প্রেম-প্রণয়ের গুচ্ছ কবিতা

মাহবুবুল আলম ২ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ০৬:২৮:০৯অপরাহ্ন কবিতা ১৯ মন্তব্য

প্রথম দেখা

যেদিন তোমায় প্রথম দেখি; পৌষ পার্বণের মেলায়,

তোমায় নিয়ে মন যে মাতে, অনুরাগের খেলায়।

 

মনলোভা হাসি তোমার, চোখে ইন্দ্রজাল,

তোমায় দেখে ভীষণ কাতর; দৃষ্টি হলো কাল।

 

মায়াভরা চাহনীতে, মন হলো উদাসী,

কখন যেনো আবার দেখি, মনকাড়া সে হাসি।

 

তোমায় দেখার আশায় ঘুরি; মেলার আয়োজনে,

যদি আবার দেখা মিলে, খোঁজি সঙ্গোপনে।

 

ঘুরে বেড়াই বইয়ের মেলায়, বসন্ত উৎসবে,

নববর্ষের মেলায় ঘুরি, হয়তো দেখা হবে।

 

কোথাও তোমার পাই না দেখা; ব্যস্ত এ নগরে,

তোমার জন্যে মনটা আমার, শুধুই কেঁদে মরে।

 

কোথায় তোমায় পাবো খোঁজে; নেই জানা ঠিকানা,

ঠিকই তোমায় নিতাম খুঁজে, করলেও বারণ মানা।

 

আর হলোনা কোনদিনই, তোমার সাথে দেখা,

হৃদয় মাঝে এঁকে গেলে, প্রেম-প্রণয়ের রেখা।

 

সে রেখাটা হচ্ছে বড়, হৃদয়ের গভীরে,

তার কারণে ভাসি আজো; ভাসি চোখের নীরে।

 

 

দাও না এক ফোটা তৃষ্ণার জল

 

তীব্র পিপাষায় বুক পুড়ে গেলেও

বিলাওনা একফোটা শীতল বারিও

বিলাও না কৃপণ, এফোটা তৃষ্ণার জল।

 

পুড়ে পুড়ে খাঁক হয় এ দেহমন

ছাই হয় জ্বলে পুড়ে তুষের মতোন।

 

চাতক, তবুও চেয়ে থাকে

নিঃসীম আকাশের নীলে

মিলে যদি এক ফোটা পিপাষার জল

তা ও মিলেনা, কাটে প্রতিক্ষায় প্রহর।

 

মেঘেদের কেনো এই বখাটে জীবন

ঘনঘোর বর্ষার দিনেও কর্মহীন উদাসিন

ঘোরে, নেই যেনো কাজ শুধুই অবসর

বিরামহীন কেবলই উড়ে ।

 

তারা কেনো বেছে নিল বখাটে জীবন

ঢালেনা একফোটা শ্রান্তির বারি

এমন শ্রাবণ দিনেও।

 

গর্জেনা আকাশে গুরু গুরু ডাক

তোলেনা ময়ূর তার মুগ্ধ পেখম

বাজেনা টিনের চাল বৃষ্টি ধারায়

ফুটেনা আষাঢ়ের ফুল ঘননিপবনে

দিনে দিনে সব কিছুই বদলে যায়

বদলে যাওয়ার নিয়মেই।

 

আসা-যাওয়ার পথে

 

আসা-যাওয়ার পথে, তোমার বাড়ির কাছে

যখন আমি আসি, থমকে দাঁড়াই হঠাৎ

মনটা কেমন পোড়ে, পা চলে না আর

তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে

আসা-যাওয়াই দায়।

 

তোমার বাড়ির পাশ দিয়ে, যখোন হেটে যাই

সমীরণে আছরে পড়ে, তোমার গায়ের ঘ্রাণ

সুবাসিত চুল আর, পারফিউমের ঘ্রাণে

মন-পবনের নাও তখোন

উথাল পাতাল দোলে।

 

মনের সাথে যুদ্ধ করে, কেবল হেরে যাই

ইচ্ছে জাগে মনের মাঝে তোমায় যদি দেখি

কত চেষ্টা উঁকিঝুঁকি পাইনা তোমার দেখা

মনের ইচ্ছে মনের মাঝেই কয়েদ করে ফিরি।

 

হৃদয়মাঝে কষ্ট পোষে ভাবি, হয়তো কাজে মগন

নয়তো স্বামীর শিয়রে বসে দিচ্ছো তারে বাতাস

হয়তো ভুলে বসে আছো অতীত স্মৃতিসব

সুখের ভেলায় ভেসে ভেসে করছো সুখবিলাস।

 

 

রোষের আগুনে পোড়াব

 

তুমি যদি চলে যাবে তবে কেন

সযত্নে গড়ে তোলেছি এ পুষ্প উদ্যান

আর কেনই বা আদরে-সোহাগে

ফুলেফুলে ভরে তুলেছি এ স্বপ্নিল কানন,

তবে কেন উষ্ণ প্রণয়ে

ভরিয়ে তোলি তাকে সারাক্ষণ।

 

একদিন নিপুণভাবে তুমিই

চিনিয়েছো ফুল, শিখিয়েছো

পুষ্পচর্চা বলেছো-ফুলের সাথে

অলি কানে কানে কি কথা বলে

কেমন করে ভালোবাসা হয়

ফুল এবং অলি’র।

 

তোমার জন্যে একদিন তাই, গড়ে তুলেছি

ফুলের এক বিশাল কানন

কত বাহারী নাম ও রঙের

ফুলদলে ভরে তোলেছি তার অঙ্গন।

 

প্রতিপ্রভাতে পুষ্পাঞ্জলী দেব

কন্ঠে পরাব পুষ্পকন্ঠহার

প্রসূনে প্রসূনে সাজাবো শয্যা

ভালোবাসা বিলিয়ে দেব তোমার

কুসুমাবৃত্ত সুখাসনে।

 

তাই নিরন্তর এ পুষ্পবিলাস

বাগান পরিবেষ্টিত আমার আঙ্গিনা

তোমার নামেই উৎসর্গ করি

হৃদয় উৎকীর্ণ ভালোবাসায়।

 

তুমিই যদি না থাকবে নিশ্চিত

জেনে রেখ এ্যাসিডে ঝলসিয়ে দেব

ফুলেদের সুন্দর মুখ, নগ্ন শরীর

দ্রোহের আগুনে পোড়াব সে

প্রসূন কানন, তছনছ করে দেব; সমগ্র পুষ্পউদ্যান

 

অতঃপর সেখানে হবে পাষাণ

বিষকাটালীর চাষ, থাকবেনা সেখানে

ফুলেল বিভা কাঁটার আঘাতে আঘাতে

ঝরাবো রোধির তুমিই যেখানে

থাকবেনা সেখানে কুসুমদের

থাকার প্রশ্নই ওঠেনা; নিষ্ঠুরতা

ছাড়া সেখানে থাকবেনা কোনো

ভালোবাসার নাম ঠিকানা।

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ