১) আম্মার জন্য কিছু কিনতে যমুনা ফিউচার পার্কে আড়ং এর শোরুমে গিয়েছিলাম। যথারীতি কিশোরী, তরুণী, মধ্যবয়সী নারীদের উপচে পড়া ভিড়। এমনই সেই ভিড় যে সেই ভিড়ের মধ্যে দিয়ে দাড়িয়ে নিজেকে এলিয়েন এলিয়েন বলে মনে হয়। ষ্পিকারে উচ্চ স্বরে বাজছে একটার পর একটা তাহসানের গান।
তুমি ছুঁয়ে দিলে মন
আমি উড়বো আজীবন...
বাংলার রমণীরা ঐতিহাসিক ভাবেই গিটারওয়ালা আদমিদের প্রেমিক হিসেবে দেখতে পছন্দ করে। তাই রমণীকুলের মাঝে আজকাল এই ভদ্রলোকের ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তার উপর আবার উনি মাল্টি ট্যালেন্টেড, একই সঙ্গে প্রেম-গায়ক, প্রেম-নায়ক, হাজী সাহেব, বিচারপতি (লাক্স-চ্যানেল আই সুপারষ্টার)। যাই হোক কথা সেটা না। কথা হচ্ছে রমণীকুলের তাহসানপ্রেমের কারণে লোকজন আজকাল এই ভদ্রলোকের গান কমার্শিয়াল পার্পাজেও ব্যবহার করছে। নট ব্যাড, নট ব্যাড এট অল, কি বলেন?
২) বাঙ্গালী মুসলমানের কালচার কেন্দ্রীক দৃষ্টিভঙ্গিতে দুটো ধারা আছে। এক ধারার অনুসারীদের কাছে কালচার বলতে বুঝায় মধ্যযুগীয় আরবীয় কালচার। ইহাই সত্য, ইহাই পরম। ইহা ছাড়া আর কোন গতি নাই আর এক ধারার অনুসারী আছে যারা ধর্ম পালনের প্রক্রিয়াকেই প্রতিনিয়ত চেইঞ্জ হওয়া এই কালচারের সঙ্গে এডজাষ্ট করে তুলছে। সেহরি পার্টি, টাইট জিন্সের সাথে হিজাব, একমাস রোজা রেখে ঈদের দিনে লালপানি হজম তারই কিছু সাম্প্রতিক উদাহরণ। আপনি যদি হাই প্রোফাইল শপিং মল গুলোতে যান, দেখবেন অনেক হিজাবী মা আর তার জিন্স টপ পড়া আল্ট্রা মর্ডান মেয়ে একসঙ্গে মনের মাধুরী মিশিয়ে শপিং করছে। আমি তো গত পহেলা ফাল্গুনে ঢাকার রাস্তায় বাসন্তী হিজাবেরও প্রচলন দেখেছি। কি বলবেন এটাকে? এটাই হছে কালচার আর রিলিজিওনের এক ধরনের কোঅর্ডিনেশন। এই কোঅর্ডিনেশনটা ঘটবে। যারা সভ্যতাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান সেই মধ্যযুগে কিংবা অন্তত পক্ষে সেই স্বপ্নটা দেখেন তাদেরকে কাউন্টার করতে এই কোঅর্ডিনেশনটার দরকার আছে।
৩) "যদি তুমি কারো মনযোগ তোমার প্রতি আকর্ষিত করতে চাও তবে তার উপস্থিতিতে বিরক্ত হবার ভান করো"- কথাটা আমার না, বলেছিলেন ফ্রেডরিখ নিৎসে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম আর হিষ্পানিক বিরোধী আস্ফালনের ক্ষেত্রেও কথাটা খাটে।
৪) এসপি বাবুল আখতারের ওয়াইফ হত্যা নিয়ে আমি আপনি ধন্ধে থাকলেও বিশাস করেন সিআইডি, ক্রাইম পেট্রল দেখা দর্শকেরা কিন্ত মোটেও ধন্ধে নাই। তিনাদের কাছে যান গোটা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দিবে সহজেই। তাই ষ্টার জলসার উপর চাপ কমিয়ে বেশি করে সিআইডি, ক্রাইম পেট্রোল দেখার অভ্যেস গড়ে তুলুন, পুলিশের ইন্টারনাল পলিটিক্স সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন।
৫) বাংলার মাটিতে পীরের অভাব কম্মিনকালেও হয়নি। এদেশের প্রতিটি মহল্লায় সুপ্ত ভাবে লুকিয়ে থাকে কোন না কোন ভবিষ্যৎ পীর। পীর আছে রাজনীতিতে, পীর আছে অর্থনীতিতে, আছে আর্মি পীর, আছে ফেসবুক পীর, আছে মানবাধিকার পীর, আছে সুশীল পীল, আছে রোমান্টিক পীর। কবির ভাষায় বলতে হয় -পীর ভোগ্যা এই বঙ্গ বসুন্ধরা। পীর যেহেতু আছে, পীরের মুরিদও থাকবে। কথায় আছে সূর্যের চাইতেও বালি গরম। এদেশেও তেমনি পীরের চাইতে পীরের মুরিদ গরম। কোন পীরের বিরুদ্ধাচারন করতে চাইলে এই বিষয়টা মাথায় রাখবেন।
৬) একটি অপ্রাসঙ্গিক কুইজ- চাঁদে পা রাখা প্রথম বাঙ্গালীর নাম যেন কি?
ক) অনন্ত জলিল।
খ) ওবায়দুল কাদের(ফাটাকেষ্ট)।
গ) দেলোয়ার হোসেন সাইদী।
ঘ) নুসরাত ফারিয়া।
জামাতী খোঁজার লিটমাস টেষ্ট হিসেবে এই প্রশ্নটা ব্যবহার করতে পারেন।
১৪টি মন্তব্য
ইঞ্জা
কঠিন আর সত্যান্বেষী চোখ আপনার।
অপার্থিব
বাঁচতে হলে জানতে হবে, দেখতে হবে।
ইঞ্জা
সহমত
লীলাবতী
১. রমনীরা গিটারোয়ালাকে লাইক করেন নাকি? জানা ছিল না, খোঁজ নিতে হয় 🙂 তবে আমি তাহসেনের গানের ভক্ত ।
২. হোক কিছু মিলিত কালচার, সময়ে এটি টিকে থাকলেই হয়। গ্রহনযোগ্যতা না থাকলে বাতিল হয়ে যাবে একসময়।
৩. একমত এ বিষয়ে
৪. এসপি বাবুলের স্ত্রী হত্যার বিষয়টি এখন জলের মত পরিস্কার।
৫. আমার কোনো পীর নেই, খুব অভাগা আমি।
৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অধ্যাপকও বিশ্বাস করেন সাইদি প্রথম চাঁদে যাওয়া বাংালী 🙂
এক পোস্টে এত কিছু! (y)
অপার্থিব
১) খোঁজ নেন , ভুল হইলে জানাইয়েন তবে মনে হয় না ভুল হবে।
২) মিলিত কালচারটার টিকে থাকা্টা জরুরী কিন্তু আশংকার কথা হলো কালচার আর রিলিজিওনের এই কোঅর্ডিনেশন ঘটানোর প্রবণতাটা দিন দিন কমছে।
৩) ধন্যবাদ।
৪) আপনার কি সিআইডি/ ক্রাইম পেট্রোল দেখার অভ্যেস আছে নাকি?
৫) হার্ডলাক।
৬) অনেক বিজ্ঞানের শিক্ষক/ অধ্যাপক ভুতের হাত থেকে রক্ষা পেতে গলায় , কোমরে তাবিজ ঝুলিয়ে রাখে তাহলে আর সাইদীর চাঁদে যাওয়া বিশ্বাস করবে না কেন?
আবারো ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
টুকরা টুকরা চিন্তা ভাবনার মিশ্রনে ভালই এক পোষ্ট।
পোস্টের শিরোনাম দিলাম ” অপার্থিব এর পার্থিব ভাবনা – ১ “
অপার্থিব
শিরোনাম গ্রহণযোগ্য। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
আবু খায়ের আনিছ
কালচার পরিবর্তন হবেই, এটা স্বাভাবিক কিন্তু সেটা যেন বির্বজিত না হয়ে যায় সেই দিকে।( পোষ্ট পড়ে হেসেছি মন্তব্য করতে গিয়ে হাসছি।)
পরকিয়া পছন্দ করে না, তবু অন্যের জামাই এর সাথে নিজেকে নিয়ে কল্পনা করতে যে কেন ভালোবাসে তা বুঝে আসে না।
বেশ দেখেছি ক্রাইম পেট্রোল, ঘুরে ফিরে কাহীনি একই, আর সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় পরকিয়া। অপরাধ যেভাবে সংগঠিত হয় পুরুপুরি সেভাবে উপস্থাপন করতে পারে না। দেখতে বাধাঁ নেই। বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যা নিয়ে কিছু বলতে আগ্রহী নয়, চলমান মামলা নিয়ে মন্তব্য করা আইন বিরুদ্ধ।
মিছিল এর বাক্য থাকে না, ওমুকের গালে জুতা মার তালে তালে, এই অমুকের জায়গায় পীরের নাম বসিয়ে দিলেই খুশি হই।
চাদেঁ ত সেই যাবে, যাকে নিয়ে মানুষ ভাবে মরার আগেই স্বর্গে চলে যাবে। রাজাকার নিপাত যাক।
অপার্থিব
চলমান মামলা নিয়ে মন্তব্য করা আইন বিরুদ্ধ হলেও আপনার সিআইডি/ ক্রাইম পেট্রোল দেখার দীঘ অভিজ্ঞতাকে মামলার তদন্তে কাজে লাগানোর দাবী জানিয়ে গেলাম। 🙂 আশা করি দেশ ও দশ আপনার এই দীর্ঘ, প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ, প্রাঞ্জল অভিজ্ঞতা থেকে অনেক উপকৃত হবে।
// মিছিল এর বাক্য থাকে না, ওমুকের গালে জুতা মার তালে তালে, এই অমুকের জায়গায় পীরের নাম বসিয়ে দিলেই খুশি হই।//
পীরের মুরিদদের কাছ থেকে পাল্টা আক্রমনের জন্যও প্রস্তুত থাইকেন।
সাইদীর চন্দ্র ভ্রমনের অভিজ্ঞতাকে কেন রিয়েল এষ্টেট কোম্পানীরা তাদের ব্যবসায়ীক বিজ্ঞাপনের কাজে লাগাইলো না তা নিয়ে মাঝে মধ্যে আফসোস হয়।
ধন্যবাদ।
আবু খায়ের আনিছ
ভাই, আমি সেই রকম কোন পদের লোক নয়, এক সময় দেখতাম এগুলো, এখনো সুযোগ হলে দেখি ইউটিউব এ। ভালোই লাগে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
চাঁদে পা রাখা প্রথম বাঙ্গালীর নাম দেলোয়ার হোসেন সাইদী। 😀
অনেকদিন পর মনের মতো একটা পোষ্ট পড়লাম।
রূপক-প্রহসনমূলক লেখাটির জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অপার্থিব
এক্সপেরিমেন্টাল পোস্ট। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
ব্লগার সজীব
আসলে অস্থির একটি সময় অতিবাহিত করছি আমরা।
অপার্থিব
হুম , এই অস্থির সময় অতিক্রম করতে আমাদেরই প্রয়াস নিতে হবে।