরিবারের সন্তান এবং সৌদি রাজপরিবারের কন্সট্রাকশান কাজের জন্য নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ছিলেন লাদেন। সেই সুবাদে রাজপরিবারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে লাদেন পরিবারের সখ্যতা ছিল। ধারনা করা হয় সেই সূত্রেই তাঁর সাথে গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স তুর্কী আল ফয়সাল এবং ওয়াশিংটনের সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স বানদারের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। সৌদি আরবের হাত ধরেই পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইএ’র সাথেও লাদেনের সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি হয়। যা দিনে দিনে প্রগাড় হয়ে ওঠে আফগান রণাঙ্গনে। ISI AND CIA CHIEF1

ISI AND CIA CHIEFছবিঃ (বা থেকে পাশাপাশি) ১৯৮৭ সালে আফগান রণাঙ্গনে আইএসআই প্রধান মে.জে. হামিদ গুল এবং সিআইএ প্রধান উইলিয়াম ওয়েবস্টার।

young laden 1980ছবিঃ ১৯৮০ সালের তরুন বিন লাদেন।

বলছিলাম ৭৯ সালের কথা। সেই বছরেই প্রথমবারের মত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মুজাহিদদের কি দেওয়া হয়েছিল? জানবো আগামী পর্ব ৮ এ।

বিঃদ্রঃ ঈদের আনন্দের মুহূর্তে আসলে মারামারি কাটাকাটি, যুদ্ধ বিগ্রহ এর ইতিহাস পড়তে এমনকি আমার লিখতেও খারাপ লাগবে এবং ঈদের আনন্দকে মলিন করতে পারে এই সব। তাই আনন্দকে আরো আনন্দময় রাখতেই, আগামী সপ্তাহে এই সিরিজের পর্ব ৮ আসছে না। পর্ব ৮ আসবে ঈদের পরবর্তী সপ্তাহে।

সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, চোখ-কান খোলা রাখুন; নিরাপদে থাকুন, কোরবানীর মহত্ত্ব ছড়িয়ে পড়ুক সবার মনে, দোলা দিক বিবেকের দ্বারে।

সবাইকে অগ্রীম ঈদ মোবারক।।

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ