বসন্ত-স্মৃতি মোহন-মন্থন

ছাইরাছ হেলাল ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ০৪:০৫:৩৩অপরাহ্ন গল্প ১৮ মন্তব্য

খুবই সহজ-সংক্ষেপে দু’টি অতীব সাধারণ ঘটনা বলার চেষ্টা হবে,মহা-ব্যস্ত পাঠকের অতি মূল্যবান সময়-ক্ষেপণ না করে ধৈর্যচ্যুতির দায়ভার এড়িয়ে যাচ্ছি।

ঘটনা.........১

সেবার হঠাৎ করে প্রস্তাব এলো বিশেষ কর্মের জন্য দূরগামী গন্তব্যের সাথী হতে হবে। ঘুরুক্কু মন (ঘোরতে ভাল্লাগে) বিনা পায়ে-ই এক বাক্যে রাজি, দেখি না কী কী হয়!

যেতে যেতে যেতে ক্লান্তিহীন, প্রায় জন-মানবহীন এক ছাড়া-ভিটেয় স্থাণু হলাম, সামান্য গাছ-গাছালি এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লক্ষ্মীছাড়া ভাব নিয়ে। সামান্য খোঁজাখুঁজির পর দারুণ পুষ্পিত এক শিমুল গাছের নীচে বসন্ত দাঁড়িয়ে পড়ল। উরু উরু ভাব নিয়ে,সামান্য দূরত্বে অবস্থান নিয়ে কাণ্ডকারখানা লক্ষ্য করছি। গাছের গোঁড়ায় বসে পড়ল ধপাস করে, প্রথমে ফোঁস-ফোঁস এরপর ফচফচ করে করে কান্না শুরু হলো, কান্না সুর তাল লয় ভঙ্গ করে ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি লাভ করতে থাকল, শেষ-মেষ সেই শিমুল গাছ জড়িয়ে বিপুল কান্নাজজ্ঞ শুরু হলো। বিনা বিপত্তি বিনা উস্কানিতেই এক সময় কান্না থিতিয়ে এলো। ইতোমধ্যে সমূহ বিপদাশঙ্কায় নিকটবর্তী ঝোপাশ্রয় থেকে সব কিছু লক্ষ্য রেখেছি। পানি-পুনি মুখে মেখে বাতাসি ভাব ফিরে এলে কাছে এসে শানে-নজুল জানতে চাইলাম মিনমিনিয়ে,

কোন এক কালে এই দিকশূন্যপুর প্রান্তরে এক প্রবল বসন্ত প্রেমিকের ঘাড় মটকে তাজা রক্ত পান ও মাথা ভেঙ্গে ঘিলু ভক্ষণ করেছিলন, কথানুযায়ী কাম-কাইজ না করায়।
সেই স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই বেঘোর কান্নাকাটির পর্ব অনুষ্ঠিত হলো।

ঘটনা......২

একবার এক ফুলেল বাগানে ঘোরতে ঘোরতে আচমকা বসন্ত প্রস্তাব দিল......“চলো দু’জনে মিলে গলাগলি জড়াজড়ি করে কান্দি”

কাঁদা-কাঁটা কান্নাকাটি আমরা করি হরহামেশা, সত্যি/মিথ্যে ভাবে, প্রকাশ্যে/আড়ালে কারণে/অকারণে ভান-ভণিতা করে, আবার সত্যি সত্যিই-ও। বুঝতে পারছিলাম না, এই কান্না পর্বটি কী প্রকারের, আনন্দাশ্রু না বিষাদাশ্রু না কুম্ভীরাশ্রু! সেহেতু নিমরাজি বা গররাজি কোনটি-ই না হয়ে সরাসরি অপারগতা জানিয়ে দিলাম। তাতে এই মুহূর্তে কোন সমস্যার উদ্ভব হয়নি। কান্না তাঁর চাই-ই এবং এখুনি। পূর্ব প্রস্তুতি হয়ত নেয়াই ছিল, স্বর খুব-ই উচুগ্রামে বাঁধা ছিল। আর যায় কোথায়! মরা কান্না শুরু হয়ে গেল রম্ভোরু মেলে, এরাবিয়ান স্টাইলে! বুক থাবড়ে, মুখ চাপড়ে/খামচে (সত্যি সত্যি ভান না কোন)। লুকানোর কোন জায়গা না পেয়ে পায়ে শিকড় গজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম শেষ অব্দি।
এ এক আশ্চর্য শিল্পিত শিল্প।

অফুরন্ত শব্দ গর্জনের মিহি বুদবুদ তুলে বসন্তের ঋতু-রক্তিম রূপ তরঙ্গের মুখমণ্ডল কাঁপা কাঁপা বিষাদ ভণ্ডুলে ভরে গেল।
দুর্বোধ্য দুর্ভেদ্য দহন ইন্ধনে ফুলে ফুলে উঠল। জ্বল-জ্বলে পোড়া জলে বাতাস ভারী হয়ে এলো।

কান্না-লহরি থিতিয়ে/মিইয়ে এলে উত্তেজনায় উত্তেজিত হয়ে হাঁটু গেড়ে ঘন হয়ে বসে পরিপূর্ণ দু’হাত ধরে চোখ-জিজ্ঞাসায় জানতে চাইলাম????????

আমার সাথে বসন্তের জনম-আড়ি!!

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ