যদি রাত পোহালে শুনা যেত
বঙ্গ বন্ধু মরে নাই..............
কেউ বলুক আর নাই বলুক

তুমিই বঙ্গ বন্ধু,বাংলাদেশের জাতির পিতা
কেউ মানুক আর নাই মানুক
তুমিই বঙ্গের জন্মদাতা।
যুগে কালে ভাদ্রে জন্মেছে এমনি নেতা

যার হাত ধরে,
উঠে ,অন্ধকারে নিমজ্জিত জনতা
শেখ মুজিব, সেই তুমি
না ধরলে হাল পেতো না স্বাধীনতা।

এইতো হাতে গণা আর মাত্র কয়েকটি দিন পরই আসছে ঐতিহাসিক সেই দিনটি যে দিনটির জন্য কেউ হারিয়েছেন তার প্রান প্রিয় কলিজার টুকরো সন্তানকে কেউ বা হারিয়েছেন স্বামী-স্ত্রী কন্যা ভাই বোনকে তা ১৬ই ডিসেম্ভর ১৯৭১....আর অগণিত লাশের পাড়ারে যে নামটির সৃষ্টি তা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি "গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ" এখানে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান জাতের মিলিত কল্পানাতীত সুন্দর একটি ঈর্ষনীয় বসবাস।
বাংলাদেশের জন্ম দিবস/ বিজয় দিবস নিয়ে সুন্দর একটি যুক্তি তর্ক
ের শুরু হয়েছে সূর্য্য,অভি,সমর সহ আরো যারা তাদের পাড়ায় গড়ে উঠা সূর্য্য সেন ক্লাবের সন্ধ্যা কালীন আড্ডায়।আড্ডায় উঠে আসে কত অজানা,মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে অনেক অজানা কথা।তাদের মধ্যে থেকে এক জন অল্প বয়সী ছেলে টিপ্পনী কাটেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাতে সূর্য্যের মাথায় রক্ত উঠে যায়।
-কি বললে?অল্পতেই স্বাধীন হয়েছে...এমন ইতিহাস হাজারো আছে!....তোমার বয়স কতো? তুমি যুদ্ধ দেখেছিলে?
-না,স্বাধীনের পর আমার জন্ম।
-তাতে কি টিভি কিংবা বাপ চাচার কাছে শুনোনি কত বর্ববর আর পিচাশ ছিল পাকিরা?আমার চাচাকে ধূতি পড়া অবস্হায় গাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে কালেমা বলে লিঙ্গ কেটে মুসলমান বানানোর বণিতা করে পুরো লিঙ্গটি কেটে মেরে ফেলেছিল,....আর তুমি বলছ সহজেই স্বাধীনতা এসেছে।
সমরের এমন আবেগময় কথায় আড্ডাস্হলের সবাই 'থ খেয়ে যায়।
সূর্য্য সবাইকে অনুরোধ করেন যাতে ভবিষৎতে কেউ আর এমন অযৌক্তিক কথা না বলেন।
-তুমি আমরা আমাদের,এখানে যারা আছো নতুন প্রজন্ম হয়তো সেই সময় আমাদের জন্ম হয়নি কিন্তু টিভিতে কিংবা যুদ্ধা/গাজী হিসাবে যারা আছেন তাদের চোখে মুখে সে দিনের বর্ননায় কি দেখি আর কতটা ত্যাগ স্বীকার করলে এমন আনন্দীত হয় মন উৎফুল্লতায় ফেটে পড়ে জনতা।
৭১ এর ডিসেম্বরে এই দিনে বাংলাদেশের অবস্থা কি ছিল , একবার ভাবতো ? টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ায় চারিদিকে ছিল বিজয়ের পদ ধ্বনি। 'জয়  বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু' বলে বাংলার দামাল মুক্তি যোদ্ধারা একের পর এক এলাকা মুক্ত করে ঢাকার দিকে এগিয়ে আসছিল।
শুধু মুক্তিযোদ্ধা কেন , আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার কন্ঠেই ছিল এই শ্লোগান।
হানাদার পাক বাহিনী আর তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আল বদর বাহিনী , মিত্র বাহিনীর সাড়াশি আক্রমনে 'ছেড়ে দে মা কেদে বাঁচি' বলে ঢাকার দিকে পালিয়ে আসছিল। রাজাকার , আল-বদরদের নাটের গুরু গোলাম আজম আগেই পালিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানে। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বরের সেই মাহেন্দ্রক্ষণে হানাদার পাক বাহিনীর লজ্জাষ্কর আত্মসমর্পনে মুক্ত হয়েছিল বাংলাদেশ।
এর মধ্যে আড্ডায় পাশে একটু দূরে বসা সবার পরিচিত এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আঃ রব সাহেব(পরিচালক:রানস এ্যাপারেলস লিঃ(কম্পোজিট) তাদের তর্ক বির্তকের মাঝে যোগ দেন।সে তাদের সামনে আসাতে বাঙ্গালী স্বভাব সূলভ ভাবে দাড়িয়ে তাকে সম্মান জানিয়ে তাকে আড্ডায় স্বাগত জানান সূর্য্য......
-তোমাদের দেখছি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কিছুই অজানা...আমি তোমাদের যুদ্ধের পরে ঠিক সমসাময়িক মুহুর্তের কিছু চক্রান্তকারীর তথ্য দিবো যা তোমাদের ভবিষৎ প্রজন্মরা সতর্ক থাকতে পারবে
স্বাধীনের পরও থেমে ছিল না শত্রুরা.........

অবজারভারের প্রথম পাতার উপর দিকে দুই কলাম এবং দৈনিক পাকিস্তানে নীচের দিকে সিঙ্গেল কলামে বক্স আইটেমে প্রকাশিত খবরটির শিরোনাম ছিলো এমন 'যুদ্ধের ফলে গোপন আলোচনা নস্যাত হয়ে গেছে: হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র' এবং India's attack interrupts US secret move, খবরের সারমর্ম হলো পাকিস্তান ভারত যুদ্ধের ফলে মার্কিনিরা গোপনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যে আপস রফায় পৌছানোর চেষ্টা করছিলেন সেটা ভেস্তে যায়।
এই গোপন আলোচনা ছিলো পররাষ্ট্র মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদের সঙ্গে। এর আগে জাতিসংঘে পাঠানো প্রতিনিধি দলের একজন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দল বদলে ফেলার তার কূট চালটি ব্যর্থ হওয়ার পর এবার অনেক সতর্ক ছিলেন মোশতাক। তার আজ্ঞাবহ কুমিল্লার সাংসদ কাজী কাইয়ুম এবং তাহের উদ্দিন ঠাকুর-চাষী জুটির মাধ্যমে দুই পাকিস্তানকে এক রেখে স্বায়ত্ব শাসনের আপস রফায় আসার চেষ্টা ছিলো তার।
বলা বাহুল্য এই চক্রান্তটিও ফাস হয়ে যায় এবং মোশতাক নজর বন্দী হয়ে পড়েন। তাজউদ্দিন স্রেফ আওয়ামী লীগের দলীয় ঐক্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ধরে রাখার স্বার্থে তাকে বরখাস্ত না করে স্বপদে বহাল রাখেন...।এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে যা বাংলাদেশকে স্বাধীন হবার পরও সোজা হয়ে দাড়াতে বাধা হয়েছিল।
সে দিন বাংলাদেশ প্রেস অনলাইনে পত্রিকায় দেখতে পেলাম মুক্তিযোদ্ধা যারা জীবিত আছেন তাদের বিরুদ্ধেও যড়যন্ত্র চলছে অহ রহ ,সেই রিপোর্টির কিছু অংশ আমি তোমাদের বলছি, না তার সাথে আমার কোন ব্যাক্তিগত কোন সম্পর্ক নেই সম্পর্ক আছে দেশপ্রেমের।

চাঁদপুর জেলার এক অকুতভয় কৃতি সন্তান । চাঁদপুরের গর্ব। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদান চির স্বরণীয়। শুধু তার নয় তার পুরো পরিবার মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর মামা এবং দাদাও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন নৌ কমান্ডো।
’৭১ মার্চ মাসে যুদ্ধ শুরু হবার পর বঙ্গবন্ধুর ভাষণে তিনি অনুপ্রাণিত হন এবং বাড়িতে চলে আসেন। এরপর তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ভারতের ত্রিপুরা ট্রানজিট ক্যাম্পে যোগ দেন। সেখান থেকে তাদেরকে পলাশী নৌ কমান্ডো ট্রেনিং ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। যে পলাশীতে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ও লর্ড ক্লাইভের সাথে যুদ্ধ হয়েছিল।
ওখানে ট্রেনিং ক্যাম্পের সাথেই ছিল ভাগিরথী নদী। আর এই নদীতে নৌ-কমান্ডোর রণ কৌশল অর্থাৎ কী করে শত্রু পক্ষের জাহাজ মাইন দ্বারা ধ্বংস করা যায় এসব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মে, জুন ও জুলাই মাসে ট্রেনিং হয়।
ট্রেনিং শেষে মমিন উল্যা পাটওয়ারী সহ নৌ কমান্ডো আব্দুল হাকিম, ফজলুল কবির সহ ক’জন ২৫ আগস্ট দিবাগত রাতে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে লন্ডন ঘাটে সিএসডির জেটিতে পাক-সেনাদের খাদ্য সামগ্রী নিয়ে অবস্থানরত বিশাল জাহাজ, এমভি লোরাম নামের এই জাহাজটিকে মাইন দ্বারা নদীতে ডুবিয়ে দিতে এক দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেন। তারা ওই রাতে ডাকাতিয়া নদীতে নেমে কচুরি পানা মাথা নিয়ে ভাসতে ভাসতে লোরাম জাহাজের তলদেশে একটি শক্তি শালী মাইন লাগিয়ে আবার কচুরীপানা মাথায় করে ভাসতে ভাসতে মেঘনা নদীর মোহনায় গিয়ে নিরাপদে চলে যান। পরে এই জাহাজটি ধ্বংস করা হয়।
মমিন উল্যা পাটওয়ারী একাই চাঁদপুরের বড় স্টেশনের বার্মা ইস্টার্ন তেলের ডিপোটি বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে উড়িয়ে দেন।
তিনি এ ধরনের বহু দুঃসাহসিক সফল অভিযান পরিচালনা করেন। আর এ জন্যই বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত হন। দেশ স্বাধীন হবার পর লেখাপড়া শেষে তিনি প্রথম পুলিশের এ এস পি পদে চাকুরী নেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত সৎ অমাইক। তিনি পুলিশের এসপি হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় অত্যন্ত সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সেনেগাল ও অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর হিসেবে ৪ বছর নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি দেশে এসে কিছুদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ও পরবর্তীতে মহা-পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর তৎকালীন সরকার মমিন উল্যা পাটওয়ারী সহ ১১ জনকে চাকুরী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেন। মমিন উল্যা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন এবং আদালতে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ ৭ বছর পর ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মামলার রায় হয়। এই রায়ে তাঁকে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করে তাঁকে অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতির জন্য আদেশ দেয়া হয়।
এই হলো মোটামোটি আমাদের চরিত্র.............।তোমরা বসে কথা বলো এই ফাকে আমি নামাজটা পড়ে আসি তবে তোমাদের কাছে অনুরোধ থাকবে তোমরা যেখানেই দেখাবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নোংরমী হচ্ছে সেখানেই ঐক্য বদ্ধ ভাবে প্রতিবাদ জানাবে...মনে রাখবে এ ঋণের ভার তোমাদের উপরই ।

চলবে...

এখানে ক্লিক করলে জানতে পারবেন গত ১৬তম পর্বটি

 সহযোগিতায়:বাংলাদেশ প্রেস।

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ