পুস্তক সমাচারেৎ

আগুন রঙের শিমুল ২৫ নভেম্বর ২০১৪, মঙ্গলবার, ০৪:৪২:২৯অপরাহ্ন বিবিধ ২৪ মন্তব্য

পড়তে শেখার পর থেকেই মোটামুটি ছাপার অক্ষরে যাই পাই গোগ্রাসে গিলি। হোক সেটা ছোট বোনের গার্হস্থ্য অর্থনীতির বই কিংবা হোকনা আ ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইম, বই হলেই হলো।

আমার বাবা, মফস্বলের স্বল্পশিক্ষিত ছোটখাট ব্যাবসায়ী। আমি তার একমাত্র ছেলে, কার্যোপলক্ষ্যে রাজধানীতে যেতেন তিনি, আজো যান। কিন্ত সেই নব্বইয়ের দশকের শুরুর মতোই আজো তার মন টেকেনা সেখানে। দ্রুত ফিরবার তারা তাকে প্রোয়জনীয় অনেক কিছুই কিনতে বা নিয়ে নিতে ভুলিয়ে দেয়। কিন্ত একটা জিনিস ভুলায়না কখনো - সেটা হচ্ছে প্রিয় পুত্রের জন্য নেয়া বই। কতশত বই, রুশ সাহিত্যের অনুবাদ, সাইন্স ফিকশন, ইতিহাস, এমনকি উনি আমাকে মোটর সাইকেল ডায়েরী পর্যন্ত এনে দিয়েছিলেন। সেই যে কিশোর টি বইয়ের জানালায় তাকিয়ে বিশ্ব দেখার শুরু, চলছে আজো। উনি অসম্ভব ধর্মভীরু মানুষ ,আজ পর্যন্ত উনাকে কোন ওয়াক্তের নামাজ কাজা হতে দেখিনি। মজার ব্যাপার হচ্ছে অবিশ্বাস বিষয়ে পড়া আমার প্রথম বই ''ভুত ভগবান শয়তান বনাম ডঃ কোভুর'' উনার কিনে দেওয়া। তখন ক্লাস টেনে পড়ি।

 

তারপরের জন, চপল ভাই- এলাকার বড় ভাই, বর্তমানে ঢাকায় জজ কোর্টে প্র্যাকটিস করেন। তার ছিল বইয়ের বিশাল সংগ্রহ। এক কিশোরের সামনে উনি খুলে দিলেন এক আশ্চর্য মায়ার জগত। টানে সবাইকে বাধনে জড়ায় না। উনার নিয়ম ছিলো বই নেয়া যাবেনা, উনার রুমে বইসা পড়তে হবে। উনি মাঝে মাঝে রুমের তালা খুলে রেখে বলতেন বাইরে যাইতাছি পড়া শেষ হইলে রুম তালা দিয়া রাইখা যাইস। এবং সেলফে তালা দিয়া রাইখা যাইতেন , দুইটা পড়ার জন্য একটা বই থাকতো হাতে আরেকটা জামার ভেতরে লুকানো :p এবং ভাইয়ের বইয়ের সংগ্রহ ছিলো বিচিত্র, মাসুদ রানা তিন গোয়েন্দা থেকে এস্ট্রোলজী নিউমারলজী সব। উনার কাছেই আমার কামু, কাফকা এদের চেনা। হাতে ''দ্য আউটসাইডার'' তুলে দিয়ে বলেছিলেন - পড়,পরে কাজে দিবে।

 

এবং জুয়েল ভাই - আমাদের গ্রামের স্কুলের থেকে বোর্ড স্ট্যান্ড করা ছাত্র। বর্তমানে এনটিভির অনলাইন হেড। এই লোকের কথা না বললে অন্যায় হবে, এজন্য যে উনিই আমাকে শিখিয়েছেন বইয়ের কোন বড়দের ছোটদের হয়না, মানসিক পরিপক্কতার বেশকম হয়। উনার ও ছিলো বিশাল বইয়ের সংগ্রহ। দুপুরের রোদ মাথায় করে কতদিন মাইল তিনেক হেটে উনাদের বাড়ি গেছি বইয়ের জন্য।

বই পড়ার অভ্যাস অনেক ঝামেলা থেকেও বাচিয়েছে, অনেকবার। তখন এয়ারফোর্স এ জব করি, ইন্সপেকশন প্যারেডের দিন বেস কমান্ডার আসছেন রুম ইন্সপেকশনে। যথারীতি ব্যারাকের সবচেয়ে অগোছালো রুম আমার দরজা থিকাই চোখ লাল কইরা রুমে ঢুকলেন স্যার ..... এবং টেবিলের সামনে আসার পর উনি একবার টেবিলের দিকে একবার আমার দিকে তাকায়ে চুপচাপ চলে গেসিলেন এবং পরে পিওন পাঠায়ে ডাইকা নিয়া বিকালে প্রায় আধাঘন্টা গল্প করছেন। টেবিলের উপরে আধাখোলা ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট আর বেডের উপ্রে উল্টানো ছিলো কম্প্যানি অফ উইমেন।

আইরনি ইজ - স্যারের কাছ থেকে আনা কারেনিনা পড়তে নিছিলাম আর ফিরত দেই নাই।

 

বই কিনতে কিনতে বইয়ের দোকানদার মামাদের সাথে খাতির হইয়া যাইত। যেমন ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমার সামনের স্টল ওয়ালা মামা। নতুন মাসুদ রানা আসলেই উনি এককপি আলাদা করে রেখে দিতেন , সব কপি ফুরায়া গেলেও অইটা কাউকে দিতেন না। উল্টোদিকে যশোরের রেলওয়ে বুকস্টলের মামা, আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী আইনা দিব বইলা পঞ্চাশ টাকা অগ্রীম নিছে - বইও আইনা দেয় নাই, টাকাও না , দুনিয়া নিষ্ঠুর জায়গা ।

এখন বই পড়ি কম্পিউটার স্ক্রিনে। পাতা উল্টানোর বদলে এরো তে ক্লিক করে, কিন্ত দুপুর বেলা খাওয়ার পরে কাত হয়ে বইয়ের পাতা উল্টানোর মতো মজা দুনিয়ার আর কোন কাজে আছে ?

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ