প্রজম্মের ঋণ শোধ ১১তম

মনির হোসেন মমি ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪, সোমবার, ০৯:৩৫:২৩পূর্বাহ্ন গল্প, মুক্তিযুদ্ধ ১৮ মন্তব্য

সূর্য্য রিক্সা হতে নেমে ফোনের পর ফোন দিচ্ছেন রক্ত দাতাকে,কোন উত্তর নেই ,কিছু ক্ষণ ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছেন প্রজম্মের ঋণ শোধের চত্ত্বরটিকে।যে দিকে তাকায় লোকে লোকারণ্য স্বাধীনের পর এমন গণ জমায়েত আর কখনও হয়নি।নিঃস্বার্থ ভাবে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসা রাজাকারদের ফাসির দাবীতে ছেলে বুড়ো সবাই ছিল উম্মুখ।দল বদ্ধ ভাবে বিভিন্ন গ্রুপে ভিন্ন ভিন্ন মনোরঞ্জন আয়োজনে দাবী একটাই .......তুই রাজাকার....ফাসি চাই।সূর্য্যের আশা হত বুক ভরে যায় নিশ্চিত তরুনদের জয় ভেবে।ঘামে একাকার তবু উত্তাল শ্লোগান বলেই যাচ্ছেন  অনবরত তুই রাজাকার ,রক্ত দাতা সেই ছেলেটিকে লক্ষ্য করেন সূর্য্য।

শ্লোগানের জন্য লাকী নামক এক ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী অগ্নি কন্যায় উপাদিতে ভূষিত হন।BOAN এর সম্মেলিত তরুনদের মিলিত উদ্দ্যেগ ছিল এটি সর্ব সম্মতিক্রমে ডাঃ ইমরান এইচ সরকার  কে আহবায়ক করেন পরবর্তীকালে প্রজম্ম চত্ত্বরের মূখপাত্র হন।

সূর্য্যের এখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে.....বাঙ্গালী প্রয়োজনে জাগতে জানে।সূর্য্য রক্ত দাতা ছেলেটির কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞসা করেন।ছেলেটি বড়ই অমায়িক সে তাদের অন্যান্য সহযোদ্ধাদের সাথেও আলাপ করিয়ে দেন সূর্য্য এবং তার বন্ধুদের।প্রায় প্রতি দিন একটা না একটা প্রোগ্রাম ছিল সেখানে, সূর্য্যের এখানে এসে বেশ ভাল লাগছে তামান্না যদি সাথে থাকত আরো কত মজা হতো।নাম নিতে নিতেই তামান্না এসে হাজির সাথে এক হ্যান্ডসাম বয়।তামান্নাকে সে দেখেনি তামান্নাই প্রথম ভিড়ের মধ্যে দেখেন সূর্য্য এবং তার বন্ধুদের, সে ধীরে ধীরে কাছে আসে।

-সূর্য্য!

সূর্য্য তার বন্ধুদের সাথে সম্মেলিত স্বরে বিভিন্ন শ্লোগানে মক্ত হঠাৎ সূর্য্যের পিঠে নরম হাতের ছোয়াঁ সাথে সেই চেনা কন্ঠে সূর্য্য নামের ডাক।পিছু ফিরে অবাক হয় সাথে ছেলেটিকে দেখে সন্দেহের দানা বাজে মনে....তাহলে এই ছেলেটি কি তামান্নার স্বামী!দূর ছাই কি সব ভাবছি আমি বিয়ে হলেতো অন্ততঃ নিমন্ত্রনটি পেতাম।

-তামান্না তুমি এখানে।

-এখানে আমি প্রায় আসি....বাবার অপরাধের ঋণের বোঝা হালকা করতে।

সূর্য্য যেন লজ্জা পেল।বন্ধুরা তামান্নার সাথে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেন তারপর সাথের ছেলেটির কথা জিজ্ঞাসা করেন।

-ও হ্যা...ও হচ্ছে আমার কাজিন এবার ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে,ওর এখানে চেনা জানা কেউ নেই বলে আমি সাথে করে নিয়ে এসেছি।

সূর্য্য সহ সূর্য্যের বন্ধুরা ছেলেটির পরিচয় জেনে নিশ্চিন্ত হন। ছেলেটিকে বন্ধুরা সাথে করে নিয়ে গেল সূর্য্য আর তামান্না থেকে দূরে।

-চলো... ঐ খানটায় একটু নিরিবিলি আছে ...একটু বসি।

-চলো.....।

সূর্য্য এবং তামান্না কোলাহল থেকে একটু শীতল ছায়ায় আবৃর্ত স্হানটিতে বসলেন।দু'জনে বসে বসে কিছুক্ষণ কেবল লোকের চলাচলে কিংবা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসা আকাশেঁ উড়ন্ত নীর ফেরা ঝাক ঝাক পাখিদের চলন্ত দৃশ্য দেখছেন।মূখরিত প্রজম্ম চত্ত্বরের সন্ধ্যের আয়োজনের সরঞ্জামের প্রস্তুতি।আজ লক্ষ লোক জড়ো হচ্ছে কিছু ক্ষণের মধ্যে প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে সন্ধ্যায় এক সাথে জ্বলবে লক্ষ হাজারো মোমের অগ্নি শিখা।

-কি কিছু বলছ না যে?

-কি বলব আমিতো রাজাকারের মেয়ে,আমার সাথে সম্পর্ক না রাখাই ভাল।.......কতটা দিন চলে গেলো একটি বারও ডাকোনি কিংবা খোজঁ নাও নি আমি কেমন আছি।

-শুধু কি তুমিই বলবে নাকি আমাকেও বলতে দিবে।....তুমি চলে যাবার পর নিজেকে নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছিল,হতাশায় ঘুম ছিলনা প্রতিটি রাত।বিরহ তিল তিল করে যখম করেছে হৃদয়টাকে।মায়ের ভরসা পেয়ে তোমাদের বাসায় যে দিন যেতে চেয়েছিল সে দিন মৃত্যুর হাত থেকে আমি আর অভি ফিরে আসি।হাসপাতালে ছিলাম মাস খানেক তোমাদের বাসায় খবরও পাঠিয়েছি অথচ তুমি আসো নি।

তামান্না অবাক হন এ কয় দিনে এত কিছু ঘটে গেল সে জানলা,যাকে দিয়েই খবর পাঠিয়েছিল সেও কিছু বলল না।নিজের মনের গহীনে অনুশোচনার বীজ জম্ম নেয়।

-সত্যিই আমি জানতাম না,জানলে হয়তো.....

-আমি জানি তুমি আসতে...থাক সে কথা তোমার খবর বলো।

-হুম আমার আবার খবর,বাবা পাত্র ঠিক করেছে আমেরিকায় থাকেন।

-খুব ভালো,আমেরিকান হয়ে যাবে।

-হুম!জীবনে মনে হয় সূখের দেখা আর পাবো না।

-কেনো তুমিতো সুখেই থাকবে আমেরিকার ছেলে কাড়ি কাড়ি টাকা...তোমার বাবারতো টাকার অভাব নেই।

-জীবনে টাকাই কি সব সুখ!তোমরা ছেলেরা মেয়েদের মন কখনও বুঝোনি আর বুঝবেও না।......ঐ দেখো দেখো এক সাথে কেমন করে জ্বলছে মোমের বাতি।চমৎকার না..............।

-হ্যা,.................চমৎকার, তার চেয়ে সুন্দর তোমার চঞ্চলতা...তোমার হাসি।

-থাক আর রোমান্টিক হতে হবে না..যখন থাকব না তখন দেবদাস হয়ে যেও।.................চলো উঠা যাক...।

সূর্য্যের বন্ধুরা এরই মধ্যে ফিরে এসেছেন।তামান্না চলে গেল বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে।সূর্য্য প্রজম্ম চত্ত্বরের একটি গ্রুপের সাথে কথা বলে সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

এর পর প্রজম্ম চত্ত্বরের এ ভাবেই বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচীর মাধ্যমে চলতে থাকে।এক সময় ডাঃ ইমরান আশা জাগান সমগ্র বাংলাদেশের তরুন সমাজের ,তরুনদের হয়তো সে দিন আর দূরে নয় যখন রাত পোহালেই শুনা যাবে রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ।সমপৃক্ত হন সরকার দলীয় কিছু লোক তাদের শাহবাগ চত্ত্বরের প্রতিদিনের খরচের একটি অংশ আসে সরকার থেকে আর বাকীটা পাবলিকের।এর মাঝে ঘটে যায় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা খেতাব প্রাপ্ত অগ্নি কন্যা লাকিকে কে বা কারা যেন আঘাত করে,অসুস্হ হয়ে লাকী হাসপাতালে তবুও থেমে নেই কর্মসূচী আন্দোলন।২০১৩ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী ব্লগার রাজীব নিহত হন। ব্লগার রাজীবের জানাযায় সর্বস্তরের জনতার অংশ গ্রহনে অনুষ্টিত হয়।

শাহবাগে আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে রয়েছে নাস্তিক ব্লগাররা, এই অভিযোগে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম নামক একটি সংগঠন সক্রিয় হয়ে উঠে।সক্রিয় কর্মী রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কিন্তু তার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর প্রথমে দৈনিক ইনকিলাব ও এর পরপরই দৈনিক আমার দেশ ধারাবাহিক আকারে কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে দাবী করা হয় যে ব্লগার রাজীব মুসলমানদের শেষ নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে কটুক্তি করেছে। এর পরপর হেফাজতে ইসলাম তাদের ১৩ দফা দাবী এবং এরকম কটুক্তিকারীদের ফাঁসির দাবীতে আন্দোলন শুরু করে।

যুদ্ধাপরাধী হিসাবে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইবুনালের এক নজরে ফলাফল।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম জন্ম অভিযোগ বর্তমানে অবস্থান বিচারের অবস্থা ফলাফল আপিল নিস্পত্তি
গোলাম আযম ১৯২২ আটক ১৫-০৭-২০১৩ ট্রাইব্যুনালের রায় ৯০ বছর নিরবিচ্ছিন্ন কারাদন্ড
মতিউর রহমান নিজামী ‌১৯৪৩ আটক
দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ১৯৪২ আটক ২৮-০২-২০১৩ ট্রাইব্যুনালের রায় মৃত্যুদন্ড
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান আটক ০৯-০৫-২০১৩ ট্রাইব্যুনালের রায় মৃত্যুদন্ড
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আটক ১০-১০-২০১৩ ট্রাইব্যুনালের রায় মৃত্যুদণ্ড
আশরাফুজ্জামান খান ১৯৪৮ নিউ ইয়র্কে পলাতক ০৩-১০-২০১৩ ট্রাইব্যুনালের রায় মৃত্যুদন্ড
চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ১৯৪৮ যুক্তরাজ্যে পলাতক ০৩-১০-২০১৩ ট্রাইব্যুনালের রায় মৃত্যুদন্ড
আব্দুল আলীম আটক ০৯-১০-২০১৩ ট্রাইব্যুনালের রায় আমৃত্যু কারাদণ্ড
আব্দুল কাদের মোল্লা হত্যা, গণহত্যা ও ধর্ষণের ৬টি অভিযোগ আটক ০৫-০২-২০১৩ ট্রাইব্যুনালের রায় ৩টিতে ১৫ বছরের কারাদন্ড, ২টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মৃত্যুদণ্ড
আলী আহসান মুজাহিদ আটক ১৭-০৭-২০১৩ ট্রাইব্যুনালের রায় মৃত্যুদণ্ড
আবুল কালাম আযাদ হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ এবং অগ্নিসংযোগের ৮টি অভিযোগ পাকিস্তানে পলাতক ২১-০১-১৩ ট্রাইব্যুনালের রায় ৪টিতে মৃত্যুদণ্ড, ৩টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

বাসায় প্রবেশ করেন তামান্না। তার পিতা বিশিষ্ট ব্যাবসায়িক এবং রাজনৈতিক নেতাকে সন্ধ্যায় বাসায় দেখে অবাক হন, সোফায় তার কয়েক জন চামচাকে নিয়ে বসে আজকের সবগুলো পত্রিকা ঘাটাঘাটি করছেন মনে হচ্ছিল কি যেন খুজঁছেন সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে অবশেষে নিউজটি চোখে আসে।যুদ্ধাপরাধীর মামলা সম্পৃক্ত বিশাল আকারে রিপোর্ট এই রিপোর্টের পরই হয়তো মামলা হয়ে যাবে। তার মুক্তি যুদ্ধের সার্টিফিকেট আছে সে সম্পর্কেও রিপোর্টে উল্লেখ আছে এবং চ্যালেঞ্জ ছুড়া হয়েছে তার সংগ্রহীত মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নকল টাকা আর ক্ষমতার বিনিময়ে পাওয়া।পেপার গুলো দেখে ক্রোধে ছুড়ে ফেলেন মেজেতে চোখ পড়ে তামান্নার দিকে।তামান্না ছুড়ে ফেলা পত্রিকাটি হাতে নিয়ে অবাক হন তার বাবার নামে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীকারী সম্পর্কে রিপোর্ট।

প্রজম্মের ঋণ শোধ ১০ম পর্ব                                                                                                                                                                               সহযোগিতায়:উইকিপিয়া

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ