ফোঁড়ার আদ্যপান্ত

ছাইরাছ হেলাল ৩০ আগস্ট ২০১৬, মঙ্গলবার, ০৬:৫৭:৩৫পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩২ মন্তব্য

কোন এক গভীর সকালে চিনচিনে ব্যথার অনুভবে আবিষ্কৃত হলো বুকের মাঝে ছোট্ট একটি বিষের ফোঁড়া,
ও কিছু না, হটেনটট ভাবনায় কিছুই পাত্তা দেয়া হলো না। দিন যায় দিনের মত, রাত রাতের মত, দিন রাতের মত, রাত দিনের মত হয়ে যায়, নিয়ম বেনিয়মের তোয়াক্কা না করে টনটনে ব্যাথায়। অগত্যা ডাক্তারের শরণাপন্ন, সুগভীর মনযোগে প্রায় ধ্যানস্থ হয়ে ভাল ভাবে ব্যাথা দিয় না দিয়ে টিপে-টুপে দেখে বিধান দিলেন, ভয়ের কিছু নেই এমনিতেই সেরে যাবে, একান্ত যদি অসহ্য যন্ত্রণা হয় তাহলে কিছু বটিকা খাওয়ার নিয়মবিধি উল্লেখ করে লিখে দিলেন একখানি হিব্রু খত,

দিন যায় রাত যায়, যন্ত্রণাবিদ্ধতায় সপ্তাহ না যেতেই আবার যেতে হল ডাক্তারের কাছে। সিদ্ধান্ত হলো ফোঁড়া অপসারণের, কিছু টেস্ট ও হলো। দিন তারিখ ঠিক হলে আবার গেলাম, বাঁদরমুখো ডাক্তার আবার জটিল কিছু দামী টেস্ট দিলেন, অপারেশন স্থগিত।

একে ফোঁড়া সময় অসময় চিড়িক দিয়ে ওঠে, তার উপর ডাক্তারের কর্মকাণ্ডে মেজাজ তিরিক্ষি, সাতদিন পর আবার গেলাম, হাঁড়িমুখো রিপোর্ট দেখে-টেখে কাঁদো কাঁদো মুখে বলে, ক্যান্সার, আমার মহানন্দ এই সুখ সংবাদে, জিজ্ঞেস করি টাইম কিরাম, চৌক্ষের পানি ফেলে বলে টাইম বেশি নাই, এহেন খবরে সুখানন্দ আরও বেড়ে গেল, আহা একটা দুটো নয়, সত্তুরটা এস্তেমালের আনন্দ, অপেক্ষা করতে মন চাচ্ছে না।
বোর্ড বসে কেমোথেরাপির সিদ্ধান্ত দিতে, তার আগে আবার টেস্ট। সাতদিন পরে গেলাম আবার,
অসভ্য ডাক্তার রিপোর্ট দেখে-টেখে হাসে, বলে কিচ্ছুটি হয়নি।
রাগে দুঃখে আশা ভঙ্গের ফাঁটা হৃদয় নিয়ে ফিরে আসলাম, পণ করলাম এর হেস্তনেস্ত করতেই হবে,
এই মহা ধুরন্ধর শয়তানের সাথে ধুন্ধুমার কিছু একটা করতেই হবে।।

একবারের একটি প্রেসক্রিপশনের নমুনা দেখাচ্ছি,

“হে সহৃদয় বিষ ফোড়া,
বিষের কছম, বাদশাহ সুলেমানের দোহাই, মুক্তি দাও,
বিষটুকু চুলোয় যাক, ফোঁড়াটুকু থাকুক,”

ঘুমানোর আগে ও ঘুম থেকে উঠে দশ বার করে জপ করতে দিয়েছিলেন।
কাজ না হওয়ায় মাথায় বাঁশ মারতে গিয়েও মারা হয়নি, মারা যায় না বলে।

অবশেষে সাশ্রয়ী মূল্যের একটি বিশেষ প্যাকেজের আওতায় গুটিকয়েক বেয়াদপ ভাড়া নিলাম,
‘মিশন সম্মুখবর্জ নিক্ষেপ’ { যুগপৎ অজ্ঞানতা ও শব্দ অপ্রতুলতায় ‘সম্মুখ বর্জের’ বিকল্প ভদ্রস্থ সময়যোগী মোক্ষম শব্দ
ব্যাবহার করা গেল না, সোনেলার সোনাদের কাছে বিনম্র সাহায্য প্রার্থী}।
মৃত্যুন্মুখ পাণ্ডুর রোগিণীর কাছ থেকে কৌশলে পর্যাপ্ত বর্জ সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হলো,
এরপর সময় নিয়ে সাবধানে রেকি পর্ব সম্পন্ন করে কৌশল পত্র প্রণয়ন পূর্বক অপেক্ষা, মু হা হা হা,

ছোড়া হলো, কিন্তু হায়! অব্যর্থ লক্ষ্যে আঘাত হানল না, বেঁচে গেল ডাক্তার; বিফল প্রচেষ্টা।
উহ সেকি যন্ত্রণা!! শরীরের ক্ষয়, টাকারও অপচয়।  ফোঁসফোঁসানই সার এখন।

বাকী কথা পরে হবে।

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ