মনকে শান্ত রাখার চেষ্টায় দীপ্ত কিছু ক্ষন পূর্বে এক দল টুপি পড়া যুবক অর্ধ বয়সী লোকেরা তাদের ঘর বাড়ীগুলোকে আগুনে জ্বালিয়ে ভাংচুড় করে গেছেন।কারন কিছুই না তাদের মতে দীপ্তরা এ দেশে অভিসপ্ত জাতি,তাদের সাফ কথা এ দেশে কোন ভিন ধর্মী লোকেরা বসবাস করতে পারবে না।যদি মুসলমান হতে পারে তবেই তারা এদেশে বসবাস করতে পারবেন...এমনি মর্মস্পয়ী অভিযোগ নিয়ে এসেছেন সূর্য্যের কাছে তাদের গ্রুপের এক সদস্য দীপ্ত।সূর্য্যরা তখন তাদের কার্য্যালয়ে অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনের  বিষয়ে কিছু পোষ্টার ফেষ্টুন নিজেরাই তৈরী করছিলেন।তখন দীপ্তের এমন অভিযোগে তাদের পুরো টিম তার পাশে আছেন বলে ঘোষনা দেয়।প্রথমে সুর্য্য তাকে শান্তনা দেন।
-দীপ্ত..কি বলে যে তোমাকে শান্তনা দিবো বুঝতে পারছি না,আসলে তোমাদের যে পরিমান ক্ষতি ওরা করেছে তা হয়তো অর্থের দ্বারা পুণরায় পূর্ণস্থাপন করা যাবে কিন্তু তোমাদের মনে যে সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত আঘাতটা লেগেছে তা কি ভাবে মুছবে আমার জানা নেই তবে কথা দিচ্ছি ঐ সমস্থ নামধারী মুসলিমদের বিষদাত অচিড়েই উপড়ে ফেলতে পারব।
তারপর কথার মাঝে কথা বলেন অভি।
11137119_757680864345209_3873089926265994566_n (1)-এই যে আজকে যে ৭১ এ রাজাকার আলবদর খুনি কামরুজ্জামানের  রায় হলো,এই রায়কে বাতিল করে স্বদেশী ভিনদেশী সবায় উঠে পড়ে লেগেছেন,মনে হচ্ছে এক জন ফেরাস্তাকে যেন মিথ্যে সাজা দিচ্ছেন মহামান্য আদালত।ধর্মকে পুজি করে এ সব লোকেরা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে ৭১ এ যেমন করেছিল তেমনি এখনো তা করার মধ্যই আছে অথচ নীরবে আমরা দেখেই যাচ্ছি কেবল আমাদের যেনো কিছুই করার নেই।আরো এক অবাক বিষয় কেউ আজও তাদের ঘৃণিত কৃত কর্মের জন্য একটু ক্ষমা চাওয়া কিংবা স্বীকার করেনি।এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।
সমর দীপ্তের হাত দুটো ধরে অনেকটা বৃষ্টি ভেজা নয়নে নিজেদের কষ্ট আর দুর্ভোগের বর্ননা দেন।
-এই আমি তোমার মতোই নির্যাচিত তবে আমার সময়টা ছিল ১৯৭১ সাল ২৫শে মার্চের কালো রাত্রীর ঘটনাতে।আমাদের সংসারের সব কিছুই চলছিল স্বাভাবিক ভাবে।সে দিন গত রাতে, আমার বড় ভাই ছিলেন ভার্সিটির শিক্ষক।সে টি এস সির চত্ত্বরে তাদের সহকর্মীদের নিয়ে আড্ডা মারছিলেন হঠাৎ কিছু বুঝে উঠার আগেই বৃষ্টির মতো গুলি পড়ল তাদের উপর,.. ভাইয়া হঠাৎ শুয়ে পড়াতে সে যাত্রায় গুলি লাগেনি বেচে যান কিন্তু তার এক জন সহ কর্মী সহ পাশের তিন চার জন সেখানেই গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢুলে পড়েন।কিন্তু পাক হায়নার দল শুয়ে পড়া মৃত লাশগুলোকে বন্দুকের অগ্রভাবের ক্রীচের আঘাতে নিশ্চিত করছিলেন মৃত্যুকে,..বড় ভাইয়ের বুকে ক্রীচের আঘাত লাগার সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠেন।পাকি সৈনিক তবুও ক্ষ্যান্ত হনননি....বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে ভাইয়ে দু চোখের মণি ক্রীচের আঘাতে উপড়ে ফেলেন।....ভাইয়ার চিৎকারে রাতের অন্ধকারে বৃক্ষে বসবাস রত পাখিরা অত্যাচারের ভয়ে শব্দ করে উড়ে চলে যায়।
সমরের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে কষ্টের লোনা জলে।সাথীদের মুখের শান্তনার ভাষা যেনো হারিয়ে গেছে সমরের পরিবারের মুক্তি যুদ্ধে  ঘটে যাওয়া বিভৎর্ষ বর্ননায়।সূর্য্য এগিয়ে এসে সমরের কাধে হাত রাখেন।অভি তাদের দুজনার মাঝে।
-কি রে তুই কেমন বন্ধু বলতো! এমন ঘটনাও মনে চেপে রাখে কেউ!আমাদেরতো কখনও এসব কথা বলিসনি।
-কি বলব যে দেশে রাজাকার আল বদররা এসি গাড়ীতে রাষ্টীয় পতাকা নিয়ে নির্বিগ্নে দেশে বসবাস করে সে দেশের জন্য ত্যাগের ইতিহাস অন্যকে জানিয়ে কি লাভ বল?
তাদের আত্ত্বত্যাগের কথা শুনে দীপ্তের সব কষ্ট যেনো তাদের তুলনায় কিছুই না।সে সবার মাঝে একটি প্রশ্ন রাখেন।
-যাদের দ্বারা আমরা এত ত্যাগ এতো অত্যাচারিত হলাম তাদেরকে এই আমরাই বিভিন্ন মাধ্যমে সহযোগিতা করছি কেনো?
-এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই,হয়তো আমাদের পূর্বো পূরুষরা কোন পাপ করেছিলেন যার খেসারত এখন আমরা দিচ্ছি।তবে আমরাও প্রতিজ্ঞা বদ্ধ প্রজন্মের সেই ঋণ আমরা কড়ায় গন্ডায় শোধ করব।আর তাইতো আমরা বছর জুড়ে একটি কর্মশলার কাজ হাতে নিয়েছি,যুদ্ধাপরাধীদের অতীত এবং বর্তমানের ঘৃণিত কৃতকর্মগুলো নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিবো যাতে নতুন প্রজন্ম যারা যুদ্ধের ভয়াবহতা,এ সব রাজাকার আলবদরা কতটা পাষন্ড ছিলো স্বদেশী হয়ে ভিন দেশের সাপোর্টে কত মা বোনদের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে ইত্যাদি আমরা টগি মানে প্রজেক্টের সাহায্যে ছোট সিনেমা পর্দায় শো করব।অলরেডি আমাদের সবার প্রিয় সোনেলা ব্লগের বড় ভাই জিসান তাদের গ্রামের বাড়ীতে প্রদর্শনী শুরু করে দিয়েছেন।নিঃসন্দেহ একটি প্রশংসনীয় কাজ।এ ভাবে নিজ উদ্দ্যেগে সবাই এগিয়ে আসলে ঐ সব নর পশুরা যারা এদেশে এখনো বসবাস করে এখনো দেশের বিরুদ্ধে পাকিদের হয়ে কাজ করছে সেই সব চির ঘৃণিত মুখগুলোকে নতুন প্রজন্মরা সহজেই চিনতে পারবেন এবং তাদের কু-কর্মের ভয়াবহতা বুঝতে পারবেন আর তখনি আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।সূর্য্য কথাগুলো বলে তাদেরকে নিজ নিজ এলাকায় স্ব উদ্দ্যেগেই কাজ করার আহবান জানান।

সূর্য্য বাসায় মাকে মন মরা মুখশ্রী দেখে মাকে খুশি করার উপায় খোজছেন নিশ্চয় মা তার আসতে দেরী হওয়াতে অভিমান করেছেন।সূর্য্য এক বার মায়ের সামনে উপুর হয়ে মায়ের চোখের তাকান চোখ দুটো যেন তার বিমূর্ষতায় মুর্ছা যায় বার বার।না কোন ক্রমেই মাকে খুশি বা হাসি মাখা মুখটি আনতে পারছেন না হঠাৎই সে সমর অভিকে গালাগাল দিয়ে বলতে থাকেন....কতো কইড়া কইলাম ওগো আমার মাকে আজ সময় দিবো আজ কোন কাজ করতে পারব না...কে শোনে কার কথা।একটু আড় চোখে মায়ের দিকে তাকায় সূর্য্য।মা সামান্য হাসেন।মাকে জড়িয়ে ধরে সূর্য্য আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
-জানো মা!আজ এক সূর্য্য সেনা ক্লাবের সদশ্য এসেছিল অভিযোগ নিয়ে তাদের বাড়ীর উপর হামলা করেছে কিছু টুপি পড়া নাম ধারী মুসলমান।আচ্ছা বলোত আমরা কি ভিন্ন ধর্মের?আমরাওতো মুসলমান,আমরাতো আল্লাহর ইবাদত করি বিধি নিষেধ মেনে চলি,হাদিস কোরান পড়েছি,কই কোথাওতো পাইনি অন্যের ক্ষতি করতে হবে ইসলাম রক্ষার্থে!তবে ওরা, যারা নামে মুসলমান কাজে সন্ত্রাস ওরা কোন কিতাব পড়েন বলতে পারো তুমি,কোন কিতাবে ওরা পড়েছিল ইসলাম রক্ষার্থে খুন করতে হবে কিংবা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারতে হবে?
মা তখনো নিশ্চুপ।মাকে ঝাকি দিয়ে তার কথগুলো শুনবার বাধ্য করাতে সচেষ্ট সে কিন্তু মা যেনো একটুও খুশি নয় যেনো রাজ্যের সমস্ত দুশ্চিন্তা মায়ের মনে বাসা বেধেছে।
-মা...এই মা তুমি কথা বলছনা কেনো?কি হয়েছে কোন দুঃসংবাদ?
মা একটি কাগুজি লেখা চিরকুট এগিয়ে দেন ছেলের সামনে।চিরকুটটি হাতে নিয়ে তা খোলে আশ্চর্য্য হন সূর্য্য।তাতে স্পষ্ট বড় বড় অক্ষরে লেখা।
"স্বামীর মতো ছেলেকে হারাতে না চাইলে ছেলে তার কর্ম থেকে স্টপ করো"
লেখাটা পড়ে ক্ষেপে যায় সূর্য্য....সালারা সাহস থাকলে আমার সামনে এসে বল,,,যত্তসব।
চিরকুটটি ধলামোচড়া করে ডাষ্টবিনে ফেলে দেন।মাকে ঝড়িয়ে ধরে মাকে শান্তনা দেন।
-মা,তুমি না বীরাঙ্গনা,তুমিতো যুদ্ধ করেছো,,বাবাকে দেশের জন্য বিলিয়ে দিয়েছো...আর তুমিই ভয় পাচ্ছো!
--তখন ভয় ছিল না,ছিলো দেশ স্বাধীনের মরন পণের এক নিদিষ্ট গোষ্টি,এখন ভয় পাই কে যে দেশ প্রেমিক আর কে যে দেশের শত্রু তা বুঝা যায় না,হয়তো আমাদের মাঝেই লুকিয়ে আছে আমাদের শত্রু।তা না হলে রাজাকার কামরুজ্জামানের ফাসির কার্যকরের এমন টানা হেচড়া হয় নাকি!তার রাষ্ট্রপতির কাছে প্রান ভিক্ষা চাইবে কি না তা জানাতেই দুদিন পাড় করে দিল।
-মা তুমি আমাদের এই ডিজিটাল যুগের মারপ্যাচ বুঝবেনা,ঐ রাজাকার যেমন এটাকে নিয়ে ধূম্ভ্রজাল চালের চেষ্টা করছে, তেমনি সরকারও তার ইতরামির সাথে তাল দিয়ে দেখছে ঘুড়ির লাটাইয়ের সূতা কতো দূর যায়!তাছাড়া সবাই নিশ্চিত যে রাষ্ট্রপতি তাকে প্রান ভিক্ষা কখনোই দিবেন না,কেননা সে একজন মুক্তিযোদ্ধা আর এক জন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে এ ভূল কখনই সে করবেন না।
-বুঝেছি,,,তবে একটু সাবধানে থাকিস,....আর শোন,ব্যাবসার একটু খোজ খবর নে,
-কি হলো আবার,রহিম চাচা কোন সমস্যা করেছেন নাকি?
-না,তয় আর কতো অন্যকে দিয়ে হাল চাষ করাব,এবার একটু খোজ খবর রাখ।
বাহিরে কে যেনো এসেছেন কলিং বেলের শব্দে তা বুঝতে পেয়ে মা কাজের মেয়ে চমকিকে ডাকেন....চমকি...একটু দেখতো কে এলো।

চলবে..

-{@ শেরপুর বাসীদের জানাই স্বাগতম...আমার মনে হয় এই প্রথম সরাসরি প্রতিরোধ...রাজাকার নিপাত যাক দেশ এগিয়ে যাক।
N.B:অবশেষে যে ভাবে পিচাশটির ফাসির কাজ সমাপ্ত হলো
১১ই এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৩০ মিঃ

প্রজন্মের ঋণ শোধ ২১তম

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ