প্রজম্মের ঋণ শোধ ১২তম

মনির হোসেন মমি ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪, বুধবার, ১০:১১:১০পূর্বাহ্ন গল্প, মুক্তিযুদ্ধ ২২ মন্তব্য

-তামান্না   মা….. তুমি কোথায় গিয়েছিলে?

-ঐ..তো শাহবাগ, প্রজম্ম চত্ত্বরে যেখানে আমি প্রায় প্রতি দিন যাই।

-ঠিক আছে ভাল,তবে সাবধানে থেকো আর বেশী প্রয়োজন না হলে সেখানে না যাওয়াই ভাল …..

-কেনো,আমি রাজাকারের মেয়ে বলে?

বাবা অপ্রস্তুত কি বলবেন মেয়ের হাতে সেই পত্রিকাটি।

-কি যে বলো তুমি রাজাকারের মেয়ে হবে কেনো,তোমার বাবাতো একজন মুক্তিযোদ্ধা…… ঐ দেখো দেয়ালে আমার যুদ্ধের সার্টিফিকেট ফ্রেমে বাধা ঝুলছে।

-ঐ রকম কাগজের সার্টিফিকেট হাজারটা বানানো যায় বাবা…..সব কিছুই মেনে নিতাম স্বাধীনের পর যদি তুমি খাটি বাংলাদেশী হতে।এখনও তুমি তোমরা পাকিস্হানের সাথে সম্পর্ক রেখে দেশের ক্ষতি করে যাচ্ছো।

-কি সব যা তা বলছ,

-পত্রিকায় যা লিখা আছে তা কি মিথ্যে?তুমি বিস্বাস না করলেও আমি বিস্বাস করি কারন এই রিপোর্টটি যিনি লিখেছেন তার অনেক আত্ত্ব ত্যাগ রয়েছে স্বাধীনতার জন্য….সূর্য্য এক জন সৎ নির্ভীক দেশ প্রেমিক।

পিতা কন্যার তর্ক যুদ্ধ শেষে কন্যা প্রস্তান নেন।ঐ দিকে সূর্য্যের মা সূর্য্যের কাছে জানতে পারেন তামান্নার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হচ্ছে।মা সূর্য্যকে তামান্নার বাসার ঠিকানাটা নিতে বলেছিলেন বহু পূর্বেই সেই ঠিকানা মোতাবেক সূর্য্যের মা সূর্য্যকে নিয়ে তামান্নার বাসার দিকে রওয়ানা দেন।

বিশাল অট্রেলিকা বাড়ী গেইটে দাড়োয়ানকে জিজ্ঞাসা করে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করেন মা ও ছেলে।ভিতরে প্রবেশ করে  সূর্য্য তামান্নার বাবার ছবি দেয়ালে ঝুলতে দেখে থমকে দাড়ায় এ তো সেই রাজাকারের ছবি যার রিপোর্টটি আজই ছেপেছিল পত্রিকায়।

-মা...দাড়াও...চলো ফিরে যাই।

-কেনো?

-এমনিই...মনে হয় না তামান্নার বাবা তোমার প্রস্তাবে রাজি হবেন আর আমিও জানতাম না যে, এই সেই তামান্নার বাবা যার বিরুদ্ধে আমি নিজে পত্রিকায় রিপোর্ট করেছি, সে একজন চিহিৃত রাজাকার।আমার মন সায় দিচ্ছে না মা...।

-তাতো জানি এসেছি যখন ওর বাবার সাথে এক বার কথা বলেই দেখি।ছেলের মনের গহীনে জ্বলছে তোষের আগুন এক দিকে মনের খোরাক হাত ছাড়া অন্য দিকে দেশপ্রেমের টানপোড়ন মা তা বুঝতে পারেন .....ঠিক আছে চল ফিরে যাই ।

এরই মধ্যে তামান্নার বাবা দু'তলা হতে সিড়ি বেয়ে নীচে ওয়েটিং রুমে নামছেন তাদের চলে যেতে দেখে উপর থেকেই ডাক দেন।

-হে লো কে আপনারা চলে যাচ্ছেন কেনো?বসুন।

সূর্য্য ফিরে তাকায় এবং ওয়েটিং রুমে সোফায় বসেন।তামান্নার বাবা সোফায় বসে পরিচয় জানতে চান।মা তার গ্রামের পরিচয় দিলেন।কেরামত মাওলার নাম শুনে চমকে যান।

-মুক্তিযুদ্ধের স্হানীয় প্রতিনিধি

-হ্যা,

মা উত্তর দেন এবং তামান্নার বাবার দিকে ভাল করে খেয়াল করলেন এক সময় চোখের সামনে ভেসে উঠে তামান্নার বাবার যুদ্ধকালিন কূ-কৃর্তির প্রতিচ্ছবি।

সারা গ্রাম পাকিরা স্বদেশীয় দালালদের যোগ সাজসে আগুন লাগিয়ে দেন ছোট দুটি বাচ্চাকে লাথি মেরে পায়ের তলায় পিষতে থাকেন তারপর সে যখন মা রোজীর সামনে দাড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটাকে পবিত্র বাংলার মাটিতে ছুড়ে থুথু দিয়ে পায়ের গোড়ালী দিয়ে অনবরত হিট করে যাচ্ছেন রোজীর তরুন রক্তে আগুন লেগে যায় হাতে একটি সাফাল নিয়ে আঘাত করেন তার মাথায় তৎক্ষনাত তার মাথা ফেটে রক্ত ঝড়তে শুরু করে ঠিক সেই মুহুর্তে রোজীর স্বামী এক গ্রুপ মুক্তি সেনা নিয়ে ফায়ার করতে করতে রোজীর সামনে আসার আগেই তামান্নার বাবা রক্ত মাখা মাথায় হাত রেখে দৌড়ে পালাল।

সূর্য্যের মা তামান্নার বাবার মাথার সেই আঘাতটা দেখে চিনে ফেলেন।মা রোজী বসা থেকে উঠে দাড়ান।

-কি ব্যাপার উঠলে কেনো?যা বলতে এসেছো বলে যাও।

-মানুষ মানুষের সাথে কথা বলে.... কোন অমানুষের সাথে নয়।

-ও আচ্ছা তাহলে আমি অমানুষ......আর তোমরা মানুষ,তাইতো আমার আছে অগাত সম্পদ আর তোমরা ফকিন্নি।যাক সে কথা তোমরা যে জন্য এসেছ তা হবার নয়।

-ইচ্ছে করলেও হবে না আর এক জন কুখ্যাত রাজাকারের মেয়ের সাথে আমার ছেলের মিলন হবে না কখনই।

-কারন তোমরা মুক্তিযোদ্ধা তাই না......ঐ দেখো দেয়ালে ঝুলছে আমার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট.....আমিও মুক্তিযোদ্ধা।আর রাষ্ট্র আগে যেমন ছিল আমাদের এখনও তেমনি আছে আমাদের।তোমাদের নেতা মুজিব সেদিন যুদ্ধ শেষে আমাদের ক্ষমা করেছিল আমরা সেই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছি।

-সে দিন আর বেশী দূরে নয় যখন ফের ফাসিতে এই সূর্যের মতন নতুন প্রজম্মরা তোদের লটকাবে।

অট্ট্র হাসিতে ফেটে পড়েন তামান্নার বাবা।

-হা হা হা....পারবে না,আমরা সেই '৭৫ এর পর হতে বীজ বপণ করে আসছি, এখন দেশের প্রতিটি সেক্টরে উচ্চ পর্যায়ে আমাদের লোকদের আধিপত্য।আমরা ইচ্ছে করলে যে কোন সরকারকে কাইত করতে পারি।

-সাধারন দেশপ্রেমি জনতা যখন জেগে উঠবে তখন তোদের ঐ উচু তলা হতে টেনে হিচড়ে নামিয়ে ফেলবে।

-দেখা যাক কে কাকে নামায় তা বুঝবে আসছে ৫ই মে

সূর্য্যরা সেখান থেকে প্রস্তান নেন।স্বাধীনত্তোর বাংলাদেশ ছিল যুদ্ধে বিধ্বংস্ত একটি নতুন রাষ্ট্র সেই রাষ্ট্রের কিছু আগাছা থাকে যা পরিষ্কার করা জরুরী হয়ে পড়ে কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা করেননি বরং ক্ষমা সূলভ দৃষ্টিতে কিছু যুদ্ধাপরাধীদের সাধারন ক্ষমা করেন যারা পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে বহু দলীয় গণতন্ত্রের সুবিদায় রাজনিতী শুরু করেন তাদের মধ্যে জামাতে ইসলামী অন্যতম।ক্ষমতার পালা বদলে ওরা শক্তিশালী হতে থাকে এবং সুযোগের সৎ ব্যাবহার করেন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে দলীয় লোক নিয়োগ দিয়ে।

সূর্য্য,অভি,সমর এখন নিয়মিত প্রজম্ম চত্ত্বরে আর সবার মতন "ফাসির দাবী নিয়ে এসেছি"মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে পুরোপুরি আন্দোলনে শরীক হন।প্রতি দিনের মতন সে দিন ৫ই মে ২০১৩ সালে ওরা প্রজম্ম চত্ত্বরেই অবস্হান করছিল সাথে আরো বেশ কয়েক জন প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের রাজনিতী নিয়ে পাল্টাপাল্টি তর্কে মেতে উঠেন।

-সবাই এসেছে,

-হ্যা, মোটামোটি তবে আরো কয়েক জন আসছেন।

-ঠিক আছে তাহলে মূল পর্ব শুরুর আগে আগত ওদের জন্য অপেক্ষা করি।

তখন বেলা দশটা ঐদিকে হেফাজতের তের দফা দাবীগুলো  নিয়ে ভোর হতেই কিছু পায়ে হেটে কিছু চুপিসারে গাড়ীতে করে আসতে শুরু করেছেন তাদের পূর্ব নির্ধারিত ঢাকা মুখী লং মার্চে।তাদের এমন কর্মসূচীর জন্য সরকার পূর্বের দিন হতেই বিভিন্ন অজুহাতে লং জার্নি গাড়ী চলাচলে নিষিদ্ধ করেন।

-আমার মাথায় কিছুই আসছে না সরকার কেনো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এমন করছেন।

সূর্য্যের কথার জের ধরে অভি কথা কাটেন।

-সরকার ঠিকই আছে আমাদের মাঝেই যত সমস্যা।

অন্য জন মাঝ পথে কথা বলেন।

-দেখুন ভাই আমরা কোন দল বা সরকারের পক্ষ হয়ে এখানে আসিনি এসেছি দেশের স্বার্থে আমাদের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে।

আরেক জন অতি ব্যাথিত হয়ে কথা বলেন।

-হুম!ভালোই বলেছেন,মৌলিক অধিকার..... কি ভাবে রক্ষা করবেন বিচার বিভাগে বিশৃংখলা কারা করছে কেনো করছেন।বিচার বিভাগে যদি কার্যত স্বাধীনতা না থাকে তবে কি ভাবে আপনার মৌলিক অধিকার রক্ষা হবে বলুন তো?সাগর-রুনি হত্যা বিচার করতে পেরেছেন?পারেননি কচি মনের মেঘকে তার মা বাবার সঠিক বিচারের বাণী শুনাতে পারেননি এখনও,কি জবাব দিবেন আগামী নতুন প্রজম্মকে।

-হয়নি,হবে ......

সমর কথার যোগ করে প্রশ্ন করেন।

-আর কবে হবে?যদিও হয় তবে লাইভ হত্যা কান্ড, আট জনের বিশ্বজিৎ হত্যায় ফাসির রায়ের মতন হবে এর কার্যকারীতা করতে করতে কোন বিশেষ ক্ষমতায় একদিন ছাড়া পেয়ে যাবেন।এই তো কয় দিন আগে ২৪শে এপ্রিল ২০১৩ সালে রানা প্লাজায় ধষ নামে    হাজারো লাসের উপর দিয়ে মন্ত্রীদের রসিকতা চলে।সেই প্লাজার সোহেল রানা আওয়ামিলীগ রাজনিতীর গংদের চিহিৃত সোহেল রানাকে ধরতে এতো সময় নিলো কেনো?এখনও এর বিচার ঝুলে আছে কিন্তু কেনো,হাজারো রাজনৈতিক,গুম,খুনের মামলা ঝুলে আছে ঝুলে থাকে বছরের পর বছর কিন্তু কেনো?আমাদের পূর্বোসূরীরা কি স্বাধীনতার জন্য প্রান দিয়েছিল এমন রাষ্ট্র ব্যাবস্হা দেখতে?

সবচেয়ে মজার বিষয় কি জানেন ১৭ দিন পর রেশমা নামক এক জনকে অক্ষত উদ্ধার করা হয়,এর পক্ষে বিপক্ষে কত রকমের রসপূর্ণ যুক্তি তর্ক হয় আমাদের মাঝে অথচ কেউ ভাবছেন না এই গার্মেন্টস সেক্টরটা যদি ধ্বংস হয় তবে সাম্যতার ভেদাভেদে কেউ রেহাই পাবো না বেকার হওয়া সাধারন জনগণের হাত হতে।

-ঠিক বলেছেন ভাই.......।

হঠাৎ শোড় গোলের শব্দ।হেফাজত লং মার্চে ঢাকা শাপলা চত্ত্ব জড়ো হচ্ছে।দেখতে দেখতে পুরো শাপলা চত্ত্বরটি ভরেও আশে পাশে লক্ষাধিক লোকে লোকারণ্য।

চলবে'''''

প্রজম্মের ঋণ শোধ ১১তম

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ