বিচারক

হালিম নজরুল ২৭ মার্চ ২০২০, শুক্রবার, ০৪:৫২:০৭অপরাহ্ন ছোটগল্প ২১ মন্তব্য

 

মহারাজা একদিন সকলকে নামাজ পড়া ও ফরজ পালনের ঘোষণা দিলেন। এরপর থেকে ঘোষণামতো সবাই নিয়মিত নামাজ পড়ে এবং অন্যান্য ফরজ আদায় করে। এমনি একদিন পথ দিয়ে নামাজে যাচ্ছিলেন এক মুছল্লী। নামাজের সময় প্রায় শেষ। কিন্তু একজন ডাকাত এক পথচারীকে কতল করতে উদ্যত। নামাজী ভাবল হত্যাকারী একজন নামাজীকে হত্যা করতে যাচ্ছে। সে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠল। যেহেতু হত্যাকারী একাই ছিল, সে ভয় পেয়ে দৌড়ে পালাল। লোকটিও বেঁচে গেল। কিন্তু মুসল্লী পরে জানতে পারল ডাকাতের কবলে পড়া লোকটি আসলে নামাজী ছিল না, সে ছিল কাফের।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাটি মহারাজার কানে পৌঁছে গেল। তিনি মুছল্লীর উপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হলেন। তিনি রাত্রি দ্বিপ্রহরেই তাকে নিজ হাতে কতল করার ঘোষণা দিলেন। নির্দিষ্ট সময়ে রাজা তাকে কতল করবার উদ্দেশ্যে বের হবেন। এমন সময় রানী অপূর্ব সাজে সজ্জিত হয়ে রাজার সামনে হাজির হলেন। রাণীকে এতটাই সুন্দর দেখাচ্ছিল যে রাজা তার থেকে চোখ ফেরাতে পারছেন না। তিনি বিমোহিত হলেন। রাণী এসে তাকে আলিঙ্গন করলেন। রাজা ক্রমশঃ আবেগাপ্লুত হলেন। এই সুযোগে রাণী তাকে অন্দরমহলে নিয়ে গেলেন। রাণী তাকে এতটাই সম্মোহিত করল যে, রাজা রাণীর সঙ্গ ত্যাগ করতে পারলেন না। তিনি রাণীর বাহুডোরে বাঁধা পড়লেন।

আদরে আহ্লাদে রাজা কখন ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই। কিন্তু ফজরের আজানে রাণীর ঘুম ভেঙে গেল। রাণী ফজরের নামাজ আদায় করলেন। নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি রাজাকে ডেকে উঠালেন। রাজা হন্তদন্ত হয়ে উঠলেন। দ্রুত নামাজের জন্য তৈরি হয়ে নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে মুসল্লীকে কতল করার কথা পনে পড়ে গেল। তিনি রাণীকে বললেন আমাকে এক্ষুনি বেরুতে হবে। আমি নিজে ঘোষণা দিয়েছিলাম ওই মুসল্লীকে কতল করব। রাণী বাধা প্রদান করে বললেন, এটা তোমারই আঈন যে, কারো ফাঁসির আদেশ যদি সুনির্দিষ্ট সময়ে কার্যকর না হয়ে থাকে, তবে ঐ আসামীকে মুক্তি প্রদান করা হবে। তাছাড়া ঐ আসামী তো আমার চোখে ফাঁসির দণ্ড পাবার যোগ্য আসামী নয়। রাজা এবার অবাক বিস্ময়ে রাণীর দিকে চেয়ে রইলেন। তিনি রাণীকে বললেন, এটা তোমার কিভাবে মনে হল। রাণী এবার আসল সত্য খুলে বললেন। তিনি বললেন, যে মুসল্লীকে আপনি একটি ফরজ কাজ না করার অপরাধে কতল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি আসলে অন্য একটি ফরজ কাজ করতে গিয়ে নামাজটি পড়তে পারেনি। তিনি যখন নামাজের জন্য বের হয়ে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন একজন ডাকাত একজন মানুষকে খুন করতে যাচ্ছিল। এই মুসল্লী তখন ঐ ব্যক্তিকে আরেক মুসল্লী ভেবে তার জীবন বাঁচাতে দৌড়ে গিয়েছিলেন। তিনি পরে ক্বাযা নামাজ আদায় করে নিয়েছেন। কিন্তু ওই সময় উনি দৌড়ে না গেলে একটি মানুষের জীবন রক্ষা পেত না।

রাজা কিছুটা আশ্চর্য হয়ে বললেন, এসব তুমি জানলে কি করে! রাণী বললেন আল্লাহ যা করেন, মঙ্গলের জন্যই করেন। মুসল্লী যে লোকটিকে বাঁচতে সাহায্য করেছেন, তিনি আসলে একজন কাফের ছিলেন। সেই লোকটি সন্ধ্যায় রাজদরবারে ইসলাম গ্রহনের জন্য এসেছিলেন। তিনি এসে বললেন, যে ধর্মের একজন সাধারণ মুছল্লী নিজের জান কোরবান দিয়ে একজন কাফেরের প্রাণ রক্ষা করতে পারেন, সেই ইসলামের উপর আর কোন ধর্ম হতে পারে না, আমি এই মুহূর্তে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে চাই। রাজা আরও চমকিত হলেন। তিনি জানতে চাইলেন কোথায় সেই কাফের। রাণী বললেন, আমি তাকে সকালে আসতে বলেছি। কেননা তখন আমার হাতে সময় ছিল খুবই কম। আপনি ঐ মুসল্লীকে কতল করতে বেরুচ্ছিলেন। আর আমি হন্তদন্ত হয়ে ভাবছিলাম কি করে একজন নিরপরাধ মুসল্লীর জীবন বাঁচানো যায়। ঐ সময় ওটাই ছিল আমার ফরজ কাজ। তাই আমি তাকে বাঁচানোর জন্য এত সাজগোজ করে আপনার সামনের হাজির হয়েছিলাম এবং আমি যেমনটি চেয়েছিলাম তেমনটিই হয়েছে। এখন সুর্য উঠে যাচ্ছে, ইনশাআল্লাহ ঐ কাফেরও এক্ষুণি এসে যাবে। বাকি বিচার আপনার হাতে মহারাজ। রাণীর কথা শুনে রাজা একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন। বললেন, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

কিছুক্ষণ পরেই কাফের ব্যক্তি এসে পৌঁছালেন। রাজা খুবই খুশি হলেন। লোকটিও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন। রাজা লোকটিকে বললেন, আজ আমি তোমাকে অন্য রকম একটি উপহার দিতে চাই। বলেই তিনি লোকটিকে নিয়ে দরবারের দিকে এগিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি কারাগার থেকে মুসল্লীকে লোকটির সামনে এনে বললেন, এই নাও, যে তোমার জীবন বাঁচাতে সাহায্য করেছে তাকে আমি মুক্তি দিলাম। ইনিই তোমাকে ইসলাম ধর্মের পরবর্তী দীক্ষা দিবেন। লোকটি বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন।

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ