iDxJmGLYdGEv

পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম এই তাজ। আমাদের নিজেদের মধ্যে তাজ দেখা নিয়ে অনেক আলোচনা হল। দুনিয়ার বহু দেশ থেকে বহু লোক শুধু তাজ দেখার জন্য ভারতবর্ষে আসত। তাজমহলের কথা জানে না, এমন মানুষ দুনিয়ায় খুব বিরল। আমাদের দেরি আর সইছে না। মনে হচ্ছে ট্রেন খুব আস্তে আস্তে চলছে, কারন তাজ দেখার উদগ্র আগ্রহ আমাদের পেয়ে বসেছে। আমরা তো ভাবি নাই ঠিক পূর্ণিমার দিনে আগ্রা পৌঁছাব। আমরা হিসাব করে দিন ঠিক করে আসি নাই। মনে মনে পূর্ণিমাকে ধন্যবাদ দিলাম, আর আমাদের কপালকে ধন্যবাদ না দিলে অন্যায় হত, তাই তাকেও দিলাম। আমরা আগ্রায় পৌঁছালাম সকালের দিকে। দুই দিন আমরা আগ্রায় থাকব। কোন একটা হোটেলে উঠব ঠিক করলাম। লোক তো আর আমরা কম না, প্রায় বার চৌদ্দজন। অনেক টাকা খরচ করতে হবে। মোসাফিরখানা হলেই আমাদের সুবিধা হত। আগ্রা স্টেশনে পৌঁছালাম, অনেক হোটেলের লোকই তাদের হোটেলে থাকতে আমাদের অনুরোধ করল। এক ভদ্রলোক এলেন, তিনি বললেন, “আপনারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, একটা বাঙালি হোটেল আছে, সেখানেই আপনাদের সুবিধা হবে।” চৌধুরী সাহেব বললেন, “আপনাদের হোটেলে তাঁবু আছে? আমরা অনেক লোক।” তিনি বললেন, “তাঁবু খাটিয়ে দিতে পারব।” ঠিক হল আগ্রা হোটেলেই যাব। চৌধুরী সাহেব একটা রুম নিলেন, আমাদের জন্য দুইটা তাঁবু ঠিক করে দেওয়া হল। আমরা খাটিয়া পেলেই খুশি। শুধু প্রয়োজন আমাদের গোসল করার পানি, আর পায়খানা। হোটেলের মালিক বাঙালি, খুব ভদ্রলোক, আমাদের অভ্যর্থনা করলেন। আমাদের যাবতীয় বন্দোবস্ত করতে ম্যানেজারকে হুকুম দিলেন। কত টাকা দিতে হবে চৌধুরী সাহেবই ঠিক করলেন, তিনিই দিয়েছিলেন। আমাদের কিছুই দিতে হয় নাই।

তাড়াতাড়ি আমরা গোসল করে কিছু খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম, মন তো মানছে না, তাজ দেখার উদগ্র আগ্রহ। টাঙ্গা ভাড়া করে তাজ দেখতে রওয়ানা করলাম। প্রখর রৌদ্র। কি দেখলাম ভাষায় প্রকাশ আমি করতে পারব না। ভাষার উপর আমার সে দখলও নাই। শুধু মনে হল, এও কি সত্য! কল্পনা যা করেছিলাম, তার চেয়ে যে এ অনেক সুন্দর ও গাম্ভীর্যপূর্ণ। তাজকে ভালভাবে দেখতে হলে আসতে হবে সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যাবার সময়, চাঁদ যখন হেসে উঠবে তখন। আমরা বেশি দেরি করলাম না, কারন আগ্রা দুর্গ ও ইতিমাদ-উদ-দৌলা দেখতে হবে সন্ধ্যার পূর্বেই। যখন সূর্য অস্ত যাবে তার একটু পূর্বেই ফিরে আসতে হবে তাজমহলে। টাঙ্গাগুলিকে আমরা দাঁড় করেই রেখেছিলাম।

ইতিমাদ-উদ-দৌলা-বেগম নুরজাহানের পিতার কবর। আমরা আগ্রা দুর্গে এলাম। দেওয়ানি আম, মতি মসজিদ, মছি ভবন, নাগিনা মসজিদ সবই ঘুরে ঘুরে দেখলাম। দেওয়ানি খাস ও জেসমিন টাওয়ার দেখতেও ভুল করলাম না। দিল্লির লাল কেল্লার সাথে এর যথেষ্ট মিল আছে। মোগল আমলের শিল্প একই রকমের, দেখলেই বুঝা যায়। যমুনার দিকে বারান্দায় কতগুলি পাথর ছিল। সেই পাথরের মধ্যে সম্পূর্ণরুপে তাজকে দেখা যেত। এখন আর পাথরগুলি নাই। একটা কাঁচ লাগান আছে। এই কাঁচের মধ্যেও পরিষ্কারভাবে তাজকে দেখা যায়। আমরা সকলেই দেখলাম, শীশ মহল দেখে রওয়ানা করলাম। আমাদের যে ভদ্রলোক ঘুরে দেখাচ্ছিলেন, তিনি অনেক কথাই বলছিলেন। কিছু সত্য, কিছু গল্প, তবে একটা কথা সত্য, মোগলদের পতনের পরে বারবার লুটতরাজ হয়েছে। জাঠ ও মারাঠি এবং শেষ আঘাত হেনেছে ইংরেজ। জাঠ ও মারাঠিরা কিছু কিছু লুট করেই চলে গিয়েছিল, কিন্তু ইংরেজ সবকিছু লুট করেই নিয়ে গিয়েছে ভারতবর্ষ থেকে। লর্ড স্থানীয় লোকরাই এই লুটের প্রধান কর্ণধার ছিলেন। ভারতবর্ষ ও পাকিস্তানের অনেক জায়গায়ই মোগল শিল্পের অনেক নিদর্শন আছে। আমরা ইতিমাদ-উদ-দৌলা দেখে ফিরে চললাম তাজমহল দেখতে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। দিল্লির লালকেল্লা পূর্বেই দেখেছি, তাই আগ্রা দৃর্গ দেখতে আমাদের সময় লাগার কথা না।

অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং- ৫৬, ৫৭, ৫৯)

অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-৪৪)

0 Shares

৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ