iDxJmGLYdGEv

দিল্লি যখন পৌঁছালাম তখন দেখা গেল, যেখানে আমরা পৌঁছাব সেখানে বিকালে পৌঁছালাম। আট ঘন্টা দেরি হয়েছে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কনভেনশন বন্ধ করে রেখেছেন আমাদের জন্য। সকাল নয়টায় শুরু হবার কথা ছিল, আমাদের ট্রেন থেকে সোজা সভাস্থলে নিয়ে যাওয়া হল। দিল্লির লীগ কর্মীরা আমাদের মালপত্রের ভার নিলেন। আমরা বাংলায় স্লোগান দিতে দিতে সভায় উপস্থিত হলাম। সমস্ত সদস্য জায়গা থেকে উঠে সম্বর্ধনা জানাল। জিন্নাহ সাহেব যেখানে বসেছেন, তাঁর কাছেই আমাদের স্থান। যখন উর্দু স্লোগান উঠত, আমরাও তখন বাংলা স্লোগান শুরু করতাম।

জিন্নাহ সাহেব বক্তৃতা করলেন, সমস্ত সভা নীরবে ও শান্তভাবে তাঁর বক্তৃতা শুনল। মনে হচ্ছিল সকলের মনেই একই কথা, পাকিস্তান কায়েম করতে হবে। তাঁর বক্তৃতার পরে সাবজেক্ট কমিটি গঠন হল। আট তারিখে সাবজেক্ট কমিটির সভা হল। প্রস্তাব লেখা হল, সেই প্রস্তাবে লাহোর প্রস্তাব থেকে আপাতদৃষ্টিতে ছোট কিন্তু মৌলিক একটা রদবদল করা হল। একমাত্র হাশিম সাহেব আর সামান্য কয়েকজন যেখানে পূর্বে 'স্টেটস' লেখা ছিল, সেখানে 'স্টেট' লেখা হয় তার প্রতিবাদ করলেন; তবুও তা পাস হয়ে গেল। ১৯৪০ সালে লাহোরে যে প্রস্তাব কাউন্সিল পাস করে সে প্রস্তাব আইনসভার সদস্যদের কনভেনশনে পরিবর্তন করতে পারবে কি না এবং সেটা করার অধিকার আছে কি না এটা চিন্তাবিদরা ভেবে দেখবেন। কাউন্সিলই মুসলিম লীগের সুপ্রিম ক্ষমতার মালিক। পরে আমাদের বলা হল, এটা কনভেনশনের প্রস্তাব, লাহোর প্রস্তাব পরিবর্তন করা হয় নাই। জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে ঐ প্রস্তাব পেশ করতে জনাব মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ অনুরোধ করলেন, কারণ তিনিই বাংলার এবং তখন একমাত্র মুসলিম লীগ প্রধানমন্ত্রী।

কনভেনশন সমাপ্ত হওয়ার পরে যারা হাওড়া স্টেশনে আমাদের বিদায় দিতে এসে ট্রেনে উঠে পড়েছিল তারা মহাবিপদের সম্মুখীন হল। কি করে কলকাতা ফিরে আসবে? স্পেশাল ট্রেন তো আর কলকাতা ফিরে যাবে না। কি করি, ভেবে কূল পাই না। আমরা পূর্ব থেকে প্রস্তুত হয়ে এসেছিলাম দিল্লি থেকে আজমীর শরীফে খাজাবাবার দরগাহ জিয়ারত করব, আবার আজমীর থেকে আগ্রায় তাজমহল দেখতে যাব। ১৯৪৩ সালে তাজমহল না দেখে ফিরে যেতে হয়েছিল। এবার যেভাবে হয় দেখতেই হবে। ছোটকাল থেকে আশায় রয়েছি, সুযোগ আবার কখন হবে কে জানে?

অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং- ৫১, ৫২ ও ৫৪)

অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-৪১)

0 Shares

একটি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ