একজন নারী যত প্রতিষ্ঠিত বা জনপ্রিয় হন ততই তার অন্তর্গত চাপ বাড়তে থাকে।
আর তিনি যদি দেখতে সুশ্রী এবং বিবাহিত হন তবে তো কথাই নেই। এই পুরুষ শাষিত সমাজে
সংসারের মানুষটি থেকে শুরু করে রাস্তার প্রতিটি কৌতুহলি চোখ ও কণ্ঠকে সামলে ক্যারিয়ার সমুন্নত
রাখাটা যে তার জন্য কতখানি দুঃসাধ্য  হয়ে ওঠে তা কেবল সেই নারীই জানেন।

এই দেশে এখনো কোন নারী নিজ যোগ্যতা মেধা দিয়ে সামান্য কিছু অর্জন করলেও লোকে পেছনের কাহিনী খুঁজতে থাকে। এই নারীর রাতারাতি উত্থানের পেছনে 'নিশ্চই কোন পুরুষ' আছে। জনতার তীক্ষ্ম দৃষ্টি পাতা থাকে তার চালচলন বা চলাচলের রাস্তায়। সেই নারীর সামান্য বিচ্যুতিতেই সমাজ খাঁমচে ধরে সাঁড়াশির মত।

প্রায়ই শুনি, একজন নারী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডার মায় ম্যাজিস্ট্রেসির চাকরি ছেড়ে ঘর সংসার সামলাচ্ছে । একজন মেধাবী নারী, কলেজ ইউনির তুখোড় রূপবতি চঞ্চল সদা হাস্যময়ি মিশুকে মেয়েটি বিয়ের পরে স্বামীর অপছন্দ বলে চাকরি বাকরি ছেড়ে দিয়েছে বা স্বামীর আদেশ বলে ফ্যাশন ছেড়ে হেজাব পরে হাসি ভুলে গেছে। শুধু মাত্র সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য আত্মসম্মান বিসর্জন নিজস্ব
আকাংখার  গলা টিপে মেরে মরে মরে বেঁচে থাকে শুধুমাত্র সংসারটা টিকিয়ে রাখবার জন্য। কেন? সংসার টিকিয়ে রাখতেই হবে কেন? যে স্বামী তোমায় সম্মান দেয় না, তোমার মেধার মুল্য দেয় না সে স্বামীর সাথে সংসার করতেই হবে কেন?
সমাজের জন্য। কেননা, সংসার ভাঙ্গলে পরিবার সমাজ পরিচিত মহল সেই নারীটিকেই দুষবেন শত মুখে।
'এই মেয়েরই নিশ্চয় ঝামেলা আছে'
আর
নারীটি যদি মিডিয়ার প্রতিষ্ঠিত /জনপ্রিয় কেউ হন তবে তো সোনায় সোহাগা। 'দূশ্চরিত্রা' শব্দটি তার কপালে সিল মেরে দেওয়া হয়। নারীটি প্রতিষ্ঠিত হবার আগে যে পুরুষটি তাকে 'তার ক্যারিয়ার যেমন চলছে তেমনই চলবে' বলে আশ্বাস দিয়ে বিয়ে করেন, বিয়ের পরে সেই ক্যারিয়ারটি নারীটির জীবনের জন্য বিষ সমান হয়ে দাঁড়ায়। না পারে মুখে রাখতে না পারে গিলে খেতে। ওদিকে শর্তারোপ করা হীনমন্য স্বামীটিকে ত্যাগ করলেও সব দায়/দোষ ঐ নারীরই, ''ঐ যে, মাইয়ার পাংখ্যা গজায়ে গেছে, চাইরটা কামাই করেই ছিনাল হয়ে গেছে'' নোংরা অসম্মানের বাক্য হজম করার ভয়ে বা শান্তি বজায় রাখতে তাই বেশির ভাগ সময় নারীটি মুখে রাখা ক্যারিয়ারের বিষটি 'থুঃ' করে ফেলে দিয়ে ফুলটাইম হাউজ ওয়াইফ হয়ে যায় নয়তো  এক দলা বিষ গিলে নিয়ে সব কিছু থেকেই মুক্তি খোঁজে।

ভাগ্যবাতিরা বিষে নীল হয়ে কবরে/চিতায় শুয়ে আরামে ঘুম পাড়ে আর ন্যান্সির মতন অভাগিরা বেঁচে থেকে লোকের মুখরোচক আলাপের বিষয় হয়।

গত দিন থেকে ন্যান্সির আত্মহননের ব্যার্থ চেষ্টাকে কেন্দ্র করে যা সভ ভাষার ব্যাবহার দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে, মেয়েটা মরে গেলেই ভালো হতো। অন্ততঃ নোংরা কথার পরিবর্তে করুনা করে হলেও কিছু সত্য কথা বোরোতে কারো কারো মুখ থেকে তার মেধা বা প্রতিভা সম্পর্কে।

কোন যাতনায় যে একজন সন্তানের মা, সুপ্রতিষ্ঠিত নারী এই রকম করে মরতে চায় তা এই পুরুষ শাষিত দুনিয়া কখনোই বুঝবেনা।

0 Shares

১৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ