“বঙ্গবন্ধুঃ তরুন প্রজন্মের ভাবনা” শীর্ষক এক আলোচনাসভা অনূষ্ঠিত হোল মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে ১৬-ই অগাষ্ট বিকেলে। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের প্রধান জনাব সারোয়ারের সঞ্চালনায় মূলতঃ বঙ্গবন্ধু এবং ৩৯ বছর আগেকার তাঁর নৃশংস হত্যাকান্ড সম্পর্কে আজকের তরুন প্রজন্মের ভাবনাগুলো কী তা জানাই ছিল অনূষ্ঠানটির উদ্দেশ্য।
আলোচক ছিলেন চারজন- ড. নুজরাত শম্পা (তিনি একজন শহীদকন্যা), জনাব রুবায়েত ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাংবাদিক অদিতি ফাল্গুনী এবং ব্যারিষ্টার তাপস কান্তি।
সঞ্চালকের সূচনা-বক্তব্যের পর আলোচকগন ১০ মিনিট করে কথা বললেন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে। জনাব রুবায়েত বঙ্গবন্ধু এমনি এমনিই যে বঙ্গবন্ধু হননি সে বিষয়ে বলতে গিয়ে তাঁর রাজনৈতিক এবং পারিবারিক বেশ কিছু বিষয়ের অবতারনা করেন। যেমন বঙ্গবন্ধু মহাত্মা গান্ধীর মতো মধ্যম-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছেন, দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন, কারাবাস করেছেন দীর্ঘ বার বছর, কখনো কোন আপোষ করেননি, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে রাজনৈতিক গুরু মানতেন ইত্যাদি। পরিবারের বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেন, উনি স্ত্রীর খোঁজ রাখতেন গুরুত্ব দিয়ে, ’রেনু’ নাম নিতে অজ্ঞান ছিলেন, সবসময় ঐ নাম ধরে ডাকতেন। উনিও বঙ্গবন্ধুর কখন কী খরচ লাগে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতেন, কখন বঙ্গবন্ধুর হাতে টাকা দেবেন, এই চিন্তা থাকতো তাঁর মধ্যে সবসময়। আসলে তাঁদের মধ্যকার সম্পর্কটাকে বড় করে উপস্থাপন করেন তিনি এবং শেষে বলেন বঙ্গবন্ধু এমনি এমনি হওয়া যায়না।
জনাবা নুজরাত শম্পা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধরে রাখার উপর জোর দেন বিশেষভাবে। শুধু আজকের তরুনদের উদ্দেশ্যে-ই নয়, যারা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন করেন, তাদেরও তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করার উদ্দেশ্যে সকলকে ভাল এবং উদার হওয়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতার বছর তার জন্ম এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে তাদের পরিবারেরও সম্পর্ক ছিল এবং সেই সুবাদ অনেক ছোট থাকতে তিনি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গিয়েছেন এবং ভয়-ডর করার মতো বয়স তার সেসময় না হওয়ায় তাঁর সামনে গিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে কোলে তুলে নিয়েছেন ইত্যাদি বলে অতি করূনভাবে ধরা গলায় বাসার সিঁড়ির উপরে বঙ্গবন্ধুর করূন মৃত্যুকে তার দ্বিতীয় পিতার মৃত্যু বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
অন্যান্য আলোচকবৃন্দ-ও একইভাবে বঙ্গবন্ধুর জীবনী এবং তাঁর আদর্শকে লালন করার উপরই জোর দেন।
তরুন প্রজন্মের চার জনকে আলোচনার সুযোগ দেয়া হয়। এবার তাদের ভাবনা শোনার পালা। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের হলরুমটি খুব বড় নয়। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০/৫০ জন মানুষের উপস্থিতি। অর্ধেকই মেয়ে। ঢাকা ইউনিভার্সিটির দু’জন ছাত্রী, একজন আইন ও আরেকজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আর দু’জন ছেলে, একজন সাংবাদিক ও আরেকজন মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরেরই সাথে সম্পর্কিত এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাথে যূক্ত।
জনাবা শম্পা বলেছিলেন ’আমরা আমাদের বাল্যে-কৈশোরে বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে নিয়েছি কষ্ট করে, কারন আমাদের বেড়ে ওঠার সময়টা হচ্ছে পঁচাত্তর থেকে নব্বইয়ের মধ্যে। সেইসময় বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ছিল।’ আজকের তরুন প্রজন্মের সদস্যদের কথায়ও সে কথা-ই উঠে এসেছে বারবার। তাদের একজন বলেছেন, ছিয়ানব্বইতে যখন আমি স্কুলে পড়ি, তখন আমাদের স্কুলে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মাইকে একটা গান বাজা থেকে আমার মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছিল যে, এই লোকটি কে!
একজন ছাত্রী বঙ্গবন্ধুর আমলে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার না হওয়ার প্রসংগ ও কানাডায় বঙ্গবন্ধুর খুনের কারনে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত খুনী আসামীকে কেন ফিরিয়ে আনা হচ্ছেনা, সেবিষয়ে জানতে চান। আরেকজন বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক পড়াশুনা করেছেন এবং তাঁর আদর্শ প্রতিষ্ঠিত কেন হচ্ছেনা, তা তিনি জানতে চান।
মোটামুটি এগুলোই আজকের তরুন সমাজের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভাবনা। তাদের অনেক আগ্রহ আছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙ্গালী সম্পর্কে।
উত্তরে আইনের বিষয় হিসেবে ব্যারিষ্টার তাপস কান্তি ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার না হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, পাকিস্থানে তখন দু’লাখ বাঙ্গালী আটকে ছিলেন। এরা আটকে থাকবেন বলে বঙ্গবন্ধু ওদের বিচার করা থেকে সরে আসেন। আর কানাডায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী সেদেশে নাগরিকত্বের আবেদন করেছে এবং সে আবেদনের নিষ্পত্তি হয়নি এখনো। সেকারনে কানাডা সরকার তাকে ফেরত দিচ্ছেনা। নাগরিকত্ত্বের আবেদন খারিজ হয়ে গেলে ফেরত দেবে আর না হলে অর্থাৎ সে নাগরিকত্ত্ব পেলে কানাডা সরকার তাকে ফেরত দেবেনা। কারন কানাডা তার কোন নাগরিককে মৃত্যুদন্ডের শাস্তি দেয়না, প্রেরনও করেনা এমন কোথাও যেখানে তার মৃত্যুদন্ডের সাজা হয়েছে।
আবারো আদর্শ-ই উঠে আসে আলোচকদের কথায়। রুবায়েত ফেরদৌস বলেন, আওয়ামী লীগের চার মূলনীতি- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র তথা আজকের আর্থিক ন্যায়বিচার, ধর্মনিরপেক্ষতা এগুলো নিশ্চিত করলেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারন করা হবে, যে আদর্শের জন্য তিনি সারাজীবন লড়াই করে গেছেন।
নুজরাত শম্পা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আজ আমরা ভুলে গেছি বলে আবারো আক্ষেপ করেন এবং বলেন, আজকাল অনেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানেননা। আজ তাই টেন্ডারবাজী হয়, দখলবাজী হয়। এটা তাঁর আদর্শের সমস্যা নয়। সমস্যা তাদের, যারা এসব করে বেড়ান। কাজেই আজকের তরুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদশর্কে বুকে ধারন করে পথ চলতে হবে, তবেই তাঁকে সম্মনিত করা হবে, তাঁকে মূল্য দেয়া হবে আর শোক পালন করা আমাদের সাথর্ক হবে কেবলমাত্র তখনই।
১৪টি মন্তব্য
স্বপ্ন
বংগবন্ধুকে নিয়ে এ ধরনের আলোচনা দরকার খুব। তাঁ্র সম্পর্কে বেশ কিছু ভুল ধারনা আছে।
আজিম
আলোচনা হোক, কেটে যাক তাঁর সম্পর্কে ভুল ধারনাগুলি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
মহান মানুষটিকে নিয়ে আরো আলোচনা প্রয়োজন। -{@
আজিম
আসলেই, আলোচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এই মহান মানুষটিকে নিয়ে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
শুন্য শুন্যালয়
ভালো উদ্যোগ। শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
আজিম
পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মেঘাচ্ছন্ন মেঘকুমারী
নেতা সমর্কে এমন আলোচনার একান্ত প্রয়োজন।
আজিম
আসলেই।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ব্লগার সজীব
বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ভাবনা আজ অনেকটাই ঢেকে গিয়েছে। তাঁর আওয়ামী লীগ আর বর্তমানের লীগ এক নয়।
আজিম
জবাব নিষ্প্রয়োজন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আগুন রঙের শিমুল
বঙ্গবন্ধু যা চেয়েছিলেন তা হলে আজ বাংলাদেশ অন্য উচ্চতায় থাকতো।
প্রতিটি আইকন লীডারের সাফল্যের পিছনে আছে নতুন ধরনের অর্থনৈতিক ভাবনার রূপরেখা।
সেটা সফল করেই তারা আইকন হয়েছেন, এখানে প্রাসঙ্গিক একটা কথা মনে পরল, বঙ্গবন্ধুকে কোন এক ইন্টারভিউয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ কি সমাজবাদের পথে হাটবে?
পিতার জবাব ছিলো , না। বাংলাদেশ মুজিববাদের পথ অনুসরন করবে।
১৫ আগস্ট সেই মুজিববাদের যাত্রা থামিয়ে দিয়েছিল, না হলে আজকের বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই সোনার বাংলা হয়ে জ্বলজ্বল করত।
আজিম
ধন্যবাদ ছাড়া আর কী বলব!
লীলাবতী
দেশকে উল্টো পথে চালিত করার জন্যই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিলো।
আজিম
এবং সাথে আরো কিছু কারন।